সূরা মূলক পরিচিতি

আবু হুরায়রা থেকে বর্নিত, ‘কুরআনে ৩০ আয়াত সম্বলিত এমন একটি সুরা রয়েছে যেটি এর তিলাওয়াতকারীর ক্ষমার জন্য সুপারিশ করবে আর সেটি হলঃ تَبَارَكَ الَّذِي بِيَدِهِ الْمُلْكُ’ আব্দুল্লাহ ইবন মাসউদ (রা) বর্নিত অপর এক হাদিসে এসেছে ‘যে প্রতি রাতে সুরা মূলক পড়বে আল্লাহ্‌ তাকে কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবেন’, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এই সুরা না পড়ে কক্ষনো ঘুমাতে যেতেন না। এত তাৎপর্যময় একটি সুরা, তাই চলুন জেনে নিই একটু এই সুরা সম্পর্কে। সামগ্রিক ভাবে সুরাটিকে ৬ ভাগে ভাগ করা যায়, ১ম অংশঃ ১-৪ আয়াত। আল্লাহর শক্তি এবং ক্ষমতার বর্ণনা। ২য় অংশঃ ৫-১৫ আয়াত। জান্নাত এবং জাহান্নামের বর্ণনা। এই অংশে আকাশ হলো জাহান্নামের একটি প্রিভিউ আর জমিন হলো জান্নাতের একটি প্রিভিউ। ৩য় অংশঃ ১৬-২২ আয়াত। আসন্ন হুমকি। যে কোন সময় বিপদে পড়ার আশঙ্কা। ৪র্থ অংশঃ ২৩-২৪ আয়াত। ৪র্থ অংশঃ ২৩-২৪ আয়াত। এই অংশে শুধু দুটি আয়াত। এখানে বর্ণনা করা হয়েছে যে তিনি তোমাদের লালন পালন করেছেন, তোমাদের যৌবনের শক্তি সামর্থ্য দিয়েছেন, দেখার এবং শ্রবণ করার শক্তি দিয়েছেন, আরও দিয়েছেন অন্তর। আর বিনিময়ে তোমরা কেমন অকৃতজ্ঞ হয়ে পড়। তারপর তোমাদের বার্ধক্য এসে পড়ে এবং পরিশেষে তার কাছে ফিরে যাও। এই সব কিছু হলো মানুষের ক্ষুদ্র জীবন সম্পর্কে। সংক্ষেপে বলতে গেলে এই অংশ হলো সংক্ষিপ্ত এই জীবন সম্পর্কে এবং কিভাবে এটা কাজে লাগানো যায়। ৫ম অংশঃ ২৫-২৭ আয়াত। কুফফারদের প্রশ্ন যে কখন জান্নাত জাহান্নাম দেখা যাবে? ৬ষ্ঠ অংশঃ ২৮-৩০ আয়াত। মানুষ দুর্বল, ক্ষমতাহীন। এখন দেখুন, প্রথম অংশে আল্লাহ বলছেন তিনি শক্তিশালী, আর শেষ অংশে বলছেন আমরা মানুষরা দুর্বল। দ্বিতীয় অংশে – আল্লাহ জান্নাত জাহান্নামের বর্ণনা দিয়েছেন, আর ৫ম অংশে মানুষ জিজ্ঞেস করছে কখন এটা আসবে? তৃতীয় অংশে বলা হয়েছে অবিলম্বে তুমি বিপদে পড়তে পারো, আর চতুর্থ অংশে বলা হয়েছে এই বিপদ থেকে বাঁচার জন্য...

