আপনি যদি কখনো হতাশায় ভোগেন, আপনি বুঝতে পারছেন যে আপনার অন্তর আসলেই কঠিন হয়ে গেছে – আর আপনি নিজেই এই সমস্যাটা আপনার মধ্যে বাড়তে দিয়েছেন। কখনো কখনো ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের উপস্থিতি খুবই ভীতিকর মনে হয়। তাদের সাথে কথা বলা কঠিন, তাদের আশে পাশে যাওয়া আতংকজনক কারণ তারা হয়ত আমাকে অপমান করতে পারেন। আপনি তাদের ভয়ে ভীত থাকেন। অনেক সময় যেসব বোন্ হিজাব পরেন না তারা হিজাব পরা একজনকে আসতে দেখলে রাস্তা ক্রস করে অন্য দিকে চলে যান। তারা মনে করেন – ঐ যে হিজাব পুলিশ আসছে!! সে নিশ্চয়ই আমাকে কিছু বলবে, আমার মন খারাপ করে দিবে। এখন- একদিকে এটা একটা অমূলক ভয়ের কারণ, অন্যদিকে কখনো কখনো এটা সত্য যে, কিছু মানুষ রয়েছে যারা অন্যদের নিচু চোখে দেখে, তারা অন্যদের প্রতি উদ্ধত। আমাকে বলেন – “কয়েকদিন আগে না আপনি পার্টি মাতিয়ে রাখতেন! যারা আপনার সাথে এভাবে কথা বলতো তাদেরকে আপনি কিভাবে জবাব দিতেন? আপনি কি ভুলে গেছেন যে, আপনি কোথা থেকে এসেছেন? আল্লাহ আপনাকে কোথায় এনেছেন।” কারণ মানুষ ভুলে যায়, মানুষ ভুলে যায় যে তারা কি ছিল আর আল্লাহ তাদের কোথায় এনেছেন। তারপর কয়েক বছর অতিক্রান্ত হওযার পর, যখন তারা এমন কাউকে দেখে যে পার্টি এনিম্যাল – তারা তখন বলে উঠে , আস্তাগফিরুল্লাহ, সে এমন হলো কিভাবে? আপনি কোথায় ছিলেন? এই লোককে দেখেতো আপনার নিজের কথা মনে হওয়া উচিত। আপনিতো ঠিক তার মতই ছিলেন। আল্লাহর যে রহমত আপনার উপর বর্ষিত হয়েছে তা আপনার স্মরণ করা উচিত। وَكُنتُمْ عَلَىٰ شَفَا حُفْرَةٍ مِّنَ النَّارِ আপনি অগ্নিকুন্ডের একেবারে প্রান্তসীমায় ছিলেন। فَأَنقَذَكُم مِّنْهَا তিনিই আপনাকে রক্ষা করেছেন। আর সেই আয়াতেই আল্লাহ বলেছেন, فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ তিনি তোমাদের অন্তরে ভালবাসা সৃষ্টি করেছেন। (৩:১০৩) আপনারা আপনাদের অন্তরসমূহের মাঝে যদি ভালবাসা পেতে চান, তাহলে আপনাকে মনে রাখতে হবে...
