উস্তাদ নুমান আলী খান

নুমান আলী খান একজন মুসলিম দা’ঈ। কুর’আন এর জ্ঞানে তার অসাধারণ গভীরতা এবং সুন্দর উপস্থাপনা শৈলীর কারণে সমগ্র বিশ্বের তরুণ প্রজন্মের কাছে তিনি অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশ এবং বাংলাভাষাভাষী অনেক ইসলাম অনুরাগী তরুণ তাঁর অসাধারণ আলোচনা থেকে উপকৃত হচ্ছে নিয়মিত …

সংক্ষিপ্ত পরিচিতি

আমাদের সাথে সংযুক্ত থাকুন

বর্তমানে আমরা ফেইসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল এ নুমান আলী খানের লেকচার গুলো নিয়মিত প্রকাশ করছি এবং এই ওয়েবসাইট এর মাধ্যমে তা শ্রেণীবদ্ধ ভাবে সংরক্ষণ করছি। আপনি আমাদের ফেইসবুক ও ইউটিউব চ্যানেল লাইক /সাবস্ক্রিপশন করে আমাদের সাথে আরো নিবিড় ভাবে সংযুক্ত থাকতে পারেন।

আমাদের ওয়েবসাইট ভিজিট করার জন্য আপনাকে অভিনন্দন…

সংযুক্ত থাকুন

ভিডিও + প্রতিলিপি

জিব্রাইল (আঃ) এর গল্প (৫ম পর্ব)

রাসূল ﷺ যখন শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন তখন জিব্রিল কিভাবে সান্ত্বনা দিতেন? রাসূল ﷺ যখন অসুস্থ হয়ে পড়েন, তিনি বলেন, জিব্রিল আমার কাছে আসলেন এবং বললেন- ও মুহাম্মাদ! আপনি কি অসুস্থ? আমি বললাম – হ্যাঁ। তখন জিব্রিল তাঁর হাত দিয়ে আমার মুখমণ্ডল এবং বক্ষ মুছে দিলেন এবং বললেন- ‘বিসমিল্লাহি আরকিকা মিন কুল্লি শাইয়িন ইয়ুজিকা’। আল্লাহর নামে আমি আপনার জন্য আরোগ্য প্রার্থনা করছি সবকিছু থেকে যা আপনার ক্ষতি করছে – ”মিন সাররি কুল্লি নাফসিন আও আইনিন, আও হা-সিদ।” সকল খারাপ জিনিস থেকে অথবা বদ নজর থেকে বা হিংসা থেকে। আল্লাহ আপনাকে আরোগ্য দান করুন। আল্লাহর নামে আমি আপনার জন্য আরোগ্য প্রার্থনা করছি। কিন্তু তখন ব্যাপারটা কেমন ছিল যখন জিব্রিল (আঃ) রাসূল ﷺ কে জীবন সম্পর্কে কোন উপদেশ দিতেন! এখন আমি আপনাদেরকে যে বিষয়টি বলবো সেটি রাসূল ﷺ এর জীবনের শেষ দিককার। জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) রাসূল ﷺ এর নিকট এসে বললেনঃ হে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), আচ্ছা, আল্লাহ কি কুরআনে কখনও এভাবে বলেছেন ‘হে মুহাম্মাদ’? না। ইয়া নাবিয়াল্লাহ, ইয়া রাসূলাল্লাহ – ও আল্লাহর নবী, ও আল্লাহর রাসূল (এভাবে বলেছেন)। তাহলে জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) কি করে ‘ইয়া মুহাম্মাদ’ বলার সাহস করলেন? আলেমরা বলেন যে, যখন জিব্রীল (আলাইহিস সালাম) বলেন, ‘ইয়া মুহাম্মাদ’, এর মানে হলোঃ তিনি নবীﷺ কে এটা বুঝাতে চাচ্ছেন যে, এখনকার বিষয়টি ওহীর বাইরের বিষয়। যখন আমি আপনাকে ‘ইয়া মুহাম্মাদ’ বলি, তার মানে বিষয়টি আপনি মুহাম্মাদ আর আমার মধ্যকার। সুতরাং এটা হলো কেবল এমন একক সময় যখন জিব্রাইল ‘ইয়া রাসূলাল্লাহ’ বলে সম্বোধন করলেন না। কারণ এখন আমি এমন কথা বলবো যা কেবল আপনার আর আমার মাঝে। বিষয়টি বুঝতে পারছেন আশা করি। সুতরাং তিনি বলেনঃ হে মুহাম্মাদ, ৫টি উপদেশ দিচ্ছি আপনাকে। ১। আপনি যেভাবে খুশি জীবন যাপন করুন। কিন্তু একথা মনে...

