আল্লাহর রাসূল (সঃ) এর প্রতি ভালোবাসার প্রমাণ

আল্লাহ আপনার অন্তরে ঈমানকে সুন্দর করেছেন। আল্লাহ ঈমানকে আপনার কাছে প্রিয় করেছেন এবং তিনি একে আপনার হৃদয়ে সৌন্দর্যমন্ডিত করেছেন। তবে এটা দ্বারা কী বোঝায়? এটা দ্বারা বোঝায়, রাসূল (সাঃ)-এর জন্য আমাদের যে ভালোবাসা রয়েছে, যা আমরা আমাদের হৃদয়ে বহন করি তা সুন্দর। যখন আপনার হৃদয়ে সুন্দর কিছু থাকে, এক সময় এই সৌন্দর্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটে। ধারক তাই প্রকাশ করে যা এটা ধারণ করে। সুতরাং যখন কারো অন্তরে রাসূল (সাঃ)-এর জন্য ভালোবাসা থাকে তখন তার বহিঃপ্রকাশ কীভাবে ঘটে? একটা ব্যাপার যা ঘটে তা হচ্ছে, যার অন্তরে রাসূলুল্লাহ মুহাম্মদ (সাঃ) আছেন আমার হৃদয়ও তাদের প্রতি কোমল হয়ে যায়। এটার একমাত্র কারণ হচ্ছে, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) কে এতো ভালোবাসি যে, যার আল্লাহর রাসূল (সঃ) এর প্রতি ভালোবাসা রয়েছে, তার জন্য আমারও ভালোবাসা রয়েছে। এটাই মূলত রাসূল (সাঃ)-এর প্রতি আমার ভালবাসার প্রমাণ। তাই যখন একজন মুসলিম অন্য একজন মুসলিমকে নিয়ে ঠাট্টা করার সময় দ্বিতীয়বার চিন্তা করে না, তখন বুঝতে হবে আল্লাহর রাসূল (সঃ) এর প্রতি ভালোবাসায় তার কিছু একটা ঘাটতি রয়েছে। সর্বোপরি রাসূলুল্লাহ (সঃ) সকলকে একইভাবে ভালবাসতেন। আপনাদের এ ব্যাপারটি সহজে বোঝাবার জন্য একটি ভিন্ন উদাহরণ দেওয়া যাক। অনেকেই এমন আছেন যাদের পিতামাতা মারা গেছেন এবং যখন বাবা-মা মারা যান, এটা একটা কষ্টকর ব্যাপার। আপনি তার সঙ্গ চান, আপনি আপনার পিতার অভাব বোধ করেন, তাকে স্মরণ করতে চান, আপনি জানেন কী করতে হবে? আপনি তার কিছু বন্ধুকে দেখতে যান। আপনার পিতার স্মরণে তার বন্ধুদের দেখতে যাওয়া, তাদেরকে সম্মান দেখানো…এ কাজগুলোই এখন আপনার নিকট একান্ত প্রিয় কাজ। আমার বাবা এই লোকগুলোকে ভালবাসতেন, তাই আমি তাদের ভালোবাসি। এই লোকগুলোর সঙ্গ আমাকে এমন ব্যক্তির কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যাকে আমি ভালোবাসি কিন্তু যাকে আমি এখন আর দেখতে পাই না। আপনার এবং আমার মধ্যেকার পারস্পারিক সম্পর্কটাও ঠিক এমনই।...