মূর্খের মত মানুষকে দ্বীনের দাওয়াত দেয়ার একটা উদাহরণ হচ্ছে,যখন আমরা ইসলামের বিভিন্ন দল নিয়ে কথা বলি। আমরা বলি এই দল বনাম সেই দল, এই শায়খ বনাম ওই শায়খ, এই মাজহাব বনাম সেই মাজহাব। তুমি এইটা বলছ অথচ অমুক শায়খ এর বিপরীত বলেছে, তুমি কি ঝগড়া করতে চাও? আর এরপর, এমনও মানুষ আছে, যারা মনে করে তারা ইসলাম নিয়েই কথা বলে, কিন্তু আসলে তারা শুধু অমুক কী কী ভুল করেছে সেটা নিয়েই কথা বলে। তারা নিজেদের youtube চ্যানেল, ফেসবুক পেজ, ব্লগ সবকিছুতে এরা। আসলেই অনেক কষ্ট, সময় দিয়ে করে মানুষের ভুল ধরে যায়। এদের কি আর কোনো কাজ নাই?? যাই হোক, এরা এসবই করে। তারা বলে অমুক ভিডিওর ৮৭ মিনিটে …। ভাই, তুমি ৮৭ মিনিট ধরে ভিডিওটা শুনেছ শুধু উনি কী ভুল করে এটা বের করার জন্যে?? অবিশ্বাস্য!! এদের মনোযোগের মাত্রা দেখে আমি সত্যিই অভিভূত! এই ভাই এটা বলেছে, আস্তাগফিরুল্লাহ! এই ভাই এই সমাজের জন্যে ফিতনা। উনি আসলে মানুষকে জাহান্নামের দিকে ডেকে চলেছেন এবং উম্মাহ কে উনার থেকে বাঁচানোর জন্যে এই আমার ব্লগ কি…? এইসব কথা পরিচিত মনে হয়? এদের থেকে কি মানুষ উপকার পাবে? আমি কারো নাম নিতে চাইনা এদেরকে আমি পাত্তা দেইনা, আমার সম্পর্কে বললেও না। আমি সত্যিই এদেরকে গণনায় ধরি না। আমি মাঝে মাঝে ইউটিউবে এদের কমেন্ট পড়ি, শুধুমাত্র বিনোদনের জন্যে। কিন্তু ইনি, ইনার এই ভুল আছে .. অথবা লোকে বলে উনি অমুক বিপথগামী দলের লোক, লোকে বলে উনি ভালো শায়খ নন।এই সব কথাবার্তা শুনেছেন না? .. আহ ..এইসব ‘লোকে বলা’ জিনিস গুলা কোথায় থেকে পায় এরা? এটা নবী (সা:) সুন্নাহ নয়, তবে এখন ‘মুসলিমদের সমাজের’ একটা সুন্নাহ চালু হয়েছে। যখনি কেউ মানুষের উপকারের জন্যে কাজ করবে আপনাকে তার ভুল বের করতেই হবে। এবং আমি গ্যারান্টির সাথে...
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম আমি সত্যিই সম্মানিত বোধ করছি এবং কিছুটা আশ্চর্যও হয়েছি আপনারা এতক্ষণ অপেক্ষা করেছেন দেখে আলহামদুলিল্লাহ্। আমার কণ্ঠস্বর কিছুটা ক্লান্ত মনে হতে পারে কারণ আমি আসলেই তাই … আট ঘন্টার টানা লেকচার ছিল কিন্তু আমি ইনশাল্লাহ খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় নিয়ে খুব সংক্ষিপ্ত কিছু কথা শেয়ার করব। এটা এমন একটা বিষয় যা এখন আর তেমন আলোচনায় আসে না কিন্তু এর প্রতি আমাদের মনোযোগ দেয়া প্রয়োজন। কোন সন্দেহ নেই যে এই বিষয়ের প্রতি আমাদের নজর দেয়া দরকার ইনশাল্লাহ। আমি আপনাদের সাথে কথা বলতে চাচ্ছি মুসলিম তরুণদের নিয়ে যারা কোন ধর্মীয় পথের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে, বিশেষ করে পশ্চিমা সমাজে। তাদের মাঝে এক সংষ্কৃতি গড়ে উঠেছে। অনেক সময়ই মুসলিম তরুণরা যে জীবন যাপন করে তাকে বলা যেতে পারে … মনে করুন ‘পার্টিইং’ … ঠিক আছে … এবং তারপর জীবনের কোন এক সময় তারা কোন বিশেষ উপলব্ধির মুখোমুখি হয় এবং দ্বীনের পথে চলতে শুরু করে। এমন প্রচুর ভাই-বোন আছে যারা জীবনের কোন এক সময় পরিবর্তিত