আল্লাহ বলেন – كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ -দুনিয়ার উপমা হল বৃষ্টির মত…. আরবিতে বৃষ্টির জন্য যে শব্দটি ব্যবহৃত হয় তা হলো – ‘মাতার।’ কিন্তু ‘গাইস’ শব্দের অর্থ হলো – পরিমানমত বৃষ্টি, এতো বেশি নয় যার ফলে জমিনে বন্যা তৈরি হয় আবার এতো কমও নয় যার কারণে জমিনে গাছ জন্মাবে না। একেবারে পরিমানমত বৃষ্টি। আর এই ধরণের বৃষ্টিকে বলা হয় ‘গাইস।’ এই জন্য যখন আমরা আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য দোয়া করি আমরা ‘সালাতুল ইস্তিগাসা’ আদায় করি। কারণ আমরা যেমন তেমন বৃষ্টির জন্য দোআ করছি না, আমরা দোয়া করছি ‘গাইস’ এর জন্য। আমরা পরিমানমত বৃষ্টির জন্য দোয়া করছি। কারণ খারাপ বৃষ্টির কারণে মানুষ মারা যেতে পারে, বন্যা হয়ে যেতে পারে, এই বন্যা আপনাকে মেরে ফেলতে পারে। আল্লাহ আকাশ থেকে পাথরের বৃষ্টিও বর্ষণ করতে পারেন। তাই আপনি ‘গাইস’ চাইবেন, যে বৃষ্টি প্রাণের সঞ্চার করে।
তো, আল্লাহ বলছেন, দুনিয়ায় যেসব কিছুর পেছনে তোমরা ছুটে চলো তার উপমা হলো – পরিমানমত বৃষ্টির মত, أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ – যে কৃষক জমিনে বীজ বপন করেছে, সে এই বৃষ্টি দেখে দারুণ খুশি, কারণে এই বৃষ্টির ফলে তার জমিনে ফসল ফলবে। এই উপমায় একটি সুন্দর চিত্র অঙ্কন করা হয়েছে। কৃষক এর জন্য আরবিতে যে শব্দটি ব্যবহার করা হয় তা হলো – ‘কুফ্ফার।’
এখন আমরা সাধারণভাবে ‘কাফের’ শব্দের একটা অর্থ জানি। ‘কাফের’ শব্দের অর্থ কী? অবিশ্বাসী। কিন্তু এই আয়াতে কাফের শব্দের অর্থ এটা নয়, সূরা হাদীদের এই আয়াতে ‘কুফ্ফার’ শব্দের অর্থ হলো- যে জমিনে বীজ লুকিয়ে রাখে। এটাই কুফ্ফার শব্দের শাব্দিক অর্থ। একজন অবিশ্বাসীকে এই জন্য কাফের বলা হয় কারণ সে সত্য লুকিয়ে রাখে। এই জন্যই তাকে কাফের বলা হয়।
যাইহোক, একজন কৃষককে সারা বছর ধরে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। সর্ব প্রথম কোন কাজটা তাদের করতে হয়? বীজ বপন করার কাজ। এটাই প্রথম কাজ। তারপর তাদেরকে জমিনের মাটি ঠিক করতে হয়, পানি দিতে হয়, কীটনাশক ব্যবহার করতে হয় এবং নিশ্চিত করতে হয় যেন জমিনে যথেষ্ট সূর্যের আলো পড়ে। এই সব কিছু তাদের করতে হয়। কিন্তু সর্ব প্রথম তাদের যা করতে হয়…..এবং সবচেয়ে পরিশ্রমের যে কাজটি তাদের করতে হয় তা হলো বীজ বপন, যখন তারা কুফ্ফার থাকে।
আল্লাহ এই পর্যায়টাকেই উল্লেখ করেছেন, কারণ এটাই সবচেয়ে পরিশ্রমের কাজ, আর এ সময় কৃষক তার পরিশ্রমের কোনো ফলাফল দেখতে পান না। তিনি জানেন না এই বীজ থেকে আসলে চারা গজাবে কিনা। অথবা পোকা মাকড় এই বীজটা খেয়ে ফেলবে কিনা। তিনি জানেন না বৃষ্টি হবে কিনা। তিনি কিছুই পূর্ব থেকে জানেন না। আর বিষয়টা আমাদের মতো নয়। আমি প্রায় এই উদাহরণটা দিয়ে থাকি। আপনি যদি কোনো চাকরি করে থাকেন, তাহলে আপনি মাসে একবার বা দুইবার বেতন পেয়ে থাকেন। অথবা কেউ কেউ প্রতি সপ্তাহে বেতন পেয়ে থাকেন।
