জিব্রাইল আঃ এর গল্প (১ম পর্ব)

আপনি কীভাবে জিব্রাইল আঃ এর নাম বলেন, কীভাবে উচ্চারণ করেন তার নাম? জিব্রীল, জিব্রাই–ল, জিব্রাইল, জিব্রাই’ল, জিব্রিইল এই পাঁচ ভাবে তার নাম উচ্চারণ করা হয়। আর এটা বিভিন্ন কিরাতের মাধ্যমে বর্ণনা করা হয়েছে। এখানে বার বার কি শোনা যাচ্ছে? ই-ল। ই-ল মানে আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা। এ নিয়ে কোন মতপার্থক্য নেই। জিবরা মানে বান্দাহ, দাস। তাহলে জিব্রাইল অর্থ- আল্লাহর দাস। সুতরাং এটা হলো তার নাম এবং নামের অর্থ। রাসূল সঃ এবং আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা কিভাবে তাঁকে সম্বোধন করতেন? এটা আসলেই একটা মজার বিষয়। যখন আমি এই বিষয়ে গবেষণা করা শুরু করলাম, প্রথম দিন এটা দেখে খুব অবাক হলাম যে- কারণ আমি বুখারি শরীফ থেকে শুরু করেছিলাম। আমি বুখারি শরীফ থেকে জিব্রাইল আঃ সম্পর্কে বর্ণিত সকল হাদিস সংগ্রহ করলাম। প্রথম যে হাদিসে জিব্রাইল আঃ এর নাম উল্লেখ আছে, রাসুল সঃ বলেন, জিব্রিল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। আমরা সাধারণত জিব্রিলকে আলাইহিস সালাম হিসেবে সম্বোধন করি। যার অর্থ তাঁর উপর শান্তি বর্ষিত হউক। কিন্তু রাসুল সঃ তাঁর উপর সালাওয়াত ও পেশ করলেন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলে। রাসুল সঃ এটা করলেন জিব্রাইল আ এর উচ্চ মর্যাদার কারণে। আরেকটা ব্যাপার, রাসুল সঃ প্রায়ই তাঁর নাম বলে তাঁকে সম্বোধন করতেন না। জানেন, কিভাবে করতেন? তিনি বলতেন, যিনি আমার রবের নিকটে থাকেন। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বিভিন্ন উপায়ে তাঁকে সম্বোধন করতেন। সব গুলো আমার পক্ষে বর্ণনা করা সম্ভব নয়। এটা আরেকটা বিশাল অধ্যয়নের ব্যাপার। ইনশাআল্লাহ ভবিষ্যতে এ বিষয়ে আলোচনা করা যাবে। তবে সবচেয়ে কমন যে বিষয়টি আপনি পাবেন তা হলো ‘রুহ’ শব্দটি, আত্মা, স্পিরিট। আল্লাহ তাঁকে বলেন আর রুহুল কুদুস(পবিত্র আত্মা), আর রুহুল আমিন(বিশ্বাসী আত্মা), রুহানা(আমাদের আত্মা), আল্লাহ তাঁকে আরও ডাকেন ‘রাসুলুন কারীম (সম্মানিত বার্তাবাহক) বলে। সর্বশেষ আর একটি নাম বলেই আমরা অগ্রসর...

জিব্রাইল আঃ এর গল্প (২য় পর্ব)

