আল্লাহর প্রতি সুধারনা পোষণ করুন (১ম পর্ব)

আমার প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, সহিহ হাদিসে এসেছে, একদা আয়েশা (রা) রাসূল (স) এর নিকটে এসে বললেন- হে আল্লাহর রাসুল (স)! আল্লাহর নিকট আমার জন্য দোয়া করুন। ফলে রাসূল (স) কিবলার দিকে ফিরে তাঁর হাত উত্তোলন করলেন এবং বললেন – ইয়া আল্লাহ! আয়েশাকে ক্ষমা করে দিন, তাঁর সকল পাপ ক্ষমা করে দিন। তাঁর অতীত এবং ভবিষ্যতের সকল গুনাহ, যা সে প্রকাশ্যে করেছে এবং যা সে গোপনে করেছে। এরপর আয়েশা (রা) মুচকি হাসি দিলেন। আর তিনি তাঁর মাথা নামিয়ে রাসূলের (স) কোলে রাখলেন; অত্যান্ত খুশি হলেন রাসূলের (স) দোয়া শুনে। ঠিক সেই মুহূর্তে আমাদের প্রিয় নবী (স) আয়েশার (রা) দিকে ফিরে বললেন, তুমি কি আমার দোয়ার কারণে খুশি ? তিনি বললেন, হ্যাঁ ও রাসূলুল্লাহ, কেন আমি আপনার দোয়ায় খুশি হবো না ? তখন তিনি বললেন, আমি আল্লাহর নামে শপথ করছি যাঁর হাতে আমার রূহের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, প্র্রত্যেক নামাজে এটাই আমার দোয়া আমার উম্মার জন্য। আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আ..লি মুহাম্মাদ …… ভাই এবং বোনেরা, আমাদের রাসূলের (স) জন্য দুয়া করতে কখনোই কৃপণতা করবেন না। তিনি আমাদের জন্য তাঁর নিজের সন্তানদের চেয়েও বেশি দুয়া করেছেন। যিনি আমাদেরকে ভালোবেসেছেন, আমাদেরকে স্মরণ করেছেন সম্ভবত তাঁর নিজের সন্তান এবং পরিবারের চেয়েও বেশি। আলহামদু লিল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ… । আমার মুসলিম ভাই ও বোনেরা, আমরা মুসলিম ভূমিতে এমন নৃসংসতা প্রত্যক্ষ করেছি যার মতো উদাহরণ বহুদিন ধরে আমরা দেখিনি। আমরা দেখেছি একজন ব্যক্তির ক্ষমতা এবং আধিপত্যের লালসার কারণে যেরকম নৃসংসতা সে ঘটিয়েছে আলেপ্পোতে, যুগ-যুগ ধরে যার দৃষ্টান্ত আমরা দেখিনি সুবহানাল্লাহ। যেভাবে সে তার জনগণকে হত্যা করেছে, যেভাবে সে রাজপথে রক্ত ঝরিয়েছে, যেভাবে সে ইসলামের শত্রুদের আসার সুযোগ করে দিয়েছে, আল্লাহর শপথ, এটা আমাকে মনে করিয়ে দেয় ইবনে তাইমিয়া যা বলেছেন। তিনি বলেছেন,…..। তিনি বলেছেন, নুসাইরিয়ারা...