হযরত হুসাইন ইবনে আলী (রা) এর তোতলামি

মহানবী (সঃ) …খুবই স্পর্শকাতর ঘটনা। তাঁর নাতি, আলী এবং ফাতিমা (রা) এর সন্তান ছিলেন হুসাইন (রা)। দুই ভাইয়ের মাঝে তিনি ছিলেন ছোটজন, হাসান এবং হুসাইন, আল্লাহ তাঁদের উভয়ের উপর সন্তুষ্ট হোন। ছোট ভাই তোতলাতেন। তাঁর এত বেশি তোতলামি ছিল যে তিনি একটি বাক্যও শেষ করতে পারতেন না। একটি বাক্য শেষ করতে তাঁর অনেক সময় লাগতো। তাঁর উপর একজন ছোট শিশু হিসেবে … একে তো একটা শিশুর বেড়ে উঠার ক্ষেত্রে এটা খুবই কষ্টদায়ক এবং বেদনাদায়ক ছিল, তার উপর তাঁর বড় ভাই হাসান (রা) ছিলেন অসাধারণ বাগ্মী, সুভাষী এবং আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ গুণের অধিকারী বক্তা। তো, চিন্তা করুন ছোট ভাই কেমন চাপ অনুভব করতেন যিনি এতো বেশি তোতলাতেন! যাইহোক তিনি অনেক বেশি তোতলাতেন। আমরা জানি, বাচ্চারা যখন একটু বড় হতে শুরু করে, ৪ বা ৫ বছর বয়সের সময় তারা যখন কিছুটা সাহস অর্জন করে এবং সে সময় তারা অনেক কথা বলতে পছন্দ করে। একদিন মহানবী (স) কিছু সাহাবীর সাথে বসে ছিলেন, আর তাঁর দুই নাতিও তাঁর সাথে বসে আছেন। তখন ছোটজন যে তোতলাতো সে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিল। কারণ তারা তাঁদের নানাকে ভালোবাসতো। তারা তাঁর সাথে অনেক কথা বলতো। তো, সে কিছু বলার চেষ্টা করছিল… আর রাসূলুল্লাহ (স) সবাইকে এতো বেশি সম্মান করতেন যে কেউ যদি কিছু বলা শুরু করতো তিনি চুপ করে থাকতেন, তিনি সেই ব্যক্তির দিকে শুধু তাঁর চেহারাই ফেরাতেন না, তিনি তাঁর বক্ষ সমেত তার দিকে ফিরতেন, এবং বক্তার কথা বলার সময় বক্তার দিকে তাকিয়ে থাকতেন। আচ্ছা তারপর, হুসাইন (রা) কথা বলা শুরু করলেন, আর রাসূলুল্লাহ (স) থেমে গেলেন এবং তার দিকে ফিরলেন। ফলে সেখানকার অন্য সবাইও তার কথা শুনতে লাগলেন। কিন্তু শিশুটি এতো বেশি তোতলানো শুরু করলেন যে পরিস্থিতি কিছুটা বেমানান হয়ে উঠলো। তাই কিছু মানুষ...

সত্য প্রত্যাখ্যানের কৌশল

সত্য-মিথ্যার চিরকালীন দ্বন্দ্বে মিথ্যাবাদীরা কৌশল খাটিয়ে কিছুদিনের জন্য টিকতে পারে – তা নিয়ে এক খুৎবাতে উস্তাদ নুমান আলী খান কুর’আন হাদীস থেকে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তাদের ৫টি কৌশলের। মিথ্যাবাদীদের কৌশলগুলো বলার আগে দেখি আল্লাহ সুবহানাল্লাহি ও তাআলা সত্যকে কীভাবে চিত্রায়িত করেছেন কুরআনে। সত্য সবসময় আগ্রাসী আর মিথ্যাকে সামনে পেলেই চুরমার করে ফেলে: “আমরা সত্যের দ্বারা মিথ্যার উপর আঘাত হানি, ফলে তার মগজ চুরমার হয়ে যায়, তখন দেখো! তা অন্তর্হিত হয়। আর ধিক তোমাদের প্রতি! তোমরা যা আরোপ কর সেজন্য।“ [সূরা আম্বিয়া: ১৭] সত্যের নিজের কোন অস্ত্র লাগেনা। মিথ্যাকে মারার জন্য সত্য নিজেই এক অস্ত্র। কোন বিষয়ের সত্য মিথ্যা একসাথে রাখলে সত্য একদম নিঃশেষ করে দেয় মিথ্যা কে। সত্য খুবই আগ্রাসী এ ব্যাপারে। সত্যের আগমনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত তারাই হয় যারা এতদিন মিথ্যা কিছু তথ্য আর বিশ্বাসের উপর ভর করে বিশাল বিশাল ইমারত তৈরি করে নিয়েছে আর প্রজন্মের পর প্রজন্ম অন্ধভাবে তা মেনে চলছে। এইসব অহংকারী মিথ্যাবাদীরা কিভাবে সত্যকে নিশ্চিতভাবে জানার পরও প্রথম যে কৌশল এর আশ্রয় নেয় তা হল By Force বা পেশী শক্তি আর ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে। যেমন: ছোট একটা ছেলে তার এক বড় ভাইকে বিরবির করে বলল: ২+২=৪ বড়ভাই বলে উঠল ভারী গলায় “না, ২+২ =৫” “কিন্তুদেখুন ২ হচ্ছে ১ যোগ ১ আর…” “থাম, আমি বলছি ৫ , তাই ৫ এখন অফ যাও” ইব্রাহীম (আঃ) যখন তার গোত্রদের বললেন তোমরা ভুল ইলাহদের প্রার্থনা করছো আর জবাবে ওরা বলল: তাই না? ওকে জীবন্ত পুড়াও। শুধু জোর খাটিয়ে পেশী শক্তি আর হুংকার দিয়ে সত্যকে দূরে ঠেলে দেয়। দ্বিতীয় কৌশল হল চরিত্র হনন। আগের উদাহরণে আসি। – “জান ভাইয়া ২+২=৪” – “তাই না? তুমি তো বাইট্টা, ঠিকমত হাটতেও পারোনা আর আমারে আইসো শিখাইতে, না?” মুসা (আঃ) যখন সত্যের দাওয়াত নিয়ে আসলেন তখন...

