ভিডিও + প্রতিলিপি
জিব্রাইল আঃ এর গল্প (২য় পর্ব)
পরিশেষে, ইমরানের পরিবারের সাথে। কোন কোন সময় জিব্রিল (আঃ) কে নবীর সাথে উল্লেখ না করে নবীর পরিবারের সাথে উল্লেখ করা হয়। তো, আমরা মারিয়াম (আঃ) এর ঘটনা জানি। মারিয়াম (আঃ) মসজিদের বাইরে পূর্বে দিকের কোন এক স্থানে যেতেনمَكَانًا شَرْقِيًّا । তিনি মাসে একবার মসজিদের বাইরে পূর্ব দিকের কোন এক জায়গায় যেতেন। অনেক আলেমের মতে, সেটা ছিল সূর্যোদয় দেখার উদ্দেশ্যে। তিনি সেখানে গিয়ে সূর্যোদয় দেখতেন আর আল্লাহর জিকর করতেন। তিনি সেখানে মাটিতে দুটি লাঠি গেঁড়ে পর্দা টাঙিয়ে দিতেন, যেন এই খোলা জায়গায় মানুষ বুঝতে পারে এটা তাঁর বসার জায়গা। কেউ যেন এটার নিকটে না আসে। তিনি অল্প বয়স্ক মেয়ে ছিলেন, ১৪- ১৮ বছর বয়সের। মোটকথা তিনি একজন টিনেজার ছিলেন। আর তিনি একা আল্লাহর উপাসনা করছেন, আল্লাহকে একা একা স্মরণ করছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, فَأَرْسَلْنَا إِلَيْهَا رُوحَنَا আমরা তাঁর কাছে আমাদের রুহকে (জিবরাইল আঃ ) পাঠালাম। فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا জিব্রিল (আঃ) তাঁর নিকট একজন সুন্দর পুরুষের আকৃতিতে আবির্ভূত হলেন। জিব্রিল (আঃ) মুখ খুলে কিছু বলার আগেই মারিয়াম (আঃ) তাকে দেখে বললেন, أَعُوذُ بِالرَّحْمَٰنِ مِنكَ إِن كُنتَ تَقِيًّا ”আমি পরম করুণাময়ের কাছে তোমার থেকে আশ্রয় চাচ্ছি, যদি তোমার অন্তরে আল্লাহর কোন ভয় থেকে থাকে।” মানে – যদি তোমার নূন্যতম কোন শালীনতা থেকে থাকে ভাগ এখান থেকে। কোন কথা বলতে যেও না। মনে কর যে এটা কখনো ঘটে নি। যাও, আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। তাই প্রিয় বোনেরা, যদি কোন ভাই আপনার নিকট এগিয়ে আসে, তাদের সাথে এভাবে আচরণ করার চেষ্টা করে দেখুন(আরবিতে এই কথাটা বলেন)। দেখুন, কি ঘটে। যদি তিনি আরবি নাও বুঝেন তিনি ভাববেন, না এই আপুর থেকে দূরে থাকাই উত্তম। আমরা এই গল্পে যদি আবার ফেরত যাই, তাহলে দেখবো যে মারিয়াম (আঃ) জিবরাইল (আঃ) এর সাথে পরে কথা বলেছিলেন।...ধার্মিকতা-বিহীন ক্ষমতা
[শায়েখ ওমার সুলেইমান ও মুহাম্মাদ জিয়ারার তৈরি ইন্সপিরেশন সিরিজ] ”হে ঈমানদারগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক; আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্নীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও। কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদের শুভাকাঙ্খী তোমাদের চাইতে বেশী। অতএব, তোমরা বিচার করতে গিয়ে রিপুর কামনা-বাসনার অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ কর্ম সম্পর্কেই অবগত।” (সূরা আন নিসাঃ...জিব্রাইল (আঃ) এর গল্প (৩য় পর্ব)
আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সঃ) এর সাথী ফেরেশতাদের মাঝে যিনি রাসূল (সঃ) এর সবচেয়ে নিকটবর্তী ছিলেন, যিনি রাসূল (সঃ) কে সহযোগিতা করেছেন, তাঁর প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করেছেন তিনি ছিলেন জিব্রিল আঃ। অন্য একটি বর্ণনায় রাসূল (সঃ) আরও বলেছেন, …… প্রত্যেক নবীকেই আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা দুনিয়া থেকে দুইজন এবং আকাশ থেকে দুইজন মন্ত্রী দান করেছেন। আমাকে দেয়া আকাশের দুইজন মন্ত্রী হলেন – জিব্রিল এবং মিকাল। আর দুনিয়া থেকে প্রদত্ত দুইজন হলেন- আবু বকর এবং ওমর (রা)। জিব্রিল আ এবং রাসূল সঃ এর প্রথম সাক্ষাৎকারটি কেমন ছিল? আনাস ইবনে মালিক (রা) বর্ণনা করেন, রাসূল (সঃ) এর ছেলেবেলায় তিনি অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলছিলেন, দৌড়াদৌড়ি করছিলেন – ঠিক সকল বাচ্চার মত। হঠাৎ করে এক ব্যক্তির আবির্ভাব হলো। তিনি রাসূল (সঃ) কে ধরে মাটিতে শুইয়ে দিলেন। এটা দেখে অন্য বাচ্চারা তাদের পিতা-মাতার কাছে দৌড়ে চলে গেল আর বলতে লাগলো – মুহাম্মাদ (সঃ) কে হত্যা করা হয়েছে। অন্য বাচ্চারা যখন দৌড়ে পালাতে লাগলো, তখন রাসূল (সঃ) দেখছিলেন যে এই লোকটি তাঁকে কি করতে যাচ্ছে। আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেন, তিনি আমার বুক কেটে ফেললেন, তিনি আমার বুক খুলে ফেললেন। তিনি রাসূল (সঃ) এর হার্ট ধরলেন এবং তা থেকে কিছু একটা বের করে নিলেন আর বললেন- এটা হলো তোমার অন্তরের শয়তানের অংশ। তারপর তিনি এটাকে ফেলে দিলেন। তারপর তিনি সোনালি বর্ণের একটি পাত্রে রাখা জমজমের পানিতে আমার হার্ট ধুয়ে ফেললেন। আর এই বাচ্চাবস্থায় রাসূল (সঃ) সবকিছু অবলোকন করছেন। এরপর রাসূল (সঃ) এর হার্টকে আবার যথাস্থানে রেখে দেয়া হলো। অন্য বাচ্চারা ফিরে এসে দেখল যে রাসূল (সঃ) এর বুক সেলাই করে দেয়া হয়েছে। আর তাঁর মুখমণ্ডল নীল বর্ণ ধারণ করলো। রাসূল (সঃ) এর হার্ট বের করে পবিত্র করা হলো। সে সময় তিনি এই ঘটনার কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পেলেন...জিব্রাইল (আঃ) এর গল্প (৪র্থ পর্ব)
খাদিজা (রা) বললেন – চলুন, ওয়ারাকার কাছে যাই। তো, তাঁরা তার নিকট গেলেন। রাসূল (সঃ) যা দেখলেন তা ওয়ারাকার নিকট বর্ণনা করলেন। ওয়ারাকা সাথে সাথে বলে উঠলেন – ”ইনি নামুস! (আপনিই সেই রাসূল যার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।) এই ফেরেশতাই (নামুস বা জিব্রিল) মূসার (আঃ) কাছে এসেছিলেন। ইস! আমি যদি যুবক হতাম! তাহলে আপনাকে সাহায্য করতে পারতাম! যখন আপনার সম্প্রদায় আপনার বিরোধিতা করবে।” এরপর কি ঘটেছিল? আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন – এরপর বহুদিন যাবত ওহী অবতীর্ণ হওয়া বন্ধ থাকে। রাসূল (সঃ) অপেক্ষা করতে লাগলেন যেন সেই ফেরেশতা আবার দেখা দেন। রাসূল (সঃ) আবার ওইসব পাহাড়ে ঘুরতে লাগলেন। রাসূল (সঃ) নিজের ভাষায় তা এভাবে বর্ণনা করেন যে, ”(তাঁর মানসিক অবস্থা এমন ছিল যে) তিনি যেন চাইতেন নিজেকে পাহাড় থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে!” তিনি স্পষ্টরূপে জানতে চান কি ঘটছে! প্রতিবার রাসূল (সঃ) পাহাড়ে গেলে জিব্রিল (আঃ) এর কণ্ঠ শুনতে পেতেন। ”ও মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল।” এতে রাসূল (সঃ) কিছুটা সান্ত্বনা পেতেন এবং ঘরে ফিরে আসতেন। এরপর পরবর্তীতে তিনি শুধু যে ”ও মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল।” এ কথা বলতেন তা নয়, তিনি আরও বলতেন – ”আর আমি জিব্রিল”। তো, তিনি রাসূল (সঃ) এর নিকট বিষয়টা পরিষ্কার করলেন যে তিনি জিব্রিল (আঃ)। কিন্তু তবু কোন কুরআন বা ওহী অবতীর্ণ হয়নি। অবশেষে, অন্য একদিন রাসূল (সঃ) হাঁটছিলেন – আর এবার ‘ইয়া মুহাম্মাদ ইন্নাকা রাসূলুল্লাহি হাক্কা’- ”ও মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল” এ বাক্য নয়। বুখারি শরীফে জাবির (রা) থেকে বর্ণিত আছে- রাসূল (সঃ) হাঁটছিলেন তারপর হঠাৎ উপরের দিকে তাকিয়ে দেখলেন – জিব্রিল আলাইহিস সালাম তাঁর পরিপূর্ণ ফেরেশতার আকৃতি ধারণ করে সম্পূর্ণ আকাশ ঢেকে আছেন, সম্পূর্ণ দিগন্তকে ঢেকে আছেন। আল্লাহ জিব্রিল (আঃ) সম্পর্কে বলেছেন – ذُو مِرَّةٍ فَاسْتَوَىٰ প্রজ্ঞার অধিকারী, সে নিজ আকৃতিতে...জিব্রাইল (আঃ) এর গল্প (৬ষ্ঠ পর্ব – সমাপ্ত)