ঈমান হারানোর প্রক্রিয়া

আমাদের আশেপাশে বিভ্রান্ত অবস্থায় অনেক আব্দুল্লাহ, জায়নাব, আলী, ফাতিমা, আব্দুর কারিম, আহমেদ, রুকাইয়া, হামজাহ, আই’শা, মুহাম্মদ — এইসব চমৎকার আরবি নামধারী তরুন-তরুণীদের আমরা দেখতে পাই। তারা খুব নির্ভীকভাবে বলে, “ইসলাম নিয়ে আমার মনে অনেক সন্দেহ আছে। আর এ মানুষগুলো এমন নয় যে তাদের দর্শন শাস্ত্রে পি এইচ ডি রয়েছে বা ইসলামের ইতিহাসে ব্যাপক জ্ঞান রয়েছে এবং এসব বিষয় বহু দিন অধ্যয়নের ফলে তাদের মনে ধীরে ধীরে সংশয়ের জন্ম নিয়েছে। না, না, না, আসল ব্যাপার তা নয়। বরং আসল ব্যাপার হলো এরা নিজেদের জন্য জেনে-বুঝে খারাপ সঙ্গ এবং অসৎ পরিবেশ বেছে নিয়েছিল। তারা নিজেদের পরিবর্তন করেনি। এটাই ঈমান হারানোর প্রক্রিয়া। আমি এমন শত শত মানুষের সাথে কথা বলেছি। তারা আক্ষরিক অর্থে এই আয়াতের ভেতর জীবনযাপন করছে!! (তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদগ্রস্ত করেছ। প্রতীক্ষা করেছ, সন্দেহ পোষণ করেছ এবং অলীক আশার পেছনে বিভ্রান্ত হয়েছ, অবশেষে আল্লাহর আদেশ পৌঁছেছে। ৫৭ঃ ১৪) তারপর এক সময় তারা ধর্ম নিয়ে সন্দেহ পোষণ করতে থাকে। কিন্তু তাদের এই সন্দেহের সাথে যুক্তি বা বুদ্ধির কোন সম্পর্ক নেই। আপনি একটা প্রশ্নের উত্তর দিয়ে শেষ হতে না হতেই আরেকটা প্রশ্ন করবে। কোন উত্তরেই তারা সন্তুষ্ট হবে না, কোন উত্তরেই তাদের সন্দেহ কাটবে না। কারণ তাদের কোন স্বদিচ্ছাই নাই যেন তাদের বিভ্রান্তি কেটে যায়। আপনি উত্তর দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে একসময় ভাববেন আসলে এদের সমস্যাটা কি? তখন যদি আপনি তাদেরকে প্রশ্ন করেন, “কতদিন থেকে তোমরা এই অসৎ পরিমণ্ডল জেনেশুনে বেছে নিয়েছ?” তখন আপনি বুঝতে পারবেন এদের আসল সমস্যা কোথায়। ‘wartabtum’ অর্থাৎ (নানা রকমের) সন্দেহ পোষণ করেছ। জানেন? সন্দেহ কী করে? সন্দেহ প্রথমে তাদের ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে দিবে। তারা এভাবে নিজেকে সান্ত্বনা দিবে- “এটা তো আসলে পুরোপুরি সত্য না। সুতরাং এটা না মানার কারণে আমার খারাপ অনুভব করার দরকার নেই।”...

