অন্যদের দোষ দেয়ার মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসুন

আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহ মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ, ‘বিস্ময়কর কুরআন’ সিরিজে আপনাদের স্বাগতম। কুরআন অধ্যয়নের সময় বিস্ময়কর কিছু পেলে আমি এই সিরিজের মাধ্যমে আপনাদের সাথে তা শেয়ার করি। আজকে ইউসুফ (আ) এর ভাইদের একটি বক্তব্য নিয়ে কথা বলবো। وَتَكُونُوا مِن بَعْدِهِ قَوْمًا صَالِحِينَ তোমরা তাকে কুপে ফেলে দেয়ার পর অথবা এমনকি হত্যা করার পর, এটা করার পর তোমরা তোমাদের পিতার একান্ত মনোযোগ পাবে। এরপর, কিছু সময় পার হওয়ার পর তোমরা ভালো মানুষ হয়ে যাবে। وَتَكُونُوا مِن بَعْدِهِ قَوْمًا صَالِحِينَ তারা মনে মনে নিজেদের ভালো মানুষ গণ্য করতো না। তারা বলছে না যে, তারা ভালো মানুষ। কারণ তারা বলছে – এই কাজ করার পর আমরা ভালো মানুষ হয়ে যাবো। “তো, হ্যাঁ, আমার একটি সমস্যা আছে, কিন্তু আমার সমস্যার কারণ ঐ যে সে। যখন সে সরে যাবে তখন আমি আসলে ভালো মানুষ হয়ে যেতে পারবো।” এই দুনিয়াতে এমন মানুষ রয়েছে যারা নিজেদের সাধু মনে করে। শয়তান তাদের কাজ কর্মকে তাদের নিকট সৌন্দর্যমণ্ডিত করে উপস্থাপন করে। তাই তারা মনে করে তারা ভালোই আছে। وَهُمْ يَحْسَبُونَ أَنَّهُمْ يُحْسِنُونَ صُنْعًا “ অথচ তারা মনে করে যে, তারা সৎকর্ম করেছে।” তারপর এমন ধরনের মানুষও পাওয়া যায়, যারা মনে করে যে তারা ভালো মানুষ নয়। তারা জানে তারা খারাপ। কিন্তু তারা স্বীকার করে না যে তাদের নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে। তারা এর জন্য অন্য কিছুকে দোষারোপ করবে বা বেশিরভাগ সময় অন্য এক মানুষকে দোষারোপ করে। তারা এভাবে বলে- “যতক্ষণ পর্যন্ত সে আমার জীবনে থাকবে বা যতক্ষণ পর্যন্ত সে এই এই … কাজ করতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত আমিও ভালো হতে পারবো না।” যখন আমি তাদের থেকে মুক্ত হতে পারবো বা তাদের ক্ষতি করতে পারবো … অথবা এই ঘটনার ক্ষেত্রে তাকে হত্যা করতে পারবো বা তার থেকে মুক্ত হতে...

শয়তানের ধূর্ততা – বাংলা ডাবিংসহ

“তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও যমীন, যা তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য। যারা স্বচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন। তারা কখনও কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের উপর জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন? তারা নিজের কৃতকর্মের জন্য হঠকারিতা প্রদর্শন করে না এবং জেনে-শুনে তাই করতে থাকে না। তাদেরই জন্য প্রতিদান হলো তাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে প্রস্রবণ যেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। যারা কাজ করে তাদের জন্য কতইনা চমৎকার প্রতিদান।” [সূরা আলে ইমরানঃ ১৩৩- ১৩৬...