মানসিকতার ভেতর দিয়ে যায় এবং তারপর ধীরে ধীরে আরও ধার্মিক হয়ে ওঠে। কিন্তু তারপর যা হয় তা হচ্ছে, যখন সময়ের সাথে সাথে তারা আরও ধার্মিক হয়ে ওঠে, তারা অনেক বেশি কড়া হয়ে যায় এবং নিজেদের জন্য নিজেরাই কোন শিক্ষক খুঁজে নেয়। সেই শিক্ষক হচ্ছে কখনো কোন মানুষ, কখনো কোন লেকচার সিরিজ, কখনো কোন ওয়েবসাইট, কখনো ব্লগ, কখনো অপরিচিত কোন নাম কিন্তু সেটা যাই হোক না কেন, তারা নিজেদের জন্য একটা জ্ঞানের উৎস খুঁজে নেয় যেটাকে তারা “সঠিক” বলে মনে করে। এর প্রতি তারা খুবই অনুরক্ত হয়ে পড়ে এবং আস্তে আস্তে যা ঘটতে শুরু করে তা হচ্ছে তারা খুব কঠোর ও অনমনীয় হয়ে ওঠে। তারা লক্ষ্য করতে শুরু করে যে তাদের চারপাশের মানুষরা ঠিক তাদের মতো না।...
এটা বলার বিভিন্ন ধরণ আছে, তাই না? “এই কাজটি করাতে তুমি দোজখে যাবে তুমি জানো তো?” ‒ এটা একভাবে বলা।”নিজের কাজের জন্য তোমার লজ্জিত হওয়া উচিৎ।” ‒ এটা বলার একটা ধরণ।”ভাই আমি সত্যিই তোমার জন্য উদ্বিগ্ন। তুমি জানো ওটা খারাপ আর আমি তোমাকে ভালোবাসি। তুমি এটা কেন করছ? তোমার কোন সাহায্য লাগবে? আসলেই কেন করছ, বন্ধ কর। আসো এটা নিয়ে আলোচনা করি।” আন্তরিক! (অডিয়েন্সে বসা কেউ হাঁচি দিলেন, উস্তাদ নুমান বললেন, “ইয়ার হামু কাল্লাহ”, অর্থাৎ আল্লাহ আপনার প্রতি ক্ষমাশীল হোন)। আন্তরিকতা, এটা দেখা যায় না, তবে প্রকাশিত হলে হৃদ্যতা বাড়ায়। আপনি কীভাবে মানুষের সাথে কথা বলেন, এতে প্রকাশ পায় আপনি আন্তরিক নাকি শুধু ওদের প্রতি আপনার মন্তব্য প্রকাশ করতে চান। এখানে পার্থক্য আছে। আপনি মানুষের সাথে কীভাবে কথা বলছেন এতে পার্থক্য আছে।أَذِلَّةٍ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ “আযিল্লাতিন আলাল মু’মিনীন”,(৫: ৫৪ ) বিশ্বাসীদের কাছে যখন নিজেদের উপস্থাপন করে ওরা আন্তরিক, বিনয়ী ‒ কুরআনে এভাবে বলা আছে, কিন্তু আপনি কীভাবে জানবেন আপনি আন্তরিক কিনা। এই আয়াতে এটা বলা আছে, এরপরই আমরা শেষ করবো। فَاعْفُ عَنْهُمْ وَاسْتَغْفِرْ لَهُمْ وَشَاوِرْهُمْ فِي الْأَمْرِ “ফা’ফু আনহুম ওয়াস তাঘফির লাহুম ওয়া শাভিরহুম্ ফিল আমার”,(৩: ১৫৯) তাদের ভুলের পর আপনি তাদের প্রতি সহনশীল; যদি তারা ভুল করে ফেলে, প্রথম কাজ, তাদেরকে মমতার সাথে ক্ষমা করে দিন। “ফাফু আনহুম”, এরপর আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার কাছে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করুন। আল্লাহ্র কাছে অন্যের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা মানে এই নয় — ধরুন, কোন ভাই কিছু করলো আর আপনি বললেনঃ “এই, যা হোক আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তোমাকে মাফ করুন।”ওটা “ফাস্তাঘফির লাহুম” নয়। আপনি কখন তাদের জন্য আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা চাইবেন? যখন আপনি নিজের জন্য আল্লাহ্র কাছে ক্ষমা চাইছেন, নির্জনে ক্ষমা চাইছেন। নির্জনে প্রার্থনার মানে কী? ঐ প্রার্থনা আন্তরিক, ওটা অকৃত্রিম। সবার...