সূরা কাহফ এর গঠন

বেশ পরিচিত একটি সুরা। হাদীসে এসেছে এই যে ব্যক্তি এই সুরার প্রথম ১০ আয়াত আত্মস্ত করবে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে নিরাপদ। আবার অন্য এক হাদীসে এসেছে যে ব্যক্তি শুক্রবার দিন এই সুরা তিলাওয়াত করবে তার উপর একটি আলোক রশ্মি পরবর্তী শুক্রবার পর্যন্ত ছায়া হয়ে থাকবে। কী আছে এই সুরাতে এমন যে এটি নিয়ে এত এত হাদীস এসেছে? বলা হচ্ছে এটি দাজ্জালের ফিতনার বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী অস্ত্র? সাধারণভাবে এই সুরাকে সবাই ৪টি গল্পের সমষ্টি হিসাবেই বলে থাকে। হ্যাঁ, বেশ উল্লেখ্যযোগ্য ৪টি কাহিনী এখানে আছে কিন্তু আসলে তার সাথে সাথে আরো ৪টি অংশ রয়েছে যাতে রয়েছে আমাদের জন্য আল্লাহর কিছু উপদেশ বা দিক নির্দেশনা। তাই সুরাটাকে আসলে মোটামুটি ৮ টি ভাগে ভাগ করা যায়। আল্লাহর উপদেশ/ দিক নির্দেশনা আয়াত ১-৯ এই পার্থিব দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ীত্ব বিষয়ে, আমরা যেন এই দুনিয়ার সৌন্দর্যে আসল সত্যটা ভুলে না যাই যে আল্লাহ্‌ তায়ালা একসময় এই দুনিয়াকে ধু ধু প্রান্তরে পরিণত করবেন, তিনি দুনিয়া বানিয়েছেন যাতে আমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন, কে আমাদের মাঝে কর্মে শ্রেষ্ঠ। কাহিনী আয়াত ১০-২৬ গুহাবাসী যুবকদের গল্প, যাদের আল্লাহ্‌ ছাড়া কোন সহায় ছিল না, শুধু ছিল আল্লাহর প্রতি ঈমান, আর সেটার উপর ভরসা করে তারা অত্যাচারী শাসকের জায়গা থেকে পালিয়ে গেল, আর আল্লাহ্‌ তাদেরকে নিদর্শন হিসাবে ঘুম পাড়িয়ে দিলেন তিনশ নয় বছরের জন্য। আল্লাহর উপদেশ/ দিক নির্দেশনা আয়াত ২৭-৩১ এই জায়গায় প্রথমেই আবার সেই দুনিয়াবি মোহে যেন বিশ্বাসীরা আসক্ত না হয়ে পড়ে সেই কথা এসেছে। তারপর বলা হচ্ছে এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়ার পরীক্ষায় যারা সফল হবে তাদের জন্য কি থাকবে আর যারা ব্যর্থ হবে তাদের জন্য কি শাস্তি রয়েছে। কাহিনী আয়াত ৩২-৪৩ এরপর আসছে দুইটি সমৃদ্ধ বাগানের মালিকের কথা যে কিনা তার প্রতিবেশী, তুলনামূলক ভাবে দুর্বল্‌ এর সাথে বড়াই করছিল তার সম্পদ নিয়ে। কিন্তু...