পরকালের বন্ধুরা

জানেন, মানুষ যখন খুশিতে থাকে তখন তারা কি চিন্তা করে? তারা বসে বসে ভাবে ইসস.. জীবনটা যদি সব সময় এরকম হত। তারা জানে যে এরকম হবার নয়, জীবনের বাঁকে বাঁকে সমস্যা আছে। কিছু না কিছু সমস্যা হবেই, শারীরিক বা মানসিক, কিছু একটা হবেই। জীবনে আর কোন সমস্যাই আসবে না এটা যদি জানা যেত!! আমার অত্যন্ত অত্যন্ত প্রিয় একটা বর্ণনা জান্নাত সম্পর্কে, এটা সুরা সাফফাত থেকে (আয়াত ৫০-৫৯) এক ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করলো এবং সে দেখলো সেখানে তার বন্ধুরাও আছে। তারা একজন একজনকে দেখে উচ্ছসিত হয়ে বলল ”আরে তুমিও সফল হয়েছও” তারপর তারা একে অপরকে অভিনন্দিত করলো। তারা একজন আরেকজনকে বলতে থাকবে ও আল্লাহ! তুমি, ও তুমিও। তারা আবার একজন আরেকজনের সাথে পরিচিত হতে থাকবে। আমি তোমাকে ওখানে চিনতাম। এরপর সে চিন্তা করবে আচ্ছা আমার সবচেয়ে ভাল বন্ধু যে তার কি হল? তাকে তো দেখছি না। অর্থাৎ সে তার পুরোনো জীবনের কথা স্মরণ করবে আর ভাববে যে তার এক বন্ধু এখানে নেই। তখন সে বাকীদেরকে জিজ্ঞাসা করবে তোমরা কি জান ওর কি হয়েছে? কিন্তু কেউই এই ব্যাপারে জবাব দিতে চাইবে না। কিন্তু সে আসলেই জানতে চায় যে তার পুরাতন বন্ধুর কি হল। ব্যাপারটা এমন হবে যে আল্লাহ জান্নাতে একটা জানালা খুলে দিবেন যাতে সে জাহান্নামে তার বন্ধুকে দেখতে পায়। এই ধরনের একটা চিত্রই ৩৭ নম্বর সুরাটিতে বর্ণিত হয়েছে। সে দেখবে যে তার সবচেয়ে ভাল বন্ধু জাহান্নামে জ্বলছে। হ্যাঁ, আপনি জান্নাত থেকে এটি দেখতে পারবেন, কারণ জান্নাতে আপনি যা চাইবেন তাই পাবেন। আর সে তার বন্ধুকে দেখতে চাইলো আর তার ইচ্ছাও পূরণ হল। তাই সে জাহান্নামের একটি ঝলক দেখতে পেল এবং সেখানে তার বন্ধুকে দেখলো। তখন সে বলবে إِن كِدتَّ لَتُرْدِينِ তুমিও আমাকে প্রায় ওখানেই নিয়ে যাচ্ছিলে। সে তার বন্ধুকে দেখলো...

তালাকপ্রাপ্তা বা বিধবাদের বিয়ে করাঃ একটি ভুলে যাওয়া সুন্নাহ

আজকের খুতবার আলোচ্য বিষয় সূরা নুরের দুটি আয়াত থেকে একটু কম। এই আয়াতগুলোতে এমন এক মূলনীতি আলোচনা করা হয়েছে যার দ্বারা আমরা শুধু বিবাহ নামক প্রতিষ্ঠানটিকে বুঝবো না, বরং সমাজে কিভাবে মানুষকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করা যায় তাও বুঝবো। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল এর চেয়ে কেউ বেশি অলংকারপূর্ণ ভাষায় কথা বলে না। অল্প কিছু শব্দের মাধ্যমে তিনি এ বিষয়টা চমৎকারভাবে তুলে ধরেছেন যে কিভাবে মুসলিম কমিউনিটি এবং মুসলিম পরিবারগুলো তাদের ছেলে মেয়েদের বিয়ে দেয়ার বিষয়টি চিন্তা করবে। বস্তুতঃ এটা শুধু আপনার ছেলে বা মেয়ের বিয়ে দেয়ার ব্যাপার নয়। যখন এই আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয় তখন বহু মানুষ মাত্র ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় গ্রহণ করেছে। সুতরাং অনেকের কোন মুসলিম পরিবার ছিল না। এমন অনেক মহিলা ছিলেন যাদের পিতামাতা মুসলিম ছিল না, তারা তাকে সমর্থন দিচ্ছিলেন না। তাঁরা এখন সাহাবিয়াত এবং তাঁরা অবিবাহিত। অথবা যাদের বিবাহ ভেঙ্গে গেছে, অধিকন্তু সন্তান সন্ততি আছে, ইত্যাদি। সাধারণ পরিবারগুলোতে আপনার ছেলে বা মেয়ে থাকে, তারা বড় হয় অতঃপর বিয়ের বয়সে পৌঁছায় আর আপনি তাদের বিয়ে দেয়ার কথা ভাবেন। কিন্তু বৃহত্তর পরিসরে আমাদের পরিবার হল গোটা উম্মাহ। রাসূল (সঃ) সমগ্র উম্মাহকে একটি শরীরের সাথে তুলনা করেছেন। আর আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা একে ‘ইখওয়া’ বা প্রায় রক্ত সম্পর্কীয় ভ্রাতৃত্ব বলে অভিহিত করেছেন। আমরা একে অপরের ভাই। তার মানে আমরা সবাই মিলে বড় একটি পরিবারের মত। সুতরাং আমাদের সমাজে যখন পুরুষ মহিলারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে না সেটা আমাদেরই সমস্যা। যার দায়ভার সম্মিলিতভাবে আমাদের সকলের কাঁধে অর্পিত হয়। তো, আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা বলেন – وَأَنكِحُوا الْأَيَامَىٰ مِنكُمْ তোমাদের মধ্যে যারা বিবাহহীন, তাদের বিবাহ সম্পাদন করে দাও। এভাবেই বক্তব্যের শুরু। আরবিতে ‘আইম’ শব্দটি নারী পুরুষ উভয়ের জন্য প্রযোজ্য। বেশিরভাগ সময় এটা নারীদের জন্য ব্যবহৃত হত আর কম...