কৃষক কতবার বেতন পায়? বছরে একবার। তাকে সারা বছর পরিশ্রম করতে হয়, তারপর সম্ভবত বছর শেষে সে তার পরিশ্রমের ফলাফল পাবে। তাকে পরিশ্রম ঠিকই করতে হবে, কিন্তু ফসল পেতেও পারে আবার নাও পেতে পারে। এখন লোকটি সপ্তাহের পর সপ্তাহ জুড়ে পরিশ্রম করে যায়, তারপর একদিন ঘুম থেকে জেগে উঠে দেখে ফসলের জন্য পরিমানমত বৃষ্টি হয়েছে। সে কি তখন খুশি হবে? হ্যাঁ, সে খুশি হবে। একসময় সে দেখতে পায় বীজ থেকে চারা গাছ গজিয়েছে। গাছগুলো এখনো বড় হয়নি, যখন পরিপক্ক হবে তখন হয়তো সেগুলো উচ্চতায় তাকেও ছাড়িয়ে যাবে। কিন্তু এখন সেগুলো সবে মাত্র গজিয়েছে, আর তাতেই সে অত্যন্ত খুশি। সে অত্যন্ত খুশি।
তারপর আল্লাহ বলেন – ثُمَّ يَهِيجُ – “তারপর তা পেকে যায়।” আমি আপনাদের বলেছিলাম, যখন পরিপক্কতা লাভ করে তখন সেই গাছগুলো উচ্চতায় তাকেও ছাড়িয়ে যায়। যখন ফসল পরিপক্কতা লাভ করে, তখন একজন কৃষকের কী করা উচিত? আপনারা কৃষক নন। কেউ কেউ হতে পারেন, আমি জানি না। কেউ কি ওহাইও থেকে এসেছেন? যখন ফসল পরিপক্কতা লাভ করে তখন আপনারা কী করেন? তখন আপনি শস্য সংগ্রহ করেন, ফসল কেটে ফেলেন। কিন্তু আয়াতটি এখানে একটি অদ্ভুত মোড় নিয়েছে। আল্লাহ এখানে বলেন নি, এরপর সে ফসল কেটে ফেলে। বরং তিনি বলেছেন -فَتَرَاهُ مُصْفَرًّا – “তখন তুমি তা হলুদ বর্ণের দেখতে পাও।” তখন তুমি দেখবে এটা হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে।
এখন এটা বুঝতে পারা গুরুত্বপূর্ণ। কোন কৃষকই নির্বোধ না হলে তার ফসলকে হলুদ বর্ণ ধারণ করতে দিবে না। (এখানে ধান বা গম গাছের কথা বোঝানো হয়নি।) সবুজ থাকাবস্থায় সে এটা কেটে ফেলবে; যখন এটা ফ্রেশ থাকে। হলুদ বর্ণ ধারণ করা মানে, গাছ মরে গেছে বা মারা যাওয়ার পথে আছে।
তারপর আল্লাহ বলেন – ثُمَّ يَكُونُ حُطَامًا – এরপর তা ‘হুতাম’ বা খড়কুটা হয়ে যায়। হুতাম হলো যা জমিনে খড়কুটা হয়ে পড়ে থাকে, যার প্রতি আমরা কোনো মনোযোগ দেই না। হেটে যাওয়ার সময় আপনার পায়ের নিচে পড়লে ‘খটাস’ করে শব্দ হয়, কিন্তু আপনি এর প্রতি কোনো গুরুত্ব দেন না। যেমন, শুকনো পাতা আপনার পায়ের নিচে পড়লে আপনি এভাবে বলেন না – ‘ওহ, আমি দুঃখিত। খেয়াল করিনি।’ আপনি এভাবে বলেন না, কারণ এটা শুধু অর্থহীন আবর্জনা। ‘হুতাম’ শব্দের শাব্দিক অর্থ হলো – যা আপনার পায়ের নিচে পড়ে, যার প্রতি আপনি কোনোই গুরুত্ব দেন না।