আপনি এখানে কেন এসেছেন? আপনি কি এখানে এসেছেন কারণ আপনার বন্ধুরা এসেছে বলে? কারণ আপনাকে আসতে জোর করা হয়েছে? আপনার গাড়ি আজ ছাড়ছে না, তাই আপনি আটকে গেছেন এখানে। এজন্য? তাহলে আপনি কিছুই অর্জন করতে পারলেন না।কিন্তু আপনার এখানে আসার কারণ এবং নিয়ত যদি এরকম হয়-“আজ রাতে আমি আল্লাহ্ কে স্মরণ করব, আমি আল্লাহ্র আরোও নিকটবর্তী হব। এমনকি যখন কিছু হচ্ছে না, আপনি সেটার অপেক্ষায় আছেন। এ অপেক্ষার সময়টাও আপনার স্বপক্ষে পূণ্য হিসেবে গণ্য হবে। শুধু দরকার দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন, নিয়তের পরিবর্তন। ঠিক আছে? এটি আপনাকে জীবনভর অনেক সাহায্য করবে। কারণ আপনি যখন কিছু করবেন, যেমন- প্রচারপত্র দেওয়া, মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া এবং কেউ কোন আগ্রহ দেখাল না এবং আপনি হয়তো মনে মনে বলবেন-কেউ কিছু শুনতে চায় না। কিন্তু আপনি হতাশ হয়ে পড়বেন না। কেন জানেন? কারণ, কেন আপনি প্রচারপত্র গুলো বিলি করছিলেন? কেন আপনি দাওয়াত দিচ্ছিলেন? কোথায়, কার আছে আপনার প্রত্যাশা? (আঙুল ঊর্ধ্বমুখী, মানে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালার কাছে।)আপনার কাজ চেষ্টা করা। ফলাফল তাঁর কাছে। আপনি এই ফলাফলের দায়িত্বে নন। আপনি যখন এটাকে আন্তরিক ভাবে মেনে নিতে পারবেন,তখন জীবন অনেক সহজ হয়ে যাবে। এবং নিজের প্রতি অনেক সন্তুষ্ট থাকবেন। আপনি হতাশ হয়ে পড়বেন না।’ ‘সেখানে মাত্র অল্প কিছু মানুষ, তাদের সংখ্যা আরোও বেশি হতে পারত।’ ‘ হ্যাঁ,সেখানে আরো মানুষ থাকতে পারত কিন্তু সেটি আল্লাহ্র হাতে। আমি কি আমার দায়িত্বটুকু পালন করেছি? আমি কি যথেষ্ট চেষ্টা করেছি? শুধুমাত্র এটাই নিজেকে জিজ্ঞেস করতে পারেন এবং আমার চেষ্টা কি সত্যিই আল্লাহ্র জন্য ছিল? এই প্রশ্নটিই নিজেকে করতে পারেন। আমি এসব আলোচনায় আনছি কারণ ‘নিয়ত’ এমন কিছু নয় যা আপনি জীবনে একবারমাত্র করেন। জীবনে একবার ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন যে আল্লাহ্র রাস্তায় কাজ করবেন, একজন ভালো মুসলিম হবেন। আপনি সেই ইচ্ছা পোষণ করেছিলেন কিন্তু...