রামাদান প্রস্তুতি

রামাদান প্রস্তুতি

ইতিমধ্যে হয়ত আপনারা রামাদান নিয়ে নিজস্ব পরিসরে কিছু পরিকল্পনা নিয়ে ফেলেছেন আর হয়ত নিবেন ইনশাল্লাহ। আপনাদের পরিকল্পনার কুর’আনের পার্টটিতে আমরা আপনাদের জন্য নিচের এই ভিডিও কে ভিত্তি করে একটি সহজ প্ল্যান দিচ্ছি। চাইলে অনুসরণ করতে পারেন। 
একটি সুরা (সুরা জুমা) আমরা ইনশাল্লাহ মুখস্থ করব আর আর গোটা রামাদান ব্যাপী আমরা এর তাফসীর দিব (উস্তাদ নুমান আলী খানেরই) । মুখস্ত করার অনেক সুবিধা আছে।

প্রথমত, মুখস্থ করার জন্য একটি আয়াত অনেকবার পড়া হয়। যত পড়বেন তত সাওয়াব। আর রামাদানে তো আর বেশী সাওয়াব। 

আর দ্বিতীয়ত, কুর’আন মুখস্থ করতে অনেক সময় দিতে হয়। আপনার সময়ও ভাল যাবে রামাদানে ইনশাল্লাহ। 
—– —- —– —- —– —- —– —- —– —- —– —- —– —- 

আলহামদুলিল্লাহ, রমজান মাস প্রায় চলেই এল। আমাদের নিজেদের এবং আমাদের পরিবারের তাই সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে এই সময় থেকে উপকৃত হওয়ার জন্যে। এ মাসটি হল কুরআনের মাস। আল্লাহ আযযা ওয়াযাল আমাদের এ মাসের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। তিনি বলেছেনঃ

“শাহরু রমাদান আল্লাযী উনযিলা ফী হিল কুরআন।
রমজান হল সেই মাস যখন কুরআন নাযিল হয়েছে”।

রমজান মাস সম্পর্কে প্রথম এটাই বলা হয়েছে। আমি অনেক বারই একথা বলেছি যে এই মাসটিকে আল্লাহ যেভাবে আমাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন তা দিয়ে আল্লাহ বুঝিয়ে দিলেন যে রমজানের এত বিশেষত্ব রয়েছে কেননা এ মাসে কুরআন নাযিল হয়েছে। আমরা ভাবি রমজান মাস মানেই যেন রোযা রাখার মাস। কিন্তু আল্লাহ বললেন এ মাস কুরআনের মাস।

রোযা রাখার কথা আসলে আরও অনেক পরে বলা হয়েছে। এই লম্বা আয়তের প্রথম অংশে কেবল কুরআনেরই বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। “হুদাল্লিন নাসঃ এটা মানবজাতির জন্যে পথ নির্দেশক”। “ওয়া বায়্যিনাতিম মিনাল হুদা ওয়াল ফুরক্বান…অলৌকিক নিদর্শন…সুস্পষ্ট প্রমাণ…আর সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী হল কুরআন”। কুরআনের প্রাথমিক বর্ণনাই আয়াতের শুরুতে দেওয়া হয়েছে। এই আয়াতের একটা অদ্ভূত ব্যাপার হল এই আয়তটি সূরা বাকারাহ তে আছে যেটা একটা মাদানী সূরা। আর এই সময়ের মধ্যে কুরআনের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ নাযিল হয়ে গিয়েছে। কুরআনের দুই তৃতীয়াংশ মক্বায় নাযিল হয়ে গিয়েছিল।কিন্তু তারপরও আল্লাহ যখন এই মাসের বর্ণনা দিচ্ছেন…যেটা আমাদের জন্যে অবশ্যই নতুন তথ্য…কুরআনের আর কোথাও এ কথা বলা নেই যে কুরআন রমজান মাসে নাযিল হয়েছে.. কেবল এ আয়াত হতেই আমরা তথ্যটি জানতে পেরেছি…কিন্তু তিনি এমন ভাবে কুরআনের বর্ণনা দিচ্ছেন যেন আমরা কুরআন সম্পর্কে কিছুই জানিনা । “হুদাল্লিন নাসঃ এটা মানবজাতির জন্যে পথনির্দেশক”। দুই তৃতীয়াংশ নাযিল হয়ে যাওয়ার পর এখন আল্লাহ বলছেন…কুরআন হল মানব জাতির পথ নির্দেশক…এতে আছে আল্লাহর অলৌকিক নিদর্শন…এটা সত্য মিথ্যার পার্থক্যকারী…এগুলো তো কুরআনের প্রাথমিক পরিচয়! অথচ আমাদের এ কথা গুলো বলা হচ্ছ মাদানী যুগে…কিন্তু কেন?