এই উদাহরণটি দেয়া হয়েছে যেন আমরা আমাদের জীবনটাকে উপলব্ধি করতে পারি। আমি এখনো উদাহরণটি ব্যাখ্যা করিনি, শুধু এটা বর্ণনা করলাম। (আমার হাতে সময় আছে ….. ৫৮ সেকেন্ড! আমি কি আরো ৫ মিনিট সময় পেতে পারি? ৫ মিনিট। এটা ইমাম সিরাজ ওহ্হাজের ৫ মিনিটের মতো হবে না। হা, হা, হা। আজকে যেহেতু আপনি আর মাইক পাচ্ছেন না, তাই আমি এরকম বলতে পারি। ঠিকাছে, আমার পাঁচ মিনিট সময় আছে।)
এই পাঁচ মিনিটে ….. প্রথম আকাংখাটি কী ছিল? খেলা করা। কোনো খেলনা নিয়ে খেলা করার পূর্বে আপনি আপনার সন্তানকে খেলনার দোকানে নিয়ে গেলেন। ব্যাপারটা খারাপ, তবু আপনি নিয়ে গেলেন। সে খেলনার দোকানের সেলফে রাখা খেলনাগুলোর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে থাকে। আপনি যদি তাকে অন্য দিকে নিয়ে যান, তবু সে তার মাথা ঐ খেলনার দিকে ফিরিয়ে রাখে, আপনার হাত থেকে ছুটে যেতে চায়। সে ইতিমধ্যে ভাবতে শুরু করে দিয়েছে–সে কিভাবে ঐ খেলনা ধরে রেখেছে, ঐটা নিয়ে খেলছে, তার মুখ ঘষছে আরো সব মজার মজার কত্ত কি করছে! সে ইতিমধ্যেই এসব কিছু কল্পনা করে ফেলেছে। তাই সে আপনার কাছে বায়না ধরে, “আম্মু, প্লিজ ঐটা, প্লিজ আম্মু আমাকে ঐটা কিনে দাও।”
তাই আপনি খেলনাটি কিনে ব্যাগে রাখেন, আর তাকে বলেন – “বাসায় যাওয়ার আগে এটা বের করতে পারবে না।” সে গাড়ির পেছনের সিটে বসে খেলনার ব্যাগটি হাতে ধরে রাখে, আর বার বার ব্যাগের মুখটা একটু ফাঁকা করে দেখে খেলনাটা আছে কিনা। তারপর একসময় সেটা বের করে আনে, আপনাকে জিজ্ঞেস করে –
“আম্মু আমি কি এটা নিয়ে একটু খেলতে পারি? প্লিজ শুধু একবার। শুধু একবার।”
– “না, আমি বলেছি এখন না।”
কিন্তু তার প্রত্যাশার কোনো কমতি নেই, ভাবতে থাকে ‘ ওহ! এটা দিয়ে খেলতে পারলে চরম মজা পাবো।’
আপনার বাচ্চাকে একটা খেলনার ব্যাগ দিয়ে রাখুন, যেটা এখনো খোলা হয়নি, তারপর ব্যাপারটা ভিডিও করুন। অনেকক্ষন যাবৎ তাকে এটা খুলতে দিবেন না, কারণ সেই সময়টুকুই ঐ খেলনার সাথে কাটানো তার সবচেয়ে সেরা সময়।
এটা ঠিক ঐ কৃষকের মত যে চরম চিন্তায় মশগুল থাকে – ” বৃষ্টি হবে তো? বৃষ্টি হবে তো? বৃষ্টি হবে তো?” আর যখনি বৃষ্টি আসে সে চরম খুশি হয়ে যায়। যদিও এখনো ফসল বের হয়নি, যদিও এখনো গাছগুলো পরিপক্কতা লাভ করেনি, তারপরেও সে দারুণ খুশি। সে ভাবতে শুরু করে দেয়, আমি অনেক ফসল পাবো, বিক্রি করে অনেক টাকা পাবো, টাকাগুলো অমুক অমুক ক্ষেত্রে ব্যয় করবো ইত্যাদি ইত্যাদি।
তো বাচ্চাটি চরম উত্তেজিত, অবশেষে সে বাক্সটি খুলে খেলনাটি বের করে আনলো। সে এটা নিয়ে ….হুমম …..ধরুন তিন ঘন্টা খেলা করলো। এরপর আপনি খেলনাটি কোথায় পাবেন? খাটের নিচে।
– “তোমার খেলনাটা কোথায়?”