আপনি কি সত্যিই কুর’আনকে ভালোবাসেন

কিয়ামতের দিন স্বয়ং নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহকে সরাসরি বলবেন, وَقَالَ الرَّسُولُ يَا رَبِّ إِنَّ قَوْمِي اتَّخَذُوا هَٰذَا الْقُرْآنَ مَهْجُورًا (রাসূল (সাঃ) বলবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! আমার জাতির লোকেরা এ কুরআনকে পরিত্যক্ত গণ্য করেছিল।’) এই আমার জাতি, নিঃসন্দেহে তারা এই কোরআনকে –এমনকি ‘হাজা’ শব্দটির ব‍্যবহারেও সৌন্দর্য‍্য লক্ষ‍্য করা যায়, যেটা ‘‘জালিকা’’ শব্দটির বিপরীত। (হাজা অর্থ এই, আর জালিকা অর্থ ঐ)। যেমনটি আপনি কোরআনের শুরুতে পড়ে থাকেন, (জালিকাল কিতাবু লা রাইবা ফিইহি)। এখানে আল্লাহ বলেন নি ‘‘জালিকাল কোরআন’’ আল্লাহ বলেন, ‘‘হাজাল কোরআন’’– এই কোরআনটা এখানেই ছিল, তোমার সামনেই ছিল, তবুও তুমি তার প্রতি মনযোগ প্রদর্শন কর নি। এবং নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কেয়ামতের দিন অভিযোগ করে বলেন, আমার এই জাতি ‘‘এই’’ কোরআনকে, ‘‘ঐ’’ কোরআনকে নয়, এই কোরআনকে…। এই আয়াতে ‘‘হাজা’’ শব্দটির একটি অন‍্যতম পারিভাষিক বৈশিষ্ট‍্য হচ্ছে এরকম যে, যেন শেষ বিচারের দিন কোরআনকে সাক্ষী হিসেবে আনা হবে। জানেন, আদালতে কিভাবে সাক্ষীদের হাজির করা হয়, তারপর সাক্ষী বা প্রামাণিক বস্তুকে সামনে রাখা হয় এবং প্রমানটিকে চিহ্নিত করে বলা হয় এই হচ্ছে তার প্রমান যে, ওই লোকটি আসামী। তাই শেষ বিচারের দিন স্বয়ং কোরআনই হবে প্রমান স্বরূপ। আপনার মামলার অবস্থা এমনিতেই যথেষ্ট খারাপ ছিল এবং তার উপর কোরআনকে আনা হল সাক্ষী হিসাবে এবং সে সাক্ষী আনার ব‍্যাপারে উকিল হচ্ছেন রাসুলুল্লাহ (সাঃ)। এবং তিনি কোরআনকে চিহ্নিত করছেন এবং বলছেন এই লোকগুলো…আমার এই জাতিগুলো তারা এই কোরআনকে নিয়েছে ‘‘মাহজুরা’’ হিসাবে। আরবীতে মাহজুরা বলতে বুঝায়, আপনি কোনকিছু পুরোপুরি ভুলে গেছেন, আপনি কোনকিছুকে সম্পুর্ণরূপে অবহেলা করেছেন, আপনি তা অনেক পিছনে ফেলে রেখে এসেছেন। এখানে উর্দুভাষীরা হয়ত ‘‘হিজরা’’ শব্দটি চেনেন। সবাই চেনেন ‘‘হিজরা’’ শব্দটি কোনকিছুকে স্থানান্তর করা। আয়াতটি এমনকি ‘‘মাতরুকান’’ও বলে নি, ‘‘মাতরুকান’’ মানে পেছনে ফেলে রেখে আসা। আর ‘‘মাহজুরা’’ মানে বহুদূর পর্যন্ত...