প্রবন্ধ

ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি বিপ্লবের প্রয়োজন

ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি যে, ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থার একটি বিপ্লব দরকার।  এটা একান্তই আমার নিজস্ব মতামত, “ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি বিপ্লবের প্রয়োজন” আমি এর দ্বারা কি বুঝাতে চাচ্ছি ? (দেখুন) আলেমদের জন্য ইসলামি অধ্যাপনার ব্যবস্থা আছে যেখানে তারা পড়াশুনা করবেন ফিকহ, হাদিস, তাফসীর, আকীদাহ নিয়ে, এগুলো সবই তারা চর্চা করবেন এবং (এভাবে) আপনিও একজন আলেম হবেন আর আপনি সেগুলো চর্চা করে অনেক উচু স্তরে যেতে পারেন।  কিন্তু এর নিচেও একটি স্তর আছে, যেটা আসলে আমাদেরই তৈরি করা প্রয়োজন। যেটার বাস্তবে তেমন কোন অস্তিত্ব নেই, এখনো  এবং (তাই) আমাদের প্রয়োজন ইসলাম শেখার একটি স্তর তৈরি করা শুধুমাত্র প্রতিদিন অনুশীলনের জন্য, প্রাত্যহিক জীবনে। আমি ফিকহ নিয়ে কথা বলছি না, আমি কথা বলছি বাবাদের জন্য উপদেশ নিয়ে, আমি কথা বলছি স্ত্রীদের জন্য উপদেশ নিয়ে, শুধু একটি পাঠ্যক্রম, কিভাবে হওয়া যায় একজন ভালো মুসলিম স্ত্রী? কিভাবে হওয়া যায় একজন ভালো মুসলিম স্বামী? কিভাবে হওয়া যায় একজন ভালো মুসলিম….. পিতা? কিভাবে হওয়া যায় একজন ভালো পুত্র? কিভাবে হওয়া যায় একজন ভালো কন্যা? এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তাআলার কি কি উপদেশ আছে? পুরো পাঠ্যক্রমটার ভিত্তি হবে কিভাবে আমাদেরকে ভাল মানুষে পরিণত করা যায়, এটাই হচ্ছে (প্রকৃত) শিক্ষা। প্রকৃত শিক্ষা এটা না যে, তুমি C++ কোডিং জানো, আর তুমি মাইক্রোসফটের কিছু একটায় সার্টিফাইড হয়েছো এবং তুমি সিসকো সার্টিফাইড হয়েছো  আর এ সবগুলোর উপরে তোমার একটা একাউন্টিং ডিগ্রী আছে, এমবিএ ডিগ্রী আছে। এ সবকিছুরই মানে হলো, তুমি টাকা উপার্জন করতে সক্ষম কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তুমি শিক্ষিত। এটার মানে শুধু এই যে, তুমি টাকা উপার্জন করতে সক্ষম। এতটুকুই, এ সবকিছুর মানে শুধু এতটুকুই। এগুলোর কোনোটাই তোমাকে একজন ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে তুলবে না। আমি অনেক চিকিৎসকদেরকে চিনি যারা মানুষ হিসাবে ভয়ংকর, আমি অনেক প্রোগ্রামারদেরকেও চিনি যারা...

আমাদের পরিবারঃ আমার চোখের শীতলতা

– উস্তাদ নোমান আলী খান হে আল্লাহ আমাদের সেই অপ্রত্যাশিত উপহার প্রদান করুন। কি সেই অপ্রত্যাশিত উপহার?   رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُن- হে আমার প্রভু! স্ত্রী ও সন্তাদের দ্বারা আমার চোখ শীতল কর।অর্থাৎ, স্বামী বা স্ত্রী এবং সন্তান দেও যা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় ও চোখে আনন্দের অশ্রু বইয়ে দেয়। কুররাতা আইয়ুন, এর অর্থ কি আপনি জানেন? এর মানে এমন কিছু যা পাওয়ার আনন্দে আপনার চোখে আনন্দের অশ্রু চলে আসে। আপনি যখন দেখেন আপনার সন্তান কুরআন তিলাওয়াত করছে ও কুরআন তিলাওয়াত করতে ভালোবাসে তখন কি আনন্দে আপনার চোখে পানি আসে না কিংবা আপনার প্রিয়তমা স্ত্রী যখন অতি আদর-যত্নে বড় করে তোলে আপনার সন্তানদের তখন কি আপনার চোখ আনন্দে ভিজে যায় না? আপনি যখন দেখেন আপনার স্বামী আপনার সন্তানদের ফজরে ডেকে তোলে এবং তাদেরকে নিয়ে মসজিদে যায় তখনো আনন্দে আপনার চোখে অশ্রু চলে আসে, আপনি প্রচন্ড সুখ অনুভব করেন।অনেক স্বামী বা স্ত্রীকেই কাঁদতে দেখবেন কিন্তু তাদের এই কান্না কিন্তু আনন্দের কান্না না, তাদের এই কান্না অন্য কোন কারণে। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি আনন্দের কান্নার জন্য, আমরা চাই আমাদের পরিবার নিয়ে সর্বোচ্চ সুখী হতে। কিন্তু সেটা কিভাবে হবেন? এখনো তো আপনি বাসায় গিয়ে আপনার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করেন। আপনি বাসায় গেলে আপনার স্ত্রী জিজ্ঞেস করে আপনার আসতে দেরি হলো কেন আর আপনিও তখন রেগেমেগে জবাব দেন এই বলে যে বারবার একই প্রশ্ন কেন করো, তুমি কি জানো না রাস্তায় কি পরিমাণ জ্যাম, জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেই তো দেখতে পাও। এই ধরণের ঝগড়া নিয়মিতই হয় আর এরপর আপনি যখন আপনার সন্তানের কাছে যান তাকেও আপনি বকাঝকা করেন সে কেন খেলনা নিয়ে খেলছে বা কেন এত হাসাহাসি করছে, এত খুশির কি আছে এসব নিয়ে। তাকে বকা দেন তার হোমওয়ার্ক...