ঈমান এবং আঁধার প্রান্তরে পথ চলা প্রদীপ – ২য় পর্ব

দ্বিতীয় সমস্যাটি কী ছিল? দ্বিতীয় সমস্যাটি ‘ওয়া তারাব্বাস্তুম’। “তোমরা (সব সময় সুযোগের) প্রতীক্ষা করেছ/দীর্ঘসূত্রতা করেছ”। এখানে দীর্ঘসূত্রতা বলতে কি বুঝানো হয়েছে? আপনি বুঝতে পেরেছিলেন যে এটা খারাপ, আপনার নিজের বিবেকের মাধ্যমে আপনি বুঝতে পেরেছিলেন যে, আমার নিজেকে পরিবর্তন করা উচিত; কিন্তু নিজেকে বুঝিয়েছেন “ইনশাআল্লাহ আমি দ্রুত নিজেকে পরিবর্তন করবো’, আমি জানি নিজেকে পাল্টাতে হবে, আমি জানি এটা খারাপ, শুধু এই সপ্তাহ পরেই আমি সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষে পরিণত হবো।” “বেশী না, আর একটা সেমিস্টার/দুটো মাস এই ‘বখে যাওয়া’ বন্ধুদের সাথে থাকবো, তারপর আমি অন্য কোর্স নিব। এখন ওদেরকে রাগানো ঠিক হবে না”। “শুধু এই এক মাস আমি এসব করবো, এই আর এক সপ্তাহ, এই আর একটা বা দুইটা পার্টি, একটা দুইটা ড্রিঙ্কস… এভাবে আপনি নিজেকে বলতে থাকেন আর সামান্য একটু, সামান্য একটু। “এই নয়/দশ মাস পরেই তো রামাদান। রামাদানে সব ছেড়ে দিব। পুরাই চেইঞ্জ হয়ে যাবো। আমার প্ল্যান আছে হজ্জে যাওয়ার, হজ্জ থেকে আসার পর দেখবেন আমি কেমন ভালো মানুষে পরিণত হয়ে যাই“। কিন্তু সে পর্যন্ত … আমার জন্য দোয়া করতে থাকেন। এটাই ‘ওয়া তারাব্বাস্তুম’। আপনি এই মুহূর্ত থেকে নিজেকে পরিবর্তন করতে চান না, আপনি শুধু নিজেকে খারাপ পরিবেশে ফেলে রাখছেন না, আপনি এখনো নিজেকে পরিবর্তনের জন্য কোন পদক্ষেপ নিতেও প্রস্তুন নন। মনে হচ্ছে আপনার কাছ থেকে অনেক বেশী কিছু চাওয়া হচ্ছে। আপনি যেভাবে আছেন সেভাবেই থাকতে চান, আরও কিছু খারাপ উপভোগ করতে চান। এটাই ‘ওয়া তারাব্বাস্তুম’। আপনি ধারণা করে আছেন … আপনার প্রথম ধারণা ছিল – খারাপ পরিবেশে থাকলেও এটা আমার উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না, কিন্তু প্রভাব পড়েই। সময়ের সাথে সাথে ভয়ঙ্কর খারাপ কিছু আপনার কাছে স্বাভাবিক হয়ে যায়। এখন তারাব্বুস বা অপেক্ষা করতে থাকা, দীর্ঘসূত্রতা করার প্রভাব কী? আপনি ভাবছিলেন আপনি যেকোনো সময় এই খারাপ কর্ম...

স্বামীদেরকে বলছি, “সবাইকে খুশি রাখা অসম্ভব

আপনার মা-বাবা আপনার জন্য যা যা করেছেন তার মূল্য আপনি কখনোই পরিশোধ করতে পারবেন না। আপনার মা তার দেহের মধ্যে আপনাকে নিয়ে বেড়িয়েছেন। তাঁর রক্ত বিসর্জনের কারণেই আপনি পৃথিবীর মুখ দেখতে পেরেছেন। আপনাকে জন্ম দিতে গিয়ে তাঁরই মৃত্যু হতে পারতো। আপনি যখন নিজের যত্ন নিতে পারতেন না তখন বাবাই আপনার সব প্রয়োজন মেটানোর ব্যবস্থা করেছেন। আপনার থাকার জায়গা ছিলোনা, তিনিই সেই ব্যবস্থা করেছিলেন। আপনার পড়াশোনার ব্যবস্থা করেছেন। আবার আপনার মায়ের দেখভাল করার মাধ্যমেও আপনার বাবা আসলে আপনার প্রতিই ইহসান করেছেন। কেন এমনটা বলছি? কারণ আল্লাহ যখন মুসা (আঃ) এর প্রতি বর্ণনা করছিলেন وَلَقَدْ مَنَنَّا عَلَيْكَ مَرَّةً أُخْرَىٰ সূরা ত্বহাতে… “আমি তোমার প্রতি আরও একবার অনুগ্রহ করেছিলাম।” আর তাঁর প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহের একটা অংশ ছিলো… “আমরা তোমাকে তোমার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছিলাম।” ..… “যাতে সে চোখের পানি না ফেলে।” যাতে তাঁর চোখ শীতল হয়ে যায়। যাতে সে আর কষ্ট না পায়। যখন আল্লাহ তাঁর মায়ের যত্ন নিচ্ছিলেন, আল্লাহ বলছেন, “আমি আসলে তোমাকেই অনুগ্রহ করছিলাম।” তাই যখন আপনার মায়ের প্রতি ভালো কিছু করা হচ্ছে, তখন আসলে আপনার প্রতিও অনুগ্রহ করা হচ্ছে। আপনি হয়তো বলবেন “আমি জানি আম্মু আমার যত্ন নিয়েছে, কিন্তু আব্বু তো কিছুই করেনি।” তিনি যে স্বামী হিসেবে আপনার মায়ের দেখাশোনা করে যাচ্ছেন, আপনাদের দুজনেরই, এটাই একটা অনুগ্রহ যা আপনি শোধ করতে পারবেন না। তিনি যদি আর কিছু না-ও করে থাকেন। তাই বাকি সব সম্পর্কের ক্ষেত্রে আপনি হয়তো অন্যদের ভালো করছেন। কিন্তু মা-বাবার বেলায় আপনি আসলে এমন ঋণ পরিশোধ করছেন যা আসলে শোধ হওয়ার ঊর্ধ্বে। এটা অসম্ভব। আর আমরা সারা জীবনই এর জন্য ঋণী থেকে যাবো। তাই আপনার সর্বোচ্চটা দিলেও তা যথেষ্ট হবেনা। তবুও আপনি আপনার সেরা চেষ্টাই দিয়ে যাবেন। সেজন্যই এটা “ওয়াবিল ওয়ালিদাইনি ইহসানা।” এটা হলো আপনার দায়িত্বের প্রথম...

