বাংলা নোটসমূহ

আলহামদুলিল্লাহ, আমরা এখন উস্তাদ নুমান আলী খানের সকল বাংলা নোটসমূহের আর্কাইভ করছি

জীবন, স্বাধীনতা আর সুখের সন্ধান – পর্ব ০১

আমরা প্রথমে যা নিয়ে কথা বলব সেটা হল আমেরিকান ড্রিম। ”জীবন, স্বাধীনতা আর সুখের সন্ধান।” ভাল কথা। আমি শুরু করব সুখের সন্ধান দিয়ে। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি তা হল এটা যদিও চমৎকার একটি উপমা, আর এই জাতির প্রতিষ্ঠাতাদের মনে আসলেই ভাল উদ্দেশ্য ছিল, কিন্তু আমি আসলে খুবই অবাক হয়েছি কারণ কুরআনে সুখের সন্ধান নিয়ে কিছু বলা নেই। খুবই তাজ্জব ব্যাপার। আমি ১৫ বছর ধরে এটা বুঝতে চেষ্টা করছি যে, কুরআনে কোথায় এই সুখের সন্ধানের কথা বলা আছে। আল্লাহ এই ব্যাপারে কথা বলেননি, কিছুই বলেননি। আর এটা আমাকে ভাবায় যে, আধুনিক সভ্যতার জন্য এত গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার, মানুষ সুখী হতে চায়, কিন্তু আল্লাহ এই ব্যাপারে কিছুই বলেননি। (অপ্রয়োজনীয় অংশ) কুরআনে এটা বলা নেই কিভাবে সুখের সন্ধান পেতে হবে। আর এটা খুবই আকর্ষণীয় ব্যাপার যে, কুরআনে সবচেয়ে বড় যে অনুভূতির কথা বলা হয়েছে তা হল সন্তুষ্টি। সন্তুষ্টি, সন্তুষ্ট থাকা। এটাই সব থেকে বড় লক্ষ্য। সুখ নয়। এই দুটি কিন্তু আলাদা জিনিস। সুখে থাকা আর শান্তিতে থাকা দুটো আলাদা বিষয়। এখন আমি আপানাদেরকে সাইকোলজি এর ব্যাপারে কিছু বলব। খুবই আকর্ষণীয় কিছু বিষয়। আর এই তথ্যগুলো আমাদেরকে কুরআনের বাণী বুঝতে আরও বেশি সহায়তা করবে। আর আমার আলোচনার পুরোটা এই নিয়ে। আর এই বাণীটি আছে সূরা নাজম এর মধ্যে وَأَن لَّيْسَ لِلْإِنسَانِ إِلَّا مَا سَعَىٰ এবং মানুষ তাই পায়, যা সে করে, এখন আপনারা আমার সাথে থাকার চেষ্টা করুন। সর্বপ্রথম আর সবচেয়ে ছোট যা মানুষ সন্ধান করে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্ম যা চায়, আমি জানি শ্রোতাদের মধ্যে মনে মনে তরুণ লোক আছেন, কিন্তু আমি এখানে যারা বয়সে তরুণ তাদের বলছি, আমি চাই আপনারা এটা বুঝতে পারুন যে, সবচেয়ে তুচ্ছ কিছু যখন জীবনে সন্ধান করা হয়, তখনি আসলে সুখের সন্ধান করা হয়। এটা আসলেই সব...

ধৈর্য এবং নামাযের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করুন (পর্ব – ০১)