জিব্রাইল আলাইহিস সালামের মৃত্যু। সুবহানাল্লাহ, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত্যুবরণ করেছেন এবং প্রত্যেকেই মৃত্যুবরণ করবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এমনকি জিব্রীল-ও মৃত্যুবরণ করবে। চিন্তা করতে পারেন, জিব্রীল (আলাইহিস সালাম)- ও মারা যাবেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সিংগায় ফুতকার দেওয়ার পর আল্লাহ যাদের চান তারা ছাড়া আর কেউ স্থির থাকতে পারবে না (অন্য সবাই মৃত্যুবরণ করবে)। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা তাদেরকে তাঁর সম্মুখে নিয়ে আসবেন, তারা হলেনঃ জিব্রীল, ইস্রাফিল, মিকাল ও মৃত্যুর ফেরেশতা … যারা আল্লাহর আদেশ সমূহের বাস্তবায়ন করে থাকেন। আল্লাহ মৃত্যুর ফেরেশতাকে জিজ্ঞেস করবেন, আর কারা কারা বাকী আছে? মৃত্যুর ফেরেশতা বলবেন, ওহ আল্লাহ, আপনার সম্মানিত পবিত্র চেহারা (পূর্ণ সত্ত্বা), আপনার বান্দা আমি, আপনার বান্দা জিব্রীল, আপনার বান্দা মিকাল, আপনার বান্দা ইস্রাফিল। আল্লাহ বলবেন, মিকালের আত্মা নিয়ে নাও। তখন মিকালের আত্মা নিয়ে নেওয়া হবে। তখন আল্লাহ পূনরায় বলবেন, আর কে কে বাকী আছে? তিনি বলবেন, ওহ আল্লাহ, আপনি, আমি, জিব্রীল এবং ইস্রাফিল। আল্লাহ বলবেন, ইস্রাফিলের আত্মা নিয়ে নাও। ইস্রাফিলের আত্মা তাঁর থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। আল্লাহ আবারও বলবেন, আর কারা বাকী আছে? তিনি বলবেন, ওয়াজহুকাল বাকিল কারিম – ওহ আল্লাহ, আপনার পবিত্র চেহারা, আপনার এই বান্দা এবং আপনার বান্দা জিব্রীল। আমরা দুই বান্দা সবশেষে বাকী রয়েছি। আল্লাহ বলবেন, জিব্রীলের আত্মা নিয়ে নাও। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জিব্রীল তাঁর চেহারা নিয়ে পতিত হবেন এমন অবস্থায় যে তাঁর ডানাগুলো বিস্তৃত অবস্থায় থাকবে আর সেগুলো আল্লাহর প্রশংসা করতে থাকবে। তিনি তাসবিহ (আল্লাহর প্রশংসা)-রত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবেন। তাঁর চেহারা নিম্নে পতিত হবে এমতাবস্থায় তিনি আল্লাহর প্রশংসারত থাকবেন। এরপর আল্লাহ বলবেন, আর কে বাকী আছে? তখন মৃত্যুর ফেরেশতা বলবেন, ইয়া আল্লাহ, কেবল আপনি আর আমিই বাকী আছি। আল্লাহ মৃত্যুর ফেরেশতাকে আদেশ করবেন মৃত্যুবরণ করার জন্য। আর...প্রবন্ধ
আল্লাহ সবকিছু জানেন এর দ্বারা আসলে কী বোঝায়?
— নোমান আলী খান আজ আমি আপনাদের সাথে আল্লাহর একটি নাম নিয়ে আলোচনা করবো যা কুরআনে বহু বার এসেছে। আর সে নামটি হল: আল-আলীম, যিনি সবকিছু জানেন। আল্লাহ কুরআনে বার বার উল্লেখ করেছেন – তিনি সবকিছু জানেন। “وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ” – যে আয়াতটির উদাহরণ দিয়ে আমি আলোচনা শুরু করতে চাই তা হল, কুরআনের ৬৪ তম সূরা, সূরা আত-তাগাবুনের একটি আয়াত। তিনি বলেন – يَعْلَمُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَيَعْلَمُ مَا تُسِرُّونَ وَمَا تُعْلِنُونَ – “নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলে যা আছে, তিনি তা জানেন। তিনি আরও জানেন তোমরা যা গোপনে কর এবং যা প্রকাশ্যে কর।” তাহলে আপনি যা সবার অগোচরে করেন আর যা সবার সম্মুখে করেন – আল্লাহ তার সবই জানেন। وَاللَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ – “এছাড়াও আল্লাহ অন্তরের অবস্থা সম্পর্কেও সম্যক জ্ঞাত।” মানুষের মনের মাঝে যা লুকিয়ে আছে তার প্রকৃতি এবং আসল অবস্থা সম্পর্কে আল্লাহ সবসময় পুরোপুরি জানেন। এটি অসাধারণ একটি আয়াত। নতুন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, এই আয়াত থেকে স্পষ্টত যা বুঝা যায় তার বাহিরে গিয়ে চিন্তা করুন। আমরা জানি, আল্লাহ সবকিছু জানেন। আমরা জানি, আমাদের বাহ্যিক ব্যাপারগুলো আল্লাহ যেমন জানেন তেমনি তিনি আমাদের গোপন ব্যাপারগুলোও জানেন। আমরা জানি, আল্লাহ সাত আসমানের সবকিছু জানেন। চলুন, এর থেকে কিছু বিষয় সঠিক