এত কিছু বলার পিছে মূল উদ্দেশ্য হল আমরা যেন রমজান মাসে নিজেদেরকে কুরআনের সাথে এমন ভাবে পরিচিত করিয়ে নিই যেন এ কিতাব সম্পর্কে আমাদের আগে কোন জ্ঞানই ছিল না। এই উদ্যম নিয়েই আপনার এবং আমার এই রমজান মাস কে বরণ করা উচিত। আমাদের কুরআন কে নতুন করে জানতে হবে এবং কুরআনের সাথে আমাদের সম্পর্ককে সতেজ করে তুলতে হবে…নতুন করে এক সম্পর্ক গড়তে হবে যেন মনে হয় আগে কখনও এ সম্পর্ক ছিলোই না। আপনাদের সাথে প্রথম এটাই শেয়ার করতে চাই যে এ মাসে কুরআনের প্রতি আমাদের আচরণ কেমন হওয়া উচিত…আর কুরআন কে কতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিত।

তো এখন যা বলতে চাই…যারা বায়্যিনাহ টিভি এর subscriber…আলহামদুলিল্লাহ বায়্যিনাহ টিভিতে এখন অনেক প্রোগ্রাম চলছে…আপনারা অনেকেই উপকৃত হচ্ছেন Arabic with Husna কিংবা অন্যান্য কুরআনিক বিষয়বস্তু হতে। তবে আমি চাই এ রমজানে আরবি কিংবা অন্যান্য পড়াশুনা থেকে আপনারা কিছু সময়ের জন্যে বিরতি নিয়ে ফেলুন। আমি আমার পরিবারের জন্যে একটা প্রোগ্রাম আয়োজন করেছি যেখানে আমাদের চেষ্টা এমন থাকবে যেন রমজান মাসের শেষে বলতে পারি আমি,আমার পরিবার,আমার সন্তান,আমার স্ত্রী সকলেই বাস্তব অর্থে কুরআনের আরও নিকটবর্তী হয়েছি। রমজান মাস শেষে তারা যেন কুরআন সম্পর্কে আরও নতুন জ্ঞান লাভ করে এবং এ জ্ঞান তাদের নামায,তিলাওয়াত ইত্যাদি ইবাদত গুলোকে সত্যিকার অর্থেই সমৃদ্ধ করে। এ প্রোগ্রামটি আমি তাদের জন্যে প্রস্তুত করেছি এবং বায়্যিনাহ টিভি তেও রেখেছি যাতে আপনারাও এ থেকে উপকৃত হতে পারেন। এই ছোট্ট ভিডিও তে রমজানে যে প্রোগ্রাম অনুসরণ করব এবং যে আয়াত গুলো বাছাই করেছি তার পিছে আমি শুধু আমার যুক্তি স্থাপন করব।

