আল্লাহর নিকট সবচেয়ে মূল্যবান বিষয়

তুমি জানো এর মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস কোনটা আল্লাহর কাছে? সবকিছুর চেয়ে বেশি মূল্যবান? সেটা হচ্ছে প্রচেষ্টা, অধ্যবসায়। অর্থ নয় , প্রভাব নয় , শ্রেষ্ঠত্ব নয় – এ সব কিছুই আসবে, কিন্তু আল্লাহ তোমার কাছ থেকে যেটা দেখতে চান সেটা হচ্ছে প্রচেষ্টা। আমি তোমাদের বলেছি নবী (আঃ) দের কথা যারা শেষ বিচারের দিনে আল্লাহর সামনে দাঁড়াবেন… কতজন উম্মাহ নিয়ে? শূণ্য!!! সুতরাং, উনাদের প্রভাব ছিলো শূণ্য। কিন্তু তারপরেও আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতের সর্বোচ্চ আসনে আসীন করাবেন…কেনো? কারণ আল্লাহ সম্মান জানাবেন তাদের প্রত্যয়কে, তাদের প্রচেষ্টাকে, তাদের চারিত্রিক দৃঢ়তাকে। তারা কঠিন সময়ে পড়েছিলেন এবং তারা সেটা মোকাবিলা করেছেন। যদি তুমি নূহ (আঃ) এর প্রতি বছরের একটা ‘প্রোগ্রেস রিপোট’ দেখতে চাও… চল একটা ‘ গ্রোথ চার্ট’ বানিয়ে দেখি কতজন মানুষ মুসলিম হয়েছে প্রতি বছর, যেমনটা করা হয় বার্ষিক প্রতিবেদন এ। কতজন মানুষ মুসলিম হয়েছে প্রতি বছর? … ৯৫০ বছর!!! চার্ট অবশ্যই ঊর্ধ্বমূখী ছিলো না, বরং সেটা ছিলো অপরিবর্তনশীল, এমনকি কখনও হয়তো নিম্নমূখীও ছিলো, হয়তো কেউ ইসলাম এর খুব কাছাকাছি এসেছে কিন্তু তারপর দূরে সরে গেছে… এর মানে কোনো প্রভাব তৈরি হয়নি। সেখানে দৃশ্যমান কোনো পরিবর্তন আসেনি, কিন্তু কি জানো? আমরা নূহ (আঃ) এর কোন জিনিসটা কে এতো সম্মান করি? ক্রমাগত ক্রমাগত ক্রমাগত প্রচেষ্টা। আমাদের এটা উপলব্ধি করতে হবে। তোমাদেরকে হতে হবে ক্রমাগত প্রচেষ্টারত এবং প্রত্যয়ী মানুষ। আল্লাহর সামনে দাড়ানোর মতো কিছুই থাকবেনা যদি আমাদের এই প্রচেষ্টা টুকু না থাকে। তরুন প্রজন্ম, দয়া করে মনোযোগ দিয়ে শুনো আমি কি বলছি। দয়া করে একটু চিন্তা করো। তোমার জীবনের সার্থকতা কোথায়? যদি তোমার জীবন মানে হয় শুধু একটা ভিডিও গেম থেকে অন্য ভিডিও গেম, যদি তোমার জীবন মানে হয় শুধু টিভি শো এর একটা পর্ব থেকে অন্য পর্ব- তুমি কিসের জন্য চেষ্টা করছো? কি অর্জন করছো? এতে...