পরিশেষে, ইমরানের পরিবারের সাথে। কোন কোন সময় জিব্রিল (আঃ) কে নবীর সাথে উল্লেখ না করে নবীর পরিবারের সাথে উল্লেখ করা হয়। তো, আমরা মারিয়াম (আঃ) এর ঘটনা জানি। মারিয়াম (আঃ) মসজিদের বাইরে পূর্বে দিকের কোন এক স্থানে যেতেনمَكَانًا شَرْقِيًّا । তিনি মাসে একবার মসজিদের বাইরে পূর্ব দিকের কোন এক জায়গায় যেতেন। অনেক আলেমের মতে, সেটা ছিল সূর্যোদয় দেখার উদ্দেশ্যে। তিনি সেখানে গিয়ে সূর্যোদয় দেখতেন আর আল্লাহর জিকর করতেন। তিনি সেখানে মাটিতে দুটি লাঠি গেঁড়ে পর্দা টাঙিয়ে দিতেন, যেন এই খোলা জায়গায় মানুষ বুঝতে পারে এটা তাঁর বসার জায়গা। কেউ যেন এটার নিকটে না আসে। তিনি অল্প বয়স্ক মেয়ে ছিলেন, ১৪- ১৮ বছর বয়সের। মোটকথা তিনি একজন টিনেজার ছিলেন। আর তিনি একা আল্লাহর উপাসনা করছেন, আল্লাহকে একা একা স্মরণ করছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, فَأَرْسَلْنَا إِلَيْهَا رُوحَنَا আমরা তাঁর কাছে আমাদের রুহকে (জিবরাইল আঃ ) পাঠালাম। فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا জিব্রিল (আঃ) তাঁর নিকট একজন সুন্দর পুরুষের আকৃতিতে আবির্ভূত হলেন। জিব্রিল (আঃ) মুখ খুলে কিছু বলার আগেই মারিয়াম (আঃ) তাকে দেখে বললেন, أَعُوذُ بِالرَّحْمَٰنِ مِنكَ إِن كُنتَ تَقِيًّا ”আমি পরম করুণাময়ের কাছে তোমার থেকে আশ্রয় চাচ্ছি, যদি তোমার অন্তরে আল্লাহর কোন ভয় থেকে থাকে।” মানে – যদি তোমার নূন্যতম কোন শালীনতা থেকে থাকে ভাগ এখান থেকে। কোন কথা বলতে যেও না। মনে কর যে এটা কখনো ঘটে নি। যাও, আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। তাই প্রিয় বোনেরা, যদি কোন ভাই আপনার নিকট এগিয়ে আসে, তাদের সাথে এভাবে আচরণ করার চেষ্টা করে দেখুন(আরবিতে এই কথাটা বলেন)। দেখুন, কি ঘটে। যদি তিনি আরবি নাও বুঝেন তিনি ভাববেন, না এই আপুর থেকে দূরে থাকাই উত্তম। আমরা এই গল্পে যদি আবার ফেরত যাই, তাহলে দেখবো যে মারিয়াম (আঃ) জিবরাইল (আঃ) এর সাথে পরে কথা বলেছিলেন।...

জিব্রাইল (আঃ) এর গল্প (৩য় পর্ব)

আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সঃ) এর সাথী ফেরেশতাদের মাঝে যিনি রাসূল (সঃ) এর সবচেয়ে নিকটবর্তী ছিলেন, যিনি রাসূল (সঃ) কে সহযোগিতা করেছেন, তাঁর প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করেছেন তিনি ছিলেন জিব্রিল আঃ। অন্য একটি বর্ণনায় রাসূল (সঃ) আরও বলেছেন, …… প্রত্যেক নবীকেই আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা দুনিয়া থেকে দুইজন এবং আকাশ থেকে দুইজন মন্ত্রী দান করেছেন। আমাকে দেয়া আকাশের দুইজন মন্ত্রী হলেন – জিব্রিল এবং মিকাল। আর দুনিয়া থেকে প্রদত্ত দুইজন হলেন- আবু বকর এবং ওমর (রা)। জিব্রিল আ এবং রাসূল সঃ এর প্রথম সাক্ষাৎকারটি কেমন ছিল? আনাস ইবনে মালিক (রা) বর্ণনা করেন, রাসূল (সঃ) এর ছেলেবেলায় তিনি অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলছিলেন, দৌড়াদৌড়ি করছিলেন – ঠিক সকল বাচ্চার মত। হঠাৎ করে এক ব্যক্তির আবির্ভাব হলো। তিনি রাসূল (সঃ) কে ধরে মাটিতে শুইয়ে দিলেন। এটা দেখে অন্য বাচ্চারা তাদের পিতা-মাতার কাছে দৌড়ে চলে গেল আর বলতে লাগলো – মুহাম্মাদ (সঃ) কে হত্যা করা হয়েছে। অন্য বাচ্চারা যখন দৌড়ে পালাতে লাগলো, তখন রাসূল (সঃ) দেখছিলেন যে এই লোকটি তাঁকে কি করতে যাচ্ছে। আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেন, তিনি আমার বুক কেটে ফেললেন, তিনি আমার বুক খুলে ফেললেন। তিনি রাসূল (সঃ) এর হার্ট ধরলেন এবং তা থেকে কিছু একটা বের করে নিলেন আর বললেন- এটা হলো তোমার অন্তরের শয়তানের অংশ। তারপর তিনি এটাকে ফেলে দিলেন। তারপর তিনি সোনালি বর্ণের একটি পাত্রে রাখা জমজমের পানিতে আমার হার্ট ধুয়ে ফেললেন। আর এই বাচ্চাবস্থায় রাসূল (সঃ) সবকিছু অবলোকন করছেন। এরপর রাসূল (সঃ) এর হার্টকে আবার যথাস্থানে রেখে দেয়া হলো। অন্য বাচ্চারা ফিরে এসে দেখল যে রাসূল (সঃ) এর বুক সেলাই করে দেয়া হয়েছে। আর তাঁর মুখমণ্ডল নীল বর্ণ ধারণ করলো। রাসূল (সঃ) এর হার্ট বের করে পবিত্র করা হলো। সে সময় তিনি এই ঘটনার কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পেলেন...