কুরআনে কিছু সূরাকে একত্রে বলা হয় ‘মুসাব্বিহাত’। এগুলো মাদানী সূরা অর্থাৎ মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় হিজরত করার পর অবতীর্ণ। আর এগুলো ছোট্ট সূরা। সব গুলো সূরার একটা সাধারণ মিল হল প্রত্যেকটি সূরাই আল্লাহর নিখুঁত মহিমা ঘোষণা করছে। “সাব্বাহালিল্লাহি মা ফিস সামাওয়াত…ইয়ুসাব্বিহু লিল্লাহি মা ফিস সামাওয়াত...সকল কিছুই আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করছে, সকল কিছুই আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করতে থাকবে”। এই সূরা সমূহের আরম্ভটা হয়েছে মক্কী সূরার মতন, কারণ এখানে ঈমান, আল্লাহর উপর বিশ্বাস, সকল বস্তুর আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করা নিয়ে কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সব গুলো সূরার মূল বিষয়বস্তু হল একটা সাধারণ সমস্যা যা হল, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন মদীনায় এলেন সেখানে মুসলিম সমাজের ঈমান মক্বায় থাকাকালীন সময়ের ন্যায় দৃঢ় ছিল না। মুসলিমদের মাঝে সেখানে বৈচিত্র দেখা গেল, তারা সকলেই তো আত্মত্যাগী সাবিকুন ছিলেন না। অর্থাৎ তারা সকলেই মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পাশে সর্বক্ষণ থেকে অত্যাচার, ব্যাঙ্গ বিদ্রূপ সহ্য করে ঈমানের রশি ধরেননি। মুসলিম সমাজের একাংশ, মুহাজিরগণ এর মধ্য দিয়ে গেছেন।আবার মদীনার যারা আনসার ছিলেন তারাও ছিলেন আত্মত্যাগী, ঈমানে অত্যন্ত মজবুত ছিলেন। তবে তাদের মাঝে এমন মুসলিমও ছিলেন যারা ইসলামে নতুন প্রবেশ করেছেন, কারণ ইসলাম তাদের কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়েছে। কিন্তু তারা এখনও সম্পূর্ণরূপে অনুধাবন করেননি ইসলামের গুরুত্ব। কারণ তারা তখনও কোন মহৎ আত্মত্যাগ করেননি যা থেকে তারা ঈমানের স্বাদ উপলব্ধি করতে পারবেন এবং তাদের মাঝে এমনও মুসলিম ছিলেন যারা ইসলামের দাবি মোটামুটি ভাবে মেনে নিয়েছিলেন।

