আমার সবচেয়ে প্রিয় দুআ

দু’আটি হল সূরা আল-ফুরকান এর ৭৪ নং আয়াতঃ وَالَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا এবং যারা বলে, হে আমাদের পালনকর্তা, আমাদের স্ত্রীদের পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা (নয়নের প্রশান্তি) দান করুন এবং আমাদেরকে মুত্তাকীদের জন্যে আদর্শস্বরূপ...

এক টুকরো জান্নাত

“জান্নাতের মাটি আর জমীন হচ্ছে জাফরান আর কস্তুরীর। এর ছাদ হচ্ছে আল্লাহর আসন। শিলাখণ্ডগুলো মণিমুক্তোর। দালানগুলো সোনারূপায় তৈরি। গাছের শাখা-প্রশাখাগুলো সোনারূপার। ফলগুলো মাখনের চেয়ে নরম, মধুর চেয়ে মধুর। পাতাগুলো সবচেয়ে কোমল কাপড়ের চেয়েও কোমল। কিছু নদী দুধের। যার স্বাদ কখনো বদলায় না। কিছু শরাবের। যারা পান করবে তাদের তৃপ্তি মিটবে। কিছু নদী পবিত্র মধুর। কিছু নদী সতেজ পানির। যে-ফলমূল তারা চাইবে তা-ই তাদের খাবার। যে-পাখির গোশত তারা খেতে চাইবে তা-ই পাবে। তাদের পানীয় হচ্ছে তাসনীম, সজীবতা উদ্দীপক ও কাাফূর। তাদের পেয়ালাগুলো স্বচ্ছ, সোনারূপার তৈরি। এর ছায়া এত বড় যে, দ্রুতগতির কোনো অশ্বারোহী এক শ বছর ধরে চললেও সেই ছায়া থেকে বের হতে পারবে না। এর বিশালতা এত বেশি যে, জান্নাতের সবচেয়ে নিচু অবস্থানে যে থাকবে তার রাজত্বে যেসব দেওয়াল, ভবন আর বাগান থাকবে সেগুলো পার করতে হাজার বছর লেগে যাবে। এর তাঁবু আর শিবিরগুলো যেন লুকোনো মুক্তো। একেকটা প্রায় ষাট মাইল লম্বা। এর ভবনগুলোতে রুমের উপর রুম। তাদের নিচ দিয়ে নদী বয়ে যায়। এগুলোর উচ্চতা যদি জানতে চান তাহলে আকাশের যেসব উজ্জ্বল তারা দেখা যায় সেগুলোর দিকে তাকান। দৃষ্টি যেসব তারার নাগাল পায় না সেগুলোও দেখার চেষ্টা করুন। জান্নাতবাসীর পোশাক হচ্ছে রেশম আর স্বর্ণ। তাদের বিছানায় যেসব কাঁথা থাকবে সেগুলো হবে সবচেয়ে উঁচু মাপের রেশমি কাপড়ের। তাদের চেহারা হবে চাঁদের মতো। তাদের বয়স হবে ৩৩। মানবজাতির পিতা আদামের অবয়বে। সেখানে তারা শুনবে তাদের পবিত্র স্ত্রীদের গান। তার চেয়েও ভালো হচ্ছে সেখানে তারা ফেরেশতা আর নাবিদের কণ্ঠ শুনতে পাবে। এর চেয়েও ভালো হচ্ছে সেখানে তারা নিখিল বিশ্বজগতের প্রভুর কথা শুনতে পাবে। তাদের খেদমতে থাকবে চিরতরুণ বালকেরা। তাদের নমুনা হচ্ছে ছড়ানো-ছিটানো মুক্তোদানার মতো। তাদের স্ত্রীরা হবে পূর্ণ-যৌবনা। তাদের অঙ্গ-প্রতঙ্গে যৌবনের উন্মাদনা ছড়াতে থাকবে। সে যদি তার সৌন্দর্য দেখায় তাহলে মনে হবে...