আপনার ভিতরের প্রতিভাকে খুঁজে নিন

আল্লাহ সূরা বনি ইসরাইলে বলেছেন,” বলুন, ‘প্রত্যেকেই নিজ প্রকৃতি অনুযায়ী কাজ করে থাকে এবং আপনার রব সম্যক অবগত আছেন চলার পথে কে সবচেয়ে নির্ভুল।‘”-(১৭:৮৪) এটি সূরা বনী-ইসরাইলের একটি খুব সুন্দর আয়াত। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদের প্রত্যেককে কঠিন পরিশ্রম করার নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের নিজ প্রকৃতি,প্রবণতা,আকৃতি,গঠনের উপর ভিত্তি করে। এর মানে হচ্ছে আমাকে আল্লাহ বিভিন্ন রকমের দক্ষতা দিয়েছেন, বিভিন্ন রকমের জেনেটিক্স,বিভিন্ন রকমের প্রতিভা, শক্তির বিভিন্নতা আপনাদের থেকে। আপনাকে আমার চেয়ে ভিন্ন প্রকৃতি আপনাকে দেওয়া হয়েছে,বিভিন্ন সুযোগ,ভিন্নরকম জেনেটিক অবকাঠামো। আপনাকে কিছু প্রতিভা দেয়া হয়েছে,আমাকে অন্যরকম প্রতিভা দেয়া হয়েছে, অন্যজনকে অন্যরকম প্রতিভা দেয়া হয়েছে। প্রথম কথা হল আল্লাহ বলেছেন নিজের সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করতে। আমরা যখন আল্লাহর এই নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করিনা তখন কি হয়? সবাই চিন্তা করতে শুরু করে,আমার লক্ষ্য ওই মানুষটির সাথে তুলনা করে সাজানো উচিত। এই মানুষটি এই লক্ষ্যে,ওই লক্ষ্যে পৌঁছেছেন, আমি কেন পৌঁছাতে পারিনি। আমার ভাই মেডিকেল কলেজে খুব ভাল করেছে কিন্তু আমি বায়োলজি পছন্দ করিনা তাই আমি একজন ব্যার্থ। আপনি কিছু বুঝতে পারছেন না মানে হল আপনার বোঝার সক্ষমতা আপনার ভাইয়ের সক্ষমতার মাঝে পার্থক্য রয়েছে। আমি জানিনা, আপনি হয়ত একজন ভাল অলিম্পিক ক্রীড়াবিদ হতে পারেন। আমি জানিনা,আপনি হয়তো একজন খুব ভাল লেখক হতে পারেন। আপনাকে আপনার ভাইয়ের মত প্রতিভা না দিয়ে হয়ত অন্য প্রতিভা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন,”আর যা দ্বারা আল্লাহ তোমাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন তোমরা তার লালসা করো না।”(সূরা: নিসা- ৪:৩২) আল্লাহ কাউকে একটা বিষয়ে খুব ভাল দক্ষতা দিয়েছেন,হয়ত সে বিষয়ে আপনার দক্ষতা একদম কম,আবার আপনাকে যে বিষয়ে দক্ষতা দিয়েছেন অন্যজনের সে বিষয়ে হয়ত দক্ষতা নেই। তাই প্রথম কথা হল, এই আয়াতগুলোর মাদ্ধমে বলতে চাচ্ছি- আল্লাহ আমাদের একটি সুন্দর নির্দেশনা দিয়েছেন,নির্দেশনা মানে হল আমাদেরকে একটি লক্ষ্যে পৌঁছান। আজকাল অনেক মানুষের মনে প্রশ্ন আছে,তারা জিজ্ঞেস করে,...

সেই বিবাহ প্রস্তাবটি

— উস্তাদ নোমান আলী খান আপনাদের সাথে মুসা আলাইহিস সালামের কাহিনীর একটি অংশ আজ শেয়ার করতে যাচ্ছি। যা ঘটেছিল – মূসা আলাইহিস সালাম দুজন নারীকে সাহায্য করেন যারা তাকে উত্তম বিবেচনা করে তাদের ঘরে আমন্ত্রণ জানায় যাতে অর্থের বিনিময়ে তিনি তাদের জন্য কাজ করেন। তিনি তাদের ঘরে আসেন আর নিজের কাহিনী বিস্তারিত তাদের বলেন – কিভাবে তিনি মিশর থেকে পালালেন, আর সেখানে কিভাবে তাকে হত্যার অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে, এবং তিনি যে গৃহহীন ও আশ্রয় পেতে আগ্রহী  ইত্যাদি। সেই নারীরা ঘরের অন্য পাশ থেকে সব শুনছিলেন, তন্মধ্যে একজন তাদের পিতাকে ডাকলেন আর তাকে কিছু জানালেন। এই বিষয়টি কুরআনে উল্লিখিত হয়েছে, অর্থাৎ এটি গুরুত্বপূর্ণ। সে নারীটি পিতাকে ডেকে বললেন,  يا ابت استاجره  প্রিয় আব্বা, তাকে কাজের জন্য নিয়ে নিন।   দারুন। এই বৃদ্ধ লোকটির দুটি কন্যা রয়েছে, কিন্তু কোন পুত্রসন্তান নেই, স্বাভাবিক যে এ কারনেই তাকে তাঁর মেয়েদেরকেই পাঠাতে হয় যেকোন কাজের জন্য। মেয়েটি ভাল করেই জানে,  যদি মুসাকে কাজের জন্য নেয়া হয় তাহলে তাকে  অবিবাহিত এই নারীদের আশেপাশেই কাজ করতে হবে – যা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। তো সে জানে বা বুঝতে পারছিল যে যদি তাকে ভাড়ায় নেয়া হয় – সুযোগ থাকে তাদের দুইজনের একজনের সাথেই তাঁর বিয়ে হবে । আর সে নিজেই যখন এই কথা বলছে, সুযোগ বেশি যে আব্বা তার ইংগিত বুঝবে – আব্বা, আমার মনে হয় বিবাহের জন্য সে এক উত্তম পুরুষ।  তো প্রথমেই যে বিষয়টি এখান থেকে আপনারা বুঝতে পারেন, এই নারীর আত্মবিশ্বাস ছিল যে সে নিজের বিয়ের জন্য আব্বাকে কারও সম্পর্কে বলতে পারে।  কোন কন্যাসন্তান বিবাহের ব্যাপারে কোন ছেলের প্রতি আগ্রহী থাকলে, তার পিতাকে ইঙ্গিত দিয়ে জানানোতে কোনই অন্যায় নেই। বড় একটি বিষয় যা এখান থেকে পাওয়া যায়। এতে কোন ক্ষতি নেই, লজ্জার ও...

