Articles |
একটি বিষয়ে আজ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মাঝে মাঝে আমি কোনো প্রেক্ষাপট ছাড়াই কুরআনের আয়াত নিয়ে আলোচনা করতে পছন্দ করি। আবার কখনও আমরা যে যুগে বাস করছি তার প্রেক্ষাপটে কুরআনের আয়াত নিয়ে কথা বলি। আমি প্রায়ই একটা সমস্যা দেখতে পাচ্ছি , যা নতুন কিছু নয়, তারপরও ইদানিং এটি আরও বেশি দেখছি, এই ব্যাপারে ইমেইল পাচ্ছি, আমার সাথে এ ব্যাপারে অনেকে যোগাযোগও করছে। বিষয়টা এরকম যে, অনেকের ধারণা কুরআনকে আমাদের সর্বপ্রথম গুরুত্ব সহকারে নেওয়া উচিত, আর রাসূল (সঃ) এর সুন্নাহ হবে গুরুত্বের দিক থেকে দ্বিতীয়। অনেকে বলে তা নাকি প্রশ্নবিদ্ধ, বা বলে আমরা নিশ্চিন্ত নই যে কুরআনের মত হাদীস সংরক্ষিত কিনা। রাসূল (সঃ) এর সুন্নাহ অনেকভাবে সমালোচিত হচ্ছে, এমনকি ফিলোসফিকাল অবস্থান থেকেও সমালোচিত হচ্ছে। সমালোচনাগুলোর মধ্যে অন্যতম হল যে, সুন্নাহ ওতোটা সংরক্ষিত নয়। অর্থাৎ কুরআনের মত সুসংরক্ষিত নয়। আর আরেক রকম সমালোচনায় বলা হয় যে, এই সুন্নাহ যদি সংরক্ষিত হয়েও থাকে, যে ব্যাপারটা মুহাম্মদ (সঃ) কে রাসূলের মর্যাদা দিয়েছে, তা হলো উনি আল্লাহর বার্তা ছড়িয়ে দিতেন, আর এই বার্তাটা হল কুরআন। তাহলে আমাদের চোখ থাকবে শুধু ঐ বার্তার উপর, অর্থাৎ মূখ্য হবে শুধু কুরআন। আর এটা নিয়ে আমাদের নাকি বিভ্রান্ত হওয়ারও দরকার নেই, সুন্নাহর অস্তিত্ব আছে আরকি, তা নাকি কুরআনের মত অতোটা প্রয়োগযোগ্য নয়। আর কিছু মানুষ সব সীমা অতিক্রম করে এটাও বলেছে যে, অতিপবিত্র পথপ্রদর্শনের উৎস হিসেবে সুন্নাহকে নেওয়া নাকি শির্কের সমপর্যায়ে পড়ে। কারণ কিনা আপনি একজন নির্দিষ্ট মানুষের আচার আচরণকে গ্রহণ করছেন, আর সেটাকে আল্লাহর বাণীর সাথে সমতুল্য করছেন। এইরকম বিতর্ক এখনও চলছে, অনলাইনে আছে, অনেক মানুষ এসব আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে ইত্যাদি। আর আমি এরকম ধরণের সমালোচনা অথবা অদ্ভুত চিন্তাভাবনার সামনে পড়েছি অনেক পরে। আপনাদেরকে ব্যক্তিগতভাবে বলছি, আমি কুরআনের ছাত্র হয়েছি প্রায় পনের বছর আগে এবং এই কিতাব...
