ভিডিও + প্রতিলিপি
আট পর্যায়ের অধ্যবসায়ঃ আপনি কোনটার পিছে ছুটছেন?
...অন্তহীন শূন্যতাঃ সমাধান কী?
আল্লাহ সুব হা নাহু ওয়া তায়ালার সবচেয়ে গৌরবজনক নাম হলো আল্লাহ। এটাই আল্লাহ সুব হা নাহু ওয়া তায়ালার প্রধান নাম। আর আল্লাহ নামটি এসেছে আল-ইলাহ থেকে অর্থাৎ যার উপাসনা করা হয়, যার ইবাদাত করা হয়। এজন্য সমগ্র কুরআন জুড়ে আল্লাহ নামটির ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। আপনাকে আমাকে এই কথা স্মরণ করিয়ে দেয়ার জন্য যে, যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, যিনি আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছেন, যাকে আমরা বিপদের সময় ডাকি – একমাত্র তিনিই আমাদের উপাসনা পাওয়ার যোগ্য। আমাদের এই মালিক, যাকে আমরা আল্লাহ নাকে ডাকি, তিনি সকল সুন্দরতম নাম এবং উপাধির অধিকারী। আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা হলেন – আল ওয়াদুদ- ভালবাসাপূর্ণ, স্নেহময় এবং প্রিয়তম। এই পৃথিবীতে আপনার জন্য যত ভালবাসাই থাকুক না কেন – সেটা হতে পারে আপনার বন্ধুদের নিকট থেকে, আপনার স্ত্রীর কাছ থেকে, আপনার মাতা পিতার কাছ থেকে, এই দুনিয়ার অন্য সবার কাছ থেকেই হউক – আপনার অন্তর সবসময় অপূর্ণ থেকে যাবে। আর এই অপূর্ণতা একমাত্র আল্লাহর ভালবাসার মাধ্যমেই পূর্ণ হতে পারে। এ বিষয়টি ইবনে কাইয়েম (র) এভাবে বর্ণনা করেছেন- ”প্রকৃতপক্ষে অন্তরের শূন্যতা একমাত্র আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালার ভালবাসার মাধ্যমেই পূর্ণ হতে পারে।” এই ব্যাপারটি আমাদের অনেকেই উপলব্ধি করতে সমর্থ হয় না। মানব জাতির অনেকেই এটা উপলব্ধি করে না। তাই তারা অন্তরের এই শূন্যতা দুনিয়াবী লালসা দ্বারা পূর্ণ করতে চায়। হতে পারে সম্পদের মাধ্যমে, নারীর মাধ্যমে বা অন্য যে কোন মাধ্যমে- তারা প্রবৃত্তির লালসা দ্বারা এটা পূর্ণ করতে চায়। কিন্তু এতোসব কিছু দ্বারা চেষ্টা করা সত্ত্বেও এই শূন্যতা তারা আরও তীব্রভাবে অনুভব করে। তারা হয়তো এই শূন্যতা মদ্যপানের মাধ্যমে পূরণ করতে চায় বা যে কোন নেশাজাতিয় দ্রব্যের মাধ্যমে- কিন্তু এর পরিণতি কি? আবার সেই শূন্যতা। তারা দুনিয়াবি সব কিছু দ্বারা অন্তরের এই ফাঁকা জায়গাটা পূর্ণ করতে চায়...অসৎ সঙ্গ এড়িয়ে চলুন
তরুণ-তরুণীরা দয়া করে মনোযোগ দিয়ে শুনুন। আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা সূরা ফুরকানের ৭২ নং আয়াতে বলেন – وَالَّذِينَ لَا يَشْهَدُونَ الزُّورَ ”তারা এমন মানুষ যারা কখনো অর্থহীন বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে থাকে না।” ‘যুর’ শব্দটির অর্থ হলো মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া কিংবা এর আর একটা মানে হলো এমন সঙ্গী যারা অকেজো, যাদের দ্বারা কোনো উপকার আশা করা