আলেমদের ঝগড়ার কারনেই পরবর্তী প্রজন্ম বিশ্বাস হারাচ্ছে

নোমান আলি খান وان الذين اورثوا الكتاب من بعدهم لفي شك منه مريب তিনি বলেন – কোন সন্দেহ নেই যে যারা তাদের পরবর্তীতে বংশগতভাবে কিতাব পেয়েছিল, যাদের কিতাব দেয়া হয়েছিল উত্তরাধিকার সূত্রে اورثوا الكتاب من بعدهم শব্দগুলো নিয়ে একটু ভেবে দেখুন। সাধারণভাবে এখানে পরের প্রজন্ম নিয়ে তিনি বলছেন,  ঠিক কিনা ?  পরবর্তী জেনারেশানের মুসলিমরা। কিন্তু তিনি এটা কিভাবে বলছেন ? তিনি বোঝাতে চাচ্ছেন যে, যারা উত্তরাধিকারসূত্রে এই দ্বীন পেয়েছিল প্রথম প্রজন্ম থেকে – সেই প্রথম প্রজন্ম ব্যাস্ত ছিল অনৈক্য ও বিভাগ-বিভাজনে। তো এ থেকে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কী শিখবে ?  বুঝতে পারছেন? তারা তাদের বড়দের যা যা করতে দেখেছিল, যেভাবে তাদেরকে দ্বীন অনুসরণ করতে দেখেছিল – সেটা এতটাই কুতসিত ছিল, এতটাই সামঞ্জস্যহীন ছিল..  কেননা আমরা জানি ধর্ম হওয়ার কথা এমন কিছু যা কিনা খুবই চমৎকার, এটা সমাজে ঐক্য নিয়ে আসে। উম্মাহর ভেতর একতার বিকাশ ঘটায়। এটা اشداء على الكفار رحماء بينهم সৃষ্টি করে।  হ্যা এমন অবস্থারই প্রবর্তন করে । এটা পুরোপুরি উলটো বিষয়ের প্রবর্তন ঘটায়।  কিন্তু পরবর্তীতে এমন প্রজন্মের আবির্ভাব ঘটলো যারা বিভেদ, অনৈক্যের মানুষদের থেকে দ্বীন শেখা শুরু করলো। হ্যা এটা নতুন প্রজন্ম।  এখন এই নতুন প্রজন্মের ব্যাপারে তিনি কী বলেন !?… তারা দেখতে পেল সেই বিষয়ের কদাকার চিত্র যা তাদের হাতে পৌছেছিল ।  তারা এখন আর এই কিতাবকে চমৎকার কিছু হিসেবে দেখে না। এই দ্বীনকে সুন্দর কিছু বলে মনে করে না। তারা আসলে ভয়ঙ্কর একটা রুপ তাদের সামনে দেখে থাকে। তো তাদের কী অবস্থা হয় জানেন ?  এই পরবর্তী প্রজন্ম ?   لفي شك منه তারা এ ব্যাপারে সংশয়তে ভোগে ।  পরবর্তী প্রজন্ম, তারা নিজেদের দ্বীনকেই সন্দেহ করতে শুরু করে। সুবহানাল্লাহ।  এ কেমন মূল, যা পরিশোধ করতে হচ্ছে, এই অপরাধের দরুন !  এখানে এমন মানুষজন রয়েছে যারা দ্বীন...