Tafsir |
এখন আল-আলামিন শব্দটি নিয়ে সংক্ষেপে কিছু কথা বলব। এর অনুবাদ কিভাবে হবে? রব্বিল আলামিন? কেউ কি জানেন? জোরে বলুন। জগৎসমূহের প্রভু। এই জগৎ সমূহ শব্দের সমস্যাটা হচ্ছে- এটা আল-আলামিনের খুব একটা ভালো অনুবাদ নয়। জগৎ সমূহ বো্ঝাতে যে আরবি শব্দ ব্যবহৃত হয় তা হচ্ছে আল আওয়ালিম। আল আওয়ালিম। কিন্তু শব্দটা এখানে, আল-আলামিন। আপনাদের সাথে আমি খুব বেশি টেকনিক্যাল হচ্ছি না। কারণ, আমি যদি আপনাদের সাথে টেকনিক্যাল হই, তাহলে পালাতে গিয়ে পার্কিং-এ এক্সিডেন্ট ঘটবে তাই, আমি ব্যাপারটাকে খুব সহজ রাখব। আলামিন মানে হচ্ছে মানুষ আছে এমন পৃথিবী/ জগৎ। মানুষের জগৎ। আল্লাহ এখানে যা বোঝাচ্ছেন তা হচ্ছে, ভিন্ন ভিন্ন প্রজন্ম ও জাতি। এটাই আলামিন। একারণেই আল্লাহ বানী ইসরাঈলদের বলেছেন, আন্নি ফাদ্দালতুকুম আলা….. আল-আলামিন। আমি তোমাদেরকে সম্মানিত করেছি অন্য সকল জাতির উপর। প্রতিটি জাতিকেই একটা পৃথিবী বলা হয়েছে ব্যাপারটা সত্যিই চমৎকার! প্রতিটা প্রজন্মকেও আলাদা আলাদা জগৎ বলা হয়েছে। যদি আপনি কখনো প্রবীন কারো সাথে কথা বলেন, যার বয়স ধরুণ ৭০ কিংবা ৮০ “আপনি যখন ছোট ছিলেন, তখন মানুষের জীবনযাত্রা কেমন ছিল?” আর তখন তিনি বলা শুরু করবেন, “ওহ! সেটা এক ভিন্ন জগৎ” এমনটা শুনেছেন না? তখন এটা এক ভিন্ন জগৎ ছিল। আমরা এখানে এসেছি মাত্র। আমরা মালয়েশিয়া এসেছি। আমরা সিংগাপুরে এসেছি। আমরা তাকাই আর মনে হয়, “এ এক অন্য দুনিয়া”। এমন একটা দুনিয়া যার ব্যাপারে আমরা জানতাম না। এমন একটা দুনিয়া যা আমাদের চেনা নয়। আমরা এটাকে অন্য একটা দেশ মনে করছি না। আমরা মনে করছি যেন তা এক অন্য জগৎ যেমন ধরুন যুক্তরাষ্ট্রের কথা। আমি বেশিরভাগ সময় নিউইয়র্কেই থেকেছি। আর, নিউইয়র্কে আপনি মানুষজনকে হাই বলেন না। একটা কথা, যদি কখনো নিউইয়র্কে যান, কাউকে হাই বলতে যাবেন না। ঠিক আছে… ব্যাপারটা খুব একটা ভালো হবে না। কেউ আপনার কাছে এসে বলল, “হেই!...
Tafsir |
তো আমরা কি নিয়ে যেন কথা বলছিলাম? সূরা আলি ইমরান? আয়াত নাম্বার… কি নিয়ে যেন কথা বলছিলাম? কত দূর গিয়েছিলাম? তো, আপনারা আশা করি ইংরেজি ভাষা সম্পর্কে পরিচিত। আমি ২টি বাক্য বলব। আপনারা আমাকে বলবেন কোনটা শুনতে স্বাভাবিক লাগছে। আমি দুপুরের খাবার খেয়েছি- এটা প্রথম বাক্য। ২য় বাক্যঃ “দুপুরের খাবার, আমি খেয়েছি”। কোনটা শুনতে আপনাদের স্বাভাবিক লাগছে? আমি দুপুরের খাবার খেয়েছি। ঠিক আছে। তারা স্কুলে গেল। স্কুলে, তারা গেল। কোনটা শুনতে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে? কোনটা শুনতে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে আবার বলুন… আমি স্কুলে গিয়েছিলাম বা, তারা স্কুলে গিয়েছিল, তাই না? কিন্তু যদি আমি বলি, “স্কুলে তারা গিয়েছিল” আপনি কি তবুও আমার কথা বুঝতে পারবেন? ঠিক আছে, একটা স্বাভাবিক আর অন্যটা অস্বাভাবিক কিন্তু, দুটোই বোঝা যাচ্ছে, তাই না ? ঠিক আছে। আসলে ব্যাপারটা এটা নয় যে আমি আপনাদের বোঝাতে চাচ্ছি ইউডা স্টার ওয়ার্সে কিভাবে কথা বলে। “Strong the force is..” কিন্তু