কুরআনের রত্নঃ পথভ্রষ্টতা যেভাবে শুরু হয়

কুরআনের রত্নঃ পথভ্রষ্টতা যেভাবে শুরু হয়

উস্তাদ নুমান আলী খানের কুরআন উইকলি তে দেয়া কুরআনের রত্ন সিরিজ থেকে।   শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ أَضَاعُوا الصَّلَاةَ وَاتَّبَعُوا الشَّهَوَاتِ فَسَوْفَ يَلْقَوْنَ غَيًّا   বাংলা ভাবার্থঃ “অতঃপর তাদের পরে এল অপদার্থ পরবর্তীরা। তারা সালাত নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। সুতরাং তারা অচিরেই পথভ্রষ্টতা প্রত্যক্ষ করবে।” [১৯:৫৯] আমি ওস্তাদ নুমান, কুরআনের ১৬তম পারার অন্তর্ভুক্ত সুরা মারিয়ামের ৫৯নং আয়াতটি নিয়ে আলোচনা করবো। আর এই হল আমার বড় ছেলে ইমাদ । আলহামদুলিল্লাহ, সে আজ আমার সাথে যোগ দিয়েছে। ইমাদ তুমি কেমন আছ? ভালো । তুমি কি মনোযোগ দিয়ে শুনবে ? হাঁ । ঠিকাছে ভালো । আল্লাহ এই আয়াতে বনী ইসরাইলদের সম্পর্কে কথা বলেছেন । এই আয়াতের আগের আয়াতগুলোতে বিভিন্ন সময়ে আল্লাহ্‌র প্রেরিত নবী-রাসুলদের কথা বলা হয়েছে। যেমনঃ নুহ (আঃ) ও তাঁর বংশধর যারা মহাপ্লাবন থেকে উদ্ধার পেয়েছিল, ইব্রাহিম (আঃ) এবং তাঁর বংশধর বিশেষ করে ইসমাইল (আঃ), ইসহাক (আঃ), ইয়াকুব (আঃ) এবং তাঁর ছেলেরা, এবং মুসা (আঃ) সম্পর্কে বলা হয়েছে। এখানে উনাদের অনুসারীদের মধ্য থেকে একটি নির্দৃষ্ট প্রজন্মের কথা বলা হয়েছে যারা প্রত্যাশা পুরন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। সেই প্রজন্ম সম্পর্কে আল্লাহ্‌‘তালা বলেছেন এইভাবেঃ ‘ফাখালাফা মিম বা‘দিহিম খালফুন’ অতঃপর তাদের পরে কারা এলো ? এমন মানুষ যারা প্রত্যাশা পুরন করতে ব্যর্থ হয়েছিল। এখানে ‘খালফ’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। ‘খালাফ’ (লাম এর উপর জবর দিয়ে ) অর্থ পরবর্তী প্রজন্ম যারা  প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম, যারা দ্বীনের পথে রয়েছে। অপরদিকে ‘খালফ’ [সুকুনযোগে] অর্থ পরবর্তী প্রজন্ম যারা তাদের পূর্বপুরুষদের শিক্ষা  কে  এগিয়ে নিয়ে যায়নি, তারা পেছনে ফিরে গিয়েছিল। তারা পূর্ববর্তীদের কাছ থেকে নির্দেশনা পাওয়ার পরও পথভ্রষ্ট হয়েছিল। এখানে আল্লাহ্‌‘তালা বনী ইসরাইলদেরকে তেমন একটি জাতি হিসেবে চিহ্নিত করে ছেন যারা নবী-রাসুলদের কাছ থেকে স্পষ্ট নির্দেশ পাবার পরও...
কখনও হতাশ হবেন না

কখনও হতাশ হবেন না

  আমি আপনাদের শয়তানের একটা চালাকির কথা বলছি শুনুন। মনে করুন আপনার অফিসে যেতে দেরী হয়েছে এবং দেরী করার জন্য আপনার বস রাগ হয়ে আছেন।অফিসে আরও অনেক মানুষ আছে। আপনি এরকম সময় কী করেন? আপনি সকলের নজর এড়িয়ে নিজের কিউবিকলে গিয়ে চুপচাপ বসে পড়েন। আপনি তখন বসের সাথে দেখা করতে চান না। অথবা মনে করুন একটা বাজে রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আপনি বাড়ি ফিরলেন।যখন আপনি ক্লাস ৬ বা ৭ এ আর খারাপ রিপোর্ট কার্ড নিয়ে আসেন তখন আপনি  চুপিসারে  ঘরে ঢুকবেন। কোন “আসসালামু আলাইকুম” নেই কিছু না। চুপিসারে ঢুকে আপনি ঘুমের ভান করে পড়ে রইলেন। মা যদি জিজ্ঞেস করেন, “আজকে স্কুলে কী হোল?” আপনি বলবেন, “তেমন কিছু না।” আপনি যখন কাউকে হতাশ করেন তখন তার থেকে দূরে দূরে থাকেন। এটাই স্বাভাবিক। এই ক্ষেত্রে, যখন আমরা অশ্লীল কাজ করি, নিজেদের উপর যুলম করি, তখন আমরা কাকে হতাশ করি? আল্লাহ আযযা ওয়াযালকে! আপনি আল্লাহ্‌কে অসুন্তষ্টি করেন। শয়তান তখন এর সুযোগ নেয়। আপনার কাছে এসে সে বলে যে তুমি এখন আবার সালাহ পড়তে যাবে? ভন্ড! তুমি এতসব অশ্লীল কাজ করে এখন আবার একটা ক্লাস করতে যাবে?এখন তুমি ইবাদত করতে যাবে? তুমি তো দু’মুখো মানুষ! তখন সে বলে হ্যাঁ আমি তো দু’মুখো মানুষ; আমার সালাহ পড়া উচিত না। শয়তান আপনার গুনাহের সুযোগ নিয়ে আল্লাহর কাছ থেকে আপনাকে দূরে সরিয়ে রাখে। আপনি তখন আল্লাহর সামনে দাঁড়াতে বিব্রত বোধ করেন। কিন্তু একজন সত্যিকারের মুত্তাকী যখন ভুল কিছু করে তৎক্ষণাৎ সে কী করে? সে আল্লাহকে স্মরণ করে! যাকারুল্লাহ। ফা বা সুম্মাও আসেনি এখানে! “ফাসতাগফারু লিযুনুবিহিম।” তারপর তারা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়। (৩:১৩৫) এখানে যুনুব শব্দটা দিয়ে পাপ বোঝান হচ্ছে যা এসেছে যানাব থেকে। যানাব দিয়ে মূলত বোঝান হয় এমন একটা পাপ যার কারণে আপনি অসম্মানিত বোধ...
কুরআনের রত্নঃ শয়তানের কৌশল