যায় না, তারা ‘বাতিল’। অন্যভাবে বললে তারা রাতের ২টা পর্যন্ত আড্ডাবাজি করে না। তারা রাত ৩ টা পর্যন্ত অর্থহীন কথাবার্তা বলতে থাকে না। তারা এমনটা করে না। কিন্তু কেন করে না? কারণ তারা তাওবা করেছে। আর যখন কেউ তাওবা করে সে জানে… আপনি যখন কোন বড় পাপ করে ফেলেন, জানেন? সেই বড় পাপ কাজ করতে কিভাবে উদবুদ্ধ হয়েছেন? আপনি শুরু করেন খুব ছোট গুনাহ দিয়ে আর সেটা ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে তারপর আপনি বড় গুনাহ করে ফেলেন। আর একসময় বুঝতে পারেন আপনার গুনাহ গুলো সঙ্গদোষের কারণেই হয়েছে। যাদের সাথে আপনি সময় কাটান তারা আপনার জন্য এসব পাপ করা খুব সহজ করে দিয়েছিলো। তো আল্লাহ বলেছেন যখন তারা তাওবা করে ফেলেছে তারা নিশ্চিত করে যেন কখনোই কোন অশুভ আড্ডায় বসতে না হয়। তারা কখনো কোন মিথ্যার আসরে সময় কাটায় না। কখনো কখনো আপনি পার্টিতে যাওয়ার দাওয়াত পেয়ে যান, আর যারা দাওয়াত করে তারা হয়ত খুব একটা ধার্মিক নয়। তো সেখানে কান ফাটানো বাজনা বাজে, মেয়েরা মেকআপ করে আসে, ছেলে মেয়ে সবাই একসাথে। আর আপনি এই পার্টির মাঝে আটকা পড়েছেন। আপনি নিশ্চয়ই দাঁড়িয়ে বলবেন না, ‘ওয়াল্লাযীনা লা ইয়াশহাদুনা আয্যুরা’ আর বলে হন হন করে বেরিয়ে গেলেন! কিন্তু আপনি অযুহাত দেখাতে পারেন। ‘আমার একটু বের হতে হবে’ বলে বেরিয়ে পড়লেন। আপনি মসজিদে মাগরিব পড়লেন আর ইশা পর্যন্ত সেখানেই রইলেন। ইশা পড়ে পার্টিতে ফেরত এসে দেখলেন সবাই...অহেতুক তুলনা করবেন না
কুরআন তেলাওয়াতে পারদর্শী নয় এইরকম একজন যুবক ভাই একদিন আমাকে একটা প্রশ্ন করেছিলেন। প্রশ্নটা ছিল এইরকম – ‘আমি সবসময় ভালো করে কুরআন পড়ার চেষ্টা করি কিন্তু এত চেষ্টা করার পর ও আমি শুদ্ধ করে পড়তে পারি না’। যুবকের কথা শুনে মনে হচ্ছিল সে খুবই আবেগী প্রকৃতির মানুষ। একদিন সে রেডিও তে কোন এক প্রোগ্রামে একটা ছোট বাচ্চার কুরআন তেলাওয়াত শুনছিল। সেই বাচ্চাটা এত সুন্দর করে পড়ছিল যে ওই প্রোগ্রাম এর শিক্ষক বলছিলেন, ‘সুবহানআল্লাহ! তোমার নফ্স, তোমার মন খুব পবিত্র। তুমি খুব পবিত্র। আর এই কারণে আল্লাহ তোমাকে এত সহজে, এত সুন্দর করে তেলাওয়াত করার ক্ষমতা দিয়েছেন’। তো এই কথা শুনে ওই যুবক চিন্তায় পড়ে গেল এবং ভাবতে লাগলো – আমি মনে হয় ভালো মানুষ না, এজন্যে আমি ভালো করে কুরআন পড়তে পারি না, আমার আত্মা পবিত্র না। এসব ভেবে সে মানসিকভাবে কষ্ট পেতে লাগলো। যদিও আমি নিশ্চিত ওই রেডিও প্রোগ্রামের শিক্ষক এইরকম কিছু বোঝাতে চান নি, তিনি নিছক সেই বাচ্চা ছেলেকে উংসাহ দেয়ার জন্য এইরকম কিছু বলেছিলেন। এই প্রেক্ষিতে আসুন আমরা একটা হাদিস দেখি, রাসুল (স) বলেছেন ‘কুরআন তেলাওয়াতে পারদর্শী ব্যক্তিরা উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ফেরেশতাদের সাথে থাকবে। কিন্তু যারা