আমাদের হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করা

আমাদের হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করা

“Quran Weekly” তে দেয়া উস্তাদ নুমান আলী খানের ”Quranic Gems” সিরিজ থেকে।

”এবং আমি নিশ্চয়ই জাহান্নাম সৃষ্টি করেছি কিছু মানুষ এবং জ্বিনদের জন্য। ওদের অন্তর আছে কিন্তু বুঝতে পারে না, তাঁদের দৃষ্টি আছে কিন্তু ওরা দেখে না এবং ওদের কান আছে কিন্তু তারা শুনতে পায় না। তারা পশুর মত, বরং এরচেয়েও জঘন্য। এরাই তারা যারা অসাবধানী।” (সুরা আল-আ’রাফ – ১৭৯)

আসসালামু আলাইকুম কুরআন উইকলি, 
আজকে আমি সুরা আল-আ’রাফ এর ১৭৯ নং আয়াত এবং কুরআনের আরো কিছু জায়গা থেকে এবং রাসুল (সাঃ) এর কিছু হাদিস নিয়ে আলোচনা করতে চাই। দেখুন আল্লাহ্‌ কুরআনে সুরা আল-মুমিনুন এ বলেছেন যে, বিশ্বাসীরাই হবে জান্নাতের উত্তরাধিকারী। 


أُولَٰئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ
“ওলা-জকা হুমু আলওয়ারিঝুন” (২৩:১০)

তারা হবে বেহেশতের উত্তরাধীকারী। যখন আপনি উত্তরাধিকার নিয়ে ভাবেন, আপনার মনে হবে এমন কিছু যা আপনার জন্য আপনার নামে লিখে রাখা আছে, যখন সময় হবে সেটা আপনি পেয়ে যাবেন। তো এটা আমাকে ভাবালো, আমরা কেন বেহেশতের উত্তরাধিকারী হতে যাবো? এটা তো এমন না, ওটা কী আগেই আমাদের জন্য লেখা ছিলো?” এবং তাই আমি এ বিষয়টি আরো গভীরভাবে বুঝতে চেষ্টা করলাম এবং আমি দেখলাম রাসুল (সাঃ) এই বিষয়ে বলেছেন, একটু মন দিয়ে শুনুন, আল্লাহ্‌ বেহেশতে বাড়ী বানিয়ে রেখেছেন, যত মানুষ সৃষ্টি করেছেন, প্রত্যেকের জন্য। যত মানুষ পৃথিবীতে এসেছে প্রত্যকের জন্য বেহেশতে বাড়ী বানানো আছে। এবং বিশ্বাসীরা, অবশ্যই সব মানুষই বেহেশতে যাবে না, যখন বিশ্বাসীরা বেহেশতে যাবে তারা তাঁদের নিজের বাড়ীতে যাবে তারা তাঁদের আশেপাশে কিছু বাড়ী দেখবে যেগুলো খালি। এবং ঐসব বাড়ী ওদের জন্য বানানো আছে যারা বেহেশতে যাবে কিন্তু যেতে অস্বীকার করেছে। তারা ওখানে যেতে চায়নি। এবং তাই তারা যে শুধু নিজের বাড়ী পাবে তা নয়, তারা ঐসব বাড়ীর ও উত্তরাধিকারী হবে যারা ওখানে যেতে পারেনি। এখন আপনি হয়তো ভাবতে থাকবেন, “আল্লাহ্‌ কি ঐসব বাড়ীগুলো জান্নাতের নিচু স্তরে তৈরী করবেন? যদি সবাই জান্নাতবাসী হয় সবাই নিশ্চয়ই জান্নাতের সবচেয়ে উঁচু স্তরে যাবে না”। আপনি যদি না জানেন তাই বলে নিচ্ছি, সবচেয়ে উঁচু স্তরের জান্নাত কে বলে ফেরদৌস, যা থেকে আরবী বা ইংরেজীতে আমরা পাই স্বর্গ। এই শব্দটি এসেছে, আল-ফেরদৌস থেকে। এই আয়াতে, 

أُولَٰئِكَ هُمُ الْوَارِثُونَ
“ওলা-জকা হুমু আলওয়ারিজুন” (২৩:১০) 

الَّذِينَ يَرِثُونَ الْفِرْدَوْسَ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
“আল্লাজীনা ইয়ারিজুনা আলফিরদাওসা হুমফীহা খালিদূন” (২৩:১১) 

