আমরা ইবাদাত কেন করি?

আমরা ইবাদাত কেন করি?

ইসলাম কয়েকটি নীতির সমষ্টি যাকে বলা হয় উসুল। আমরা এই নীতিগুলো কোথা থেকে পাই? আমরা এই নীতিগুলো পাই কুর’আন থেকে। এই নীতিগুলো কী? খুবই সোজা – কুর’আন আপনার ব্যক্তি জীবনে কী আনতে চায়? কী কী গুণ আপনার থেকে আশা করে? আমাকে বলুন তো কুর’আনের মতে, কী কী গুণ থাকা উচিত আমাদের মধ্যে? যে গুণগুলো আল্লাহ চান আপনার ব্যক্তি জীবনে প্রকাশ পাক। কী কী হতে পারে? দয়া, ধৈর্যশীলতা, তাকওয়া, যিকির, নম্রতা, ভালোবাসা, ভ্রাতৃত্ববোধ, সততা ইত্যাদি। এগুলো হল ইসলামের উসুল। যিকির, তাকওয়া, ধৈর্যশীলতা, ভ্রাতৃত্ববোধ, ভালবাসা ইত্যাদি ইসলামের উসুল। আপনি কীভাবে জানবেন ইসলামের উসুল কী? আপনি কুর’আনের ঐ আয়াতগুলো দেখুন যেগুলোতে বলা হয় ‘ওল্লাহু উহিব্বু…’ ‘আল্লাহ ভালোবাসেন…’ এরপর যা আসে। যেমন ‘ওল্লাহু ইউহিব্বুস সাবেরিন’, অথবা মুত্তাকিসহ আর যে সব গুণ তিনি ভালবাসেন। আর আছে ‘আল্লাহু মা’আ…’, ‘আল্লাহ সাথে আছেন…’ এরপর যেসব গুণের কথা বলেন ঐসব গুণ হল ইসলামের উসুল।  আরও আছে ‘লা’আল্লাকুম…’, ‘যাতে করে তোমরা…’ তাকওয়া অর্জন করতে পার, চিন্তা করতে পারও, স্মরণ করতে পার। এগুলোই হচ্ছে ইসলামের উসুল। ইসলাম চায় আপনি যেন স্মরণকারী, কৃতজ্ঞ, ধৈর্যশীল ইত্যাদি হন। এইসব গুণ হল ইসলামের মূল উপাদান, আর কুর’আন চায় এই সব গুণ আপনার আমার মাঝে যেন আসে।  এখন এই গুণসমূহ কোন বস্তু নয়, এইগুলো আইডিয়া – অবস্তুগত ব্যাপার, তাই না? এসব গুণাবলী অবস্তুগত বিষয় কিন্তু কীভাবে আপনি ঐসব গুন নিজের জীবনে আনবেন? এই জন্য আল্লাহ কিছু বড় বড় আদেশ দিয়েছেন আমাদের বাস্তবায়ন করতে (যেমন সালাহ, সাওম)। প্রত্যেক বড় বড় আদেশসমূহ ঐসব গুণাবলীকে শক্তিশালী করে যেসব গুণ আমাদের মধ্যে থাকা উচিত। এখন আমাকে কিছু বড় বড় আদেশের কথা বলুনতো। হ্যাঁ, নামাজের কথা আল্লাহ বলেছেন, ‘আকিমুস সালাতি লি যিকরি’, ‘সালাহ প্রতিষ্ঠা কর যেন আমাকে স্মরণ করতে পার’। আল্লাহকে স্মরণ করা একটা মৌলিক গুণাবলী, তাই না? হুম,...
চিন্তাশীল হওয়ার গুরুত্ব

