অস্থির মনকে কী দিয়ে শান্ত করবেন?

— নোমান আলী খান মানুষের ডিফল্ট অবস্থা হলো, আপনাদের কেউ কেউ হয়তো টেকি(প্রযুক্তিতে খুব আগ্রহী। তাই ডিফল্টের অর্থ বুঝবেন), অনেক মানুষের ডিফল্ট অবস্থা হলো, অনেক মানুষের ডিফল্ট অবস্থা হলো তাদের মাথায় সবসময় পাগলাটে কোনো চিন্তা-ভাবনার আনাগোনা চলতে থাকে। কিছু একটা সবসময় তাদের মাথায় থাকে, কখনোই এটা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। আর তারা ভাবতে থাকে— কিভাবে এটা থেকে মুক্তি পাবো? এই চিন্তাটা কখনো কখনো খারাপ আচরণের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়ে পড়ে। খারাপ কাজের মাধ্যমে, উদ্বেগ, হতাশা…মাথা থেকে এটা কখনো যায় না। এখন, থেরাপিস্টরা বলবে, এটা একটা ব্যাধি। ঠিক কিনা? আর কুরআন বলছে- “ইন্নাল ইনসানা খুলিকা হালুউ’আ।” অর্থাৎ, “মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে খুবই অস্থির-মনা করে।” (৭০:১৯) তোমাদেরকে এমন করেই সৃষ্টি করা হয়েছে। এটাই তোমার স্বাভাবিক অবস্থা। আরেকটা কথা বলি— মানুষের শরীরকে মেরু ভালুকের (পৃথিবীর মেরু অঞ্চলে যাদের বাস। তুষারে ঢাকা প্রচণ্ড ঠাণ্ডা আবহাওয়ায় যারা বাস করে।) শরীরের সাথে তুলনা করে দেখি। খুবই চমৎকার একটা উদাহরণ, তাই না? মানুষের শরীরের তুলনায় মেরু ভালুকের শরীর… আমাদের শরীরকে প্রকৃতিগতভাবে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়নি যে, আমরা প্রচন্ড ঠান্ডা আবহাওয়ার মধ্যে জামা-কাপড় ছাড়া বাঁচতে পারব। আমাদের শরীর নকশাগতভাবেই বৈরী প্রকৃতি মোকাবেলা করতে সক্ষম নয়। আর তাই নিজেদের রক্ষা করতে আমরা বিভিন্নরকম পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকি। কারণ, আমাদের চামড়া এবং রক্তের তাপমাত্রা যথেষ্ট নয়। আমরা মারা যাবো। তাই, জামা-কাপড় পরিধান করা শুধু দ্বীনের ব্যাপার নয়, বেঁচে থাকার জন্যেও এর প্রয়োজন। ঠিক একইভাবে, আমাদের মনকেও ইতিবাচকতার দিকে অনুকূল করে তৈরী করা হয়নি। ব্যাপারটা প্রাকৃতিক নয়। তাই, আপনার আমার মন মানসিকতাকে ধ্বংস হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করার জন্যেও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। শেষে গিয়ে আল্লাহ এর প্রতিকার প্রদান করেন। তিনি বলেন— “ইল্লাল মুসল্লিন” মানুষ হালুউ(অস্থির-মনা), খারাপ কিছু ঘটলে তারা হয়ে যায় জাজুউ(অতিমাত্রায় উৎকন্ঠিত), আর ভালো কিছু ঘটলে তারা...