পার্থিব জীবনের সাজ-সজ্জা ও ক্রীড়া-কৌতুক

“আপনি নতুন বিয়ে করেছেন, রাস্তা দিয়ে আপনার স্ত্রীকে নিয়ে যাচ্ছেন। হঠাৎ করে তিনি হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলেন। আপনি দ্রুত গিয়ে তুললেন, সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, “আমি কখনই তোমার কিছুই হতে দেব না, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি! নতুন বিবাহের মধ্যে এরকম ভালোবাসাই থাকে… এরকম আবেগের মধ্য দিয়েই আমরা যাই… এভাবে আমাদের জীবনের অনেকগুলো স্তর থাকে… বিবাহের প্রাথমিক অবস্থা থেকে সন্তান-নাতি-নাতকুর বয়স পর্যন্ত। আমাদের জীবনের অবস্থা কেমন? ছোটবেলার খেলা নিয়েই পড়ে থাকি, কিছুটা বড় হলে পড়ালেখা ধরি, আর কিছুটা বড় হলে আমাদের মধ্যে স্মার্টনেস আসা শুরু করে, মেয়ে বা ছেলে দেখলেই একটু সাজুগুজু করার চেষ্টা করি, ভাব নেই। আরো একটু বড় হলে পড়ালেখা কখন শেষ হবে, একটা সার্টিফিকেট পাবো এই চিন্তা করি। চাকরি এবং এরপরে বিয়ে, স্বামী-স্ত্রীর আনন্দ… এভাবে আর কিছু দিন, সন্তান-সন্তুতি… এরপর নাতী-নাতকু… এভাবে জীবনের শেষপ্রান্তে এসে হাজির হই। আমাদের সেই ছোট্ট জীবন থেকে জীবনের শেষপ্রান্তে এসে হাজির হই। শেষে আর কিছুতেই মজা পাই না, আমাদের জীবনের রঙ শেষ হয়ে আসে, জীবনের রঙ পাল্টাতে শুরু করে। জীবনের শেষপ্রান্তে এসে আপনার স্ত্রীকে নিয়ে যদি আবার সেই একই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যান এবং আপনার স্ত্রী হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে যান তখন বলেন, “কী সমস্যা তোমার, তোমাকে নিয়ে কি রাস্তায়ও বেড়োনো যাবে না?” সেই প্রাথমিক বিবাহিত অবস্থার ভালোবাসা আজ নেই, জীবনে ভালোবাসা আজ পীতবর্ণ ধারণ করেছে, ধূসর রঙ ধারণ করেছে। এভাবেই আমাদের জীবনও একই অবস্থা দিয়ে যায়। ছোট্ট শিশু, কৈশর, যৌবন, বৃদ্ধাবস্থা… এভাবে আমাদের জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। এই ক্ষণস্থায়ী জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনের দিকে। ঠিক আল্লাহ এই উপমাকেই এখানে চিত্রায়িত করেছেন এভাবে… আমাদের ক্ষণস্থায়ী পার্থিব জীবন, যেন আমরা এখানে এভাবে পড়ে না থাকি, আমরা যেন ধোঁকায় পড়ে শাস্তিযোগ্য না হই। আমাদের সফলতার জন্য আল্লাহ আমাদের সতর্ক করে দিলেন আমাদের চোখের সম্মুখে দেখা একটি...