এখন পুরুষদের ব্যক্তিগত উন্নয়নকে তিন ভাগে ভাগ করা যেতে পারে–
প্রথমতঃ আত্মসংযম করা।
মৌখিক, মানসিক বা দৈহিকভাবে অভদ্র আচরণ করবেন না। এটা একটা বড় সমস্যা, যেটা নিয়ে অনেক বোন তাদের স্বামীর ব্যাপারে অভিযোগ করেন। আমার স্বামী, তার মেজাজ নিয়ন্ত্রণে থাকে না তিনি যখন মেজাজ হারান তখন চিত্কার চেঁচামেচি করেন। এবং আমাকে কষ্টদায়ক কথা বলেন এবং কখনও কখনও দুর্ভাগ্যবশত কিছু ভাইয়েরা এতটাই রাগান্বিত হন যে তারা তাদের স্ত্রীর প্রতি দৈহিকভাবে নির্যাতন করেন। আমার এক ক্লায়েন্ট ছিল যারা নবদম্পতি ছিলেন এবং তারা শ্বশুরবাড়ির সম্পর্কে আলোচনা করছিলেন, স্ত্রী তার শ্বশুরবাড়ির উপরে অনেক হতাশ ছিলেন এবং তিনি ক্রমাগত স্বামীকে অভিযোগ করতেন। স্বামী তাকে বলতেন, বন্ধ করো বন্ধ করো এসব কথা। আমি শুনতে চাই না। কিন্তু স্ত্রী ক্রমাগতভাবে স্বামীকে অভিযোগ করতেই থাকলেন এবং পরিশেষে স্বামী এতটাই রেগে গিয়েছিলেন যে তিনি তার স্ত্রীকে শেষ পর্যন্ত চড় মেরে বসেন। এরপর স্বামী একেবারে ভেঙে পড়েছিলেন। তিনি এরকম করেছিলেন, ”আমি কখনোই ভাবিনি আমি আমার স্ত্রীকে আঘাত করবো”। তিনি সেশনেই কাঁদছিলেন। ”সেটা আমি নই, এটা আমার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যর সাথে মেলে না। কিন্তু সে বন্ধ করেনি”। তাই আমাদের আবেগ আমরা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করবো তা শিখতে হবে। এর কারণ হলো, একবার যদি আপনি কিছু বলে ফেলেন বা খারাপ আচরণ করেন আপনি কখনোই তা ফিরিয়ে নিতে পারবেন না এবং এটা এমন কিছু যা তাদের সম্পর্কটিকে চিরতরে বদলে দিয়েছিলো। যখন সম্পর্কের কোন পর্যায়ে দৈহিক নির্যাতন হয়, যখন আপনি আপনার সাথীকে কোন আক্রমণাত্মক বা কষ্টদায়ক কথা বলেন, আপনার সম্পর্ক আর আগের মত থাকে না। এবং আপনি তা আর ফিরে পাবেন না।
আমার একজন ভাইকে মনে পড়ছে তিনি থেরাপির জন্য এসেছিলেন এবং তিনি আমাকে বলেছিলেন আপনি জানেন, সব আমার দোষ ছিল। আমি তাকে বললাম, আপনি কি রসিকতা করছেন? তিনি বলেন, “এটি সত্যি। সব দোষ আমার ছিল। সে একজন বিস্ময়কর স্ত্রী ছিল। সে একজন চমৎকার মা ছিল। সে সবকিছু করেছে এবং আমি তার স্বীকৃতি দেই নাই। আমি তার প্রশংসা করি নাই আমি তাকে কিছু বলিনি। এখন সে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য মামলা দায়ের করেছে। বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য মামলা দায়ের করেছে এবং আর এর জন্য আমি শুধু নিজেকেই দোষারোপ করছি।” এবং এটি এত দু:খজনক যে, যেদিন সে ভাই আদালতে গিয়েছিলো … তিনি আমাকে বলেন, আমি আদালতে গিয়ে আমার হাঁটুর উপর বসে পড়ি আমি তার পায়ে চুমু খাই, আমি তাকে বলেছিলাম দয়া করে এটা করো না, আমাদের বিবাহ শেষ করো না। কিন্তু অনেক দেরী হয়ে গিয়েছিলো।
এখন দ্বিতীয় যে কাজটির মাধ্যমে ভাইয়েরা নিজেদের উন্নত করতে পারেন, তা হলো- নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশের করার মাধ্যমে।