আল্লাহর কাছে যাওয়া পরিশ্রমের কাজ

আল্লাহর কাছাকাছি হওয়াটা একবারেই করে ফেলার কাজ না। এটা একটা প্রক্রিয়া। এটা এমন কিছু যার জন্য প্রত্যহ কাজ করে যেতে হবে। এখন, আপনি ইচ্ছে করলে দৈনিক ভিত্তিতে এই সম্পর্কের উন্নতি ঘটাতে পারেন অথবা ইচ্ছে করলে দৈনিক ভিত্তিতে এ সম্পর্কের ক্ষতি সাধন করতে পারেন। একটি ভালো দিন…আপনি সকালে উঠে মসজিদে গেলেন। কিছু কুরআন তিলাওয়াত করলেন। অন্তর বিগলিত করে অকৃত্রিম কিছু দোয়া করলেন। কিছু খারাপ কাজ আপনার অভ্যাসের অংশ হয়ে গিয়েছে কিন্তু আজ সেগুলো থেকেও দূরে থাকলেন। মানুষকে কষ্ট দিয়ে কোনো কথা বললেন না। কোনোভাবে কারো কোনো ক্ষতি করলেন না। এভাবে যোহর পর্যন্ত পৌঁছে গেলেন। এখন, অনুভব করছেন আপনি আগের চেয়ে আল্লাহর অনেক কাছাকাছি আছেন। অন্তরে এক ধরণের স্বর্গীয় প্রশান্তি অনুভব করছেন। নিজের উদ্বেগ উৎকণ্ঠাগুলো কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। এরপর… কেমন করে যেন মনোবল কমে গেল। ভাবলেন, আমার হাতে কিছুটা ফ্রি সময় আছে। মুভি বা কিছু একটা দেখে একটু বিনোদন করি এবং শুরু করলেন। এখন, আপনি আবার পিছিয়ে যাচ্ছেন। উন্নতি অর্জন করছিলেন কিন্তু এখন আবার নিচের দিকে নামা শুরু করলেন। এমনটা সবসময় ঘটে আসছে। কিছুটা অগ্রগতি অর্জন করেন এরপর আবার পিছিয়ে পড়েন। কিছুটা অগ্রগতি অর্জন করেন এরপর আবার পিছিয়ে পড়েন। আমাদের অধিকাংশের ক্ষেত্রে দেখা যায়, আমরা এমনসব কাজে যুক্ত হয়ে পড়ি যা আমাদেরকে ধীরে ধীরে আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। আর কদাচিৎ আমরা কিছু ভালো কাজ করি যা আমাদের আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে আসে। এখন, আপনি যদি অবিরত নীচের দিকে নামতে থাকেন, আর কালেভদ্রে একটুখানি উপরে উঠেন- আপনি কি তখন নিজের উন্নতি অনুভব করেন? না। তখন উন্নতি অনুভূত হয় না। ফলে, আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করার মধুরতা কখনো ফিল করেন না, তাই আপনি শুধু নিচের দিকেই নামতে থাকেন। এটি সর্পিল অবনতি। ব্যাপারটা ঠিক এমন, আপনি নিয়মিত জাঙ্ক ফুড আহার করেন, শরীরের স্থানে...

সূরাতুন নাসে আল্লাহর তিনটি নামের যৌক্তিক অগ্রগতি

সূরাতুন নাসে আল্লাহর তিনটি নামের যৌক্তিক অগ্রগতি[রাব্বিন নাস, মালিকিন নাস, ইলাহিন নাস] নোমান আলী খান চলুন, প্রথমে নিজেদের অন্যান্য প্রাণীদের থেকে আলাদা করে দেখি। আমার একটি ছাগল থাকতে পারে, কিংবা গরু বা উট। আমি এর প্রয়োজনগুলোর খেয়াল রাখি। এরপর একটা বেড়া তৈরি করে দেই। কখনো বেড়াটি বেশ বড় হয়। এরপর একে বলি— মুখে বলি না— কিন্তু সে জানে যে, যতক্ষণ এই সীমার মধ্যে থাকবো ইচ্ছেমত ঘুরাঘুরি করা যাবে। প্রাণীটি নিজের পুরো জীবন সেই সীমানার মধ্যেই কাটাতে পারে, সমস্যা ছাড়াই। সে খুশি। কোন অসুবিধা নেই। কারণ— এক, সে সুরক্ষিত আর তার খেয়াল রাখা হচ্ছে। দুই, সে আমার দেয়া সীমানা মেনে নিয়েছে।এরকম যখন হয়, তার জীবন সুন্দর। কোন চাহিদা নেই।কিন্তু অন্যদিকে, মানুষ এমন হতে পারে না। আমরা এভাবে কাজ করি না। আমাদের মানসিকতা এমন না। আমাদের মানসিকতা প্রানীদের থেকে একদমই ভিন্ন। আপনি একজন মানুষকে একটি বাড়ি দিলেন অথবা একটি এপার্টমেন্ট। সেই মানুষটিকে আপনি চাকরিও দিলেন যেন সে নিজে খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারে। এটাকি তার জন্য যথেষ্ট? নাকি সে আরও বেশী কিছু চাইবে? সে আরও বেশী কিছু চাইবে। সে আরও ভালো কিছু চাইবে। আমি কিন্তু লোভের কথা বলছি না। বুঝে নিন কি বলছি আমি। আল্লাহ মানুষের মধ্যে এমন কিছু দিয়েছেন যা অন্য কোন প্রাণীকে দেননি— নিজের চাইতে বড় কিছু অর্জন করার আকাঙ্ক্ষা। নিজের চাইতে বড় কিছুতে পৌছানোর আকাঙ্ক্ষা। মানবজাতি… এমনকি নাস্তিক, ইহুদি, খৃষ্টান মুসলিম যে-ই হোক না কেন। যদি আপনার কোন শিক্ষাগত ডিগ্রী না-ও থাকে, যদি কোন ভালো চাকরি নাও থাকে, যদি কোন সম্মানজনক পেশাতেও না থাকেন আপনি, আপনার মাথার মধ্যে কিন্তু এই চিন্তাটা থাকে— যদি কিছু অর্জন করতে পারতাম ! জীবনে যদি আরো বেশী কিছু করতে পারতাম। পৃথিবীতে যদি স্মরণীয় কিছু করে যেতে পারতাম। পৃথিবীর জন্য যদি কোনো অবদান রাখতে পারতাম।...