পরিশেষে, আমি পুরুষদের কিছু উপদেশ দিতে চাই, যারা দর্শকদের মাঝে বসে আছেন। বাচ্চাদের ব্যাপারে যা বলেছি, আপনাদেরকেও প্রথমে তাই বলবো, আপনার মোবাইলের অপ্রয়োজনীয় apps গুলো মুছে ফেলুন, সেগুলো ফেলে দিন। ভিডিও গেমস এর apps মুছে ফেলুন, Netflix app মুছে ফেলুন, amazon video player app, যে সকল apps আপনি বিনোদনের জন্য ব্যবহার করে থাকেন, সেগুলো সব মুছে ফেলুন। সেগুলো যেন আপনার ডিভাইসে না থাকে। এই মুহূর্ত থেকে! বলবেন না, যে প্রথম রমযান থেকে শুরু করবো, এর মধ্যে season 5 শেষ করতে পারব। সেটা করবেন না। এটি ফেলে দিন। একেবারে মুছে ফেলুন। আর না। আর না। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল তাদেরকে পছন্দ করেন না, যাদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হলেও তারা অবজ্ঞা করে। এবং এরা নিজেদের বলে তারা পরে বদলে যাবে। আল্লাহ এসব লোকদের পছন্দ করেন না। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল মাঝে মধ্যে খুব কঠোর ভাষায় এরকম মানুষদের বর্ণনা দেন। যে সকল লোকদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হলেও তারা অবজ্ঞা করে। وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ فَأَعْرَضَ عَنْهَا তার চেয়ে বড় জালিম আর কে? যাকে আল্লাহর আয়াত স্মরণ করিয়ে দেয়া হলে উপেক্ষা করে। সে থামে না, নিজের অপকর্ম চালিয়ে যায়। وَنَسِيَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ এবং তার কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায় অন্য কথায়, সে দায়িত্বজ্ঞানশূন্য ছিল, যদিও তাকে স্মরণ করে দেয়া হয়েছিল। তাই, ব্যাপারটি হালকা ভাবে নিবেন না। বিনোদনের মাধ্যমগুলো থেকে নিজেকে মুক্ত করুন। আমাদেরকে এই মাসে আল্লাহর কালাম এবং আল্লাহর রাসূলে উপদেশ গ্রহন করতে হবে, দূষিত ইনপুট বন্ধ করতে হবে আমাদের। তাতে তালা লাগাতে হবে। যদি পুরো জীবনের জন্য সেগুলো বন্ধ করতে না পারেন, অন্ততপক্ষে এই মাসটিকে যথার্থ সম্মান দিন। এটি ছিল পুরুষদের উদ্দেশ্যে প্রথম উপদেশ।
দ্বিতীয় উপদেশ হলো, দীর্ঘ রাত-জাগবেন না। আপনি যদি এখানে আসেন তারাবী পড়তে, এবং আপনি এক্সট্রা সালাত আদায় করছেন, কিন্তু আপনি ফজরের সময় মসজিদে উপস্থিত হতে পারলেন না… আপনি ভাববেন, উমমম, আমি সেহেরি খাবো না, লম্বা রাত্রি কাটিয়েছি। (জেনে রাখুন) আপনি মূল বিষয়টা ধরতে পারছেন না! মৌলিক নামাজ হচ্ছে ফজর ও এশা মসজিদে আদায় করা। রমযানে এটি আপনাদের প্রথম টার্গেট। যখন আপনি সেই টার্গেট পূরণ করতে পারবেন, তারপর অন্যান্য বিষয় যোগ করুন। তারাবীর নামাজ শেষে সামাজিকতার দরকার নেই। আপনি মসজিদে ৮/২০/৪ বা ৬ রাকাতের জন্য যান, সেটা ব্যাপার না, তবে যদি এখানে আসেন, তাহলে নামাজ শেষে বাসায় গিয়ে ঘুম দিন! বাসায় গিয়ে লোকদের দাওয়াত দিবেন না, তারপর দেখা যাবে ভোর ২টা পর্যন্ত আপনি জাগ্রত, তারপর শেষ মুহূর্তে কোন ভাবে সেহরির জন্য উঠলেন বা এ রকম কিছু… এটা করবেন না। এটা করবেন না। হাতে সময় রাখুন। ফজরের সময় এখানে উপস্থিত থাকুন। আর যখন ফজরের সময় এখানে থাকবেন… এরকম ভাববেন না যে আগামী কাল থেকে সারা রাত জেগে থাকব তারপর ফজর পড়তে আসবো, তাহলে আর আমার ফজর বাদ যাবে না। সেরকম করলে, আপনি যখন এখানে দাঁড়াবেন, আপনি তো দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমাবেন এখানে। আপনার তো সত্যিকারঅর্থের সালাতে আগ্রহী হওয়ার কথা। মূল কথা তো এই নয় যে আপনি কোনমতে মসজিদে যাবেন এবং সেখানে দাঁড়াবেন। মূল কথা হচ্ছে আল্লাহর সাথে খুশু(মনোযোগ ও আবেগ) থাকতে হবে। রাতে যথাযথ ঘুমান তারপর মসজিদে গিয়ে ফজর উপভোগ করুন। এবং এই বছর এটিকে লক্ষ্য হিসেবে স্থির করেন। আল্লাহ বলেন “وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর ২;১৮৫”।