মু’জিযা

মূসা (আঃ) এর নাম, একটি মৃত ভাষা ও কুর’আনের মু’জিযা

মূসা (আঃ) এর নাম, একটি মৃত ভাষা ও কুর’আনের মু’জিযা

  মূসাকে হিব্রু ভাষায় ‘মুশেহ’ বলা হয়… মূসা বলা হয় না। এই মুশেহ এর প্রথমাংশ ‘মু’ এর অর্থ হল আরবী ‘মা’(=পানি) এর মত। মূসা অর্থ পানি, আর এক্ষেত্রে ইহুদিরা বলে মূসা শব্দটি হিব্রু। আমি বলি মূসা শব্দটি হিব্রু নয়। এটা হিব্রু শব্দ হতে পারে না। অথচ ইহুদিরা এটাকে হিব্রুই বলে। আমি বলিঃ <> বলুন তিনি কোথায় জন্মগ্রহন করেছিলেন? – মিশরে। <> তিনি কোথায় বড় হয়েছিলেন? – ফিরাউনের প্রাসাদে। <> তাঁর দায়িত্বে কে ছিল? – ফিরাউন। <> তাহলে একজন নতুন শিশুকে কে নামকরণ করবে? যে দায়িত্বে আছে সে নাকি চাকর-বাকরেরা? – অবশ্যই দায়িত্বরত ব্যক্তি। <> তাহলে দায়িত্বরত ব্যক্তিরা কার ভাষায় নামরকণ করবে প্রভূর ভাষায় নাকি চাকরদের ভাষায়? – অবশ্যই প্রভূদের ভাষায়। আর প্রভূদের ভাষা ছিল মিশরীয়, হিব্রু নয় ((ফিরাউনের রাজ্য মিশর, আর তার ভাষা মিশরীয়)। কিন্তু সমস্যাটা কোথায় জানেন? রাসূল (সাঃ) এর জন্মের ৩০০০ বছর পূর্বে মিশরীয় ভাষা বিলুপ্ত হয়েছিল। কেউ মিশরীয় ভাষা জানত না। সুতরাং রাসূল (সাঃ) এর সময়ে কেউ যদি জিজ্ঞেস করত ‘মূসা’ অর্থ কী? কেউ বলতে পারত না। (আমরা না হয় আধুনিক যুগে বাস করি এবং এজিপ্টলজি বা মিশরীয় হায়ারুগ্লিফিক্স আবিষ্কারের কারণে এখন অর্থ বের করতে পারব, কিন্তু রাসূল সা এর সময়ে এটা জানা অসম্ভব ছিল)। মূসা এর অর্থ কী এটা জানার আগে চলুন দেখি কুর’আন কী বলে। সূরা কাসাস এর ৯নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, ০ لَا تَقْتُلُوهُ عَسَى أَن يَنفَعَنَا أَوْ نَتَّخِذَهُ وَلَدًا وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ অর্থঃ “…তাকে হত্যা করো না। এ আমাদের উপকারে আসতে পারে অথবা আমরা তাকে নতুন পুত্র হিসেবে গ্রহন করে নিতে পারি।” ‘মূসা’ শব্দটি মিশরীয় ভাষায় বলা হয় ‘নতুন জন্মপ্রাপ্ত’। তার মানে লক্ষ্য করেছেন? নিশ্চয় আল্লাহ কুর’আনে ‘মূসা’ শব্দের অনুবাদ করেছেন ‘وَلَدًا’ বা ‘নতুন জন্মপ্রাপ্ত শিশু’ হিসেবে অর্থাৎ ‘মূসা = নতুন জন্মপ্রাপ্ত...
কোরআন কেন মানব রচিত হতে পারে না – ৩য় পর্ব

কোরআন কেন মানব রচিত হতে পারে না – ৩য় পর্ব

আমরা কেন কোরআনে বিশ্বাস করি আরবরা ছিল ট্রেডিশনাল মানুষ, তারা যাযাবরদের মত ভ্রমন করত। যেহেতু তাদের ভূমি ছিল অনুর্বর এবং মরুভূমি আর সেকারণে ভূ-রাজনৈকিত ও অর্থনৈতিকভাবে কেউ তাদের উপর আক্রমন করত না-কারণে সেখানে কোন লাভ নেই। আরব ছিল রুমান ও ইরানিয়ান সাম্রাজ্যের মধ্যভাগে আর সেকারণে কেউ তাদের সাথে কোন সমস্যা তৈরি করত না এই ভয়ে যে এতে এই দুই সাম্রাজ্যের মধ্যে ভয়াভহ যুদ্ধ লেগে যেতে পারে। তারা অন্যান্য সাম্রাজ্যের সাথে যুদ্ধে লিপ্ত হতো, কারণ সেখানে সম্পদ ছিল আর এসব আরবে অনুপস্থিত ছিল অনুর্বর, মরুভূমি ও উন্নত সম্পদ না থাকায়। এভাবে আরবদেরকে ততকালীন উন্নত সাম্রাজ্য শত শত বছর বিচ্ছিন্ন রেখেছিল তাদের প্রভাব থেকে। আর এইসব বিচ্ছন্নতার কারণে আরবরা ছিল তাদের মধ্যে সীমাবদ্ধ, বাহিরের কোন প্রভাবও ছিল না। আর কেউ যখন বিচ্ছিন্ন থাকে তখন কিন্তু নিজের সাথেই কথা বলে। আর এভাবেই তাদের ভাষায় অন্যদের প্রভাব না থাকার কারণে বিশুদ্ধ থেকে বিশুদ্ধতম হতে থাকে এবং বিশুদ্ধই থাকে। আর অন্যরাও এ ভাষা শিক্ষায় আগ্রহী ছিল না কারণ এতে পার্থিব-সম্পদগত কোন লাভ নেই! আপনারা জেনে থাকবেন যে যখন অনেকগুলো কালচার বা শক্তিশালী ক্ষমতা অন্যকে দখল করে নেয় তখন সেই স্বদেশীয় ভাষা কলুষিত হয়(যেমন বাংলা—কত ভাষার সমষ্টি ও বিকৃতি এসেছে এ ভাষায়-সেই ওলন্দাজ থেকে ইংরেজ সাম্রাজ্য পর্যন্ত) অথবা যে কোন দেশ বা অঞ্চল বৈশ্বিক বাজারে বা কসমোপলিটানে রুপান্তরিত হয় সেখানেও ভাষার ভিন্নতা দেখা যায় যেমন প্রাচীনকালের চিটাগাং(সামুদ্রিক ব্যবসায়ী কেন্দ্র ছিল) বা নিউইয়র্কে বিভিন্ন দেশের লোকেদের ইংরেজির বেহাল অবস্থা! এভাবে একটি ভাষা যখন কোন প্রভাব ব্যতিত টিকে থাকে, সেটা বিশুদ্ধ থাকে-সেরকম ছিল আরবী ভাষা। আরবের চতুর্পার্শে কিছুই ছিল না, কেবল মরুভূমি ছাড়া। আর এজন্য তাদের কাল্পনিক চিন্তাশিলতা ছিল প্রখর(যেহেতে চতুর্পাশ্বে কিছু ছিল না তাই কল্পনার চিন্তাশক্তিই তাদের শৈল্পিক দিক ছিল)। যখন কারো চতুর্পাশ্বে কিছুই থাকে না,...
কোরআন কেন মানুষের সৃষ্টি হতে পারে না – ২য় পর্ব