জিব্রাইল (আঃ) এর গল্প (৪র্থ পর্ব)

খাদিজা (রা) বললেন – চলুন, ওয়ারাকার কাছে যাই। তো, তাঁরা তার নিকট গেলেন। রাসূল (সঃ) যা দেখলেন তা ওয়ারাকার নিকট বর্ণনা করলেন। ওয়ারাকা সাথে সাথে বলে উঠলেন – ”ইনি নামুস! (আপনিই সেই রাসূল যার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।) এই ফেরেশতাই (নামুস বা জিব্রিল) মূসার (আঃ) কাছে এসেছিলেন। ইস! আমি যদি যুবক হতাম! তাহলে আপনাকে সাহায্য করতে পারতাম! যখন আপনার সম্প্রদায় আপনার বিরোধিতা করবে।” এরপর কি ঘটেছিল? আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন – এরপর বহুদিন যাবত ওহী অবতীর্ণ হওয়া বন্ধ থাকে। রাসূল (সঃ) অপেক্ষা করতে লাগলেন যেন সেই ফেরেশতা আবার দেখা দেন। রাসূল (সঃ) আবার ওইসব পাহাড়ে ঘুরতে লাগলেন। রাসূল (সঃ) নিজের ভাষায় তা এভাবে বর্ণনা করেন যে, ”(তাঁর মানসিক অবস্থা এমন ছিল যে) তিনি যেন চাইতেন নিজেকে পাহাড় থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে!” তিনি স্পষ্টরূপে জানতে চান কি ঘটছে! প্রতিবার রাসূল (সঃ) পাহাড়ে গেলে জিব্রিল (আঃ) এর কণ্ঠ শুনতে পেতেন। ”ও মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল।” এতে রাসূল (সঃ) কিছুটা সান্ত্বনা পেতেন এবং ঘরে ফিরে আসতেন। এরপর পরবর্তীতে তিনি শুধু যে ”ও মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল।” এ কথা বলতেন তা নয়, তিনি আরও বলতেন – ”আর আমি জিব্রিল”। তো, তিনি রাসূল (সঃ) এর নিকট বিষয়টা পরিষ্কার করলেন যে তিনি জিব্রিল (আঃ)। কিন্তু তবু কোন কুরআন বা ওহী অবতীর্ণ হয়নি। অবশেষে, অন্য একদিন রাসূল (সঃ) হাঁটছিলেন – আর এবার ‘ইয়া মুহাম্মাদ ইন্নাকা রাসূলুল্লাহি হাক্কা’- ”ও মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল” এ বাক্য নয়। বুখারি শরীফে জাবির (রা) থেকে বর্ণিত আছে- রাসূল (সঃ) হাঁটছিলেন তারপর হঠাৎ উপরের দিকে তাকিয়ে দেখলেন – জিব্রিল আলাইহিস সালাম তাঁর পরিপূর্ণ ফেরেশতার আকৃতি ধারণ করে সম্পূর্ণ আকাশ ঢেকে আছেন, সম্পূর্ণ দিগন্তকে ঢেকে আছেন। আল্লাহ জিব্রিল (আঃ) সম্পর্কে বলেছেন – ذُو مِرَّةٍ فَاسْتَوَىٰ প্রজ্ঞার অধিকারী, সে নিজ আকৃতিতে...