আল্লাহর রাসূল (সঃ) এর প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ

আল্লাহ আপনার অন্তরে ঈমানকে সুন্দর করেছেন। আল্লাহ ঈমানকে আপনার কাছে প্রিয় করেছেন এবং তিনি একে আপনার হৃদয়ে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছেন। তবে এটা দ্বারা কী বোঝায়? এটা দ্বারা বোঝায়, রাসূল (সাঃ)-এর জন্য আমাদের যে ভালোবাসা রয়েছে, যা আমরা আমাদের হৃদয়ে বহন করি তা সুন্দর। যখন আপনার হৃদয়ে সুন্দর কিছু থাকে, এক সময় এই সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ধারক তাই প্রকাশ করে যা এটা ধারণ করে। সুতরাং যখন কারো অন্তরে রাসূল (সাঃ)-এর জন্য ভালোবাসা থাকে তখন তার বহিঃপ্রকাশ কীভাবে ঘটে? একটা ব্যাপার যা ঘটে তা হচ্ছে, যার অন্তরে রাসূলুল্লাহ মুহাম্মদ (সাঃ) আছেন আমার হৃদয়ও তাদের প্রতি কোমল হয়ে যায়। এটার একমাত্র কারণ হচ্ছে, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে এতো ভালোবাসি যে, যার আল্লাহর রাসূল (সঃ) এর প্রতি ভালোবাসা রয়েছে, তার জন্য আমারও ভালোবাসা রয়েছে। এটাই মূলত রাসূল (সাঃ)-এর প্রতি আমার ভালবাসার প্রমাণ। তাই যখন একজন মুসলিম অন্য একজন মুসলিমকে নিয়ে ঠাট্টা করার সময় দ্বিতীয়বার চিন্তা করে না, তখন বুঝতে হবে আল্লাহর রাসূল (সঃ) এর প্রতি ভালোবাসায় তার কিছু একটা ঘাটতি রয়েছে। সর্বোপরি রাসূলুল্লাহ (সঃ) সকলকে একইভাবে ভালবাসতেন। আপনাদের এ ব্যাপারটি সহজে বোঝাবার জন্য একটি ভিন্ন উদাহরণ দেওয়া যাক। অনেকেই এমন আছেন যাদের পিতামাতা মারা গেছেন এবং যখন বাবা-মা মারা যান, এটা একটা কষ্টকর ব্যাপার। আপনি তার সঙ্গ চান, আপনি আপনার পিতার অভাব বোধ করেন, তাকে স্মরণ করতে চান, আপনি জানেন কী করতে হবে? আপনি তার কিছু বন্ধুকে দেখতে যান। আপনার পিতার স্মরণে তার বন্ধুদের দেখতে যাওয়া, তাদেরকে সম্মান দেখানো…এ কাজগুলোই এখন আপনার নিকট একান্ত প্রিয় কাজ। আমার বাবা এই লোকগুলোকে ভালবাসতেন, তাই আমি তাদের ভালোবাসি। এই লোকগুলোর সঙ্গ আমাকে এমন ব্যক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যাকে আমি ভালোবাসি কিন্তু যাকে আমি এখন আর দেখতে পাই না। আপনার এবং আমার মধ্যেকার পারস্পারিক সম্পর্কটাও ঠিক এমনই।...

ঈমান এবং আঁধার প্রান্তরে পথ চলা প্রদীপ – ২য় পর্ব

দ্বিতীয় সমস্যাটি কী ছিল? দ্বিতীয় সমস্যাটি ‘ওয়া তারাব্বাস্তুম’। “তোমরা (সব সময় সুযোগের) প্রতীক্ষা করেছ/দীর্ঘসূত্রতা করেছ”। এখানে দীর্ঘসূত্রতা বলতে কি বুঝানো হয়েছে? আপনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এটা খারাপ, আপনার নিজের বিবেকের মাধ্যমে আপনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, আমার নিজেকে পরিবর্তন করা উচিত; কিন্তু নিজেকে বুঝিয়েছেন “ইনশাআল্লাহ আমি দ্রুত নিজেকে পরিবর্তন করবো’, আমি জানি নিজেকে পাল্টাতে হবে, আমি জানি এটা খারাপ, শুধু এই সপ্তাহ পরেই আমি সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষে পরিণত হবো।” “বেশী না, আর একটা সেমিস্টার/দুটো মাস এই ‘বখে যাওয়া’ বন্ধুদের সাথে থাকবো, তারপর আমি অন্য কোর্স নিব। এখন ওদেরকে রাগানো ঠিক হবে না”। “শুধু এই এক মাস আমি এসব করবো, এই আর এক সপ্তাহ, এই আর একটা বা দুইটা পার্টি, একটা দুইটা ড্রিঙ্কস… এভাবে আপনি নিজেকে বলতে থাকেন আর সামান্য একটু, সামান্য একটু। “এই নয়/দশ মাস পরেই তো রামাদান। রামাদানে সব ছেড়ে দিব। পুরাই চেইঞ্জ হয়ে যাবো। আমার প্ল্যান আছে হজ্জে যাওয়ার, হজ্জ থেকে আসার পর দেখবেন আমি কেমন ভালো মানুষে পরিণত হয়ে যাই“। কিন্তু সে পর্যন্ত … আমার জন্য দোয়া করতে থাকেন। এটাই ‘ওয়া তারাব্বাস্তুম’। আপনি এই মুহূর্ত থেকে নিজেকে পরিবর্তন করতে চান না, আপনি শুধু নিজেকে খারাপ পরিবেশে ফেলে রাখছেন না, আপনি এখনো নিজেকে পরিবর্তনের জন্য কোন পদক্ষেপ নিতেও প্রস্তুন নন। মনে হচ্ছে আপনার কাছ থেকে অনেক বেশী কিছু চাওয়া হচ্ছে। আপনি যেভাবে আছেন সেভাবেই থাকতে চান, আরও কিছু খারাপ উপভোগ করতে চান। এটাই ‘ওয়া তারাব্বাস্তুম’। আপনি ধারণা করে আছেন … আপনার প্রথম ধারণা ছিল – খারাপ পরিবেশে থাকলেও এটা আমার উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না, কিন্তু প্রভাব পড়েই। সময়ের সাথে সাথে ভয়ঙ্কর খারাপ কিছু আপনার কাছে স্বাভাবিক হয়ে যায়। এখন তারাব্বুস বা অপেক্ষা করতে থাকা, দীর্ঘসূত্রতা করার প্রভাব কী? আপনি ভাবছিলেন আপনি যেকোনো সময় এই খারাপ কর্ম...