ইনশাআল্লাহ, আজ আমি আপনাদের সাথে যা শেয়ার করতে চাই তা হল – কুরআন শরীফের প্রায় ১১ টি আয়াত নিয়ে কিছু ভাবনা এবং শিক্ষা। যদি আল্লাহ আমাদের সময়কে ফলদায়ক হওয়ার অনুমতি দেন, আমি ১১টি আয়াত নিয়ে আলোচনা করার আশা করছি। আপনাদের মাঝে যারা নোট করছেন – যা স্পষ্টতই শুধু বোনরা করে থাকেন- তাদের অবগতির জন্য বলছি সূরা বাকারার আয়াত নাম্বার ১৫৩ থেকে ১৬৩ পর্যন্ত। আপনারা জানেন সূরা বাকারা হলো কুরআন মাজিদের দীর্ঘতম সূরা। এই সূরার প্রথম দিকের একটা বড় অংশে আমাদের পূর্বে যে জাতিকে কিতাব দেয়া হয়েছিল তাদের কথা আলোচনা করা হয়েছে। আর তারা হল বনী ইসরাইল। তাদেরকে তাওরাত দেয়া হয়েছিল। তাদের নিকট অসংখ্য নবী প্রেরণ করা হয়েছিল। যারা বার বার তাওরাতের শিক্ষাকে পুনর্জীবিত করেছিলেন। আর এই প্রক্রিয়াটা বহু শতাব্দী ধরে অব্যাহত ছিল। আল্লাহ তাদেরকে এই কিতাব অনুযায়ী জীবন পরিচালনার এবং মানব জাতির রোল মডেল হওয়ার সুযোগ দিয়েছিলেন। অন্য সব জাতি শুধু এক ব্যক্তি থেকে ইসলামের শিক্ষা নিবে তা নয় – যেমন আপনি হয়তো কোন এক ব্যক্তির নিকট ব্যক্তিগতভাবে ইসলামের দাওয়াত দেন সেরকম নয় – বরং এ ক্ষেত্রে আপনি পুরো একটি জাতির নিকট থেকে ইসলামের শিক্ষা গ্রহণ করেন, যারা ধর্মের অনুসরণ করে থাকে। আর সেই জাতিটি হওয়ার কথা ছিল বনী ইসরাইলের। আর এজন্যই আল্লাহ তাদের নিকট এক নবীর পর আরেক নবী পাঠাতে থাকেন। যেন তারা মানব জাতিকে দেখাতে পারে যে আল্লাহর আইন অনুযায়ী বসবাস করার অর্থ কী। তাই আল্লাহ বলেছেন – ” আমি তোমাদেরকে অন্য সব জাতির উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছি।” কিন্তু ইতিহাসের দুঃখজনক বাস্তবতা হল – আল্লাহ তাদেরকে এতোসব সুযোগ প্রদান করা সত্ত্বেও তারা বহু উপায়ে আল্লাহকে হতাশ করলো। তারা কেন আল্লাহকে হতাশ করলো তার বিশাল একটা তালিকা রয়েছে। আপনাকে যদি কোন দায়িত্ব অর্পণ করা হয়, আর আপনি বার বার...

কীভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায় (পর্ব ২০-২২)