ঐ বাড়ীগুলো যা বানানো হয়েছে সমস্ত মানবজাতির জন্য, মূলত বানানো হয়েছে ফেরদৌস-এ, সবচেয়ে উঁচু জান্নাতে। এখন এই আয়াতটা বুঝতে চেষ্টা করুন, মনে হবে এই আয়াতে একদম বিপরীত একটা কথা বলা হয়েছে, 

وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ
আমি জাহান্নাম সৃষ্টি করেছি কিছু মানুষ এবং জ্বিনদের জন্য। 

আমি এই অনুবাদে ‘জন্য’ শব্দটা পছন্দ করতে পারছি না। কুরআনের অন্য আয়াতে আল্লাহ্‌ আমাদের আগেই বলেছেন কেন উনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন, শুধুমাত্র তাঁর প্রার্থনা করতেই নয় বরং 


إِلَّا مَن رَّحِمَ رَبُّكَ ۚ وَلِذَٰلِكَ خَلَقَهُمْ (১১:১৯) 
আল্লাহ্‌ তোমাদের সৃষ্টি করেছে যাতে তিনি তোমাদের প্রতি ভালোবাসা ও দয়া প্রদর্শন করতে পারেন।

এটা আল্লাহ্‌ নিজে বলেছেন। শুধুমাত্র এই কারণেই, এই একটি কারণেই আল্লাহ্‌ তোমাদের সৃষ্টি করেছেন। আরেকভাবে বললে আল্লাহ্‌ আপনাকে এই উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেননি যে আপনাকে দোযখে নিক্ষেপ করবেন। ওটা তাঁর লক্ষ্য নয়। আপনাকে সৃষ্টি করার তাঁর লক্ষ্য ছিল বেহেশতে পাঠানো। এখন, তাহলে এই আয়াতে কিভাবে এটা বলা হল لِ ‘লি’ এখানে لِ ‘লি’-এর অর্থ খুবই গুরুত্বপূর্ন, “আমরা এমন অনেককে সৃষ্টি করেছি যারা জাহান্নামে যাবে”। আল্লাহ্‌ এখানে একটা দুঃখজনক বিষয় বর্ণনা করছেন, “আমি এতো মানুষ এবং জ্বিনদের সৃষ্টি করেছি এবং ওরা জাহান্নামের দিকে যাবে”। ওরা কেন এটা করবে? 

لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا
“তাঁদের অন্তর আছে কিন্তু তারা অন্তর দিয়ে ভাবে না।”

তাদের হৃদয় আছে কিন্তু তারা তা দিয়ে উপলব্ধি করে না। অন্যকথায় বললে, এই আয়াতে এটা বলা হচ্ছে না যে তাঁদের অন্তর তালাবন্দী অথবা তাদের অন্তর নেই, তারা হ্দয়হীন মানুষ। তাদের হৃদয় আছে, কিন্তু তারা এর সঠিক ব্যাবহার করে না। 

وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُونَ بِهَا
“তাদের চোখ আছে। তারা তা দিয়ে দেখে না।”

وَلَهُمْ آذَانٌ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَا
“তাদের কান আছে। তারা তা দিয়ে শোনে না।”
তো তাদের হৃদয় আছে, তাদের চোখ আছে এবং তাদের কান আছে।তাদের আছে, তাদের আছে, তাদের আছে। তাদের আছে মানে তারা ওগুলোর সঠিক ব্যাবহার করে জান্নাতে যেতে সক্ষম। তো আল্লাহ্‌ আপনার এবং আমার জন্য জান্নাত তৈরী করেছেন এবং এরপর উনি আমাদের তিনটি জিনিষ দিলেন, 

وَجَعَلْنَا لَهُمْ سَمْعًا وَأَبْصَارًا وَأَفْئِدَةً
“ওয়া জাআ’লনা লাহুম সামা’ন ওয়াবসারান ওয়াফইদাতান” (৪৬:২৬) 