আল্লাহর সিংহাসন

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। যিনি অস্তিত্বশীল সকল কিছুর অস্তিত্বদানকারী এবং তাঁর সৃষ্টির প্রতি সবচেয়ে দয়াবান। আবার তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারীও বটে। তিনিই একমাত্র সত্ত্বা যিনি আমাদের উপাসনা পাওয়ার যোগ্য। যার কোন শরিক নেই, অংশীদার নেই, কোন পুত্র নেই, কোন কন্যা নেই। কারো সাথে তিনি পরামর্শ করেন না, কোন ব্যক্তি বা কোন কিছুর সাথে তাঁর কোন তুলনা নেই। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। তিনি সকল সার্বভৌম ক্ষমতার দাবীদারদের বাদশা। তাঁর সৃষ্টির জন্য আইন প্রণয়নের ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই। তিনি জীবন দানকারী, আবার তিনিই মৃত্যু ঘটান। কিন্তু তাঁর কোন মৃত্যু নেই। কারণ তিনি চিরঞ্জীব, নিজেই অস্তিত্ববান, চিরস্থায়ী এবং অদ্বিতীয়। সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। সব কিছুর উপর যার ক্ষমতা রয়েছে। আর বাস্তবে কারো কোন ক্ষমতা, কোন শক্তি, কোন প্রভাবই কারো কোন উপকার বা ক্ষতি করতে সমর্থ নয় একমাত্র তাঁর হুকুম ছাড়া। তিনিই এই জটিল বিশ্ব ব্যবস্থাপনা তৈরি করেছেন। দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান, স্পষ্ট এবং অস্পষ্ট, এই পৃথিবী – এই পৃথিবীর উপরে যা কিছু আছে এবং এই পৃথিবীর ভেতরে যা কিছু আছে সব কিছুই তাঁর সৃষ্টি। তিনিই সেই সত্ত্বা যিনি তাঁর সকল নবী-রাসুলদের (আঃ) পাঠিয়েছেন একই নির্ভেজাল একত্ববাদের পয়গাম নিয়ে। যার অর্থ হল কেউই আমাদের উপাসনা পাওয়ার যোগ্য নয়, কেউই আমাদের আনুগত্য পাওয়ার যোগ্য নয় একমাত্র সর্বশক্তিমান আল্লাহ ছাড়া। যিনি এক, অদ্বিতীয় এবং যার কোন অংশীদার নেই। (খালিদ ইয়াসিন) সুদূর অতীতে যে সব ঐশীবাণী পৃথিবীকে পরিবর্তন করেছিল… সে সব অঞ্চলে নবীদের পাঠানো হয়েছিল – আমরা জানি সে ঐশী বাণীগুলো আর অক্ষত নেই, পরিবর্তিত হয়ে গেছে। এমনকি যে নবীগণ আলাইহিমুস সালাম এ বাণীগুলো নিয়ে এসেছিলেন অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাঁদের নামও হারিয়ে গেছে। আমরা শুধু সাধারণভাবে বিষয়টা জানি। কারণ আল্লাহ কুরআনে আমাদের বলেছেন – “আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং...

আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণের পুরস্কার (৫ম পর্ব)