জিব্রাইল (আঃ) এর গল্প (৬ষ্ঠ পর্ব – সমাপ্ত)

জিব্রাইল আলাইহিস সালামের মৃত্যু। সুবহানাল্লাহ, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত্যুবরণ করেছেন এবং প্রত্যেকেই মৃত্যুবরণ করবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এমনকি জিব্রীল-ও মৃত্যুবরণ করবে। চিন্তা করতে পারেন, জিব্রীল (আলাইহিস সালাম)- ও মারা যাবেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সিংগায় ফুতকার দেওয়ার পর আল্লাহ যাদের চান তারা ছাড়া আর কেউ স্থির থাকতে পারবে না (অন্য সবাই মৃত্যুবরণ করবে)। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা তাদেরকে তাঁর সম্মুখে নিয়ে আসবেন, তারা হলেনঃ জিব্রীল, ইস্রাফিল, মিকাল ও মৃত্যুর ফেরেশতা … যারা আল্লাহর আদেশ সমূহের বাস্তবায়ন করে থাকেন। আল্লাহ মৃত্যুর ফেরেশতাকে জিজ্ঞেস করবেন, আর কারা কারা বাকী আছে? মৃত্যুর ফেরেশতা বলবেন, ওহ আল্লাহ, আপনার সম্মানিত পবিত্র চেহারা (পূর্ণ সত্ত্বা), আপনার বান্দা আমি, আপনার বান্দা জিব্রীল, আপনার বান্দা মিকাল, আপনার বান্দা ইস্রাফিল। আল্লাহ বলবেন, মিকালের আত্মা নিয়ে নাও। তখন মিকালের আত্মা নিয়ে নেওয়া হবে। তখন আল্লাহ পূনরায় বলবেন, আর কে কে বাকী আছে? তিনি বলবেন, ওহ আল্লাহ, আপনি, আমি, জিব্রীল এবং ইস্রাফিল। আল্লাহ বলবেন, ইস্রাফিলের আত্মা নিয়ে নাও। ইস্রাফিলের আত্মা তাঁর থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। আল্লাহ আবারও বলবেন, আর কারা বাকী আছে? তিনি বলবেন, ওয়াজহুকাল বাকিল কারিম – ওহ আল্লাহ, আপনার পবিত্র চেহারা, আপনার এই বান্দা এবং আপনার বান্দা জিব্রীল। আমরা দুই বান্দা সবশেষে বাকী রয়েছি। আল্লাহ বলবেন, জিব্রীলের আত্মা নিয়ে নাও। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জিব্রীল তাঁর চেহারা নিয়ে পতিত হবেন এমন অবস্থায় যে তাঁর ডানাগুলো বিস্তৃত অবস্থায় থাকবে আর সেগুলো আল্লাহর প্রশংসা করতে থাকবে। তিনি তাসবিহ (আল্লাহর প্রশংসা)-রত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবেন। তাঁর চেহারা নিম্নে পতিত হবে এমতাবস্থায় তিনি আল্লাহর প্রশংসারত থাকবেন। এরপর আল্লাহ বলবেন, আর কে বাকী আছে? তখন মৃত্যুর ফেরেশতা বলবেন, ইয়া আল্লাহ, কেবল আপনি আর আমিই বাকী আছি। আল্লাহ মৃত্যুর ফেরেশতাকে আদেশ করবেন মৃত্যুবরণ করার জন্য। আর...