উচ্চারণগত বা অন্য কোন সমস্যা থাকা সত্বেও কষ্ট করে পড়ার চেষ্টা করে, তারা এর দ্বিগুন পুরস্কার পাবে। (সহি মুসলিম)’ এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঐসব লোক কাদের তুলনায় এই দ্বিগুন পুরস্কার পাবে? সাধারণ তেলাওয়াতকারীদের তুলনায়? নাকি তেলাওয়াতে পারদর্শিদের তুলনায়? আমার মতে তেলাওয়াতে পারদর্শীদের তুলনায় এই দ্বিগুন পুরস্কার দেয়া হবে। কারণ একজন মানুষ কতটুকু অর্জন করলো আল্লাহ সেটাকে গুরুত্ব দেন না, আল্লাহ গুরত্ব দেন সে কী পরিমান চেষ্টা করলো সেটাকে। আমরা মানুষরাই অর্জনকে বেশি গুরুত্ব দেই, সবসময় দেখতে চাই ফলাফল কি, লাভ কতটুকু হলো? আমরা কতটুকু জানি, কতটুকু মুখস্ত করলাম, কতটুকু পড়লাম এই...এখনই সময় পরিবর্তনের
আমি দুয়া করি যেন আমরা সবাই, আমরা এই দর্শকদের সবাই, আমাদের পরিবারে কী করি, কী হয় সেটার দায়িত্ব নিই। আমি যদি বলি যে আমাদেরকে উম্মাহর সদস্য হিসাবে পরিবর্তন করতে হবে, তাহলে আপনি আসলে কোন দায়িত্ব নেওয়া ছাড়াই এখান থেকে বের হয়ে যাবেন। হ্যাঁ উম্মাহ! আমি জানি না এটা কী। আপনাকে দায়িত্ব নিতে হবে আসলে আপনার নিজের পরিবারে কি হচ্ছে সেটার। আপনার পরিবার হচ্ছে আপনার জন্য সরকারের মত, এবং সেখানে যখন দুর্নীতি হয় এর অর্থ আপনার ঘরের মাঝেই একটা ফ্যাসাদপূর্ন পরিবেশ চলছে। সেখানেই আপনার পরিবর্তন করতে হবে, যদি আপনার নিজের পরিবারেই পরিবর্তিত না হয়, দুনিয়া পরিবর্তনের কথা ভুলে যান। আপনি নিজে যদি ব্যক্তিগত ভাবে পরিবর্তিত না হয়ে থাকেন, তাহলে দুনিয়া পরিবর্তনের কথা বলবেন না। আপনি আসলে নিজের সাথেই রসিকতা করছেন। নিজেকে ধোঁকা দিচ্ছেন। কীভাবে এটা সম্ভব যে আপনি বলছেন আপনি নবীজী মুহাম্মদ (সঃ) এর উম্মাহকে ভালোবাসেন কিন্তু যেভাবে আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে ব্যবহার করছেন, তার সাথে নবীজী মুহাম্মদ (সঃ) উনার স্ত্রী- উম্মুল মু’মীনীনদের – সাথে যেভাবে ব্যবহার করতেন তার কোন মিলই নেই? কেমন করে এটা সম্ভব হতে পারে যে আপনি বলেন, আপনি নবীজী মুহাম্মদ (সঃ) কে ভালোবাসেন, বলেন যে আপনি পুরো বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ শিখে ফেলবেন, দুনিয়ার সব জ্ঞান আহরণ করে ফেলবেন, কিন্তু যেভাবে আপনি আপনার বাচ্চাদের সাথে কথা বলেন, তাদের সাথে আচরন করেন, তাতে কোন “রাহমা” নেই, যেখানে নবীজী মুহাম্মদ (সঃ) যখন উনার সন্তানদের সাথে আচরন করতেন “রাহমা” সহকারে? আপনি কেন শিখছেন এগুলো? কেন শিখছেন এসব? কীভাবে সম্ভব যে আপনি কিভাবে আপনার পরিবারের সাথে ব্যবহার করছেন তাতে কোন প্রভাবই ফেলছে না আপনার শিক্ষা? মাসজিদে পাশের মুসলিমের সাথে যে ব্যবহার করছেন তাতে কেন এর কোন প্রভাবই পড়ছেনা ? কীভাবে সম্ভব যে আপনি যেভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন তাতে এটা কোন প্রভাবই...প্রবন্ধ
রাগ সংবরণ করা যা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসে
●|●নোমান আলী খান ●|● কিছু লোক খুবই দুর্দশাগ্রস্থ জীবনযাপন করে কারণ তারা তাদের রাগ দূর করতে পারে না। তাদের ভেতর থেকে কোন কিছু তাদেরকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে অথচ তারা তার বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারছে না। ধীরে ধীরে তারা এটা মেনে নিচ্ছে যে “আমি আমার রাগ দূর করতে পারবো না এবং আমি নিশ্চিত আল্লাহ আমাকে ক্ষমা করবেন না কারণ আমি অনেক রাগী। আমি কাউকে মাফ করতে পারি না।” সাহাবীরা হুদাইবিয়ার সন্ধি নিয়ে অনেক রাগান্বিত ছিলেন কিন্তু আল্লাহ রাগ দূর করা নিয়ে কি বলেছেন? “ হুওয়াল্লাযী য় আনযালাস সাকীনাতা ফী কুলূবিল্ মুমিনীনা” (৪৮ঃ৪)- তিনিই মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করেছিলেন । তিনি মুমিনদের অন্তরে শান্তি, ধৈর্য, প্রশান্তি নাযিল করেছিলেন আকাশ থেকে। ধৈর্যশীলতা নিজ থেকে আসে না আর আমরা নিজেদের ধৈর্যশীল বানাতে পারি না। মূসা আ. এর মা চিন্তায়, ভয়ে মৃতপ্রায় ছিলেন যখন তিনি তার বাচ্চাকে পানিতে ভাসিয়ে দিচ্ছিলেন। আল্লাহ বলেন, “লাওলা আর রাবাতনা আলা ক্বালবিহা…”(২৮ঃ১০)- আমরা কি তাঁর হৃদয়কে দৃঢ় করিনি ও তাকে শক্ত রাখিনি? আল্লাহ তার অন্তরকে দৃঢ় করে দেন যার সাধ্য তাঁর ছিলো না। তিনি এটা নিয়ে ভয়ে ছিলেন, মানসিক অশান্তিতে ছিলেন। ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপ আপনাকে সাহায্য করে শান্ত হতে। কিছু লোক পাপ করে, নেশা করে, অশ্লীলতার প্রতি প্রলুব্ধ থাকে, অত্যাধিক রাগী হয় যে তারা তাদের রাগ সংবরণ করতে পারে না। কিছু লোক অতি লোভী, যারা সারাদিন টাকা নিয়ে ভাবে তারাও নিজেদের সাহায্য করতে পারে না। এই সকল সমস্যার সমাধান আসে আল্লাহর পক্ষ থেকে। এসব কারণেই আল্লাহ আকাশের দরজা দেন। আকাশের দরজা খুলে যায় এবং আপনার সমস্যার সমাধান হয়ে যায়। এটা আপনাকে পবিত্র করে দেয় যেমনভাবে পানি পৃথিবীকে পবিত্র করে। আল্লাহ বলেন, “ইয়ুমদিদ কুম বি আমওয়ালিন ওয়াবানিন” (৭১ঃ১২)- তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দিবেন। কিন্তু এটাই যথেষ্ট নয়। তিনি বলেন, “ওয়াজা...প্রজ্ঞা ও দক্ষতা
— নোমান আলী খান ভাইদের ষড়যন্ত্রের কারণে দাস হিসেবে ইউসুফ (আ) বিক্রিত হন। ফলে তিনি প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার কোনো সুযোগ পাননি। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আপনাকে সার্টিফিকেট দেয়, অনেকাংশেই বাস্তব দুনিয়ার পরিবর্তিত কর্মক্ষেত্রের অভিজ্ঞতা দেয় না। ফলে, এই তত্ত্বীয় সার্টিফিকেটও আপনার কর্মক্ষেত্রে কাজে লাগে না অনেক ক্ষেত্রে। কারণ, এটা আপনার কর্মক্ষেত্রের প্রয়োজনমাফিক বাস্তব শিক্ষা দেয়নি। ইউসুফ (আ) ছিলেন মন্ত্রীর বাড়িতে। এটা প্রাতিষ্ঠানিক কোনো শিক্ষাকেন্দ্র না, অভিজ্ঞতার কেন্দ্র। তাই, তিনি সার্টিফিকেটকে কেন্দ্র আগান নাই জীবনে। তিনি বরং বাস্তবিক কর্মক্ষেত্র দেখে শিখেছেন মন্ত্রীর কাছ থেকে। মন্ত্রীর আস্থাভাজন ও প্রিয়ভাজন হওয়ার কারণে তিনি মন্ত্রীর কাজ দেখাশোনা করতেন। ফলে, মন্ত্রী যে বড় বড় লোকেদের সাথে কথাবার্তা বলতেন, কাজ নিয়ে দেনদরবার করতেন, আলাপ করতেন, সমস্যা নিয়ে কথা বলে সমাধান দিতেন – এসবই তিনি লক্ষ্য করতেন ও শিখতেন। এরপর তিনি আরেক বড় ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে জেলে চলে যান। এখানে তিনি আল্লাহর দ্বীন প্রচার করতেন থাকেন। এমন অবস্থায় বাদশাহ খারাপ স্বপ্ন দেখেন। কেউ স্বপ্নের ব্যাখ্যা করতে পারে না। ইউসুফ (আ) কে আল্লাহ এই স্বপ্নের ব্যাখ্যা ও প্রজ্ঞা দিয়েছিলেন। ইউসুফ (আ) স্বপ্নের ব্যাখ্যা করে ছাড়া পান। ছাড়া পেয়ে তিনি অর্থমন্ত্রীর পদ তাকে দেওয়ার অনুরোধ করেন। তিনি সেটা পান। রাজার স্বপ্নের ব্যাখা ছিলো আসন্ন ৭ বছরব্যাপী দুর্ভিক্ষ সম্পর্কে। ৭ বছর ভালো ফলন হবে, এরপরের ৭ বছর দুর্ভিক্ষ হবে। টানা ৭ বছর দুর্ভিক্ষ মানে মিশর একদম শেষ হয়ে যাবে। না খেয়ে তো ৭ দিনও থাকা যায় না, আবার ৭ বছর! মানে বিরাট বিপদ, একটা জাতি পৃথিবীতে থেকে উজাড় হয়ে যাবে এই অবস্থার কারণে। ইউসুফ (আ) অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব নিলেন কেন? কারণ তার এই বিষয়ে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা রয়েছে। প্রজ্ঞা(হিকমাহ) হলো সেই জ্ঞান যা বাস্তব অভিজ্ঞতা ও কল্যাণ দেয়; এটা সার্টিফিকেট বা তত্ত্বীয় কোনো জ্ঞান নয়। তো, মিশরে ঐ সময়ে যত ফসল হতো...ভালো করে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারেন না, পড়তে কষ্ট হয়? তাহলে এই লেখাটি পড়ুন।
— উস্তাদ নোমান আলী খান কুরআন তেলাওয়াতে পারদর্শী নয় এইরকম একজন যুবক ভাই একদিন আমাকে একটা প্রশ্ন করেছিলেন। প্রশ্নটা ছিল এইরকম – ‘আমি সবসময় ভালো করে কুরআন পড়ার চেষ্টা করি কিন্তু এত চেষ্টা করার পরও আমি শুদ্ধ করে পড়তে পারি না’। যুবকের কথা শুনে মনে হচ্ছিল সে খুবই আবেগী প্রকৃতির মানুষ। একদিন সে রেডিও তে কোন এক প্রোগ্রামে একটা ছোট বাচ্চার কুরআন তেলাওয়াত শুনছিল। সেই বাচ্চাটা এত সুন্দর করে পড়ছিল যে ওই প্রোগ্রাম এর শিক্ষক বলছিলেন, ‘সুবহানআল্লাহ! তোমার নফ্স, তোমার মন খুব পবিত্র। তুমি খুব পবিত্র। আর এই কারণে আল্লাহ তোমাকে এত সহজে, এত সুন্দর করে তেলাওয়াত করার ক্ষমতা দিয়েছেন’। তো এই কথা শুনে ওই যুবক চিন্তায় পড়ে গেল এবং ভাবতে লাগলো – আমি মনে হয় ভালো মানুষ না, এজন্যে আমি ভালো করে কুরআন পড়তে পারি না, আমার আত্মা পবিত্র না। এসব ভেবে সে মানসিকভাবে কষ্ট পেতে লাগলো। যদিও আমি নিশ্চিত ওই রেডিও প্রোগ্রামের শিক্ষক এইরকম কিছু বোঝাতে চান নি, তিনি নিছক সেই বাচ্চা ছেলেকে উংসাহ দেয়ার জন্য এইরকম কিছু বলেছিলেন। এই প্রেক্ষিতে আসুন আমরা একটা হাদিস দেখি, রাসুল (স) বলেছেন ‘কুরআন তেলাওয়াতে পারদর্শী ব্যক্তিরা উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন ফেরেশতাদের সাথে থাকবে। কিন্তু যারা উচ্চারণগত বা অন্য কোন সমস্যা থাকা সত্বেও কষ্ট করে পড়ার চেষ্টা করে, তারা এর দ্বিগুন পুরস্কার পাবে। (সহি মুসলিম)’ এখন প্রশ্ন হচ্ছে ঐসব লোক কাদের তুলনায় এই দ্বিগুন পুরস্কার পাবে? সাধারণ তেলাওয়াতকারীদের তুলনায়? নাকি তেলাওয়াতে পারদর্শিদের তুলনায়? আমার মতে তেলাওয়াতে পারদর্শীদের তুলনায় এই দ্বিগুন পুরস্কার দেয়া হবে। কারণ একজন মানুষ কতটুকু অর্জন করলো আল্লাহ সেটাকে গুরুত্ব দেন না, আল্লাহ গুরত্ব দেন সে কী পরিমান চেষ্টা করলো সেটাকে। আমরা মানুষরাই অর্জনকে বেশি গুরুত্ব দেই, সবসময় দেখতে চাই ফলাফল কি, লাভ কতটুকু হলো? আমরা কতটুকু জানি, কতটুকু মুখস্ত...—আকাশ ও পৃথিবীতে বিসৃত সব সৃষ্টির তাঁকে দরকার —
নোমান আলি খান يَسْأَلُهُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ كُلَّ يَوْمٍ هُوَ فِي شَأْنٍ(সূরা আর-রাহমানঃ ২৯)‘আকাশ ও পৃথিবীর সবাই তার কাছে চায়।’ প্রথমে আয়াতের এই অংশটা বুঝে নেই। আরবি ভাষায় সূ’আল سؤال , চাওয়া, দুই ধরণের হয়। তার আগে বলে নেই কেন এই আয়াতটা বুঝতে অনেকের ভুল হতে পারে। আল্লাহ বললেন যে সবাই তার কাছে চায়। ফেরেশতারা তার কাছে চান। পশুপাখি, আমরা মানুষেরা – সবাই তার কাছে চাই। তো, কেউ এসে যদি আপনাকে বলে, ‘আমার এক নাস্তিক বন্ধু আছে, সে আল্লাহর কাছে কিছু চায় না।‘ বা ‘আমার এক বন্ধু আছে যে ধার্মিক না, সে কখনোই আল্লাহর কাছে কিছু চায় না।‘ অথবা বলল, ‘আমার ফিলসফির প্রোফেসর তো আল্লাহর কাছে কোন কিছু চান না। তাহলে তুমি কি করে দাবি করো যে আল্লাহর কাছে সবাই চায়?’এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্যই বুঝতে হবে যে ‘চাওয়া’ শব্দটার আরবিতে দুটো অর্থ আছে।একটি অর্থ হলো সজ্ঞানে চাওয়া। আরেকটা অর্থ হচ্ছে চাহিদা বা প্রয়োজন। যেমন ধরুন সূরা দুহার আয়াতেঃوَأَمَّا السَّائِلَ فَلَا تَنْهَرْযে ভিক্ষা চায় তাকে ধিক্কার দিয়ো না।এর আরেকটা অর্থ হচ্ছে, যার [সাহায্য] প্রয়োজন তাকে ধিক্কার দিয়ো না। এমন অনেকে আছে যাদের প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও ভিক্ষা চায় না। আপনার উচিত তাঁর প্রয়োজনের ব্যাপারে জানা লাগবে এবং তাঁ চাওয়ার আগেই তার প্রয়োজন মিটিয়ে দেওয়া।তাই শুরুর আয়াতটির অর্থ হচ্ছে, আকাশ ও পৃথিবীর প্রত্যেক জিবেরই কোন না কোন চাহিদা সবসময়ই থাকে। এবং সেগুলো একমাত্র আল্লাহ পূরণ করতে পারেন। হোক সে বিধর্মী, হোক সে পাপী মুসলিম। এমন মানুষও আছে যে জানে সে খারাপ কাজ করছে, তার এমন করা উচিত না, তাও সে করছে এবং আল্লাহকে অমান্য করে যাচ্ছে। তারপরও আল্লাহ তাকে দেন, দিতেই থাকেন।আপনাদের মধ্যে যে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত পড়েন, এবং যে কোন সালাতই পড়ে্ন না, এবং যে এখানে প্রথমবার এসেছেন,...যখন ফেরেশতারা আপনাকে জান্নাতের সুসংবাদ দিবেন
— উস্তাদ নোমান আলী খান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা সূরা ফুসসিলাত এর ৩০ নাম্বার আয়াতে বলেন – إِنَّ الَّذِينَ قَالُوا رَبُّنَا اللَّهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوا تَتَنَزَّلُ عَلَيْهِمُ الْمَلَائِكَةُ أَلَّا تَخَافُوا وَلَا تَحْزَنُوا وَأَبْشِرُوا بِالْجَنَّةِ الَّتِي كُنتُمْ تُوعَدُونَ – “নিশ্চয় যারা বলে, আমাদের পালনকর্তা আল্লাহ, অতঃপর তাতেই অবিচল থাকে, তাদের কাছে ফেরেশতা অবতীর্ণ হয় এবং বলে, তোমরা ভয় করো না, দুশ্চিন্তা করো না এবং তোমাদের প্রতিশ্রুত জান্নাতের সুসংবাদ শোন।”“তাতানাজ্জালু আলাইহিমুল মালা-ইকা” তাদের উপর ফেরেশতারা অবতীর্ণ হয় – এই আয়াত নিয়ে আমাদের ক্যাসিকাল স্কলারদের মাঝে বিভিন্ন মতামত পাওয়া যায়। কারণ পূর্বের আয়াতগুলোতে কিয়ামত, বিচার দিবস, জাহান্নামের আগুন, আখিরাত নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। কেউ কেউ বলেন – সম্ভবত, এই ফেরেশতারা আখিরাতে অবতীর্ণ হবেন। অন্যরা বলেন – এই আয়াতে এই ধরনের কোন সীমা নির্ধারণ করা হয়নি। সম্ভবত, মৃত্যুর সময় এই ফেরেশতাদের আগমন ঘটবে। আপনি একটি ভালো জীবন অতিবাহিত করেছেন, এখন মৃত্যু শয্যায়…। আজ হউক কাল হউক আমরা একদিন এই মৃত্যু শয্যায় শায়িত হব। এটা গাড়িতে ঘটুক, প্লেনে ঘটুক বা আমাদের বিছানায় ঘটুক, যেখানেই ঘটুক না কেন এটা অবশ্যই ঘটবে। যখন আমরা বৃদ্ধ হয়ে পড়বো, অথবা হাসপাতালের বিছানায়…আপনি শুয়ে আছেন আর চারপাশে পরিবারের সদস্যরা কান্নাকাটি করছে, আপনি কথা বলতে পারছেন না, কারণ ”বালাগাতিত তারাকি” (প্রাণ কণ্ঠাগত ৭৫ঃ ২৬) রুহ ইতিমধ্যে গলায় পৌঁছে গেছে, আপনি আমি এই ক্ষণস্থায়ী বাসস্থান ছেড়ে চিরবিদায়ের পথে… এই শরীরটাও আমাদের রুহের জন্য ক্ষণকালের বাসস্থান, আমরা এই শরীর ছেড়ে দেয়ার পথে। আপনার মা পাশে দাঁড়িয়ে আছে, ভাই, বোনেরা এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা দাঁড়িয়ে আছে, তারা সবাই কাঁদছে; ঠিক সে সময় আপনার চোখ খুলে গেল আপনি এমন কিছু দেখতে পাচ্ছেন যা অন্য কেউ দেখছে না, আপনি দেখতে পেলেন ফেরেশতারা নেমে আসছে। আশে পাশের কেউ এই দৃশ্য দেখতে পারছে না, কিন্তু আপনি দেখতে পাচ্ছেন।...মু’জিযা
No Results Found
The page you requested could not be found. Try refining your search, or use the navigation above to locate the post.