সুরা আল-ইস্রা (কারেকশানঃ সুরা আল-আহফাক্ব)। তিনি তোমাদের দিয়েছেন শ্রবণশক্তি, দৃষ্টিশক্তি এবং দৃঢ় হৃদয়। এবং তোমরা যদি ওসবের সঠিক ব্যাবহার কর, তোমরা সরাসরি জান্নাতে যাবে। কিন্তু যদি তোমরা এই তিনটি জিনিষের সঠিক প্রয়োগ না কর, তোমরা শুধু নিজেরাই সেজন্যে দায়ী থাকবে কারণ তোমাদের ওসব ছিলো। তোমাদের উপকরণগুলো ছিলো। এটা এরকম যে আপনার গাড়ী আছে আর আপনি তা কখনই চালালেন না। কাউকে দোষ দেয়ার নেই। আপনার গাড়ীতে গ্যাসভর্তি ছিলো, সবই ছিলো। আপনার কাছে পথের নির্দেশনা ও ছিলো। আপনি সেসব ব্যাবহারই করলেন না। এখন আমরা একটু আলোচনা করি এই নিয়ে যে, তোমাদের হৃদয় আছে এবং তোমরা এদিয়ে ভাবো না- এই কথার মানে কী। এই আয়াতে এটা কেন বলা হচ্ছে যে, হৃদয় ভাবে? 

لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِها
“লাহুম ক্বুলূবুন লায়াফক্বাহূনা বিহা” 

ফিকহ (মাসলা-মাসায়েল) হচ্ছে গভীর বোধের বিষয়। কারণ আল্লাহ্‌ বলেছেন, আল্লাহ্‌র বানী, আয়াত, বিশ্বাস এসব অন্তরের ভেতরে থাকে। তো যখন আমি রাস্তায় হাটছি, ধরুন আমি একজন জিওলজিস্ট (ভূ-বিজ্ঞানী) বা বোটানিস্ট (উদ্ভিদবিদ)-এর সাথে হাঁটছি যিনি গাছ-গাছালি নিয়ে পড়াশোনা করেন। তিনি আমাকে একটি গাছের ধরণ নিয়ে বলতে পারেন। তিনি গাছটি কত প্রাচীন তা বলতে পারেন। তিনি আমাকে বলতে পারবেন ঐ গাছটির পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য কি ধরনের পরিবেশ দরকার অথবা এটা অচিরেই মারা যাবে অথবা অন্যকিছু। তারা এই গাছ সম্পর্কে এসব কিছু আমাকে বলে দিতে পারেন। আমি ওসবের কিছুই জানি না। আমি উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করি না। আমি ওসব কিচ্ছু জানি না। কিন্তু আমি আপনাকে এটা বলতে পারি, যখন আমি সে একই গাছের দিকে মন দিয়ে দেখি, শুধু মস্তিষ্ক দিয়ে নয়, হৃদয় দিয়ে, আমার স্মরণ হয়ে যায় আল্লাহই মৃতকে জীবন দান করেন কারণ এই গাছটি এক সময় শুধুমাত্র একটা বীজ ছিল, আল্লাহ্‌ এর মাঝে প্রাণ দিয়ে বাড়তে দিয়েছেন। তো একটি গাছকে আমি যখন দেখি আমার নিজের মনে হয়ে যায় আমি ও মরণশীল। একজন বিজ্ঞানী আকাশ দেখে অনেক কিছু বলতে পারেন। যখন আমি আকাশ দেখি আমার শুধু মনে হয় আমি কত নগন্য। আমি শুধু আকাশের দিকে তাকাই এবং বলি, আল্লাহ্‌ বলেছেন, 

هَلْ تَرَىٰ مِن فُطُورٍ (৬৭:৩) 
“তুমি ওপরে কোন ফাটল দেখতে পাও কি?”

অন্যকথায়, আপনি আপনার আশেপাশের পৃথিবীকে বিজ্ঞানীর নজর দিয়ে দেখতে পারেন, সন্দেহবাদী নজরে দেখতে পারেন। আপনি দেখতে পারেন, ওসব কেবল কিছু দৃশ্যের মতো, কিন্তু আপনি যদি আপনার হৃদয় দিয়ে আপনার আশেপাশের পৃথিবী দেখার চেষ্টা করেন, আপনার অন্তর দিয়ে দেখেন, আপনি অন্যকিছু দেখবেন। আপনি এমন কিছু দেখবেন যা অন্যরা দেখতে পায় না। 
আমি আপনাকে আমার নিজের করা একটা এক্সপেরিপেন্ট-এর কথা বলি। এটা আপনি নিজে ও করে দেখতে পারেন। আমি হাইওয়ে দিয়ে যাচ্ছি এবং আপনি জানেন কুরআনে বলা আছে যে এই দৃশ্যমান জগতের সবকিছুই আপনি চাইলে আধ্যাত্মিক রিমাইন্ডার হিসেবে দেখতে পারেন। সবকিছুই একটি আয়াত। ঠিক আছে, এটা নিয়ে একটু পরীক্ষা করা যাক। তো আমি কিছু লোকের সাথে একটা কলেজের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গাড়ীতে যাচ্ছিলাম এবং তারা অনেক স্পীডে গাড়ী চালাচ্ছিলো, তারা ঘন্টায় প্রায় ৯০ মাইল বেগে গাড়ী চালাচ্ছিলো। তাদেরকে ধীরে চালাতে বলার আগে, একটু আগেই, যেহেতু তারা অনেক বেশি স্পীডে গাড়ী চালাচ্ছিলো এবং অন্য মানুষকে পেছনে ফেলছিলো, আমার মনে পড়লো, 