দৃষ্টিকোণ থেকে চিন্তা করে দেখি। আল্লাহ কিভাবে আমাদের নিকট তুলে ধরেন যে, আল্লাহ যা জানেন তা কোনদিনও কোনভাবেই আমাদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। আল্লাহর নামের মর্ম উপলব্ধি করার একটি সর্বোত্তম পন্থা হল আমাদের নিজেদের সীমাবদ্ধতা বুঝতে পারা। তারপর তুলনা করলে বুঝতে পারব আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল্লার ক্ষমতা কতটা ব্যাপক আর আমরা কতটা তুচ্ছ এবং অক্ষম বান্দা। চলুন, ইতিহাসের জ্ঞান দিয়ে শুরু করা যাক। কখন কোন যুদ্ধ হয়েছে, কোন রাজা জয়লাভ করেছে, কোন জাতির উপর বিজয়ী হয়েছে, একটি রাজবংশ...●|● পৃথিবীঃ আমাদের দ্বিতীয় জীবন – উস্তাদ নোমান আলী খান ●|●
কেমন করে তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে কুফরী অবলম্বন করছ? অথচ তোমরা ছিলে মৃত। (বাকারা – ২৮) এই আয়াতটি খুবই গভীর দার্শনিক অর্থ বহন করে। এই আয়াত সম্পর্কে অনেক কিছু বলা হয়েছে। যে মতামতগুলো আমার কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে সেগুলো এখন আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। আমি মরহুম ইসরার আহমেদের কাছে কৃতজ্ঞ। এই আয়াত থেকে সবচেয়ে গভীর অন্তর্দৃষ্টি আমি তার কাছ থেকেই পেয়েছি। তিনি ১৯৮৬ সালে এই আয়াত নিয়ে একটি প্রবন্ধ রচনা করেন। ভারত পাকিস্তানের বহু আলেম তার এই প্রবন্ধের প্রশংসা করেন। আমি এখন আপনাদের নিকট তার একটি সারমর্ম তুলে ধরবো। কারণ আমি মনে করি এটি অনেক মূল্যবান। আল্লাহ আজ্জা বলেন, كَيْفَ تَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَكُنتُمْ أَمْوَاتًا – কেমন করে তোমরা আল্লাহর ব্যাপারে কুফরী অবলম্বন করছ? অথচ তোমরা ছিলে মৃত। প্রথম পর্যায় – وَكُنتُمْ أَمْوَاتًا তোমরা মৃত ছিলে। দ্বিতীয় পর্যায় – فَأَحْيَاكُمْ অতঃপর তিনি তোমাদের জীবন দান করেছেন। ৩য় পর্যায় – ثُمَّ يُمِيتُكُمْ তারপর তিনি তোমাদের মৃত্যু দান করবেন; ৪র্থ পর্যায় – ثُمَّ يُحْيِيكُمْ তারপর তিনি তোমাদের আবার জীবিত করবেন। প্রথম পর্যায়টা কী ছিল? তোমরা মৃত ছিলে। আমাদেরকে প্রথম যে বিষয়টি বুঝতে হবে তা হলো – মৃত আর অস্তিত্ব না থাকা একই বিষয় নয়। যেমন, মৃত কাউকে কফিনে রাখা হয়েছে এবং তার জানাজা হচ্ছে – এর মানে এই নয় যে তার কোনো অস্তিত্ব নেই। প্রকৃতপক্ষে, পৃথিবীর যে কোনো ভাষায় মৃত বলতে এমন কাউকে বোঝায় যার পূর্বে জীবন ছিল। সুতরাং এই আয়াতে মনে হয় যেন একটি ইঙ্গিত রয়েছে…(আমরা একটু পর আবার এ বিষয়ে আলোচনা করবো, তার পূর্বে কিছু বিষয় বুঝে নেয়া জরুরি) কুরআন এবং রাসূল (স) এর সুন্নায় – মৃত্যুকে ঘুমের কাছাকাছি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। মৃত্যু এবং ঘুম একে অন্যের সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। ঘুমাতে যাওয়ার সময় আমরা কী পড়ি? ‘আল্লাহুম্মা বিসমিকা আমূতু...আমাদের ধর্ম আপনাকে এই দুনিয়ায় দুর্দশাগ্রস্থ জীবন যাপন করতে বলে না।
—নোমান আলী খান। ইব্রাহিম (আ) আল্লাহর নিকট দুআ করেন- رَبِّ اجْعَلْ هَٰذَا بَلَدًا آمِنًا وَارْزُقْ أَهْلَهُ مِنَ الثَّمَرَاتِ مَنْ آمَنَ مِنْهُم بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ – ‘হে আমার প্রতিপালক! আপনি এ শহরকে নিরাপদস্থল করুন এবং এর অধিবাসীদের মধ্যে যারা আল্লাহ ও পরকালের উপর ঈমান আনে, তাদেরকে ফলমূল হতে জীবিকা প্রদান করুন’। (২:১২৬) এই উম্মাহর ভবিষ্যতের জন্য ইব্রাহিম (আ) এর মূল উদ্বেগ ছিল— নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধি। উম্মাহর নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধি নিয়েই তিনি উদ্বিগ্ন ছিলেন। অন্য যে কোনো