কুরআনের রত্নঃ শয়তানের কৌশল

উস্তাদ নুমান আলী খানের কুরআন উইকলি তে দেয়া কুরআনের রত্ন সিরিজ থেকে।   فَدَلَّاهُمَا بِغُرُورٍ অতঃপর প্রতারণাপূর্বক তাদেরকে সম্মত করে ফেলল। সূরা আল আরাফঃ ২২ আসসালামু আলায়কুম, Quran Weekly. সূরা আল আরাফ এর ২২ নম্বর আয়াতটি দীর্ঘ একটি আয়াত, কিন্তু এই সংক্ষিপ্ত আলোচনায়, আমি আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই এর প্রথম অংশ, যার মধ্যে  আছে  জীবনের জন্য অবিশ্বাস্য রকমের প্রজ্ঞা। আমরা কিভাবে শয়তানের মোকাবেলা করবো, আল্লাহ বর্ণনা করছেন, শয়তান কিভাবে আমাদের আদি পিতামাতা আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) কে ভুল করার জন্য প্ররোচিত করেছিল। তার কি এমন পদ্ধতি ছিল, যাতে তারা তার কথা মত কাজ করেছিলো? এটা শুধু তার কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, আমরা সবাই জানি যে সে তাদেরকে প্ররোচিত করেছিল, আমরা জানি যে সে তাদের কে অনন্ত জীবনের লোভ দেখিয়েছিল এবং বলেছিল যে তারা জান্নাতে থাকতে পারবে। এটা আমরা সবাই জানি, কিন্তু সে আসলে কিভাবে তা করেছিল, তার পদ্ধতি কি ছিল? এই পদ্ধতিটি বুঝা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এবং এটাই তুলে ধরা হয়েছে আয়াতটির প্রথম অংশে – ফাদাল্লাহুম্মা বি গুরুরিন। “দাল্লা” ব্যবহার করা হয় যখন আপনি বালতি টেনে তুলেন। আরবিতে “দাল্লু” বলতে বালতি বুঝানো হয় আর “আদলা” মানে হল বালতি নীচে ফেলে আবার টেনে  উপরে  উঠানো। যেমন পুরনো দিনে কুয়াতে বালতি ফেলে পানি টেনে উপরে উঠানো হত, মানে বালতি টেনে টেনে তুলতে হত, এটাই হল “আদলা”। কিন্তু “দাল্লা” হল খুব ধীরে  ধীরে বালতি নামানো, যেমন খুব পুরনো পশু শিকার করার পদ্ধতি। যেমন আপনার কাছে একটি গাজর বা কিছু খাবার আছে, আপনি তা বালতিতে রেখে দিলেন, এবং  বালতিটা দড়িতে বাঁধা। যখন কোন প্রাণী তাতে আকৃষ্ট হয়, আপনি ধীরে ধীরে বালতিটি নিজের দিকে টেনে নিয়ে আসেন, আর প্রাণীটি পিছু পিছু আসে। এটাই হল “দাল্লা”। আক্ষরিক ভাবেই, শয়তান তাদের কে বলেনি, “আল্লাহকে অমান্য...
আপনার সন্তানকে যথেষ্ট সময় দিচ্ছেন তো?

আপনার সন্তানকে যথেষ্ট সময় দিচ্ছেন তো?

উস্তাদ নুমান আলী খানের ২০১০ এ ICNA তে দেয়া “Time, Love, Praise & Encouragement” লেকচারের অংশ বিশেষ।   টিনেজারদের বাবা-মারা প্রায় সময়ই আমার কাছে আসেন। ‘জানেন, আমার ছেলেটা না, আমার কথা শোনেই না আজকাল। আপনি ওর সাথে একটু কথা  বলবেন?’ যেন আমি কোনো মহৌষধ সাথে নিয়ে ঘুরি! যেন সেই ছেলেটা আমার কাছে আসলে আমি ওর গায়ে ফু দিয়ে দেব এভাবে। আর সাথে সাথেই সে দারুন লক্ষী  ছেলে হয়ে যাবে! ‘একটু যদি কথা বলতেন’। না, বরং আপনি আপনার ছেলের সাথে কথা বলছেন না কেন? কোথায় ছিলেন আপনি যখন তার সাথে কথা বলার প্রকৃত সময় ছিল? আজকে আমি আপনাদের সাথে বাবা-মাদের নিয়ে একটু কথা বলব, তারপর বলব স্বামী-স্ত্রীদের নিয়ে। আজকে এই দু’টো জিনিস নিয়ে বলারই সময় আছে। দু’টো খুবই মৌলিক সম্পর্ক: একটা আপনার সন্তানদের সাথে, আরেকটা আপনার জীবনসঙ্গীর সাথে। এই দু’টো সম্পর্কের ব্যপারেই আমরা খুব বেসিক কিছু ব্যাপার নিয়ে  আলোচনা  করবো। আপনার সন্তান যখন ছোট, খুবই ছোট, ধরুন যখন তাদের বয়স পাঁচ, ছয়, সাত, দুই, তিন, চার, তখন তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন জিনিসটা বলুন তো? আমার নিজের পাঁচটা বাচ্চা আছে, তাই আমি খুব ভালো বলতে পারবো এ ব্যপারে। তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার সমর্থন। তারা আপনাকে গর্বিত করতে চায়। তারা যা যা করেছে সব আপনাকে দেখাতে চায়। ধরুন, আমি জরুরী কোনো কাজের আলাপ করছি ফোনে, জরুরী একটা ফোন, আর এ সময় আমার দুই বছরের ছেলে এসে বলবে, – “আব্বা আব্বা আব্বা আব্বা আব্বা।” – “ভাই, একটু লাইনে থাকেন। কি হয়েছে?” – “হে হে হে”। ব্যস! আমি আবার ফোনালাপে ফিরে গেলাম, সে আবার আমাকে ডাকা শুরু করল। আমি বললাম, – “আচ্ছা ঠিক আছে, কি হয়েছে বলো”। – “আমি তোমাকে একটা জিনিস দেখাবো”। – “কি দেখাতে চাও বাবা?” – ” হে...
মু্সলিমদের দায়িত্ব