সূরা আল আসর এর মূলভাব

মনে করুন, আপনি পানিতে ডুবে যাচ্ছেন এবং ওই সময় আপনার কোন জ্ঞান নেই। অর্থাৎ অজ্ঞান অবস্থায় আপনি পানিতে তলিয়ে যাচ্ছেন। আপনার কি মনে হয়? এরকম একটা অবস্থায় আপনার হাতে কি বাঁচার জন্য অনেক সময় আছে? আপনি সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পানির গভীরে তলিয়ে যাচ্ছেন, এর মানে আপনার হাতে কিন্তু মোটেও সময় নেই! সময় খুব দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছে। আরবীতে এইভাবে সময় শেষ হয়ে আসাকে বুঝানোর জন্য ‘আসর’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। ‘আসর’ এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে সময়, যেটা শেষ হয়ে আসছে। দিনের শেষ সময়, যখন দিন শেষ হয়ে আসে, তখনই আসর নামাজ এর ওয়াক্ত হয়। ‘আসর’ শব্দের উংপত্তি হচ্ছে ‘অসির’ শব্দটি থেকে, যার মানে হচ্ছে চিপে রস বের করা, ‘সময়’ যেটা হাতের ফাঁক দিয়ে চলে যাচ্ছে। আমরা ভেজা কাপড় শুকাতে দেয়ার আগে দুইহাত দিয়ে মুচড়িয়ে যেভাবে পানি বের করি, আসর শব্দটি এধরনের অর্থ বোঝাতেই ব্যবহার করা হয়। তারমানে এখানে আল্লাহ এমন একটা মুহুর্তের কথা বর্ণনা করছেন যখন আপনি সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পানিতে ডুবে যাচ্ছেন এবং আপনার সময় শেষ হয়ে আসছে। এমন অবস্থায় বেঁচে থাকতে হলে আপনাকে সর্বপ্রথম কোন কাজটা করতে হবে? বেঁচে থাকার আশা করতে হলে কোন জিনিসটা আপনার একেবারে শুরুতে দরকার? … কি মনে হয়? … জ্ঞান ফিরে আসা? … অবশ্যই! এটাই এখন আপনার সবার আগে দরকার! যদি জ্ঞান ফিরে না আসে তাহলে আপানার বাঁচার কোন সম্ভাবনাই নেই। এমনকি সংজ্ঞাহীন অবস্থায় আপনি যদি জীবনের সবচেয়ে সুন্দর স্বপ্ন ও দেখতে থাকেন, তবুও বাচতে হলে আপনাকে কিন্তু জাগতেই হবে। মনে করুন, স্বপ্নের মধ্যে আপনি দেখছেন সেইরকম সুন্দর, সাজানো গোছানো একটা জীবন আপনার। পাহাড়ের পাদদেশে আপনার চমৎকার বাড়ি। আপনি আপনার ফেরারী গাড়িটা নিয়ে লং ড্রাইভে বের হয়েছেন, রাস্তার একপাশে সবুজে ঢাকা পাহাড়, আর অন্য পাশে সুনীল সমুদ্র! কিন্তু যেই আপনার জ্ঞান ফিরে আসলো, আপনি বুঝতে...

সূরা ইখলাস পরিচিতি।

বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাই। শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অসীম দয়ালু। قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ — اللَّهُ الصَّمَدُ — لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ — وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ আবারো সবাইকে জানাচ্ছি, আসসালামুওয়ালাইকুম ওয়া রাহ মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ। আমি আপনাদের কাছে সুরা ইখলাসের একটি পরিচিত তুলে ধরতে চাই। কিন্তু তার আগে বলতে চাই, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর এই সুরার প্রতি একটি বিশেষ ভালবাসা ছিল। কুরআনে দেখা যায়, সবচেয়ে প্রিয় নামাজ হিসেবে যে নামাযকে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে তা হলো ফজরের নামাজ। আল্লাহ এই সালাতকে ‘কুরআনাল ফাজর’ বলেছেন। আর কোন সালাতের সাথে কুরআন শব্দটি এইভাবে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়নি, যেভাবে ফজরের নামাজের সাথে হয়েছে। এ জন্য এটাকে বলা হয় ‘কুরআনাল ফাজর।’ যার মানে ফজরের সময়কার কুরআন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ফজরের সুন্নাহ সালাতের সময় নিয়মিত সুরা কাফিরুন এবং সুরা ইখলাস পড়তেন। তার মানে এই দুটো সুরা উনি নিয়মিত ভাবে ফজরে পড়তেন। তার উপর, শুধু একটি নয় অনেক অনেক বার রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এই সুরাকে কুরআনের এক তৃতীয়াংশ বলে উলেখ করেছেন। এটা শুধু এই কারণে গুরুত্বপূর্ন নয় যে এটি এই সুরা পড়ার গুরুত্বকে আরো জোরদার করে এইভাবে যে এটি একবার পড়লে এক তৃতীয়াংশ কুরআন পড়ার সমতুল্য হয়, ব্যাপারটি আরো গুরুত্ববহ এই কারণে যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ব্যাপারটি বার বার জোর দিয়েছেন। এটা একটি ভাবার মত বিষয়। কারণ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) অন্য কোন সুরার ক্ষেত্রে এমনটি করেননি। এমন অসংখ্য হাদিস পাওয়া যাবে না যেখানে একটি বিশেষ সুরার গুরুত্ব বলা হয়েছে, বারবার। কিন্তু এই সুরার জন্য এরকম পাওয়া যায়। এই ব্যাপারে বেশ উল্লেখ্যযোগ্য একটি হাদীস না উল্লেখ করলেই নয়, তা হল, আপনাদেরকে পড়ে শুনাচ্ছি, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সময়ে উনি একজন সাহাবীর কথা জানতে পারলেন, যে ইমামতি করার সময় প্রত্যেক রাকাত শেষ করতেন এই সুরা পড়ে।...
কু’রআনের কথাঃ বাংলা ভাষায় কু’রআনের আধুনিক আলোচনা