আল্লাহর শাস্তি

আল্লাহর শাস্তিকে ভয় না করার অন্যতম একটি কারণ হলো, অনেক সময় আমরা জানি না যে কেন ভয় করবো। এই জন্য আল্লাহর শাস্তির বিস্তারিত বর্ণনা জানাটা জরুরি। আল্লাহ কুরআনে তাঁর শাস্তির বিশদ বর্ণনা দিয়েছেন। আর রাসূল (স) জাহান্নামের শাস্তির কথা আরো সবিস্তারে উল্লেখ করেছেন। রাসূল (স) জাহান্নামের কঠোর আজাবের এমন বর্ণনা দিয়েছেন যে, আপনি যদি আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে বিশ্বাস করেন – তাহলে এসব বর্ণনা শুনার পর ঘুমাতে পারবেন না। আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালার শাস্তির ভয়ে আপনি সবসময় ভীত থাকবেন। প্রিয় ভাই এবং বোনেরা, আমরা যতই ভয়ঙ্কররূপে দোজখের শাস্তির কথা বর্ণনা করি না কেন, এটা কখনোই যথেষ্ট হবে না। কারণ শব্দ কখনই বাস্তবতার মত হবে না। আর কখনো দেখেননি এমন কিছুর বর্ণনা শুনে তার প্রকৃত অবস্থা উপলব্ধি করা আসলেই কঠিন। আল্লাহ কুরআনে জাহান্নামের আগুনের আজাবের কথা উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ এবং তার রাসূল আমাদের সতর্ক করেছেন। আমি যত ভয়ংকরভাবেই জাহান্নামের শাস্তির কথা বর্ণনা করি না কেন, বিশ্বাস করুন, এটা তার চেয়েও ভয়ংকর। আমার আপনার ধারণা কল্পনার চেয়েও ভয়ংকর। আপনার ব্রেইনকে যতটুকু বোঝার যোগ্যতা দিয়ে তৈরী করা হয়েছে, এটা তার থেকেও ভয়ংকর। শুধুই শাস্তি আর শাস্তি। আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা নিখুঁত। যখন তিনি পুরস্কার দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন, জান্নাতে তাঁর পুরস্কার হবে নিখুঁত। আবার যখন তিনি শাস্তি দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন, তাঁর শাস্তিও নিখুঁত। নিখুঁত শাস্তি। এর চেয়ে বেদনাদায়ক কোনো শাস্তি হতে পারে না, এর চেয়ে কষ্টকর কোনো শাস্তি হতে পারে না। কারণ তিনিই আমাদের এই শরীর তৈরী করেছেন। তিনিই আপনার রূহ তৈরী করেছেন। আর তিনিই সুব হানাহু ওয়া তায়ালা আপনার শরীর এবং আত্মার জন্য শাস্তি তৈরী করেছেন, যদি আপনি ভুল পথ গ্রহণ করে থাকেন। রাসূল (স) আমাদের বুঝার জন্য বলেন – “জাহান্নামের সবচেয়ে কম শাস্তি যাকে দেয়া হবে তাকে জ্বলন্ত কয়লার...