কিছুর চেয়ে। যারা আল্লাহ এবং শেষ বিচারের দিনে বিশ্বাস করে তাদের জন্য তিনি এটাই চেয়েছেন। আমাদেরকে এই ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে হবে। আমাদের ধর্ম এই দুনিয়াতে আপনার জীবনকে সৌন্দর্যময় করে তোলে, একই সাথে এটা আপনাকে এমন এক আখিরাতের জন্য প্রস্তুত করে যা আরো সৌন্দর্যময়। এটা যেমন আপনাকে দুনিয়ার সামগ্রীর জন্য অতিরিক্ত ভোগ বিলাসী করে তোলে না, একই সাথে এটা আপনার জীবনকে দুর্দশাগ্রস্তও করে তোলে না। আল্লাহ আপনাকে এই দুনিয়াতে সুখী করতে চান এবং পরকালেও তিনি আপনাকে সুখী করতে চান। আল্লাহ বলেন, وَ جَعَلۡنَا لَکُمۡ فِیۡهَا مَعَایِشَ ؕ قَلِیۡلًا مَّا تَشۡکُرُوۡنَ – “তোমাদের জন্য তাতে রেখেছি জীবনোপকরণ। তোমরা অল্পই কৃতজ্ঞ হও।” (৭:১০) তিনি এই পৃথিবীতে এমন সব উপকরণ রেখেছেন যা ব্যবহার করে তোমরা ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারবে। এমনকি আমরা যখন জান্নাতের কথা বলি, তিনি জান্নাতের কোন কোন নিয়ামতের বর্ণনা দিয়েছেন? গাছপালা, বাগান, ঝর্ণাধারা, সম্পদ, সুন্দর জামাকাপড়, অলংকার, সুন্দর স্বামী স্ত্রী। যদি এগুলোর কোনোটার কোনো আনন্দ এই দুনিয়াতে উপভোগ না করতেন তাহলে কোনোদিন কি জান্নাতের গুলোর জন্য আকৃষ্ট হতেন? কল্পনা করুন, এই দুনিয়াতে কোনো গাছ নেই। আল্লাহ যখন বলেন— জাওয়াতা আফনান (উভয় উদ্যানই ঘন শাখা-পল্লববিশিষ্ট) , মুদহাম্মাতান (কালোমত ঘন সবুজ)। আপনি তখন বুঝতেন? এগুলো কী? আল্লাহ যদি এই দুনিয়াতে আমাদেরকে ঝর্ণাধারা না দেখাতেন এবং কুরআনে বলতেন,...পরীক্ষা : সম্মান ও অনুগ্রহ দান
–উস্তাদ নোমান আলী খান। আল্লাহ বলেন – فَأَمَّا الْإِنسَانُ إِذَا مَا ابْتَلَاهُ رَبُّهُ فَأَكْرَمَهُ وَنَعَّمَهُ فَيَقُولُ رَبِّي أَكْرَمَنِ – ” মানুষ এরূপ যে, যখন তার পালনকর্তা তাকে পরীক্ষা করেন, অতঃপর সম্মান ও অনুগ্রহ দান করেন, তখন বলে, আমার পালনকর্তা আমাকে সম্মান দান করেছেন।” আল্লাহ এখানে বলছেন তিনি মানুষকে সম্মান এবং অনুগ্রহ প্রদান করার মাধ্যমে পরীক্ষা করেন। এখানে তিনি ‘আনআমাহু’ বলেন নি, তিনি বলেছেন – نَعَّمَهُ অর্থাৎ তিনি বার বার দিতে থাকেন। তিনি তার জীবনকে ক্রমান্বয়ে উন্নত করতে থাকেন… ফলে আপনি দেখতে পান সমাজে হঠাৎ করেই তার সম্মান বেড়ে যায়। কারো কারো ভার্সিটি থেকে ডিগ্রি অর্জন করলে সম্মান বেড়ে যায়। আবার কেউ ভালো কোন চাকরি পেলেও সমাজে তার সম্মান বেড়ে যায়। এখন প্রশ্ন হল কেউ সম্মান অর্জন করার পর যদি বলে, “আল্লাহ আমাকে সম্মানিত করেছেন” তাহলে এখানে সমস্যা কোথায়? কিন্তু এই আয়াতে এই কথাটি সমালোচনামূলক অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এখানে সমালোচনাটি হলো, “আল্লাহ আমাকে সম্মানিত করেছেন” এই কথা বলে আপনি থেমে যেতে পারেন না। আপনাকে বলতে হবে আল্লাহ আমাকে সম্মানিত করেছেন, আর এই সম্মানিত করার মাধ্যমে তিনি আমাকে পরীক্ষা করছেন। আয়াতের ভাষা ছিল, ” যখন তার পালনকর্তা তাকে পরীক্ষা করেন।” আর সেই পরীক্ষার অংশ হিসেবে তিনি তাকে সম্মান দান করেন এবং অবিরাম নেয়ামত দান করতে থাকেন। এখন বান্দা কীভাবে সাড়া দেয়? বান্দা শুধু নিজের উন্নতিই দেখতে পায়। আল্লাহ যে তাকে পরীক্ষাও করছেন সেই ব্যাপারটা উপলব্ধি করতে সে ব্যর্থ হয়। এখানে পার্থক্যটা কোথায়? আপনি যদি এটাকে আপনার প্রতি আল্লাহর সম্মান ও অনুগ্রহ মনে করেন এবং পরীক্ষা মনে না করেন তাহলে আপনি ভাববেন – “আল্লাহর কাছে আমি মনে হয় অনেক ভালো তাই তিনি আমাকে এতোসব নেয়ামত দান করছেন। আল্লাহ আমাকে সম্মান দান করেছেন কারণ আমি নিশ্চয়ই সম্মান পাওয়ার যোগ্য। আল্লাহ অনেক ভালো।” জীবনে...সবচেয়ে বিশুদ্ধ বুদ্ধির মানুষ কারা?