রোগাক্রান্ত অন্তর

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ “তাদের অন্তঃকরণ ব্যধিগ্রস্ত……” [সূরা আল-বাকারাঃ ১০] এই আয়াতের আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো: আল্লাহ তা’আলা এখানে ‘ফি সুদূরিহিম মারাদুন’ বলেননি, তিনি বলেছেন ‘ফি কুলুবিহীম মারাদুন’। ‘সুদুর’ এবং ‘কুলুব’ এই দুটি শব্দের মধ্যে অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে। আমরা সবাই কম বেশি ‘সূরা নাস’ জানি। যেখানে বলা হয়েছে ”الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ আল্লাজি ইউওয়াস বিসু ফি সুদুরিন নাস — যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের বুকের মধ্যে”। আমরা কিন্তু সেখানে ‘কুলুবিন নাস’ বলি না। যদি ‘কুলুবিন নাস’ বলা হতো তাহলে সূরা নাসের এই আয়াতের অর্থ হতো ‘সে, যে মানুষের (হার্ট) হৃদয়ের মধ্যে কুমন্ত্রণা দেয়।’ কিন্তু ‘সুদূরিন নাস’ বলার কারণে এইখানে অর্থ হয়ে যাচ্ছে ‘সে, যে মানুষের বুকের মধ্যে কুমন্ত্রণা দেয়।’ এখন আমরা যদি খেয়াল করি তাহলে দেখবো যে হার্ট এবং বুক এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বুক হচ্ছে একটা ভল্ট এর মত, একটা সুরুক্ষিত জায়গা। আর হার্ট হচ্ছে এই সুরুক্ষিত জায়গার মধ্যে রাখা মূল্যবান বস্তু। এখন, শয়তানের ক্ষমতা হচ্ছে আপনার বুকের মধ্যে প্রবেশ পর্যন্ত। নিজের ক্ষমতাবলে সে আপনার বুকের ভিতরে ঢুকতে পারে। কিন্তু নিজের ক্ষমতাবলে আপনার হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশের ক্ষমতা তার নেই। ব্যাপারটা পরিষ্কারভাবে বুঝার জন্য আপনার হৃদয়কে তুলনা করুন আপনার ঘর এর সাথে, আর বুক হচ্ছে সেই ঘর এর চারপাশে সীমানা প্রাচীর। শয়তান আপনার সেই সীমানা প্রাচীর এর ভিতরে প্রবেশ করতে পারে কিন্তু যেই পর্যন্ত না আপনি তাকে ঘর এর দরজা খুলে ভিতরে আসতে দিচ্ছেন, ততক্ষণ সে আপনার ঘরের ভিতরে ঢুকতে পারবে না। অর্থাৎ আপনার হৃদয়ের বাইরে শয়তান বসে আছে, এবং আপনার হৃদয়ের বন্ধ দরজায় সে অবিরাম করাঘাত করে যাচ্ছে, বিভিন্ন উপায়ে আপনাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে (লোভনীয় অফার এর কথা বলে) দরজা খোলানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমাদেরকে শয়তানের এই কুমন্ত্রণা অনুভব করে সাবধানে থাকতে হবে...