কিন্তু যখন ত্যাগ-তিতিক্ষার সময় এল তারা ভাবতে শুরু করলেন ‘আমি কি এমন কষ্ট সহ্য করার জন্যে ইসলাম গ্রহণ করেছিলাম!’ তারা সামনে অগ্রসর হতে অনাগ্রহী হয়ে উঠলেন। তাই কুরআনের আয়াত নাযিল হতে লাগলোঃ “মা লাকুম”… তোমাদের সমস্যা কি? তোমাদের যখন সামনে অগ্রসর হতে বলা হল তোমাদের পা মাটিতে আটকে গেল।** তোমরা কেন তা বল যা তোমরা কর না? এধরনের সমালোচনামূলক আয়াত নাযিল হতে আরম্ভ হল মুসলিম সমাজকে ঘিরে। কারণ সকলের একত্রিত ঈমানী শক্তি আগের মতন আর ছিল না। এই সূরা গুলো মুসাব্বিহাত, এদের নাযিল করার উদ্দেশ্য হল যে মুসলিম সমাজ তার ঈমানী শক্তির দৃঢ়তা হারিয়ে ফেলছে তাদের ঈমান কে পুনর্জীবিত করা, সতেজ করে তোলা, নতুন উদ্যমে ভরে দেয়া। এই সূরা গুলোর উদ্দেশ্য হল এটাই। এ কারণেই আমি এই সূরা গুলো কে বিশেষভাবে আমাদের অবস্থার সঙ্গে যুক্তিযুক্ত মনে করছি। আমরা এক মুসলিম সমাজ। আর সংজ্ঞা অনুসারে এ সমাজ মুসলিম পরিবার ও মানুষ নিয়ে গঠিত। সকলেরই ঈমান দুর্বল হয়ে পড়েছে। আমাদের এমন উপায় খুঁজতে হবে যাতে আমাদের বিশ্বাস কে সুদৃঢ় করতে পারি। আর এর জন্যে রমজান মাসের চেয়ে উত্তম সুযোগ আর কি হতে পারে! তাই আমি মুসাব্বিহাত এর মধ্য হতে সূরা গুলো নির্বাচিত করেছি। সবগুলো নয়, অল্প কয়েকটি সুরা। কেবল তিনটি, সূরাতুল জুমু’আ, সূরাতুল মুনাফিক্বুন, সূরাতুত তাগাবুন। সূরা নম্বর ৬২, ৬৩ এবং ৬৪। আমার নিজস্ব মতামত অনুযায়ী এ সূরা গুলো কুরআনের সবচাইতে শক্তিশালী সূরা গুলোর মাঝে অন্যতম যা আমাদের ঈমানকে পুনর্জীবিত করতে এবং কলুষতা মুক্ত করতে সাহায্য করে। এতে শক্তিশালী বার্তা পাঠানো হয়েছে। সুরা গুলো ছোট, মুখস্থ করতে সহজ। তাই এমন প্রোগ্রাম আয়োজন করেছি যা এই সূরা গুলোকে ঘিরেই সাজানো। এই প্রোগ্রামের মূল উদ্দেশ্য হল যে, ইনশাআল্লাহ আপনারা পরিবারের সকলে মিলে কুরআনের অল্প কিছু অংশ প্রতিদিন মুখস্থ করার চেষ্টা করবেন। হয়ত একেক জন একেক সময়ে, কারণ পরিবারের প্রধান কে হয়ত জীবিকার জন্যে সকালে অনেক আগেই বের হতে হয়। বেশির ভাগ ছেলেমেয়েরই এখন গ্রীষ্মের ছুটি চলছে। তাই আপনারা স্ত্রীরা হয়ত দিনে ১ ঘন্টা সময় মুখস্থের জন্যে রাখতে পারেন। আপনি যদি কলেজ শিক্ষার্থীও হন ১ ঘন্টা সময় কুরআন মুখস্থ করার পিছে দিতে খুব একটা সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এতটুকু সময় দেওয়ার চেষ্টা করুন। মুখস্থ করার চেষ্টা করুন ৬২,৬৩,৬৪ সবগুলো সূরাই যদি সম্ভব হয়। আর তা না হলে অন্তত একটা কিংবা দুইটা সূরা মুখস্থ করার নিয়ত রাখুন। তবে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা দেওয়ার প্রত্যাশা রাখুন। সবগুলো সূরাই পড়ার এবং মনে রাখার চেষ্টা করুন এবং এটা আপনার লক্ষ্য হিসেবে স্থির করুন।

যারা পরিবারের প্রধান, মাতাপিতা, আপনাদের উচিত ছেলেমেয়েদের কে সূরা মুখস্থ করার জন্যে পুরষ্কৃত করা এবং তাদের সাথে প্রতিযোগিতা করা। আপনাদের অনেকেই জানেন না কিভাবে আয়াত মনে রাখতে হয়। যদিও এটা শিখানোর উদ্দেশ্যে আমি ভিডিও বানাইনি তবে আমি আপনাদের একটা প্রাথমিক কৌশল বলে দিতে পারি যা আমি এবং আমার ছেলেমেয়েরা ব্যবহার করি। আমরা একটা আয়াত ১০ বার পড়ি, কিতাব দেখে দেখে, তারপর একই আয়াত ১০ বার পড়ি না দেখে। এরপরের আয়াতে চলে যাই এবং সেটাও কিতাব দেখে ১০ বার পড়ি। তারপর না দেখে প্রথম এবং দ্বিতীয় আয়াত দুটিই মনে করে পড়ার চেষ্টা করি। যতক্ষণ না আমি সাবলীল ভাবে তা বলতে পারি। এভাবেই ৩য় , ৪র্থ আয়াত পড়ি এবং ১ ঘন্টা সময় কুরআন হিফয করার পিছে ব্যয় করি। বাস্তবে যা হয় আপনি ওই এক ঘন্টায় যা পড়েছেন বাকি দিনটা বার বার করে তা মনে করার চেষ্টা করার সু্যোগ পাবেন। আপনার পাঁচ ওয়াক্ত নামাযে আপনি মুখস্থ আয়াত গুলো পড়ার চেষ্টা করতে পারেন। এখন আমি চাই আপনারা সূরা জুমু’আ, মুনাফিক্বুন আর তাগাবুন মুখস্থ করুন যতটা সম্ভব হয় আর এরই সাথে সাথে এই তিনটি সূরার কোন ব্যাখ্যা শুনুন, বায়্যিনাহ টিভিতে তা খুঁজে পাবেন। প্রতিদিনই ইনশাআল্লাহ আমরা ‘দিন-১’ ‘দিন-২’ ‘দিন-৩’ এভাবে কিছু ভিডিও পোস্ট করব, বলে দেওয়া থাকবে দিন-১ ও ২ এর জন্যে আপনাদের এই ভিডিও গুলো দেখা উচিত।