— নোমান আলী খান। মানুষের মাঝে যাদের সবচেয়ে পরিপক্ক ঈমান রয়েছে কুরআনে তাদের জন্য একটি পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, আর তা হলো – উলুল আলবাব বা সবচেয়ে পরিশুদ্ধ বুদ্ধির মানুষ। আল্লাহ এই মানুষদের কথা সূরা আলে-ইমরানে বলেছেন – إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ – “নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিতে এবং রাত্র ও দিনের আবর্তনে জ্ঞানবানদের (উলুল আলবাবদের) জন্য বহু নিদর্শন আছে।” (৩:১৯০) তারা ঈমানের বুদ্ধিবৃত্তিক অনুসন্ধানে এবং ঈমানের আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানে এক ধরণের পরিপক্কতায় পৌঁছে গিয়েছে, এমনকি কুরআনের সংস্পর্শে আসার পূর্বেই। সবচেয়ে পরিণত ঈমানের মানুষেরা ঐশী জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পাওয়ার পূর্বেই নিজেদের ভেতর বিশ্বাসের ভিত গড়ে তুলেছিলেন। চলুন দেখি, কীভাবে? আল্লাহ বলেন – “ইন্না ফিই খালকিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়াখতিলাফিল লাইলী ওয়ান নাহারি…” নিশ্চয়ই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টিতে এবং রাত্র ও দিনের আবর্তনে “লাআ-ইয়াতিন” অলোকিক নিদর্শন রয়েছে, শুধু একটা নয়, বহু বহু নিদর্শন রয়েছে এর প্রত্যেকটাতে। রাতের মাঝে অনেক শিক্ষা আছে, দিনের মাঝে অনেক শিক্ষা আছে, আকাশের মাঝে অনেক শিক্ষা আছে, পৃথিবীর মাঝেও অনেক শিক্ষা আছে। এর প্রত্যেকের মাঝে রয়েছে অনেক অনেক শিক্ষা। কার জন্য? উলুল আলবাব-দের জন্য। সবচেয়ে পরিশুদ্ধ বুদ্ধির মানুষদের জন্য, খাঁটি বুদ্ধিমত্তার অধিকারী মানুষদের জন্য। এখন, খাঁটি বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞা কী? আল্লাহ কিভাবে খাঁটি বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন? তিনি পরবর্তী আয়াতে “উলুল আলবাব-দের” পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন – الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ – যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে…. তাহলে উলুল আলবাবদের প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো, যারা সবসময় আল্লাহকে স্মরণ করে। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল, “ওয়া ইয়াতা ফাক্কারুনা ফিই খালিকস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ” এবং তারা আকাশ ও জমিনের সৃষ্টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে। তাহলে এখন দেখুন…...মু’জিযা

“সব কিছুই নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে” ও অলৌকিক মু’জিযা
বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ “সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চন্দ্রের নাগাল পাওয়া, আর রজনীর পক্ষে সম্ভব নয় দিবসকে অতিক্রম করা; আর প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে (Orbit) অতিক্রম করছে (সাঁতার কাটছে)” [সূরা ইয়াসিনঃ ৪০] আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা এখানে আসমানের সকল কিছুর বর্ণনা করছেন। প্রত্যেকেই তাদের নিজেদের কক্ষপথে ভাসছে, সাঁতার কাটছে, ঘুরছে। তিনি কী নিয়ে কথা বলছেন? চন্দ্র, সূর্য, গ্যালাক্সি, প্ল্যানেট ইত্যাদি। তিনি বলছেন এগুলোর সবই নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে। এখানে আল্লাহ কী শব্দ ব্যবহার করেছেন সবার ‘নিজ নিজ কক্ষপথে’ বুঝানোর জন্য? এর জন্য আল্লাহ বলছেনঃ كُلٌّ فِي فَلَك আরবিটা লক্ষ করেছেন? আরো একটু গভীরভাবে লক্ষ করুন তবেই বাক্যাংশটির অলৌকিক মু’জিযাটা বুঝতে পারবেন। আল্লাহ বলছেন, “প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে।” এবার আরবিতে দেখুন – কীভাবে শব্দগুলোও অর্থের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, আসমানের প্রত্যেকটি জিনিসের ঘূর্ণনের অর্থের সাথে যেই বাক্যটি দিয়ে, যেই শব্দগুলো দিয়ে, যেই অক্ষরগুলো দিয়ে আল্লাহ বলেছেন এই কথা, সেই অক্ষরগুলোও ঘুরছে নিজ নিজ কক্ষপথে (ছবিটি লক্ষ্য করুন)!!! সুবহানাল্লাহ! কীভাবে ঘুরছে? كُلٌّ فِي فَلَك প্রথম শব্দের প্রথম অক্ষর (ك) শেষ শব্দের শেষ অক্ষর (ك) প্রথম শব্দের দ্বিতীয় অক্ষর (ل) শেষ শব্দের দ্বিতীয় শেষ অক্ষর (ل) প্রথম শব্দের তৃতীয় অক্ষর (فِ) শেষ শব্দের প্রথম অক্ষর (فِ ِ) এখানে বাকি আছে (ي) অক্ষরটি – আর ঘূর্ণন অর্থের জন্য কী শব্দ? يَسْبَحُونَ (ঘুরছে) ঘূর্ণনের অর্থের জন্য যে শব্দটা ব্যবহৃত সেটা শুরু হয়েছে (ي) দিয়ে আর মাঝখানে আছে (ي) অর্থাৎ অক্ষরটা কিন্তু “নিজ নিজ কক্ষপথে” এর মাঝে রয়েছে আর তার চারপাশে অন্যান্য অক্ষর ঘুরছে অর্থাৎ ঘূর্ণন অর্থের জন্য যেই শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে সেই শব্দের অক্ষরের চারপাশে সবই ঘুরছে!!! অর্থাৎ আয়াতের অক্ষরসমূহ শব্দের অক্ষরগুলোর ঘূর্ণনের সাথে আসমানের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সব কিছুর নিজ নিজ কক্ষপথে ঘূর্ণনের সাথে কী অপূর্ব মিলে যাচ্ছে !! সুবহানাল্লাহ !!...