মু্সলিমদের দায়িত্ব

উস্তাদ নুমান আলী খানের কুরআন উইকলি তে দেয়া কুরআনের রত্ন  সিরিজ থেকে রাসুলরা ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদবাহী ও জাহান্নামের ভয় প্রদর্শনকারী,তাদের এজন্যই পাঠানো হয়েছিল যাতে করে রাসুলদের আগমনের পর আল্লাহ্‌ তায়ালার নিকট মানবজাতির কোন অজুহাত পেশ করার সুযোগ না থাকে; সত্যিই আল্লাহ্‌ তায়ালা মহাপরাক্রমশালি ও প্রজ্ঞাময়। সূরা আন-নিসাঃ ১৬৫ আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতাল্লাহি ওয়াবারকাতুহু। আজকের সংক্ষিপ্ত রিমাইন্ডার বেশ গুরুত্বপূর্ণ। আল্লাহ্‌ সুবহানাহুওয়াতায়ালা সূরা নিসা আয়াত ১৬৫ তে আমাদের যা বলেছেন তা অনেক শক্তিশালী। “রাসুলরা ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদবাহী ও জাহান্নামের ভয় প্রদর্শনকারী”। অবশ্যই আমরা জানি তাঁরা তা করেছেন। কিন্তু তারপর আল্লাহ্‌ বললেন আমাদের যে কেন তিনি তাঁদের পাঠিয়েছিলেন “যাতে করে রাসুলদের আগমনের পর আল্লাহ্‌ তায়ালার ওপর মানবজাতির কোন অজুহাত খাড়া করার সুযোগ না থাকে”। অন্যভাবে বলা যায় রাসুলদের পাঠানোই হয়েছে যাতে মানবজাতির কোন অজুহাত না চলে আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুওয়াতালার পথ থেকে সরে যাওয়ার। এই কারণে রাসুলদের পাঠানো হয়েছে।এটা আসলেই অনেক কঠিন। এটা এই রুপ যেন আল্লাহ্‌ সুবাহানাহুওয়াতায়ালা বলছেন “ ইনিই সেই রাসুলুল্লাহ , শেষ নবীকে  পাঠানো  হয়েছে  মানবজাতির আর কোন অজুহাত চলবেনা। ইনিই শেষ নবী”। আপনি কি জানেন এটার মানে একজন মুসলিমের জন্য কি দাড়ায়? এটার মানে এই দুনিয়াতে যদি কেউ মোহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে না চিনেন উনি আসলেই কেমন তা না জানেন , তিনি তেমন নয় যারা তাকে ঘৃণা করে তারা যেভাবে উপস্থাপন করেন, তেমন ও নয় মিডিয়া অন্যের সামনে  তাঁকে  যেভাবে  তুলে  ধরে  বরং  তারা তো জানেনই না উনি সত্যিকারে কেমন, কিন্তু তিনি আসলেই কেমন তা যদি আমরা না জানি এটা আমাদের বহন করতে হবে কারন আমরা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিশনের বাহক। কিন্তু এখন মানবজাতির কোন বিকল্প পথ নেই। কোন অজুহাত ও নেই। এই কারনেই রাসুলদের পাঠানো হয়েছিল। যদি রাসুলদের শুধু মাত্র তাঁদের জাতির জন্য প্রেরন করা হত তখন...