আপনাকে নিজের অনুভূতি প্রকাশ করা শিখতে হবে। আমি জানি যে আপনাদের অনেকেরই এটা করতে ভাল নাও লাগতে পারে। এটা করতে অস্বস্তিকর বোধ হতে পারে। এটা করা আপনার ব্যক্তিত্বের অংশ নয়। কিন্তু স্ত্রীকে খুশি করার নিমিত্তে আপনার এটা করা দরকার। এবং আমাদের লক্ষ্য হলো আমাদের নেতিবাচক ব্যবহারগুলিকে অল্প অল্প করে সরিয়ে ফেলতে হবে। যতক্ষণ না আমরা আদর্শ ইসলামিক ব্যক্তিত্বে পরিণত না হই। আমাদের মাঝে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মত হবার আকাঙ্ক্ষা থাকা দরকার। আমাদের ব্যক্তিত্ব যেমনি হউক না কেন নিজেদের উন্নয়নে সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা ভাল হতে পারি। এটা সত্যিই গুরুত্বপূর্ণ যে মানসিক উন্নতির জন্য ক্রমাগত শিখতে হবে। বিয়ের উপর এমন কিছু কোর্স করতে পারেন। নিজের উন্নতি করা যায় এমন কিছু বই কিনতে পারেন কিভাবে আপনি নিজেকে আরও ভাল বুঝতে পারবেন। হয়তো একসঙ্গে সন্তান প্রতিপালন বিষয়ক কোন কোর্স করতে পারেন। যেখানে উভয়ের আলোচনার বিষয় একই হবে। এবং আমি জানি আপনারা অনেকেই কর্মক্ষেত্রে এবং পরিবারের যোগান দেয়ার কাজে আটকে আছেন। আপনার যথেষ্ট সময় থাকে না। তাই হয়তো দু’জনে মিলে কোন একটা বই একসাথে পড়ার চেষ্টা করতে পারেন। হতে পারে একটি অডিও বই, দ্রুত গতিতে ছাড়ুন এটি একসঙ্গে শুনুন। এবং এটা নিয়ে আলোচনা করুন যেন দু’জন একই বিষয়ে কথা বলতে পারেন এবং আধ্যাত্মিক দিক দিয়ে এবং আবেগের দিক দিয়ে আরও উন্নত হতে পারেন।
শেষ জিনিসটা হলো আমি আপনাকে সুপারিশ করছি যে আপনি আপনার জীবনসাথীর জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠুন।
তো, আপনি আপনার নিজের উপর কাজ করেছেন আপনি আপনার ব্যক্তিত্বের কিছু দিক পরিবর্তিত করেছেন। এবং তারপর খুঁজে বের করুন আপনার জীবনসাথী কী পছন্দ করেন। কারণ প্রত্যেক ব্যক্তির তাদের নিজস্ব পছন্দ এবং অপছন্দ আছে। এতএব খুঁজে বের করুন আপনার কেমন পোশাক আপনার সাথী পছন্দ করেন। তারা কোন কাজ করতে মজা পায়, আপনি কি করলে তিনি ভালবাসা অনুভব করেন। এবং আরেকটি বিষয় যে কোন ধরণের বিরক্তিকর আচরণ বন্ধ করুন। যখন কোনো দম্পতি আমার কাছে আসেন, আমি প্রথমে তাদের যা বলি তা হলো বিরক্তিকর আচরণ বন্ধ করুন। কারণ হয়তো আপনি না জেনেই বিরক্তিকর আচরণ করছেন, যা কিনা আসলেই আপনার জীবনসাথীর মন খারাপ করছে। আর যতবারই আপনি এটা করেন ততবারই সে মনে ভীষণ কষ্ট পায়। এতএব আপনার নেতিবাচক আচরণগুলি বন্ধ করতে হবে সর্বপ্রথমে। এবং তারপর প্রেমময় আচরণ আরম্ভ করুন। এমন কাজ করুন যেন আপনার জীবনসাথী ভালবাসা অনুভব করতে পারেন। তিনি যথাযথভাবে সমাদৃত হয়েছেন অনুভব করতে পারেন তাকে বুঝতে দিন তিনি আপনার এক নম্বর প্রাধান্য। আপনার সাথী যদি অনুভব করেন যে আপনার কাছে তিনি অগ্রাধিকার পান তাহলে তিনি খুব সুখী হবেন। সুতরাং সাধ্যমত চেষ্টা করুন এই জিনিসগুলি প্রয়োগ করুন। আপনার নিজের মধ্যে পরিবর্তন আনুন সর্বপ্রথমে। যেমন আল্লাহ বলেছেন, “আল্লাহ কোন জাতির অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যে পর্যন্ত না তারা তাদের নিজেদের অবস্থা পরিবর্তন করে।” সুতরাং বৈবাহিক সম্পর্কে পরিবর্তন আনার আগে নিজের মাঝে পরিবর্তন আনুন। ইন’শা’আল্লাহ।