কু’রআনের কথাঃ বাংলা ভাষায় কু’রআনের আধুনিক আলোচনা

বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম আমাদের অনেকেরই কু’রআন এবং কু’রআনের তাফসীর পড়ার সময় মনে প্রশ্ন আসে, “এই আয়াতে আমার শেখার কী আছে?”, “এর সাথে আজকের যুগের সম্পর্ক কী?”, “কু’রআনে আধুনিক মানুষের জীবনের সমস্যাগুলোর কোনো উত্তর আছে কি?” ইত্যাদি। অনেকেই কু’রআন পড়ে বুঝতে পারেন না; কু’রআনের আয়াতগুলোগুলো কীভাবে তার জীবনে কাজে লাগবে।   বিশেষত কোরআনকে আমাদের পড়তে অনীহা লাগার অনেকগুলো কারণ রয়েছে- এর   মাঝে রয়েছে কোরআনের প্রাসঙ্গিকতা, এটিকে সুশৃঙ্খল মনে না হওয়া এবং পাশাপাশি কোরআনকে বুঝতে হলে শুধু কোরআনই নয় বরং অন্যান্ন জ্ঞানের শাখাও যে সমানভাবে লাগে সেগুলোর জ্ঞান না থাকায় আমরা একে হৃদয় দিয়ে উপলব্ধি করতে পারি না এবং এটা পড়তেও ইচ্ছা করে না।   এসব কিছুই মধ্য দিয়েই কোরআনের এই অসাধারণ আলোচনাসমূহ-যার কারণে আপনার কাছে কোরআনকে আর নিরস মনে হবে না, কোরআনের আবেদন নতুনভাবে উন্মোচিত হবে, নতুনভাবে পরিচিত পাবে কোরআনের চিরন্তন ও সমকালীন জীবন পথের প্রাসঙ্গিক আলোচনাসমূহ।   আধুনিক মানুষ ইসলামকে নিয়ে যে সব দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভোগেন এবং অমুসলিম মিডিয়ার ব্যাপক অপপ্রভাবের কারণে ইসলামকে মনে-প্রাণে মেনে নিতে পারেন না, তাদের কাছে ইসলামের সঠিক ভাবমূর্তি এবং কু’রআনের অসাধারণ বাণী পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে এ লেখাগুলোর সূচনা। এটি কোনো তাফসীর নয়, বরং প্রসিদ্ধ তাফসীরগুলো থেকে উল্লেখযোগ্য এবং আজকের যুগের জন্য প্রাসঙ্গিক আলোচনার সংকলন। এখানে কু’রআনের আয়াতের বাণীকে অল্প কথায়, সমসাময়িক জীবন থেকে উদাহরণ দিয়ে, সংশ্লিষ্ট বৈজ্ঞানিক আলোচনাসহ যথাসম্ভব আধুনিক বাংলায় তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করি সমকালীন মানুষেরা তাদের জীবনের সাথে কুর’আনকে মেলাতে পারবেন। কু’রআনের আয়াতগুলোর সরাসরি বাংলা অনুবাদ পড়ে আয়াতের বাণীর খুব কমই বোঝা যায়, কারণ আরবি থেকে বাংলা অনুবাদ করার সময় অনেক আরবি শব্দের প্রকৃত অর্থ, অর্থের ব্যাপকতা এবং প্রেক্ষাপট হারিয়ে যায়। আবার অনেকেই তাফসির পড়ে ঠিক কিন্তু উপলব্ধি করতে পারেন না, আয়াতগুলো কীভাবে তার জীবনে কাজে লাগবে, কীভাবে তা একবিংশ...