দর্শকদের মাঝে যারা পুরুষ এবং যাদের সন্তানদের বয়স ১২ বা এর অধিক, তাদেরকে দৈনিক আপনার সাথে ফজর এবং এশার নামাজে নিয়ে আসুন। এই রমযানে এটি আপনাদের লক্ষ্য। এই রমজানকে গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করুন। এভাবে আপনাদের চিন্তা করা উচিৎ। আপনাদের কেউ কেউ দূর থেকে এখানে এসেছেন, যেই মসজিদ আপনার কাছে, যেই মুসাল্লা আপনার নিকটে, ফজর এবং এশা। ফজর এবং এশা। ফজর এবং এশা মসজিদে আদায় করুন। কেন? কারণ আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বলেছেন যে কেউ যদি ফজর এবং এশার সালাত জামাতে আদায় করে, তাহলে সে যেন পুরো রাত সালাত আদায় করল! বলুন না, সারা রাত নামাজ পড়বার সাওয়াব থেকে আমরা কেন বঞ্চিত হবো? তাও রমযান মাসে? বুঝতে পারছেন তো, লাইলাতুল ক্বাদরও তার মাঝে পড়বে। যদি আপনি লাইলাতুল ক্বাদর ধরতে নাও পারেন, আপনি এটি পেয়ে যাবেন আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলায়হি ওয়া সাল্লাম) এর কথার গুণের কারণে। কারণ আপনি ফজর এবং এশা মসজিদে জামাতে আদায় করেছেন। বলুন না, কেন এই সুযোগটি হাতছাড়া করবেন? তাই দৃঢ় হন। এটি আমাদের সকলের জন্য একটি বিশেষ মাস হবে। আসুন কাজে লেগে পড়ি। আসুন নিজেদের পরিবর্তন করি, আসুন আলাদা কিছু করি। যাতে করে আল্লাহ দেখেন যে, এই রামাদান আমরা আমাদের পরিবারসহ ভালভাবে পালন করছি।
তারপর আল্লাহ বলেছেন وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَاكُمْ যাতে তোমরা সেভাবে আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা করতে পার যেভাবে তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন। এখন, এটি অনেক কিছু বুঝায়। তবে আমি শুধু একটি উপমার মাধ্যমে একটি ব্যাপার তুলে ধরতে চাই। মনে করুন, আমি মাত্র একটি চাকরি পেয়েছি এবং আমার কাজ হচ্ছে দুইটা। আমাকে ফোনের উত্তর দিতে হবে এবং ইমেইলের উত্তর দিতে হবে। এটিই আমার কাজ। আমাকে আর কিছু করতে হবে না। কিন্তু নিজে-নিজেই সিদ্ধান্ত নিলাম, ভাল হবে যদি আমি কিছু ফটোকপির কাজ করি, ফ্রন্ট-ডেস্কে সাহায্য করি। এভাবে যদি আমি আমার মূল কাজ বাদ দিয়ে এসকল এক্সট্রা কাজকর্ম করি। এবং আমার বস আমায় এসে প্রশ্ন ছুড়েন যে কেন আমি ফোনের উত্তর দিচ্ছি না। আমার উত্তর যদি হয় যে, আমি মনে করেছিলাম ওটা গুরুত্বপূর্ণ এবং সেটাও গুরুত্বপূর্ণ। কি মনে করেন, আমার চাকরি থাকবে? না। আমাকে নির্দিষ্ট কিছু কাজ করার জন্য চাকরি দেয়া হয়েছে। আমার যে সকল কাজকে অগ্রাধিকার দিতে হবে সেগুলো আমি ঠিক করি না। সেগুলো অলরেডি আমার বস আমার জন্য ঠিক করে দিয়েছেন। আমার বস আমাকে বলেন, এটি সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ, ওটি সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ, উনি যেটাকে গুরুত্ব দেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। এবং যেটাকে দেন না সেটি গুরুত্বপূর্ণ নয়। সিদ্ধান্ত নেন তিনি, আমি না। আমি কেন এটি বলছি?
কারণ আমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করি। আল্লাহ মহিমান্বিত এবং আল্লাহ আমাদের জন্য অগ্রাধিকার নির্ধারণ করেন যেভাবে তিনি আমাদের পথনির্দেশ দেন তার উপর ভিত্তি করে عَلَىٰ مَا هَدَاكُمْ । কোন কাজকে অগ্রাধিকার দিতে হবে সেই সিদ্ধান্ত আপনি বা আমি নিই না। কিছু মানুষের জন্য রমযানের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ কাজ হচ্ছে না খেয়ে থাকা, কেউ কেউ অগ্রাধিকার দেন সামাজিকতাকে, ‘আজকে আমরা কার ইফতারে যাচ্ছি?’ তাদের নিকট এটিই একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ কাজ। বলুন তো, কে অগ্রাধিকার ঠিক করেন? কী এই মাসকে গুরুত্বপূর্ণ বানায়?
এই রমযানে আপনি যদি কারও বাসায় নাও যান, কিন্তু আপনি ঠিকমত সালাত আদায় করেন, নিজেকে পরিশুদ্ধ করেন আল্লাহর কিতাবের নিকটে আসেন, তাহলে আপনি সঠিক অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করছেন।
— উস্তাদ নুমান আলী খান