– “জানি না। তুমি আমাকে কখনো আয়রন ম্যান কিনে দাওনি, দিয়েছো শুধু ক্যাপ্টেন আমেরিকা। আমি আয়রন ম্যান চেয়েছিলাম।”
অল্প কিছু সময়ের মধ্যে … যা একটু আগে তার কাছে ছিল দুনিয়ার সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস তা এখন মূল্যহীন।
আল্লাহ কোন বিষয়টাকে মূল্যহীন হিসেবে বর্ণনা করেছেন? কৃষি জমি।
খেলনাটার জন্য সে এতো লালায়িত ছিল, যখন সে পেলো, ভালোভাবে এটা থেকে উপকার ও নেয়নি…. কিছু সময়ের মধ্যেই তার কাছে এটা মূল্যহীন।
আপনার বাচ্চা গ্রান্ড থেফট অটোর জন্য আপনার কাছে কান্না কাটি করছিলো, সে এটার জন্য তাহাজ্জুদ পড়ছিলো, সে রমজানের ২৭ তারিখে মসজিদেও গিয়েছিলো আর দোয়া করছিলো – “ইয়া আল্লাহ! আমার এই গেইমটা দরকার, আমি প্রতিজ্ঞা করছি এক সপ্তাহের মধ্যে শেষ করে ফেলবো। আমি সব লেভেল শেষ করবো, আমি ওয়াদা করছি।”
অবশেষে সে গেইমটা পেলো, সে পুরোটা খেলে শেষ করলো। তারপর একদিন আপনি রান্নাঘরে আপনার পায়ের নিচে একটি সিডি পড়ে থাকতে দেখলেন। “এই সিডিটা এখানে কোত্থেকে এলো? আমি না তোমাকে এটা কিনে দিয়েছিলাম।”
– “হ্যাঁ, আমি সব লেভেল শেষ করে ফেলেছি।… এমমম এটা তেমন ভালো লাগেনি। আগেরটা এর চেয়ে ভালো ছিল।”
বিনোদনের ক্ষেত্রেও এমন ঘটতে দেখা যায়। নতুন মুভি আসলে সিনেমা হলের সামনে বিশাল লাইন দেখা যায়, যেটা হজ্জের ভিসার জন্য দাঁড়ানো লাইনের চেয়েও লম্বা হয়। মুভিটা দেখার জন্য মানুষ বাইরে অপেক্ষা করতে থাকে। আমার মনে আছে, আগের দিনে “ষ্টার ওয়ার” মুভি মুক্তি পাওয়ার দিনে মানুষকে দেখতাম … ‘জেডাই’ ড্রেস পরে মুভি দেখতে আসতো। মনে হয় যেন ইহরামের কাপড় পরে অপেক্ষা করছে কখন জান্নাতের গেইট খোলা হবে।
তারপর তারা সিনেমা হলে ঢুকে মুভিটা দেখে, এবং বলে – “এমমম….নিম্নমানের স্পেশাল ইফেক্ট দেয়া হয়েছে, আমার গল্পটা অতো ভালো লাগেনি। বুউউ ….”
আপনি এর জন্য এতো লালায়িত ছিলেন আর অল্প সময়ের মধ্যেই এটা আপনার নিকট মূল্যহীন হয়ে গেলো। আবার আমাদের মাঝে অনেকেই এমন আছে, যারা গাড়ির জন্য এমন তীব্র আকাঙ্খা পোষণ করেন।
হয়তো আপনি Acura NSX গাড়ির মালিক হতে চান, আমি জানি না। অথবা bmw m3 কিনতে চান।
এরপর এক সময় আপনি গাড়িটি কিনলেন। আহ, কি মজা! আপনার ভার্সিটির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় একটু স্লো মোশনে চালান, (বন্ধুদের দেখানো জন্য) ‘কার ওয়াশ’ এর কাছে একটু বেশিই আসা যাওয়া করেন।
তারপর, পরের বছর নতুন মডেলের গাড়ি বাজারে আসলো। এখন হঠাৎ করেই আপনি গাড়ির হেডলাইট নিচু করে রাখেন; গাড়িটি এখন খুব কুৎসিত মনে হয়। এটি এখন আর রাস্তায় চলার যোগ্য নয়। এই গাড়ির ভেতরে থাকলে খুব রাগ হয় নিজের উপর। এটি এখন মূল্যহীন আপনার নিকট।