নাস্তিক হবার ৩টি কারণ

অনেক মুসলিমের মাঝে একটি আচরণ আমি খেয়াল করেছি, সেই মনোভাবটি সর্বপ্রথম আমি নিজের মাঝেই খুজে পেয়েছিলাম। তাই আমি জানি এমনটা হয়। কারণ এটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা—যে কুরআন বর্তমান সময়ের সাথে সম্পৃক্ত নয়। কুরআন আমার জীবনের ব্যপারে কিছু বলছে না। এটা এমন কিছু নিয়ে বলছে যা অনেক আগেই ঘটে গেছে। আমি যাদেরকে চিনি যারা কুরআন নিয়ে কথা বলে, তাদেরকে দেখলে মনে হয় তারা ৫০০ বছর আগেই পড়ে আছে। তারা আধুনিক মানুষের মত নয়। তারা যখন কথা বলে, এমনভাবে কথা বলে যেভাবে আর কেউই কথা বলে না। আমার বন্ধুরা, সহকর্মীরা, শিক্ষকরা কেউই এইভাবে কথা বলেনা। আপনি একজন খাতিবের বন্ধু হতে পারেন। তারা এমনভাবে কথা বলে যেন তারা ভিন্ন কোন যুগের মানুষ যাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। ধর্মীয় আলোচনার পর আমার প্রথম মনোভাব ছিল যে এটি এই সময়ের জন্য নয়। এটি একটি পুরাতন কিছু, প্রাচীন কিছু মানুষের জন্য। এই ধর্ম পালন করে এই যুগে বেচে থাকা সম্ভব নয়। অসম্ভব। আর আমি যত লেকচার শুনেছি সব সময়ই তারা এই কথাই বলত যে এখনকার সময়টা কতটা খারাপ। এখন বেশ খারাপ সময়, আগে কতই না ভালো সময় ছিল। তো আমি নিজেকে বলতাম যে কিন্তু ঐ সময় তো চলে গেছে। আর এখন খারাপ সময় চলছে। তো কি আর করার? এটি প্রথম সমস্যা। দ্বিতীয় যে সমস্যা আমি দেখেছি। আবারও, আগে নিজের মাঝেই দেখেছি এরপর আরও লাখ লাখ মানুষের মাঝে যে এই ধর্ম, এই বইটি খুবই কঠোর। আর কঠিন। যেই নিয়ম কানুন আছে তা পালন করা সহজ নয়। এই নিয়ম নীতি গুল কিছু জিনিস থেকে দূরে থাকতে বলে, কিছু করতে বলে। কিন্তু এগুলোর সংখ্যা অতি মাত্রায় বেশি, বেশ কঠিন এবং প্রাসঙ্গিক নয়। পালন করা সম্ভব নয়। আর যদি পালন করতেই হয়, তবে আমাকে চরমপন্থি হতে হবে। সাধারন-সুখী কেউ...