আমি আসলে বলতে চাচ্ছি যে, আরবিতে মাঝেমধ্যে বাক্যে শব্দের ক্রম পরিবর্তিত হয়। এবং এটাকে অস্বাভাবিক করে। যখন আপনি ঈদের নামাযে হেঁটে যান যখন আপনি ঈদের নামাযে গাড়ি চালিয়ে যান, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া…. আমরা কি বলি ? লিল্লাহিল হামদ। লিল্লাহি আল হামদ। ফাতিহাতে কি বলেন? আলহামদুলিল্লাহ। শব্দগুলো একই কিন্তু বলা হয়েছে… উল্টা করে। এবং এমনটা শুধু ঈদের নামাজের জন্য না। কুর’আনেও এমনটাই রয়েছে । ওয়া লিল্লাহিল হামদ। রাব্বিস সামাওয়াতি ওয়া রাব্বিল আরদ। রাব্বিল আলামিন, কুর’আনেই আছে। কখনো কখনো আল্লাহ বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ”। আসলে, আল্লাহ ৭ বার আলহামদুলিল্লাহ বলেছেন। এবং কয়েকবার কুর’আনেই পাবেন লিল্লাহিল হামদ। দুঃখজনক বিষয় হল, এর সবগুলোই একই ভাবে অনূদিত হয়। কিন্তু তারা আসলে একই জিনিস না। ২টা ভিন্ন জিনিস। আর আমি আপনাদের ব্যাখ্যা করব, কি পার্থক্য আছে আলহামদুলিল্লাহ এবং...
Tafsir |
(১ম পর্ব ) আপনাদের উপর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালার এবং সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক সকল নবী ও রাসূলগনের উপর। এবং তাঁদের সঙ্গী সাথীদের উপর… প্রথমেই আমি ধন্যবাদ দিতে চাই এখানকার আয়োজকদের, বিশেষ করে মুইযকে, স্বেচ্ছাসেবী এবং পৃষ্ঠপোষকদের যারা এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে আমার এবং আমার সাথীদের এখানে আসা সম্ভব করেছেন। এটা আমার অনেক দিনের স্বপ্ন যেন আমি পুরো পৃথিবীর মুসলিমদের সাথেই সাক্ষাৎ করতে পারি বিশেষ করে এই অঞ্চলের মুসলিমদের সাথে। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ এটা সম্ভব করেছেন। আমি শুরুতেই অনুরোধ করব দুয়া করতে আমার এই সফররত দলের জন্য এবং আমাদের ফেলে আসা পরিবারের জন্য। এই বিচ্ছেদকে আল্লাহ যেন তাদের জন্য সহজ করেন। এবং আল্লাহ (আজ্জা ওয়াজাল) যেন এই সফরে ও এই সম্মেলনে উপস্থিত সবাইকে বারাকাহ দান করেন। অবশ্যই আপনাদেরও, ইন শা আল্লাহ। তো আজ রাতে আমি আপনাদের সাথে কথা বলতে যাচ্ছি সূরা ফাতিহা নিয়ে। এবং ভ্রমণের সময়েই বিষয়টা আমি পছন্দ করেছি । এবং আমি এর জন্য কৃতজ্ঞও বটে। কারণ আমাকে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল আমার পছন্দের যে কোন বিষয়ে কথা বলার জন্য। আমি আজকের সন্ধ্যায় আপনাদের সাথে আলোচনার জন্য সূরা ফাতিহাকে পছন্দ করলাম। কেউ কেউ হয়ত অবাক হচ্ছেন, “সূরা ফাতিহা নিয়ে কথা বলার জন্য উনার কেন তিন ঘন্টা সময়ের প্রয়োজন?” শীঘ্রই এর উত্তর পেয়ে যাবেন। হয়তবা ততটা তাড়াতাড়িও না। আমি যেটা করতে যাচ্ছি তা হল, আপনাদেরকে সূরা ফাতিহা সম্পর্কে এমন কিছু বিষয় জানাবো, যা আপনাদের কুর’আনের কাছাকাছি আসতে এবং কুরআনের বাকি অংশকে নিয়ে একটু ভিন্নভাবে ভাবতে সাহায্য করবে বলে আশা করি। সম্ভবত আমি আর আপনি এর প্রতি যতটুকু মনোযোগ দিতাম, তার চেয়ে একটু বেশি মনোযোগ দিতে পারবো। এর সাথেই ইনশা আল্লাহ আমি শুরু করবো, আমি এখানে উপস্থিত সবাইকে একটা...