তারপর আল্লাহ বলেন, خَسِرَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةَ – এ বিষয়ে কথা বলেই আমি শেষ করবো। যখন মানুষ এমন করে তখন তারা এই দুনিয়া এবং পরকাল উভয়টাই হারায়। এর মানে কী? এই লোকটি দুনিয়া এবং পরকাল দুইটাই হারিয়েছে। আপনি যদি নিজেকে ধরে রাখতে পারেন…দেখুন, আল্লাহ বলেছেন- لَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ فِي كَبَدٍ – ‘’নিঃসন্দেহে আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কষ্ট- ক্লেশের মধ্যে।’’ আপনি আল্লাহকে বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, আপনার জীবনে চ্যালেঞ্জ থাকবেই। আপনি আল্লাহকে বিশ্বাস করুন আর নাই করুন, জীবিকা উপার্জন করতে আপনাকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে, অসুস্থতার সাথে লড়াই করা কষ্টকর হবে। এই জীবনটা এমন নয় যে, বিশ্বাসীরা এখানে বিলাসী জীবন যাপন করবে আর অবিশ্বাসীরা কষ্টে থাকবে। আল্লাহ সব মানুষকেই কষ্ট- ক্লেশের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন। এটাই তিনি বলেছেন। এখন, আপনি যদি ঈমানের সাথে এই কষ্ট-ক্লেশ অতিক্রম করতে পারেন, তাহলে এই জীবনে যেমন আপনি সফলতা লাভ করবেন, তেমনি পরকালীন জীবনেও সফল হবেন। আপনি এমন মানসিক প্রশান্তি লাভ করবেন যা অবিশ্বাসী কারো পক্ষে লাভ করা সম্ভব নয়। আপনি এবং অবিশ্বাসী দুজনেই অসুস্থ, কিন্তু আপনি অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও প্রশান্তি লাভ করেন আর সে কোন প্রশান্তি পায় না। আপনি এবং অবিশ্বাসী দুজনে একই ধরনের অর্থনৈতিক সমস্যায় থাকবেন, একই ক্ষুধায় থাকবেন তারপরেও আপনার অন্তর প্রশান্ত। এত কিছুতে অাল্লাহ আপনাকে শান্তি দিচ্ছেন, পুরস্কৃত করছেন। তিনি এখনো আপনাকে রক্ষা করছেন। আর অবিশ্বাসীরা দুর্দশাগ্রস্ত। এখন আপনি যদি এমন মানুষদের অন্তর্ভুক্ত হন, যারা বিপদে পড়লে আল্লাহর দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে আপনি এই দুনিয়ার শান্তিও হারাবেন, উপরন্তু আখেরাত তো হারাবেনই। خَسِرَ الدُّنْيَا وَالْآخِرَةَ – সূরা হাজ, আয়াত ১১। এ জন্যই আমরা আল্লাহর নিকট এই বলে দোয়া করি, ‘‘হে আমাদের রব, আমাদের দুনিয়ার হাসানাহ দান করুন এবং পরকালের হাসানাহ দান করুন।’’…… এখানে হাসানাহ্ শব্দের উপযুক্ত অর্থ হল, যখন আপনি আল্লাহর...

আল্লাহর নিকট আত্মসমর্পণের পুরস্কার (৪র্থ পর্ব)

কিন্তু কিছু মানুষের জন্য যাদের ঈমানের অবস্থা একেবারে নড়বড়ে, যখন সময় কঠিন হয়ে যায়…وَإِنْ أَصَابَتْهُ فِتْنَةٌ انقَلَبَ عَلَىٰ وَجْهِهِ এবং যদি কোন পরীক্ষায় পড়ে, তখন মুখ ঘুরিয়ে নেয়।’’ তার মানে কী? তার মানে, আমি আল্লাহর কাছে কিছু চাই না, কিভাবে তিনি আমাকে ছেড়ে গেলেন? কেন তিনি আমাকে বিপদে ফেললেন? কেন তিনি আমার সাথে এমন করলেন? আমাদের সময়ে এটা উপলব্ধি করা খুবই সহজ। আমরা অস্বাভাবিক এক ভোগবাদী সমাজে বসবাস করি যেখানে সব কিছু, সহজলভ্য এবং দ্রুত লাভ করা যায়। বিনোদিত হতে চান? ফোনে একটা app খুললেই হবে। কিছু কিনতে চান? জাস্ট Amazon থেকে অর্ডার করুন, এটা আপনার ঘরে পৌঁছে যাবে। সবকিছুই কষ্ট ছাড়া পাওয়া যায় এবং সবকিছুই সাথে সাথেই পাওয়া যায়। আপনি কিছু চাইছেন? আপনাকে তার কাছে যেতে হবে না, সেটাই আপনার কাছে আসবে। সবকিছুই দ্রুত হয়। আমাদের এখন আপ্যায়িত হওয়ার অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। আপনার একটা অর্ডার যদি দুই থেকে তিনদিন দিনের জন্য দেরি হয় তবে আপনি তাকে 1 star, 2 Star, thumbs down, খারাপ রেটিং দিচ্ছেন। আমরা এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি। এমতাবস্থায়, আপনি যখন আল্লাহ কাছে দোয়া করছেন এবং আপনার সমস্যাগুলোর সমাধান চাইছেন। আপনার সবকিছু দ্রুত এবং তড়িৎ করা দরকার। যখন এটা হয় না তখন আপনি বলেন, বাজে সার্ভিস এবং আমার আরো ভালো ভোক্তা অধিকার চাই। আপনার ভাবখানা তখন এমন হয়ে যায় যে, আমি আল্লাহর কাছে আর কিছু চাইবো না, কোন অর্ডার দিব না। আপনি এখন ক্রেতার মত সুবিধা পেতে চান, মনে করেন যে এগুলো পাওয়ার আপনার অধিকার রয়েছে। আর আপনি আল্লাহর কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন। এবং বলেন, তিনি আমার কথা শুনছেন না, আমার সমস্যার সমাধান করছেন না। বুঝতে চেষ্টা করুন যে, সবার জন্য আল্লাহর পরিকল্পনা রয়েছে। তুলনা করার জন্য আপনাদের দুটি উদাহরণ দিচ্ছি। ইয়াকুব (আঃ) এর ক্ষেত্রে...