كَلَّا بَلْ تُحِبُّونَ الْعَاجِلَةَ (৭৫:২০) 
“না, না, না। হে মানুষ, তাড়াহুড়া করা তোমাদের একটা প্রবণতা”।

তোমরা দ্রুততা থেকে একধরণের উত্তেজনা পাও। আল্লাহ্‌ কুরআনে ঐ কথা উল্লেখ করেছেন। এরপর থেকে অতিরিক্ত স্পীডে গাড়ী চালালে আল্লাহ্‌র বলা এই কথাটা মনে হয়ে যেত। আল্লাহ্‌ আমাদেরকে কত ভালোভাবে জানেন। 


أَلَا يَعْلَمُ مَنْ خَلَقَ
“তিনি কি জানেন না তিনি কি সৃষ্টি করেছেন?” (৬৭:১৪)

 আমি জানালা দিয়ে তাকালাম এবং আমি এমন কিছু দেখলাম যা আমাকে এই আয়াতটি মনে করিয়ে দিলো। আমি দেখলাম কিছু গরু ঘাস খাচ্ছে এবং গাড়ীগুলো ওগুলোর পাশ দিয়ে যাচ্ছে। আপনি জানেন হয়তো, যখন কোন পশুপাখির পাশ দিয়ে কোন কিছু দ্রুত চলে যায় ওগুলো রিয়েক্ট করে। পাখি উড়ে চলে যায়, টিকটিকি গর্তে ঢুকে যায়, হরিণ একটু বোকা, সে গাড়ীর দিকে দৌড়ে আসে। কিন্তু একটা গরু, আপনি জানেন সেটি কী করে? কিছুই করে না। ওটি যেখানে ছিলো সেখানেই থাকে। যদি একটি গাড়ী পাশ দিয়ে শোঁ করে চলে যায়, মানে ঠিক দুই কিংবা তিন ফিট দূর দিয়ে, এক্কেবারে ঘাসের ওপর দিয়ে, একদম পাশ দিয়ে… গরুর লোমগুলো ‘ফাররর’ শব্দ করে। আপনি ওর গায়ে বাতাস লাগাটা অনুভব করতে পারবেন এবং এরপরও গরু তার মত ঘাস খেয়েই যেতে থাকে। সে কিছু খেয়াল করে না। ওটি তার আশপাশ নিয়ে সম্পূর্ন অসচেন। ঠিক একই মুহূর্তে আমি বললাম, “ওহ! অসাধারন! সুবহান আল্লাহ্‌। আল্লাহ্‌ যখন কিছু অসতর্ক মানুষ নিয়ে কথা বলেছেন তিনি তাদেরকে তুলনা করেছেন গরুর সাথে”।

أُولَٰئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ
তারা হল গরুর মত। বরং তারা এরচেয়েও বেশি পথভ্রষ্ট।

أُولَٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُون
তারা অসচেতন।

অসচেতনার জন্য গরুর চেয়ে ভালো উদাহরণ আর কি হতে পারে? আল্লাহ্‌ এর সাথে অন্য কোন প্রাণীর ও তুলনা করেননি কারণ অন্য পশু-পাখি রিয়েক্ট করে।অন্য প্রাণীদের সাড়া দেবার তীক্ষ্ণ ক্ষমতা আছে, গরুর নেই। এমনকি এটাও আমাদের জন্য একটা রিমাইন্ডার। 
তো আমরা গাড়ী চালিয়ে যাচ্ছি এবার আমি দেখলাম একটা বিলবোর্ড। ঐ বিলবোর্ডটি ছিল বাড়ী কেনা বিষয়ক। তো বিলবোর্ডটিতে একটা ঘর এবং একটা পরিবারের ছবি ছিল, ওরা একজন অন্যজনকে জড়িয়ে ধরে আছে। আর নিচে লেখা, “আমেরিকান স্বপ্নের মালিক হোন”। আমি ওটা দেখলাম আর বললাম, ‘সুবহানআল্লাহ”। যেই আয়াতটি আমার মাথায় প্রথম এলো,