কুরআনের ভাষাগত মু’জিযা (পর্ব ৩) – মক্কা নাকি বাক্কা?
আরেকটি চমৎকার তুলনা হতে পারেঃ মক্কা আর বাক্কা। মক্কার এই দুটি নাম কি আগে কখনো শুনেছেন আপনারা? দুটি নামই একবার করে এসেছে কুরআনে। কুরআনে আল্লাহ আযযা ওয়া জাল মক্কা শব্দটি ব্যবহার করেছেন সূরা মুহাম্মাদে। আবার সূরা আল ইমরানে ব্যবহার করেছেন বাক্কা শব্দটি।ইতিহাসগতভাবে শব্দ দুটি মক্কা শহরটিরই ভিন্ন দুটি নাম মাত্র। অনেকে বলে থাকেন যে বাক্কা ছিল প্রাথমিক সময়ের নাম আর মক্কা পরবর্তী সময়ের। তবে ভাষাতাত্ত্বিকদের মত এই যে, মক্কা হল শহরটির মূলনাম আর বাক্কা হল এর ডাকনাম। বাক্কা শব্দটি এসেছে আরবি ক্রিয়াপদ “বাক” থেকে, যার অর্থ “জনাকীর্ণতা”। প্রচুর লোকের সমাগমে ভিড় সৃষ্টি হওয়া, আধুনিক আরবিতে যাকে বলা হয়ে থাকে “আল-ইজদিহাম”। এখন দেখা যাক, সূরা ইমরানে বাক্কা শব্দটি ব্যবহার হয়েছে, যেখানে শব্দের শুরুতে উপস্থিত “বা” ধাতুটির উৎপত্তি “ভিড়” শব্দটি থেকে। এখানে যেই আয়াতগুলো রয়েছে সেগুলো মূলত হজ্জের আয়াত – “ওয়া লিল্লাহি আলান নাসি হিজ্জুল বায়িত”। হজ্জ শব্দটির সাথে কীসের চিন্তা মাথায় আসে? লোক সমাগম, ভিড়। তাহলে হজ্জের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে উপযুক্ত শব্দ কোনটি? বাক্কা। কিন্তু সূরা মুহাম্মাদের উল্লেখিত অংশে হজ্জের কোন কথাই নেই, তাই সেখানে এসেছে মূল শব্দটি – মক্কা। সুবহান আল্লাহ! আমাদের জন্য মক্কা, বাক্কা তো একই শব্দ, একটার জায়গায় আরেকটা তো ব্যবহার করাই যায়। শব্দ দুটি একই জিনিসের দুটি ভিন্ন নাম বটে, তবে কুরআনে শব্দ দুটির ভিন্ন প্রয়োগ এর পুঙ্খানুপুঙ্খতার মানদণ্ডে যে মাত্রা যোগ করেছে তা কুরআনের অপ্রতিদ্বন্দ্বীটার আরেকটি প্রমাণ ছাড়া আর কিছুই নয়। মানুষ যখন কথা বলে তখন এরকম পরিপূর্ণ সূক্ষ্মতা বজায় রাখতে পারে না। এভাবে সে চিন্তাই করতে পারে...
কুর’আনের ভাষাগত মু’জিযা (পর্ব ২) – ইয়াসরিব নাকি মদীনা?