আর প্রত্যেক রেকর্ডিং কিংবা লেকচার আপনার উচিত দুইবার করে শুনা অর্থাৎ একাধারে দুইদিন। এটা আমার নিজস্ব ফরমুলা! আমি জানি যখন আমি নিজে কুরআন পড়ি, তাফসীর পড়ি, রিসার্চ করি, এর অনেক কিছুই আমি মনে রাখতে পারিনা। কিন্তু কুরআনের যে লেকচার গুলো আমি শুনেছি যে দুরুস শুনেছি স্কলারদের কাছে যেমন আশ শারাবী (রাহিমাহুল্লাহ), ডঃ ইসরার আহমেদ, ডঃ ফারহাত হাশমি, মুহাম্মদ রাতিব আল নাবুলসি, স্কলারদের কাছে উর্দু কিংবা আরবিতে যে দুরুস আমি শুনেছি তা ১০ বছর আগে শুনা সত্ত্বেও আমার মনে আছে। কিন্তু যখন আমি নিজে পড়ি তা খুব সহজেই ভুলে যাই। আমি জানি এ ফরমুলা আমার জন্যে কাজ করে। তাই আমি কুরআনের সাথে আমার এ সম্পর্ক বজায় রাখতে প্রত্যেক বছরই এ লেকচারগুলো নতুন করে শুনি। কুরআনের এ দুরুস আমি প্রত্যেক বছরই শুনি। তাই আমি জানি বার বার শুনার গুরুত্ব কতখানি। এতে করে আহরিত জ্ঞান আপনার মনে থেকে যায়। তো আমি আপনাদের জন্যে যেটা চাই তা হল আপনারা প্রতিদিনই একটা ভিডিও দেখবেন উদাহরণস্বরূপ সূরা জুমু’আ এর একাংশ দেখলে এর পরের দিন আবার সেটাই দেখবেন, এর সাথে সাথে আপনি মুখস্থও করবেন। তবে মাথায় রাখুন যে আপনি যা মুখস্থ করছেন আর যা শুনছেন তা একই গতিতে চলতে হবে এমন কোন কথা নেই। হয়ত আপনি একটা সূরা ২০ দিন ধরে মুখস্থ করছেন কিন্তু তার দুরুস বহু আগেই শুনে ফেলেছেন এবং ২য় সূরার দুরুস শুনছেন। এভাবে আপনি লেকচার শুনতে পারবেন, সমস্যা নেই। দুটো মিল রেখে চলতে হবে না! আপনি ধীরে, সময় নিয়ে মুখস্থ করুন।

ইনশাআল্লাহ শেষ যে কথা আমি শেয়ার করতে চাই তা হল এই তিনটি সুরা, আমি আগেও বলেছি এ সূরা সমূহ আমার হৃদয়ে বিশেষ স্থান দখল করে আছে কারণ এতে আমাদের ঈমান পুনর্জীবিত হয়। তবে এদের আগে আরও একটি সূরা আছে, সূরা হাদীদ; সূরা নম্বর ৫৭। আমি চাই আপনারা সর্বপ্রথম এই সূরার দুরুস শুনবেন। কেন? কারণ এই সূরার আয়াত গুলোই সকল মুসাব্বিহাত এর সূচনা স্বরূপ। সূরা হাদীদ এর আয়াত সমূহ আপনাকে সঠিক নির্দেশনা দিবে বাকি সব মুসাব্বিহাত এর আয়াত বুঝার জন্যে। আপনি তখন বুঝতে পারবেন কেন আপনি এ সূরা গুলো পড়ছেন। সূরা হাদীদ মুসাব্বিহাতের মধ্যে প্রথম এবং সম্ভবত সবচেয়ে বেশি বলিষ্ঠ। আমি কিন্তু আপনাদের এ সূরা মুখস্থ করতেই হবে এমন দাবি রাখছি না। কারণ এটা বেশ বড় সূরা। তবে অন্তত এ সূরাটি দিয়েই রমজানের এ প্রোগ্রামের পরিচিতি পর্ব শুরু করতে চাই। এই অনুশীলনের পিছে মূল উদ্দেশ্য এই যে আশা করা যায় আল্লাহর সাহায্য থাকলে আমরা রমজান মাস শেষে এই তিনটি সূরা মুখস্থ করে ফেলব, এদের দুরুস শুনে ফেলব। যে শিক্ষা অর্জন করব তা বার বার নিজেকে স্মরণ করিয়ে দিব। এতে করে আমি, আমার স্ত্রী, আমার ছেলেমেয়ে যখন এ আয়াত গুলো তিলাওয়াত করব আমরা কি প্রার্থনা করছি তা বুঝতে পারব এবং আমাদের সাথে এ সূরা গুলোর সংযোগটা কোথায় তা অনুভব করতে পারব।ফলে রমজান মাসের শেষে আল্লাহর কিতাবের সঙ্গে আমাদের এক বাস্তবধর্মী সম্পর্ক গড়ে উঠবে। এটাই মূল কার্যক্রম ইনশাআল্লাহু তা’আলা। আমি যেমনটা আগেও বলেছি যে যারা নিয়মিত আরবি শিখছেন, কিংবা অন্যান্য বিষয় শিখছেন, সেগুলো থেকে কিছু সময়ের জন্যে বিরতি নিন। এ মাসে কুরআন কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন। আর আপনি যদি প্রতিদিন এতে অল্প করে সময় ব্যয় করতে পারেন তবে আপনাকে শেষ যা বলতে চাই, আমার মনে হয় এটাই সবচেয়ে বেশি উপকারে আসবে। লেকচারগুলো গোটা পরিবারকে নিয়ে একসাথে দেখার চেষ্টা করুন। এর জন্যে সর্বোত্তম সময় হবে ইফতারের ২০ মিনিট আগে। এ সময়টা তে সবাই ক্ষুধার্ত থাকে… সকলের মাথায় খাবারের চিন্তা থাকে, টেবিলের সামনে বসে থাকে। শুধু শুধু বসে না থেকে দারস শুনুন ১৫ মিনিট কিংবা ২০ মিনিটের জন্যে, যেমনটা সুবিধা হয়। এতে সময়টা তাড়াতাড়ি কাটবে। ভাল কিছু করে সময়টা কাজে লাগানো হবে। দারস শেষ হলে উত্তম দুআ করুন এরপর ইফতার করে সন্ধ্যা বেলাটা শুরু করুন।

আমি আশা করি আপনারা এই উপদেশ হতে উপকৃত হয়েছেন। আরও আশা করি আমরা সকলে, গোটা বায়্যিনাহ টিভি পরিবার, মাশাআল্লাহ আপনারাও এখন এর সাথে সংযুক্ত, সবাই মিলে আল্লাহর কিতাবের আরও নিকটে আসতে পারব।আল্লাহ আমাদের সকলের প্রার্থনা, সকলের দুআ কবুল করুন এবং এই পবিত্র মাসে আমাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দিক।

 

 

মতামত

comments