বাসায় বড়োদের ক্ষেত্রেও এমন হয়। হায় হায় ….মাত্র ১৫ সেকেন্ড সময় বাকি আছে। তারা বাড়ি ক্রয় করে, বাসায় নতুন কেউ আসলে তাকে পুরো বাড়ি ঘুরে দেখান। তাকে দেখান, বয়লার রুম, “এই হলো আমাদের বাথরুম, এটা হলো ফাস্ট বাথরুম, এটা সেকেন্ড, এটা থার্ড…” কেউই আপনার বাথরুম দেখতে চায় না…যদি না…..যাই হউক। কেউ আপনার বাথরুম দেখতে চায় না। তবু আপনি তাকে বাড়ির সবকিছু দেখাতে চান। কারণ এটা নতুন বাড়ি, আপনি খুবই উত্তেজিত এটা নিয়ে।
দুই বছর পর, তিন বছর পর কেউ একজন আপনাকে তাদের নতুন বাড়ি উদযাপন করার উৎসবে দাওয়াত দিলো। ঐ বাড়ির আশপাশ খুব সুন্দর। বাড়িটাও বেশ বড়। নতুন বাড়ি, তাদের বাথরুমও আপনার বাথরুমের চেয়ে সুন্দর।এর ফলে কী হয়? “হায় আল্লাহ!…..” আপনার বাড়িটি ঠিক হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। বুঝতে পারছেন? আমি কি বলতে চাচ্ছি?
খেলনা হলুদ বর্ণ ধারণ করে, গাড়ি হলুদ বর্ণ ধারণ করে, বাড়ি হলুদ বর্ণ ধারণ করে। আবার কারো কারো বিয়ে ও হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
বিয়ের প্রথম দিন …আপনার স্ত্রীকে দেখার জন্য কেমন উত্তেজিত থাকেন? না, না, আমাকে বলতে যাবেন না। তার এখন অতীতের সব কথা মনে পড়ছে। শান্ত হউন।
এভাবে দশ বছর পার হয়ে যায়। আপনি বাসায় আসলেন। বিয়ের প্রথম দিন আপনার বৌকে যখন প্রথম দেখেছিলেন, কাজ থেকে বাসায় আসার পর যখন দেখেছিলেন, সেটা অন্য রকম এক অনুভূতি।
এভাবে দশ বছর পার হয়ে যাওয়ার পর, একদিন আপনি বাসায় আসলেন, আপনি তার দিকে তাকালেন আর সেও আপনার দিকে তাকালো …আর এটা ঠিক বিয়ের প্রথম দিনের মতোই সুন্দর, তাই না??? না, সেরকম নয়। কিছু একটা হদুল বর্ণ ধারণ করেছে। আমি প্রায় এই গল্পটি বলি,
আপনি নতুন বিয়ে করেছেন, রাস্তা দিয়ে আপনার স্ত্রীকে নিয়ে যাচ্ছেন। হঠাৎ করে তিনি হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেন, ব্র্যান্ড নিউ ওয়াইফ, তিনি পড়ে গেলেন। আপনি কি করেন? ” ওহ, ওহ, তুমি ঠিকাছো তো? তুমি ঠিকাছো তো? আমি কখনই তোমার কিছুই হতে দেব না।”
তারপর দশ বছর পার হয়ে যায়। আপনার স্ত্রীকে নিয়ে আবার সেই একই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন এবং আপনার স্ত্রী আবার হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেন। কিন্তু আপনি হাটতেই থাকেন। আপনি আপনার হাঁটা অব্যাহত রেখে মুখ ঘুরিয়ে বলেন – “নিজে নিজে উঠে পড়, কী সমস্যা তোমার, তোমাকে নিয়ে কি রাস্তায়ও বেড়োনো যাবে না?” যাই হউক বিবাহ ও হলুদ বর্ণ ধারণ করে।
আল্লাহ আমাদের বলছেন, দুনিয়াতে আমরা যেসব বিষয়ের জন্য এতো আকাঙ্খা প্রকাশ করি, একসময় তার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলবো। তারপর এই আয়াতের উপসংহারে তিনি বলেছেন – وَفِي الْآخِرَةِ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانٌ – আর পরকালে আছে কঠিন শাস্তি এবং আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টি।
পরকালের শাস্তি এমন এক জিনিস যাতে আপনি কখনো অভ্যস্ত হয়ে যাবেন না। জাহান্নামের শাস্তি এমন নয় যে বার বার শাস্তি পাওয়ার দরুন একসময় তাতে অভ্যস্ত হয়ে যাবেন। এই দুনিয়ার আনন্দ এমনকি শাস্তিতেও আপনি একসময় অভ্যস্ত হয়ে যেতে পারেন। কিন্তু জাহান্নামের শাস্তিতে কেউ কখনো অভ্যস্ত হয়ে যাবে না।