স্ক্রীনে দেখানো দুটো নামই আপনারা জানেন, ইয়াথরিব এবং মদীনা। দুটোই কি একই শহরের নাম? অবশ্যই। কুরআন মদীনা শহরের কথা বলার সময় “মদীনা” শব্দটি বহুবার ব্যবহার করেছে। স্ক্রীনে আপনাদের জন্য অন্তত সেরকম তিনটি আয়াত দেখানো হয়েছে। কিন্তু কুরআন মাত্র একবার “ইয়াথরিব” শব্দটি ব্যবহার করেছে। শুধুমাত্র সুরা আহযাবে, ব্যস! কুরআনের অন্য কোথাও “ইয়াথরিব” শব্দটি ব্যবহার করা হয় নি। দুটোই কিন্তু মদীনারই নাম। তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া যেতে পারে, দুটোই তো একই জিনিস, তাই না? তাহলে আমি কেন ইয়াথরিব শব্দটি বদলে মদীনা লিখতে পারি না? অথবা মদীনার না বলে ইয়াথরিব বলি না? তোমরা বারবার বল, কুরআনের শব্দচয়ন পুরোপুরি পারফেক্ট। তোমরা তো জানই ইয়াথরিব আর মদীনা দুটোই একই জিনিস। তাহলে কেন ইয়াথরিবের বদলে মদীনা কিংবা মদীনার বদলে ইয়াথরিব ব্যবহার করা যাবে না? কতটুকুই আর হেরফের হবে তাতে? এই সামান্য পরিবর্তনে কি আসে যায়? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে আমাদের ইতিহাসের দিকে একটু তাকাতে হবে। রাসুল (স) মদীনায় আসার আগে মদীনার নাম কি ছিল? ইয়াথরিব। রাসুল (স) আসার পর তাকে যখন সবাই একবাক্যে নেতা বলে ঘোষণা দিল, তখন শহরটার নাম হল “মদীনাতুন্নাবী” বা “নবীর (স) শহর”। সংক্ষেপে “শহর”। তাহলে মদীনা শব্দটি কিসের সংক্ষিপ্ত রূপ? “নবীর (স) শহর” শব্দটির। আর আসল নাম “ইয়াথরিব”। অথবা আপনারা এভাবেও ভাবতে পারেন যে, রাসুল (স) আসার আগে শহরটির নাম ছিল ইয়াথরিব, আর উনি আসার পর এর নাম হল মদীনা। মজার ব্যাপার হল, সুরাতুল আহযাব, সুরা নম্বর ৩৩ এ আসলে মদীনা এবং ইয়াথরিব, দুটোই ব্যবহার করা হয়েছে, একই সুরাতে। আরও মজার ব্যাপার হল, সুরাতুল আহযাব একটি মাদানী সুরা। মাদানী সুরার ব্যাপারে আমরা কি জানি? রাসুল (স) সেসময় কোথায় ছিলেন? মদীনাতে। তাহলে তখন শহরটাকে কি বলা হত? মদীনা, কিন্তু এখানে আমরা “ইয়াথরিব” শব্দটি দেখতে পাচ্ছি। ধাঁধাঁটা ধরতে পারছেন তো? ব্যাপারটা হল,...
কুর’আনের ভাষাগত মু’জিযা (পর্ব ১) – শুয়াইব (আঃ)
শুয়াইব (আঃ), আপনারা জানেন তিনি একজন নবী, ঠিক? এখন নবী (আঃ) হিসেবে তাঁর নাম কুর’আনে বহুবারে এসেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “ওয়া ইলয়া মাদিয়ানা আখা’খুম শুয়াইবা” মাদিয়ানের নিকট আমি প্রেরণ করেছিলাম তাদের ভাই শুয়াইবকে (আঃ)। এখন একটা কথা বলে রাখি, কোন জাতির কাছে শুয়াইব (আঃ) কে প্রেরণ করা হয়েছিল? মাদিয়ান.. ঠিক? এখন মাদিয়ান একই সাথে দুটি জিনিস কে বোঝায়, ঠিক আছে? মাদিয়ান দুইটি অর্থ বহন করে। মাদিয়ান একই সাথে একটা জায়গার নাম আবার একই সাথে এটি একটি জাতির নাম। ঐ জাতিটিকে মাদিয়ান বলা হয়, আবার তাদের জায়গা কেও মাদিয়ান বলা হয়। এবং আল্লাহ বলেন মাদিয়ানের নিকট আমি প্রেরণ করেছিলাম তাদের ভাই শুয়াইবকে (আঃ)। সূরা শু’রায়, ২৬তম সূরা, আল্লাহ তায়ালা আমাদের বিভিন্ন নবী-রাসূলদের ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “Idh qaala lahum akhuhum Lootun; idh qaala lahum akhuhum Saalihun; idh qaala lahum akhuhum Hoodun; idh qaala lahum akhuhum Noohun”- যখন তাদের ভাই নুহ (আঃ) কে তাদেরকে বললো। এর পরের বর্ণনায় আরেক নবীর কথা বলা হয়। যখন তাদের ভাই সালিহ (আঃ) কে বললো, তার নিজের জাতির কাছে। তারপর আসেন হুদ (আঃ)। যখন তাদের ভাই হুদ (আঃ) তাদেরকে বললো। তারমানে সালিহ, হুদ, নুহ এবং লুত (আঃ) – চারজনের বেলায়ই বলা হলো তাদের ভাই, তাদের ভাই, তাদের ভাই। পঞ্চম স্থানে শুয়ায়ব (আঃ) এর কথা বলা হচ্ছে। আল্লাহ বলেন – যখন শুয়াইব তাদেরকে বললো। এখানে তিনি শুধু বললেন “ইয কালা লাহুম শুয়াইবুন” যখন শুয়াইব তাদেরকে বললো। একই সূরায় আগের সব নবীদের সাথে কী বলা হয়েছিল? তাদের ভাই নুহ, তাদের ভাই সালিহ, তাদের ভাই লুত, তাদের ভাই হুদ। কিন্তু যখন শুয়াইব (আঃ) এর কথা বলা হলো তখন বলা হলো শুধু শুয়াইব – এখানে ভাই কথাটির উল্লেখ নাই। আরো মজার ব্যাপার হলো কুর’আনের অনান্য জায়গায় আল্লাহ বলেন “ওয়া...