إِنَّهُ كَانَ فِي أَهْلِهِ مَسْرُورًا
“ইন্নাহু কানা ফী আহ্লিহি মাসরূর” (৮৪:১৩) 
সে তার পরিবারের সাথে সুখেই ছিলো। 

অন্য একটি আয়াত আমার মাথায় এলো,

وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ
যে বাড়ী তোমরা ভালোবাস, যদি তা আল্লাহ্‌, তাঁর রাসুল এবং তাঁদের রাস্তায় পরিশ্রমের চেয়ে বেশি প্রিয় হয়ে যায়।  (৯:২৪)


সুবহানআল্লাহ্‌। সবকিছুই আয়াত। আপনার আশেপাশে এমন কিছু নেই, যা আয়াত হতে পারে না। এটা এমন যে আপনার একটা অন্তর আছে যা ভাবতে চায়। আমার একটা বন্ধু ছিলো যাকে আমি আমার গাইড মনে করতাম। আমরা একবার রাস্তায় হাটছিলাম, এটাই আজকের শেষটা আপনাদের সাথে শেয়ার করবো। হৃদয় দিয়ে ভাবা মানে কী এটা বোঝাতে। আমরা রাস্তায় হাঁটছি, সে দেখছে, আমরা নিউ ইয়র্ক শহরে, এবং সে দেখলো একটা ঘাস বেরিয়ে আছে, যখন কংক্রিটের কার্ব বা ধরুন রাস্তার ধারে দেখবেন, দুইটি কংক্রিটের মাঝখান থেকে ঘাস বেরিয়ে আছে। সে হঠাত দাঁড়িয়ে পড়লো এবং ওটির দিকে তাকিয়ে থাকলো। এবং আমি ভাবছি, “সব ঠিক আছে তো?তুমি ওটির দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছ কেন?” এবং ও বলল, তুমি জানো, আমাদের আশপাশে এখন যা কিছু আছে, এই একটি মাত্র জিনিষই প্রাকৃতিক এবং এরপরও এই একটি জিনিষকেই মনে হচ্ছে বেঠিক জায়গায় আছে এবং এটা ঠিক মুসলিমদের মতো। এটা একেবারে ইসলামের মতো। আমরা হচ্ছি প্রকৃতির। আমরা হচ্ছি ফিতরা সম্পন্ন মানুষ। এই বই, এর শিক্ষা সবই স্বাভাবিক। আর আমরা এখন পৃথিবীতে এমন একটা অবস্থানে এসে পৌঁছেছি যে এই একটি জিনিষই মনে হচ্ছে ঠিক জায়গায় নেই। সুবহানআল্লাহ।

আপনি আপনার আশপাশে যা দেখবেন তা থেকেই এমন মানুষে পরিণত হবেন যারা ভাবে। আমি যদি অত গভীরভাবে ভাবতে পারতাম! এখন কথা হচ্ছে আপনি যদি আপনার হৃদয় ব্যাবহার করেন, আপনি একজন চিন্তাশীল মানুশে পরিণত হবেন, আপনি যদি সত্যিকারভাবেই এই চিন্তা করার অভ্যাস তৈরী করেন, তখন আপনি যা দেখবেন, আপনি যা কিছু শুনবেন এবং যাকিছু অনুভব করবেন অন্যরকম লাগবে, এবং এইমানুষগুলোই জান্নাতের জন্য, জাহান্নামের নয়। তো এই আয়াতটা দুঃখজনক। কি করে ঐ মানুষগুলো যাদের হৃদয় আছে, চোখ আছে, কান আছে এরপর ও জাহান্নামে যাবে? 
আল্লাহ্‌ আমাদের সবাইকে আমাদের অন্তর, আমাদের চোখ এবং আমাদের কান সবচেয়ে ভালোভাবে ব্যাবহার করার তৌফিক ফিন যাতে আমরা আরো গভীরভাবে তাঁকে অনুভব করতে পারি এবং তাঁর আরো নিকটবর্তী হতে পারি। 
বারাকআল্লাহু লি ওয়ালাকুম, ওয়া-সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহ।