স্থায়ীভাবে অন্তরের শান্তি কীভাবে অর্জন করা যায়

একজন শ্রোতার প্রশ্ন ছিল, ঈমানের বিভিন্ন পর্যায় আছে। ঈমান কি শান্তির সাথে সম্পর্কিত ? শান্তির বিভিন্ন পর্যায় আছে। আমি কি ঈমান ছাড়া কিংবা ঈমানদার হয়ে শান্তি লাভ করতে পারি? কোন ব্যক্তি অল্প ঈমান নিয়ে শান্তি পেতে পারেন কিনা? গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আসলে এটি একটি সুন্দর প্রশ্ন। এবং আল্লাহ একটি আয়াতে বর্ণনা করেছেন, যেটা আমি আগে তেলাওয়াত করেছি ,”অতএব, উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি লাভের অধিক যোগ্য কে, যদি তোমরা জ্ঞানী হয়ে থাক। যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে জুলুমের সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যেই শান্তি…..(৬; ৮১-৮২) এটি একটি চমৎকার উত্তর। আল্লাহ বলেছেন, দু,দিকের কোন দিক বেশি শান্তি প্রত্যাশা করে। অন্য কথায় ইসলাম ছাড়াও এমন কিছু জিনিস আছে যার মাঝে মানুষ মাঝে মধ্যে শান্তি খুঁজে পায়। কিন্তু কে নিয়মিত, বিরামহীন এবং সারাজীবন ধরে শান্তি পাওয়ার যোগ্য? এরা ঐসব মানুষ যারা সত্যিকারভাবে ঈমান আনে এবং ঈমান আনার পর মন্দ কাজ করে তাদের ঈমানের অধিকার ক্ষুণ্ণ করে না।
এখন আমি আপনাদের বলছি , কে এটা আপনাদের বলতে পারবে , কেউ একজন ৪ ঘণ্টা একই অবস্থায় থেকে মেডিটেশন করেছে এবং নড়াচড়া করছে না। আপনি তার দিকে তাকিয়ে দেখেন সে দেখতে সত্যি শান্তিময়। সে সত্যিকার অর্থে এখন শান্ত এবং তার ভিতরে অনেক শান্তি আছে। মানুষ ইয়গা করে এবং এর মধ্যেও শান্তি খুঁজে পায়। ঠিক আছে। কিছু মানুষ সাওনায় বসে শান্তি পায় । কেউ কেউ ক্লাসিক্যাল গান শুনে শান্তি খুঁজে পায়। সুতরাং আপনি যদি কারো শান্তি খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে কথা বলেন, তারা বলে আমি ভিন্ন ভিন্ন জিনিস থেকে শান্তি খুঁজে পাই। কেউ হয়ত সমুদ্রের ধারে বসে আছে এবং সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে থেকেই শান্তি খুঁজে পাচ্ছে। কিন্তু এটা হচ্ছে অস্থায়ী ভাবে আবেগের শান্ত / স্থির অবস্থা।
কিন্তু আমরা যখন বলি শান্তি খুঁজে পাই, এটা আসলে ১ নাম্বার দিদ্দুল খাওফ, এটা হচ্ছে ভয়ের বিপরীত। আপনার উদ্বেগ, দু:খ-দুর্দশা, এবং নেগেটিভ আবেগকেই শুধু কিছু সময়ের জন্য দূরে সরিয়ে নিয়ে যায় না, বরং আপনার অবস্থা পর্যালোচনা করে শান্তি খুঁজে পাওয়ার একটি নিরন্তন উৎসের সন্ধান দেয়। শান্তি অর্জনের নানা রকম প্রক্রিয়ায় জানেন মানুষ কি করে? তারা তাদের বাস্তবতাকে ভুলে যেতে পছন্দ করে। এটা জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্বাস ছাড়া, আল্লাহ ছাড়া মানুষ বাস্তবতাকে ভুলে যেতে পছন্দ করে।
সুতরাং অনেক মানুষ আছে যারা মদ পান করলে শান্তি পায়।জানেন কেন? কারন তারা যখন মদ্যপ অবস্থায় থাকে তখন তারা তাদের সমস্যার বিষয়টি ভুলে যায়। অনেক মানুষ আছে তারা যখন ড্রাগ নেয়, তখন শান্তি খুঁজে পায়। কারন যখন তারা ড্রাগ নেয় তাদের চিন্তা শক্তি অকেজো হয়ে যায়। সুতরাং তখন তাদেরকে তাদের সমস্যার ব্যাপারে উৎকণ্ঠিত থাকতে হয় না। অনেক মানুষ আছে তারা যখন ভিডিও গেইম খেলে বা মুভি দেখে তখনই শান্তি খুঁজে পায়। কারন যখন তারা ভিডিও গেইম খেলে বা মুভি দেখে তখন তারা তাদের নিজের জীবন নিয়ে চিন্তা করে না। সুতরাং তখন সেটা সুখের সময়। কাজেই যখনই একটি মুভি দেখা শেষ হয় তারা বলে আমি বাস্তবতার মুখোমুখি হতে চাই না।তারা আবার অন্য মুভি দেখা শুরু করে।এবং এরপর অন্যটা। কিংবা অন্য ভিডিও গেইম শুরু করে।এবং এভাবেই পুনরাবৃত্তি হতে থাকে। কারন তারা তাদের বাস্তবতার সন্মুখীন হতে পারে না।
আমাদের সাথে ওদের পার্থক্য হচ্ছে, আমাদের বিশ্বাস, ঈমান- যদি সত্যিই আপনার ঈমান থাকে, তাহলে আপনার বাস্তবতাকে এড়িয়ে চলার দরকার নেই।আপনি বাস্তবতার মোকাবিলা করেও শান্তি খুঁজে পাবেন। শান্তি খুঁজে পাবার অন্য সব পছন্দ বা শান্তি খুঁজে পাবার অন্য সব পথ হল জীবন থেকে পালিয়ে বেড়ানো। আপনি জানেন,অনেক মানুষ আছে যখন তারা শান্তি খুঁজে তখন ছুটিতে চলে যায়। তারা চেনা পরিচিত পরিবেশ ছেড়ে দূরে চলে যায়, এই ভেবে যে আমি ছুটিতে আছি। আমরা কী করি যখন আমরা শান্তি খুজি? আমরা কোন জামাতে যাই। আমরা সেই সকল মানুষের সাথে মিলিত হই এবং একত্রে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি। সুতরাং আমরা বাস্তবতার সম্মুখীন হই। এবং এটাই হচ্ছে আমাদের বিশ্বাসের সৌন্দর্য। অন্য উপায়ে কিছু শান্তি আপনি হয়তো খুঁজে পাবেন, কিন্তু আল্লাহ আপনাকে দীনের মাধ্যমে যেটা দিবেন সেটার মত নয়।