কোরআন কেন মানুষের সৃষ্টি হতে পারে না – ২য় পর্ব

  আমরা কেন কোর’আনে বিশ্বাস করি কোরআনের চ্যালেঞ্জ বলতে কী বুঝায়? কোরআনের চ্যালেঞ্জ ছিল ‘কোরআনের অনুরুপ কিছু নিয়ে আস’। আর এই ‘চ্যালেঞ্জ’ বলতে অনেক কিছু বুঝায়, কেবল কিছু শব্দের সমষ্টিযুক্ত বাক্য নয় যা অনেক সমালোচনাকারীরা মনে করে-এটা নিতান্তই সরল ও অবুঝ উপলব্ধি। এই চ্যালেঞ্জ অনেক কিছুই হতে পারে যেমন ১। কোরআনের সৌন্দর্যের মত সৌন্দর্যময় কিছু তৈরি করা। ২। কোরআনের মত শক্তিশালী জিনিস তৈরি করা। ৩। কোন ব্যক্তির উপর কোরআনের যে প্রভাব সেটা তৈরি করা। ৪। একটা সমাজের উপর কোরআনের যে প্রভাব পরিলক্ষিত হয়, সেরূপ প্রভাব সৃষ্টি করা। অর্থাৎ এই চ্যালেঞ্জ এক ধরণের নয়, অনেক কিছুর হতে পারে। এর মধ্যে একটি চ্যালেঞ্জ হল– কোরআন কত বছরে অবতীর্ণ হয়েছিল? দীর্ঘ ২৩ বছরে। আর এই ২৩ বছরে কোরআন কী করেছিল আরব সমাজে? কোন ধরণের পরিবর্তন এনেছিল তাদের মাঝে? ঐতিহাসিক দৃষ্টি… কোরআন নাযিল হয়েছিল দীর্ঘ ২৩ বছরে। আর এই কোরআনের প্রভাবে কি হল সেই সমাজ ও তার মানুষের উপর, তা একবার দেখুন… ঐ সমাজ বহু ঈশ্বরবাদী সমাজ থেকে পরিবর্তিত হয়ে এক আল্লাহতে ইবাদাতকারী সমাজে পরিণত হল। একটা সমাজ পূর্ণরুপে পাল্টে গেল, একেবারে পূর্ণরুপে। তাদের মধ্যে মানুষের মর্যাদায় কোন বৈষম্য রইল না …কালো, সাদা, আফ্রিকান, আরবী, অনারবী সবাই একই কাতারে নামাজ পড়তে শুরু করল। তারা ভাবত নারীরা কিছুই না, কিন্তু সেই পরিবর্তিত সমাজের নারীরাই হল সর্বাপেক্ষা সম্মানিত। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ক্ষেত্রে ‘তাকওয়া’(সদা আল্লাহর উপস্থিতির চিন্তা) শব্দটা ব্যবহৃত হয়নি একমাত্র মায়ে’দের ছাড়া। আল্লাহ মায়েদের এত মর্যাদা দিলেন! সকল গোত্র সমান হয়ে গেল।  তাদের ব্যবসা, খাওয়া-পান করার মধ্যে সীমাবদ্ধতা আসল। তারা হালাল ব্যবসা ছাড়া অন্য কিছু ত্যাগ করল। পিতা-মাতার সম্পর্ক কেমন হবে, সন্তানদের সাথে কেমন সম্পর্ক হবে, আত্মীয়দের সাথে কেমন সম্পর্ক হবে, বন্ধুদের সাথে কেমন হবে সম্পর্ক, অমুসলিমদের সাথে কেমন সম্পর্ক ও ব্যবহার হবে, স্বামী-স্ত্রীর...
মধ্যমপন্থী জাতি ও অলৌকিক মু’জিযা