আল্লাহর প্রতি সুধারনা পোষণ করুন (১ম পর্ব)

আমার প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, সহিহ হাদিসে এসেছে, একদা আয়েশা (রা) রাসূল (স) এর নিকটে এসে বললেন- হে আল্লাহর রাসুল (স)! আল্লাহর নিকট আমার জন্য দোয়া করুন। ফলে রাসূল (স) কিবলার দিকে ফিরে তাঁর হাত উত্তোলন করলেন এবং বললেন – ইয়া আল্লাহ! আয়েশাকে ক্ষমা করে দিন, তাঁর সকল পাপ ক্ষমা করে দিন। তাঁর অতীত এবং ভবিষ্যতের সকল গুনাহ, যা সে প্রকাশ্যে করেছে এবং যা সে গোপনে করেছে। এরপর আয়েশা (রা) মুচকি হাসি দিলেন। আর তিনি তাঁর মাথা নামিয়ে রাসূলের (স) কোলে রাখলেন; অত্যান্ত খুশি হলেন রাসূলের (স) দোয়া শুনে। ঠিক সেই মুহূর্তে আমাদের প্রিয় নবী (স) আয়েশার (রা) দিকে ফিরে বললেন, তুমি কি আমার দোয়ার কারণে খুশি ? তিনি বললেন, হ্যাঁ ও রাসূলুল্লাহ, কেন আমি আপনার দোয়ায় খুশি হবো না ? তখন তিনি বললেন, আমি আল্লাহর নামে শপথ করছি যাঁর হাতে আমার রূহের নিয়ন্ত্রণ রয়েছে, প্র্রত্যেক নামাজে এটাই আমার দোয়া আমার উম্মার জন্য। আল্লাহুম্মা সল্লি আলা মুহাম্মাদ ওয়া আলা আ..লি মুহাম্মাদ …… ভাই এবং বোনেরা, আমাদের রাসূলের (স) জন্য দুয়া করতে কখনোই কৃপণতা করবেন না। তিনি আমাদের জন্য তাঁর নিজের সন্তানদের চেয়েও বেশি দুয়া করেছেন। যিনি আমাদেরকে ভালোবেসেছেন, আমাদেরকে স্মরণ করেছেন সম্ভবত তাঁর নিজের সন্তান এবং পরিবারের চেয়েও বেশি। আলহামদু লিল্লাহ, আলহামদু লিল্লাহ… । আমার মুসলিম ভাই ও বোনেরা, আমরা মুসলিম ভূমিতে এমন নৃসংসতা প্রত্যক্ষ করেছি যার মতো উদাহরণ বহুদিন ধরে আমরা দেখিনি। আমরা দেখেছি একজন ব্যক্তির ক্ষমতা এবং আধিপত্যের লালসার কারণে যেরকম নৃসংসতা সে ঘটিয়েছে আলেপ্পোতে, যুগ-যুগ ধরে যার দৃষ্টান্ত আমরা দেখিনি সুবহানাল্লাহ। যেভাবে সে তার জনগণকে হত্যা করেছে, যেভাবে সে রাজপথে রক্ত ঝরিয়েছে, যেভাবে সে ইসলামের শত্রুদের আসার সুযোগ করে দিয়েছে, আল্লাহর শপথ, এটা আমাকে মনে করিয়ে দেয় ইবনে তাইমিয়া যা বলেছেন। তিনি বলেছেন,…..। তিনি বলেছেন, নুসাইরিয়ারা...