এবং তারপর তিনি বলেন – وَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللَّهِ – এবং আল্লাহর ক্ষমা।…. অর্থাৎ এটা চিরস্থায়ী। এবং সবশেষে বলেছেন – وَرِضْوَانٌ – “ও সন্তুষ্টি।”
তাঁর অসাধারণ অলংকারিক বর্ণনাভঙ্গির কারণে তিনি বলেন নি – “ও রিদওয়ানুম মিনাল্লাহ।” তিনি শুধু বলেছেন – “ও রিদওয়ান।” যার মানে হলো – অবিশ্বাস্য সন্তুষ্টি। অবশেষে আপনি পুরোপুরি সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন। আপনি আর পরবর্তী জিনিসের জন্য উৎসুক হয়ে থাকবেন না। এই দুনিয়াতে যদি আপনি আয়রন ম্যান, সুপার ম্যান বা যে মুভিই আপনি দেখেন না কেন, হল থেকে বের হয়ে এসেই পরবর্তীটার জন্য অপেক্ষা করতে থাকবেন। আপনি পরিতৃপ্ত হয়ে হল থেকে বের হয়ে আসবেন না। (দুঃখিত, দুঃখিত … স্ক্রিনে লাল কালিতে বলা হয়েছে ‘আপনার সময় শেষ, প্লিজ থামুন। আমাকে আসলেই থামতে হচ্ছে। এটা শেষ পর্যন্ত ইমাম সিরাজ ওহ্হাজের পাঁচ মিনিটের মতো হয়ে গেলো। আমি তাকে খুব ভালোবাসি তাই তার অনুসরণ করছি।)
যাইহোক – وَمَغْفِرَةٌ مِّنَ اللَّهِ وَرِضْوَانٌ – আপনি অবশেষে সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন, আমরা শেষ পর্যন্ত জান্নাতে গিয়ে প্রশান্ত হয়ে যাবো। আপনি এই জীবনে কখনো পরিপূর্ণরূপে শান্তি পাবেন না। এখানে আমরা সবসময় পরবর্তী চমকের জন্য অপেক্ষা করতে থাকবো, যতক্ষণ না মাটি দিয়ে আমাদের পাকস্থলী পূর্ণ হয়ে যাবে, যতক্ষণ না এটা ঘটে।
তাই আল্লাহ বলেন – وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلَّا مَتَاعُ الْغُرُورِ – পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ বৈ কিছু নয়।
এই একটি আয়াত, এই একটি আয়াত, সূরা হাদীদের এই একটি আয়াতে পার্থিব জীবনকে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে। পার্থিব জীবন প্রতারণার উপকরণ বৈ কিছু নয়।
মানুষ মনে করে এই এই জিনিস পেলে তারা সুখ খুঁজে পাবে, কিন্তু তারা পায় না। মানুষ মনে করে তারা তাদের বিশাল প্রাসাদসম বাড়িকে খুব পছন্দ করে, কিন্তু তার ৯০ বছর বয়সের সময় যখন তার সন্তান সেই বাড়ি ছেড়ে চলে যায়, তখন সেই বাড়িই তার জন্য আজাবে পরিণত হয়।
এই বাড়ি তাদেরকে আর আনন্দ দেয় না। কোনো যুবক সেই বাড়িতে গেলে ভাবে, “ইস! আমি যদি এই বাড়িতে বাস করতে পারতাম!” আর বুড়োরা মনে করে – “আমি যদি এটা থেকে কোনো ভাবে মুক্তি পেতাম! আমি এখানে থাকতে চাই না।” সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ আমাদেরকে সত্যিকারের সুখ এবং আনন্দ কী তা উপলব্ধি করার তৌফিক দান করুক। আর তাঁর উপর সত্যিকারের বিশ্বাস এবং প্রত্যাশা নিয়ে সেই উপলব্ধিকে কাজে পরিণত করার তৌফিক দান করুন। বারাকাল্লাহু লিই ওয়ালাকুম, ওয়াস্সালামুআলাইকুম ওয়া রাহ মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।