মধ্যমপন্থী জাতি ও অলৌকিক মু’জিযা

কোর’আনের সবচেয়ে বড় সূরাটি নিয়ে কথা বলছি এখন। এটি ২য় নং সূরা, সূরা বাকারাহ। আয়াত সংখ্যা- ২৮৬. এই সূরার কোনো এক জায়গায় এই আয়াতটি এসেছে… وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًاٌ “এভাবে আমি তোমা্রকে একটি একটি মধ্যমপন্থী জাতি হিসেবে তৈরি করেছি” এখানে ‘মধ্যমপন্থী’ এর আরবী কি? ‘ওয়াসাতা’। কিন্তু মূল বিষয় ও এর সাজানোর ধরণ কি জানেন আপনি? আপনি নিশ্চয় কোর’আন সংকলনের ইতিহাস, নাযিলের ইতিহাস ইত্যাদি জেনে থাকলে এটাও জানেন যে কোর’আন কখনই লিখিত আকারে অবতীর্ণ হয়নি। এটা বক্তব্য আকারে নাযিল হয়েছে; যা একবার বলার পর আর ফেরত নেওয়া যায় না। ঐতিহাসিক ডকুমেন্ট থেকে এটাও জানতে পারি যে এই সূরা একসাথে নাযিল হয়নি…প্রায় ১০ বছর ধরে ছোট্ট ছোট্ট অংশ করে নাযিল হচ্ছিল। এবং এই দশ বছরে আরো অন্যান্য সূরাও নাযিল হচ্ছিল। আর সাহাবাদেরকে ওহী(আল্লাহর অবতীর্ণ বাণী)অনুযায়ী নির্দেশ দেওয়া হত ‘এই আয়াতগুলো’ যাবে ‘অমুক’ সূরায়; ‘ঐ আয়াতগুলো’ যাবে ‘অমুক’ সূরায় আর ‘এইসব আয়াতগুলো’ যাবে ‘তমুক’ সূরায়। এভাবে প্রায় ১০ বছর শেষে অন্যান্য সূরার নাযিলের সাথে এই সুরা পূর্ণ একটি রূপ পায় যার আয়াত সংখ্যা হয় ২৮৬। এই বিশাল সূরার ১৪৩ নাম্বার আয়াতে আল্লাহ বলেন… وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًاٌ “এভাবে আমি তোমাদেরকে একটি মধ্যমপন্থী জাতি হিসেবে তৈরি করেছি” এই সূরায় কতটি আয়াত? – ২৮৬ ‘মধ্যমপন্থী জাতি’ বলা হয়েছে কত আয়াতে? – ১৪৩ অর্থাৎ পূর্ণ সূরার ঠিক মাঝের আয়াতে!!!!আল্লাহ আমাদেরকে ‘মধ্যমপন্থী জাতি’ বলেছেন ‘ঠিক মধ্যম আয়াতে’ সুবহানাল্লাহ। এটাই মু’জিযা- অলৌকিকত্ব, যা কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। কেন এটি মু’জিযা? আপনি লিখিত বইতে হয়তো এভাবে মিলিয়ে লিখতে পারেন কিন্তু বক্তব্য আকারে কীভাবে সম্ভব?! আপনি ১০ বছর কারো সাথে কথা বললেন, কোন হিসাব না করে, সাথে অন্যান্য হাজার, লাখো রকম কথা বলেন, এই কথাগুলো কোনো একদিন রেকর্ড করে কি এভাবে কোনো কিছু মেলাতে পারবেন?…আমাদের তো ১মাস আগের...
সুর ও আল-কুর’আনের মু’জিযা

সুর ও আল-কুর’আনের মু’জিযা

  যারা আরবী জানেন ও যারা জানেন না – তারা এই শব্দগুলোকে একটু মনযোগ দিয়ে উচ্চারণ করুন আর দেখুন কোনো মিল খুঁজে পান কি না: যাকারিইইয়া, খাফিইইয়া, শাকিইইয়াহ, রাজিইইয়াহ, ওয়ালিইইয়া, শারিইইয়া, নাবিইইয়া, হাইইয়া ইত্যাদি। যারা আরবী জানেন না তারা কি কিছু লক্ষ্য করেছেন? যারা আরবী জানেন না তারা নিশ্চয় শব্দগুলো কীভাবে উচ্চারিত হচ্ছে তা লক্ষ্য করেছেন। সবগুলো একই সুরে অন্তমিলের সুর ছড়াচ্ছে। এটি সূরা মারিয়ামে রয়েছে, যা পবিত্র কুর’আনের অন্যান্য সূরার মতোই একটি সূরা। প্রত্যেকটি আয়াতের সমাপান্তে শব্দগুলোতে অন্তমিলের সুরবিন্যাস রয়েছে। যিকরু রাহমাতি রাব্বিকা আব্দাহু যাকারিইইয়াহ, ইজ নাদা রাব্বাহু নিদাআন খাফিইইয়া (২-৩) ইত্যাদি। আর এভাবে এটা সমাপান্তে সুর করে চলতেই থাকছে…চলতেই থাকছে…। কিন্তু, কিছুদূর যাওয়ার পর কী দেখতে পেলেন? সূর পাল্টে গেছে (ইয়ামতারুন)?!! কিন্তু কেন? এটা আর আগের শব্দগুলো খাফিইইয়হ, শাকিইইয়া বা ইনশিইইয়া এগুলোর মতো সুর মিলছে না শব্দান্তে। এখন শুরু হয়েছে শব্দান্তের মিলের ভিন্ন সুরধ্বনি: ইয়ামতারুন, ফা ইয়াকুন, মুস্তাকুন, আযিম, মুবিন, ইউমিনুন। সুতরাং, এভাবে আপনি দেখতে পাচ্ছেন যে, প্রাথমিক কিছু আয়াত যেগুলো একই সুরের অন্তমিলের সুরধ্বনি, আর কিছুদূর যাওয়ার পর একই সূরায় অন্তমিলের ভিন্ন সুরধ্বনি। অথচ একই সূরায়, কিছুদূর যাওয়ার পর হঠাৎ করেই শুরু হয়েছে ভিন্ন সুর। যখন বিষয়টি ছিল একই, নবীদের কাহিনী, তখন সূরের অন্তমিলের ধ্বনিও ছিল একই-অভিন্ন। কিন্তু যখনই বিষয়টি (Topic of Subject) পরিবর্তিত হয়েছে তখনই ভিন্ন অন্তমিলের সুরধ্বনি এসেছে। এটা এক প্রকার প্যারাগ্রাফ-এর মতো যেখানে প্রতি প্যারায় একই টপিকের ভিন্ন ভিন্ন দিকের আলোচনার মতো। আপনি স্পেস দেন লেখায়, ট্যাব চাপেন বেশি দূরে যাওয়ার জন্য, সরিয়ে নেন, একটার উপর আরেকটা লেখেন, বা অনেকটটা জায়গা ছেড়েও দেন লেখার বিভিন্ন ধরণের জন্য। কিন্তু কুর’আনে এগুলো নেই! তাহলে কুর’আনে কী আছে? এটার রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন সুরবিন্যাস। যেহেতু একটি বিষয় পরিবর্তিত হয়েছে, আর সেজন্য শ্রোতা যাতে বুঝতে পারে যে এখন...

ইমেইলের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকুন



Created by Webfish.

Facebook Like

সাথেই থাকুন

 

<—-Facebook & YouTube —->

Youtube Subscriber