চিন্তাশীল হওয়ার গুরুত্ব

যখন কোন কম বয়সী কেউ আমাকে এসে প্রশ্ন করে, এমনকি পূর্ণ বয়ষ্ক কেউ, আমি আমার সহকর্মীদের কীভাবে ব্যাখ্যা করে বোঝাবো যে আমি রোযা রেখেছি? কীভাবে ওদের বোঝাবো? যেহেতু ওরা মুসলিম নয়, ওরা ভাবে এটা অদ্ভূত। আপনি কি আমাকে এর একটা সুন্দর উত্তর দিতে পারেন যাতে আমি আমার সহকর্মীদের বোঝাতে পারি? অথবা আমি কীভাবে ওদেরকে বোঝাবো যে, আমি অযু করছি? আমি বাথরুমে ঢুকে অযু করছি, আমি অফিসে ছিলাম বা আমি ক্যাম্পাসে ছিলাম, আমি ওদের কে কীভাবে বোঝাবো? ওরা আমাকে অযু করতে দেখেছে এবং ওদের মনে হয়েছে ব্যাপারটা অদ্ভুত- আপনি কি আমাকে এর একটা ভালো জবাব দিতে পারেন যাতে আমি ওদের বলতে পারি, আর বিব্রত না হই? অথবা ওরা যখন দেখে যে আমি নামায পড়ছি, ওরা জিজ্ঞেস করে এটা আবার কী ধরণের শারীরিক ব্যায়াম? এটা কী ধরণের যোগব্যায়াম আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবে? ওদেরকে আমি কী বলবো? আমরা ওদের কী উত্তর দিতে পারি? এ ধরণের প্রচুর প্রশ্ন আছে, আপনি হয়তো এর উত্তর খুঁজছেন,  যাতে অন্যদের বোঝাতে সাহায্য করতে পারেন, এবং এই প্রশ্ন আপনি করছেন ভালো উদ্দেশ্যে। আমাদের দ্বীন আসলে এমন যে…ও… এই তালিকায় আমার আরেকটু যোগ করার আছে, আমার সব বন্ধুরা যাচ্ছে হ্যালোইন পার্টিতে, অথবা আমার সব সহকর্মীরা যাচ্ছে খ্রিস্টমাস পার্টিতে – আমি কীভাবে ওদের বলবো আমি যেতে পারছি না? কীভাবে আমি ব্যাখ্যা করবো যে আমি এসব কিছুতে যোগ দেই না? আপনি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজছেন, কিন্তু এই প্রশ্নগুলো আমাকে কী বলছে জানেন? এ প্রশ্নগুলো বলছে যে আমরা কীভাবে ভাবতে হয়,  কীভাবে চিন্তা করতে হয় তা শিখিনি, এই বই (কুরআন)-এর আলোকে তো নয়ই।  দেখুন, আপনি যদি জানতেন কীভাবে চিন্তা করতে হয়, যখন কেউ আপনাকে বলে যে চলো হেলোইন পার্টিতে যাই, আপনি উল্টো ঘুরে তাঁকে প্রশ্ন করতেন, হ্যালোইন কী? তুমি এটা কেন উদযাপন...
ইসলামের নিরন্তন পরিপূর্ণতা

ইসলামের নিরন্তন পরিপূর্ণতা

উস্তাদ নুমান আলী খানের কুরআন উইকলি তে দেয়া “Quranic Gems” সিরিজ থেকে নেয়া। ”বস্তুতঃ আমি সাগর পার করে দিয়েছি বনী-ইসরাঈলদিগকে। তখন তারা এমন এক সম্প্রদায়ের কাছে গিয়ে পৌছাল, যারা স্বহস্তনির্মিত মূর্তিপুজায় নিয়োজিত ছিল। তারা বলতে লাগল, হে মূসা; আমাদের উপাসনার জন্যও তাদের মূর্তির মতই একটি মূর্তি নির্মাণ করে দিন। তিনি বললেন, তোমাদের মধ্যে বড়ই অজ্ঞতা রয়েছে।”। (সুরা আল-আরাফঃ ১৩৮) আসসালামু আলাইকুম, “কুরআন উইকলী” মূসা (আঃ), যিনি একজন মহান রাসুল ছিলেন, তাকে আল্লাহ দুইটি জাতির কাছে বার্তা পৌঁছে দেবার দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছিলেন।এক হলো মিশরের ফারাওদের কাছে এবং তাদের প্রজন্মদের জন্য এবং একই সময় উনি যেখানে জন্মেছিলেন, সেখানের লোকদেরও পথ দেখাবার দায়িত্ব ছিল তাঁর, অর্থাৎ বনী ইসরাইলীদেরকে।তাঁর জীবনের প্রথমভাগ ছিলো মিশরে এবং পরবর্তীভাগ ছিল:যখন তাঁরা আল্লাহ্‌র সাহায্যে মিশর থেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। একসময় তারা পানিপথ পার হলেন। আজকের যেই আয়াত আমি আপনাদের সাথে আলোচনা করতে চাই, তা হলো: পানিপথ পার হওয়ার পরের ঘটনা। আমার মনে হয় সেটি খুবই জরুরী এবং আমাদের এখনকার সময়ের সাথে খুবই সামঞ্জস্যপুর্ণ। তো আল্লাহ্‌ বলেন, وَجَاوَزْنَا بِبَنِي إِسْرَائِيلَ الْبَحْرَ আমি বনী ইসরাঈলদের পানি পার করালাম। অন্যভাবে বললে, আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া ত্বায়ালা বলছেন, একমাত্র তিনিই তাদের পানি পার হতে সক্ষম করলেন। তারপর তিনি বলছেন, فَأَتَوْا عَلَىٰ قَوْمٍ يَعْكُفُونَ عَلَىٰ أَصْنَامٍ لَّهُمْ ওরা এখন সিনাঈ মরুভূমিতে এবং এখন তারা এমন এক জাতির কাছে এসে পৌঁছালো, যারা তাদের মূর্তিগুলোর সামনে খুব মনোযোগ দিয়ে বসে ছিলো। একটু ভেবে দেখুন: আমরা যখন প্রার্থনা করি, যখন নামাজ পড়ি, তখন আমরা খুবই অমনোযোগী হয়ে পড়ি। আমরা অন্যমনষ্ক হয়ে পড়ি। আমরা বেশিরভাগই যখন প্রার্থনা করি, এমনকি সবচেয়ে ছোট সুরাটাও,যেমন, ইন্না আ’ত্বাইনাকা-ল কাওসার—এটা পড়ার সময়ও আমরা অন্যমনষ্ক হয়ে পড়ি। আর রোজার সময়, ক্বারী যখন পুরো এক পারা তেলাওয়াত করছেন, সেকথা না হয় না-ই বললাম, আমরা তাঁর পেছনে...
আমরা মুসলিম, কিন্তু কেনো?

আমরা মুসলিম, কিন্তু কেনো?

আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা বলেন, قُلْ هَٰذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ ۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي ۖ وَسُبْحَانَ اللَّهِ وَمَا أَنَا مِنَ الْمُشْرِكِينَ “বলে দিনঃ এই আমার পথ। আমি আল্লাহর দিকে বুঝে সুঝে দাওয়াত দেই আমি এবং আমার অনুসারীরা। আল্লাহ পবিত্র। আমি অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত নই।”  (সূরা ইউসুফঃ ১০৮) এই হলো সাবিল (পথ, পন্থা)। চমৎকার বাক্য। আমি আল্লাহর পথে ডাকি চোখ খোলা রেখে, সঠিক উপলব্ধি সহকারে। ‘বাসীরা’। ‘বাসীরা’ হলো যখন কোনো কিছুর প্রতি আপনার পূর্ণাঙ্গ দৃষ্টি রয়েছে। আসলে , আরবি ভাষা অনুযায়ী এই মুহুর্তে আমার ‘বাসীরা’ নেই কারণ এই পিলারটির জন্য পিলারের পেছনের মানুষদের আমি দেখতে পাচ্ছি না এবং তারাও আমাকে দেখতে পাচ্ছে না তাই আমার বাসীরা নেই। ‘বাসীরা’ মানে হলো আপনার পূর্নাঙ্গ দৃষ্টি রয়েছে। এমনকি আংশিক দৃষ্টিও ‘বাসীরা’ নয়। আল্লাহ বলেন : আমরা লোকদের দ্বীনের পথে ডাকি দৃষ্টি খোলা রেখে। আপনারা জানেন এর মানে কী ? এর মানে হলো – আমাদের পরিপূর্ণ জ্ঞান রয়েছে যে কেন আমরা মুসলিম। শুধু এটা নয় যে , আলহামদুলিল্লাহ আমরা জানি যে আমরা মুসলিম। কিন্তু আমাদের চোখ খোলা থাকতে হবে। কেন আমি মুসলিম? কেন আমি বলি – লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ? কেন আমি বলি মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম? কেন কুর’আন আল্লাহর কিতাব? আমার নিজের জন্যই এই বিষয়ে আমার পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি। বহু মুসলমান আজকে মুসলিম কারণ, আর আপনি যদি তাদের জিজ্ঞেস করেন কেন তুমি মুসলিম ? তারা বলবে – কারণ আমার বাবা-মা মুসলিম। অথবা তারা বলবে কারণ আমি বড় হয়েছি একটি মুসলিম দেশে। অথবা তারা বলবে : আমি জানি না, আমার মনে হয় সবাই মুসলিম তাই আমিও মুসলিম। এগুলো ভালো জবাব নয়। ঐ প্রশ্নের এগুলো ভালো উত্তর নয়। আর আমি আপনাদের বলছি ..আমি...
আপনার সন্তানকে যথেষ্ট সময় দিচ্ছেন তো?

আপনার সন্তানকে যথেষ্ট সময় দিচ্ছেন তো?

উস্তাদ নুমান আলী খানের ২০১০ এ ICNA তে দেয়া “Time, Love, Praise & Encouragement” লেকচারের অংশ বিশেষ।   টিনেজারদের বাবা-মারা প্রায় সময়ই আমার কাছে আসেন। ‘জানেন, আমার ছেলেটা না, আমার কথা শোনেই না আজকাল। আপনি ওর সাথে একটু কথা  বলবেন?’ যেন আমি কোনো মহৌষধ সাথে নিয়ে ঘুরি! যেন সেই ছেলেটা আমার কাছে আসলে আমি ওর গায়ে ফু দিয়ে দেব এভাবে। আর সাথে সাথেই সে দারুন লক্ষী  ছেলে হয়ে যাবে! ‘একটু যদি কথা বলতেন’। না, বরং আপনি আপনার ছেলের সাথে কথা বলছেন না কেন? কোথায় ছিলেন আপনি যখন তার সাথে কথা বলার প্রকৃত সময় ছিল? আজকে আমি আপনাদের সাথে বাবা-মাদের নিয়ে একটু কথা বলব, তারপর বলব স্বামী-স্ত্রীদের নিয়ে। আজকে এই দু’টো জিনিস নিয়ে বলারই সময় আছে। দু’টো খুবই মৌলিক সম্পর্ক: একটা আপনার সন্তানদের সাথে, আরেকটা আপনার জীবনসঙ্গীর সাথে। এই দু’টো সম্পর্কের ব্যপারেই আমরা খুব বেসিক কিছু ব্যাপার নিয়ে  আলোচনা  করবো। আপনার সন্তান যখন ছোট, খুবই ছোট, ধরুন যখন তাদের বয়স পাঁচ, ছয়, সাত, দুই, তিন, চার, তখন তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোন জিনিসটা বলুন তো? আমার নিজের পাঁচটা বাচ্চা আছে, তাই আমি খুব ভালো বলতে পারবো এ ব্যপারে। তাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো আপনার সমর্থন। তারা আপনাকে গর্বিত করতে চায়। তারা যা যা করেছে সব আপনাকে দেখাতে চায়। ধরুন, আমি জরুরী কোনো কাজের আলাপ করছি ফোনে, জরুরী একটা ফোন, আর এ সময় আমার দুই বছরের ছেলে এসে বলবে, – “আব্বা আব্বা আব্বা আব্বা আব্বা।” – “ভাই, একটু লাইনে থাকেন। কি হয়েছে?” – “হে হে হে”। ব্যস! আমি আবার ফোনালাপে ফিরে গেলাম, সে আবার আমাকে ডাকা শুরু করল। আমি বললাম, – “আচ্ছা ঠিক আছে, কি হয়েছে বলো”। – “আমি তোমাকে একটা জিনিস দেখাবো”। – “কি দেখাতে চাও বাবা?” – ” হে...