রামাদানে তরুণদের প্রতি উপদেশ

আমার প্রিয় তরুণ প্রজন্ম, যদি আপনি রোজা রেখে বাসায় আছেন আর বসে বসে সিনেমা দেখছেন, তাহলে আপনি আসলে রোজা রাখছেন না। আপনি রোজা রাখছেন না। কারণ আপনার অন্তর এখনো আপনার ভুল আকাঙ্ক্ষাগুলোর কাছে হার স্বীকার করছে। রোজা রাখার এই অনুশীলনটার উদ্দেশ্যই হল যে আপনি প্রতিনিয়ত মনে করবেন যে যেভাবে আমি আমার ক্ষুধা, তৃষ্ণার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি, আমাকে আমার চোখের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধেও লড়তে হবে, আমাকে আমার মুখের (কথার) বিরুদ্ধেও লড়তে হবে, আমাকে আমার জিহবার বিরুদ্ধেও লড়তে হবে, আমাকে আমার আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধেও লড়তে হবে, আমাকে আমার হরমোনের বিরুদ্ধেও লড়তে হবে, আমাকে এখন আমার সবকিছুর বিরুদ্ধেই লড়তে হবে। এর মাঝে দৃশ্যমান হল খাওয়া আর পান করা থেকে বিরত থাকা। কিন্তু আর সবকিছুও রোজার মাঝে রয়েছে। ‘লাআল্লাকুম তাত্তাকুন’। আশা করা যায় তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারবে। এই জিনিসটাই যদি আমাদের মনে না থাকে তাহলে বনী ইসরাইলের সাথে আমাদের আর কোন পার্থক্য থাকছে না। তারাও রোজা রাখতো, কিন্তু তাদের মাঝে কী ছিল না? তাদের তাকওয়া ছিল না, কিন্তু তারাও রোজা রাখতো। আপনি যদি এটাই ভুলে যান যে কেন আপনি রোজা রাখছেন, তাহলে আপনি তাই করছেন যা বনী ইসরাইল করতো। আল্লাহ আপনাকে বলছেন, কুতিবা আলাইকুম আসসিয়াম। আলাইকুম ‘মুকাদ্দাম’, এটাকে বলা হয় জার মাজরুর মুকাদ্দাম। বিশেষত তোমাদের উপর, এখন তোমাদের পালা। আমি তোমাদেরকে তাই দিচ্ছি, যা আগের প্রজন্মের ওদেরকেও দিয়েছিলাম, তারা এর থেকে কোন উপকার পায়নি, তারা তাকওয়া অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে, আশা করি যে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে। আল্লাহ এটাই...

রমজানে মসজিদের পরিবেশ

আমরা সবাই জানি, রমজানে প্রতিদিন মসজিদে ধারণ ক্ষমতার বেশি লোকের সমাগম হয়। কিছু কিছু মসজিদে ফজর নামাজের সময় রমজানের বাহিরের জুমুয়ার নামাজের সমান লোকের আগমন ঘটে। যাদেরকে কখনই মসজিদে দেখা যায় না, তাদেরকেও রমজানের সময় নিয়মিত নামাজ পড়তে দেখা যায়। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে, মসজিদে সারা বছর নামাজ পড়তে যান এমন কিছু ভাই সে সময় এই নতুন আগত ভাইদের নিয়ে অবজ্ঞা ও ঘৃণা অনুভব করেন এবং সম্ভবত পরোক্ষভাবে তা প্রকাশও করেন। সাধারণত তা হয়ে থাকে তীব্র ব্যাঙ্গাত্মক কোনো কৌতুক অথবা কটু মন্তব্য। তাদেরকে এভাবে নিচু চোখে দেখার পরিবর্তে উপলব্ধি করার চেষ্টা করুন যে, অহংকার এবং স্ব-ধার্মিকতার পাপ সম্ভবত বেশি ভয়ঙ্কর, এই সব নবাগত ভাইদের পাপ থেকে – যা আপনি তাদের সম্পর্কে ধারণা করে আছেন। সারা বছর যারা মসজিদে আসেন তাদের প্রতি আমার বিনীত অনুরোধ: মনে রাখবেন মসজিদ আপনার সম্পত্তি নয়, এটা আল্লাহর ঘর। যদি আল্লাহর দয়ায় এই ঘরের সাথে আপনি বেশি পরিচিত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে থাকেন, তবে এমন প্রতিজ্ঞা করুন যে, রমজানে নতুন আগত ভাই-বোনদের আপনি সত্যিকারের ভালোবাসা দিয়ে বরণ করে নিবেন। আপনার লক্ষ্য থাকবে, রমজানে মসজিদ তাদের নিকট এতো আপন হয়ে পড়বে যে রমজানের পরেও তারা নিয়মিত মসজিদে আসবেন। বিষয়গুলোকে সহজ করুন, কঠিন নয়; মানুষকে আপনার কাছে নিয়ে আসুন, তাদের দূরে ঠেলে দিবেন না। “নিঃসন্দেহে তারাই আল্লাহর মসজিদ আবাদ করবে যারা ঈমান এনেছে আল্লাহর প্রতি ও শেষ দিনের প্রতি এবং কায়েম করেছে নামায ও আদায় করে যাকাত; আল্লাহ ব্যতীত আর কাউকে ভয় করে না। অতএব, আশা করা যায়, তারা হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তর্ভূক্ত হবে।” [সূরা তাওবা, আয়াত ১৮] — শায়েখ ডঃ ইয়াসির...