Tafsir |
ইহদিনা। আমাদের পরিচালিত করুন। এটা সুন্দর, সুন্দর ভাষা। আরবীতে হিদায়াহ শব্দটি– কেন আমরা “পরিচালিত করুন” বলেছি? কারণ আল্লাহ হচ্ছেন প্রভু আর আপনার সে পর্যন্ত কোনো প্রভু থাকতে পারে না যতক্ষণ না তিনি আপনাকে দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন। কীভাবে এই সম্পর্কটি শুরু হয়? কী দিয়ে –? পথনির্দেশনা। আর তারপর, যেহেতু আপনি মাত্রই বললেন,”আমি আপনার দাস। আপনার সাহায্য আমার প্রয়োজন।” প্রথম যে ধরনের সাহায্যটা আপনার/আমার প্রয়োজন তা হলো, “ইয়া আল্লাহ, বলে দিন কী করতে হবে। আমাকে বলুন কী করতে হবে।” এখন আপনি যদি আল্লাহকে জিজ্ঞেস করেন কী করতে হবে, তার মানে হলো আপনি সেটা করতে প্রস্তুত, তাই না? সুতরাং যখন আমরা বলি, ইহদিনাস সিরাতাল মুস্তাক্বীম, আমরা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহকে বলছি, “ইয়া আল্লাহ, আমি আপনাকে মেনে চলতে প্রস্তুত। শুধু আমাকে বলুন, আমি সেটা করব। আপনার উপদেশ আমার প্রয়োজন। আর যখন আপনি আমাকে উপদেশ দেবেন, আমি সেটা গ্রহণ করব।” আমার কিছু বন্ধু আছে যারা আমার কাছে সব সময় উপদেশ চায়। কিন্তু তারা কখনোই সেটা অনুসরণ করে না। “তুমি এটা সম্পর্কে কী ভাবো? তুমি ওটা সম্পর্কে কী ভাবো? আমার কী করা উচিত? আমার কী করা উচিত ? “আমি তোমাকে ৪ বছর ধরে বলছি তোমার কী করা উচিত। তুমি তা করো না। আমি তোমাকে আর বলতে চাই না। এটা বলার কোনো মানে হয় না।” আপনি এবং আমি আল্লাহর কাছে উপদেশ চাইছি। তাঁর কাছে উপদেশ চেয়ে সেই উপদেশ মত কাজ করা উচিত। অন্তত পক্ষে করার চেষ্টা করুন। এটাই প্রথম বিষয়। দ্বিতীয়ত। হেদায়া শব্দটির সৌন্দর্যতা নিয়ে। আরবিতে আপনি বলতে পারেন, আর-রুশদ– এটার মানেও পথনির্দেশনা। আরশিদনা। “আমাদের পরিচালিত করুন।” ইহদিনা মানেও আমাদের “পরিচালিত করুন।” পার্থক্য কী তা হলে? হুদা শব্দটি আরবী হাদিয়া শব্দ থেকে এসেছে। আরবীতে হাদিয়া মানে উপহার। যখন কোনো আরব, মরুভূমিতে হারিয়ে যায়, তখন তার জন্যে সবচেয়ে বড় কোন...