(পর্ব ২০) আগের পর্বগুলোতে সুরা ফাতিহার আলোচনায় জেনেছি, কিভাবে বিশেষতঃ এই সুরাটির মাধ্যমে আমরা আল্লাহর সাথে কথোপকথন করতে পারি, এবং আল্লাহ প্রতিটি আয়াতের সাথে সাথে কিভাবে জবাব দেন। এই সুরা আল্লাহর রুবুবিয়াতের (আল্লাহই সমস্ত সৃষ্টি জগতসমূহের রব) ঘোষণা দেয়, সাথে সাথে এটাও বর্ণনা করে যে আল্লাহর রুবুবিয়াতে রয়েছে তাঁর রহমত ও করুনার প্রাধান্য, যে কারনে সৃষ্টি জগতসমূহের রবের প্রশংসার পর পরই আমরা বলি –‘আর রহমানির রহীম’। কিয়ামত দিবসের মালিকত্বের বর্ণনার আগেই আমরা জানতে পারি যে তাঁর করুনা তাঁর ক্রোধের চেয়ে বেশী। অতঃপর আমরা জানতে পারি কেন আমাদেরকে এই করুনা করা হয় – যাতে আমরা শুধুমাত্র তাঁরই ইবাদত করি। এবং তাঁর ইবাদত করতেও আমরা তাঁর কাছেই সাহায্য চাই। একারনে আমরা বলি – إِيّاكَ نَعبُدُ وَإِيّاكَ نَستَعينُ “শুধুমাত্র তোমারই ইবাদত করি এবং তোমার কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করি” কাজেই আমরা যদি সাহায্য পেতে চাই, আমাদেরকে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে। পথপ্রদর্শন এখন আমরা প্রকৃতপক্ষে দোয়া শুরু করছি। اهدِنَا الصِّرٰطَ المُستَقيمَ ﴿٦﴾ صِرٰطَ الَّذينَ أَنعَمتَ عَلَيهِم غَيرِ المَغضوبِ عَلَيهِم وَلَا الضّالّينَ ﴿٧ “আমাদেরকে সরল সঠিক পথ প্রদর্শন করুন। তাদের পথ যাদের প্রতি আপনি অনুগ্রহ করেছেন; তাদের নয় যাদের প্রতি আপনার গজব বর্ষিত হয়েছে এবং তাদেরও নয় যারা পথভ্রষ্ট।” (সুরা ফাতিহাঃ৬-৭) ইবনে তাইমিয়্যা বলেন, সুরা ফাতিহার এই দোয়াটিই হল সর্বশ্রেষ্ঠ, বিজ্ঞতম, এবং সবচেয়ে উপকারী দোয়া। আল্লাহ যদি আমাদের সরলতম পথ প্রদর্শন করেন, তিনি আমাদের তাঁর ইবাদত করতেও সাহায্য করেন। কেউ প্রশ্ন করতে পারে, ‘আমি যদি সঠিক পথেই থাকি তবে আবার কেন পথপ্রদর্শনের জন্য প্রার্থনা করব? আমি নামাজ পড়ি, রোজা রাখি, কুরআন তেলাওয়াত করি- আল্লাহ তো নিশ্চয়ই আমাকে হেদায়াত করেছেনই।’ প্রথমত, হেদায়াতের সর্বোচ্চ পর্যায় হল মহানবী (সাঃ) এর সমান পর্যায়ে পৌছতে পারা, অথচ আমরা কেউই এমনকি সাহাবীদের পর্যায় পর্যন্ত পৌছতে সক্ষম হয়েছি বলেও দাবী করতে পারি...

কীভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায় (পর্ব ১৫-১৯)

(পর্ব ১৫) আল্লাহ্‌র নামে আমরা এখন নামাজে একটি সুন্দর জায়গায় এসে পৌঁছেছি, আমরা সবচেয়ে সুন্দর নামটি উচ্চারণ করি – বিসমিল্লাহ। এই রাজসিক নামের উচ্চারণ আমাদের অন্তরে শান্তি আনে, সমস্ত জায়গা ও সব সময় নিরাপত্তার অনুভূতি দেয় – এই নামের স্মরণ ছাড়া আত্মা কি শান্তি পায়? কোন মুসলিমের অন্তরে অবস্থিত তাঁর এই নামটিই সবচেয়ে অসাধারণ বিস্ময়কর ব্যাপার, কারন এমন কোন ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র জিনিস নেই যা এই নামের বরকতে বৃদ্ধি না পায়, আবার এমন কোন বড় জিনিষ নেই যা এই নামের বরকতে অনুগ্রহ না পায়। এই নামটি এতই চমকপ্রদ, এটি যেকোনো জায়গার, যে কোন সময়ের ক্ষতি থেকে নিরাপত্তা দেয়। মহানবী (সাঃ) বলেছেন- কেউ যখন কোন স্থানে বিশ্রামের জন্য অবতরণ করে সে যেন বলে, আউযু বিকালিমা তিল্লা হিততা-ম্মা-তি মিন শাররি মা খালাক (আমি আল্লাহর পরিপূর্ণ কালেমা সমূহের মাধ্যমে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করি, তাঁর সৃষ্ট বস্তুর সমুদয় অনিষ্ট হতে), কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে আবার তার বাহনে আরোহণ করে।(মুয়াত্তা ৫৪/১৩৩৪) এই দোয়ার মাধ্যমে আল্লাহ সুবহানাওয়াতায়ালা আপনাকে হেফাজত করবেন, আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, ইনশাল্লাহ। আর সকল সময়ের নিরাপত্তার জন্য মহানবী (সাঃ) বলেছেন- بِسمِ اللهِ الذي لا يَضُرُّ مَعَ اسمِهِ شَيءٌ في الأرْضِ وَلا في السّماءِ وَهوَ السّميعُ العَليم” من قالها ثلاثاً إذا أصبح وثلاثاً إذا أمسى لم يضره شيء ‘বিসমিল্লাহিল্লাযি লা ইয়া দুররু মা’আসমিহি শাইআন ফিল আরদি ওয়া লা ফিস সামা-ই ওয়াহুয়াস সামিউল আলীম’ (আমি সেই আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি, যার নামে শুরু করলে আকাশ ও পৃথিবীর কোন বস্তুই কোনরূপ অনিষ্ট সাধন করতে পারে না। বস্তুত তিনি হচ্ছেন সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞাতা)যে এই দোয়া সকালে তিনবার ও সন্ধ্যায় তিন বার বলবে, কোন কিছু তার ক্ষতি করতে পারবে না। (আবু দাউদ ৪১/৫০৬৯) ইবনে আল কাইয়িম বলেন, শুধুমাত্র নামের মহত্ত্বই যদি এমন...

কীভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায় (পর্ব ৮-১৪)

(পর্ব ৮) নামাজের পূর্বেই নামাজের অবস্থায়: যখন আমরা “সালাত”এর কথা বলে থাকি, আমরা সবাই মনে করি যে এটা আসলে শুরু হয় যখন আমরা দাঁড়িয়ে হাত তুলি এবং বলি “আল্লাহ আকবার”| কিন্তু আসল ঘটনা তা নয়, এটা “আল্লাহ আকবার” বলারও আগে থেকে শুরু হয়| নবী(সা:) বলেন: لا زال أحدكم في صلاة ما انتظر الصلاة “একজন যতক্ষণ নামাজের জন্যে অপেক্ষায় থাকে, তার জন্যে ঐ সম্পূর্ণ সময় নামাজের মধ্যে ধরা হয়|”(বুখারী, মুসলিম) পুরুষদের জন্যে, এটা সেই সময় থেকে শুরু হয় যখন সে নামাজের জন্য প্রস্তুত হয়ে মসজিদে জামাতের সাথে নামাজের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে| যারা মসজিদে অবস্থান করছেন না এমন মহিলাদের জন্য এই নামাজের সময় শুরু হয় যখন তিনি অজু করে নামাজের জন্য সঠিক পোশাক(যদি তাঁর দরকার হয়) পরে নামাজের সঠিক সময়ের জন্য অপেক্ষা করেন তখন থেকে| একটি গুপ্তধন: শয়তান নামাজকে ঘৃনা করে| নবী(সা:) বলেন, “যখন আজানের শব্দ উচ্চারিত হয়, শয়তান তখন সশব্দে বায়ু ছাড়তে ছাড়তে দৌড়ে পালিয়ে যায় যাতে তার কানে আর আজানের শব্দ না আসে| আজান শেষ হলে আবার ফিরে আসে; ইকামাতের সময় আবার সে পালিয়ে যায় এবং শেষ হলে আবার ফিরে আসে, এবং মানুষের মনকে ফিসফিসিয়ে ধোঁকা দিতে থাকে(যাতে নামাজ থেকে মনোযোগ সরে যায়) এবং মানুষকে এমন সব জিনিস মনে করিয়ে দেয় যা নামাজের পূর্বে তার মাথায় ছিলনা এবং যার কারণে মানুষ ভুলে যায় যে সে কতো রাকাত নামাজ পরেছে|” [বুখারী] নামাজের একটি গুরুত্বপূর্ন দিক যেটাকে আমরা আমলেই নেই না সেটা হল আজান| আমরা কি কখনো আজানের সুমধুর সুর-মূর্ছনা অনুভব করেছি? যে আজানের মাধুর্য আস্বাদন করে তার নামাজের খুশু বৃদ্ধি পায়| প্রশ্ন আসতে পারে যে খুশুর সাথে আজানের সম্পর্ক কি? আজানের সময় হতেই শয়তান মানুষের মনকে অন্যদিকে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করতে থাকে, যাতে আজানের গুনাবলী থেকে সে কোন লাভ না...

কীভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায় (পর্ব ১-৭)

(পর্ব ১) পরম করুনাময় এবং অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে সকল প্রশংসা ও শুকরিয়া আল্লাহ তায়ালার জন্যে, এবং অজস্র দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক সকল নবী রাসুল গনের উপর| বেশ কিছুদিন আগে, কুয়েতী দা’য়ী মিশারী আল-খারাজ এর উপস্থাপনায় ”كيف تتلذذ بالصلاة؟” নামে একটি আরবি প্রোগ্রাম প্রচারিত হয়েছিল যার মানে হলো: “কিভাবে নামাজের মধুরতা আস্বাদন করা যায়?” আমা…দের প্রায় সবারই নামাজের ‘খুশু’ কমবেশি হয়ে থাকে| খুশু কী? এটা আসলে অন্তরের বা মনের একটি অবস্থা যা নামাজে প্রশান্তি, গাম্ভীর্য ও বিনম্রতা বজায় রাখে; যা হৃদয় থেকে বর্ষিত হয়ে আমাদের আল্লাহর সামনে বিনম্র ও আম্ত্মসমর্পিত করে| কোন কোন সময় নামাজে আমাদের আরাধনা এমন হয় যেনো আমরা প্রতিটা শব্দ কে ভেতর থেকে অনুভব করি; আবার অন্য সময় নামাজ শুধু নিয়ম মেনে উঠাবসা ছাড়া আর কিছুই হয় না| ইনশা-আল্লাহ, আমরা আগামী কিছুদিন নামাজের অতিগুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা করব| এক আনসারী ও এক মুহাজির এর কাহিনী: সুনানে আবু দাউদ থেকে হাসান সনদে বর্ণিত; কোন একটি যুদ্ধের সময় নবী(সা:) দুজন পাহারাদার নিয়োগ করেন, তাদের একজন ছিলেন মুহাজিরীন, আরেকজন ছিলেন আনসার| একটা সময় আনসারী সাহাবী নামাজের জন্য উঠে পড়লেন অপরদিকে মুহাজিরীন সাহাবী তখন ক্লান্তিতে তন্দ্রা মতো এসেছিলেন| এই সময় প্রতিপক্ষের এক মুশরিক এই অবস্থা দেখে সুযোগ বুঝে আনসার সাহাবীর দিকে তীর ছুড়ে মারেন| এটা তাঁর গায়ে লাগে, কিন্তু তবুও কষ্ট করে তীর বের করে রক্তাক্ত অবস্থায় নামাজ চালিয়ে গেলেন| এটা দেখে ঐ মুশরিক আবার তীর নিক্ষেপ করলেন| আবারও আনসার সাহাবী তীরটি অপসারণ করে নামাজ চালিয়ে গেলেন| কিন্তু যখন তৃতীয় তীর আঘাত হানল; তিনি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না এবং তিনি রুকু এবং সেজদায় চলে গেলেন, এর মাঝে মুহাজিরীন সাহাবীর ঘুম ভেঙ্গে যায়(মুশরিক তা দেখে পালিয়ে যায়), এবং তাঁর সাথীর রক্তাক্ত অবস্থা দেখে চেঁচিয়ে উঠে বললেন “সুবহান-আল্লাহ!...

কীভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায় (পর্ব ২৪)

আমরা যখন কুরআনের আয়াত তেলাওয়াত করি, আমাদের খুশু থাকা উচিত কারণ আমরা আল্লাহর কালাম বা কথা পড়ছি। আমরা যখন সিজদায় যাই, আমরা জানি আল্লাহ আমাদের প্রার্থনার জবাব দেন, তাই আমরা বেশী মনোযোগী হওয়ার চেষ্টা করি। তাহলে রুকুতে আমাদের মনের কি অবস্থা থাকা উচিত? আত্মার চাহিদা পূরণ আমাদের সবারই কিছু প্রাত্যহিক চাহিদা আছে। একজন বাবা অপেক্ষায় থাকেন কখন কাজ থেকে ঘরে ফিরে শিশু সন্তানকে আলিঙ্গন করবেন, সন্তান যদি ঘুমিয়েও থাকে, বাবা অন্ততঃ একটি চুমু খান মনের তৃষ্ণা মেটাবার জন্য। যখন আমরা খুব বেশী ক্ষুধার্ত থাকি, আমরা মাঝে মাঝে বেশী ক্লান্ত বা খিটখিটে হয়ে যাই যতক্ষণ পর্যন্ত না কিছু খেয়ে নেই। ঠিক যেমন আমাদের মনের ও শরীরের চাহিদা আছে, আমাদের আত্মারও কিছু চাহিদা আছে। সৃষ্টিকর্তার ইবাদতের জন্য আত্মা তৃষ্ণার্ত থাকে। অনেকেই বুকের ভেতর শূন্যতা অনুভব করেন, আর সেটাকে পূরণ করার জন্য অন্য কিছুর সন্ধান করেন। কিন্তু যেমন একজন ক্ষুধার্ত মানুষ দৌড়িয়ে তার ক্ষুধার চাহিদা মেটাতে পারে না- তা অবাস্তব; ঠিক তেমনি এই আত্মার তৃষ্ণাও সৃষ্টিকর্তার আনুগত্য ছাড়া অন্য কিছুতে মেটানো সম্ভব না। রুকুর মাধ্যমে বিনম্রতা আত্মার বিনম্রতার মাধ্যমেই সত্যিকারের আনুগত্য সম্ভব, আর রুকু তারই একটি বহিঃপ্রকাশ। হাকিম বিন হিজাম নামক জনৈক আরব ইসলাম কবুল করার সময় রাসুল (সাঃ) কে বলেছিল যে, সে সমস্ত নির্দেশ পালন করবে শুধু নামাজের সময় রুকু করা ছাড়া, কারণ তাতে বিনীত হতে হয়। কাজেই আমরা যখন রুকুতে যাবো, আমরা সচেতনভাবে লক্ষ্য রাখব যেন রুকু অবস্থায় আমাদের মেরুদণ্ড ঠিক মতো সোজা থাকে (মাটির সাথে সমান্তরাল), মাথা ঠিক মতো যথেষ্ট নোয়ানো থাকে, এবং “সুবহানা রব্বিআল ‘আযীম” (আমি আমার মহার প্রভুর পবিত্রতা বর্ণনা করছি) কথাটির উচ্চারণ যেন আমাদের মনের গভীর বিশ্বাস থেকে হয়। যখন আমরা বলি “সুবহানা রব্বিআল ‘আযীম”, আমরা আল্লাহর সুবহানা ওয়াতা’আলার একত্ববাদও প্রকাশ করছি। ‘রব’ শব্দটি একাধিক অর্থ...

কীভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায় (পর্ব ২৫)

আমরা এখন সিজদায় এসে পৌঁছেছি আলহামদুলিল্লাহ্‌। ইবনে আল কায়্যিম বর্ণনা করেন, সিজদা হল সালাতের গুপ্তধন, সবচেয়ে বড় স্তম্ভ, এবং রুকুর পূর্ণ পরিসমাপ্তি। তিনি বলেন, সিজদার আগের সব কাজ ছিল শুধুই ভুমিকা। আমরা এখন একটু পেছনে যাবো এবং ভেবে দেখব- আমরা যখন সিজদায় যাই, তখন আমাদের কি অনুভূতি থাকে? আমাদের মাঝে অনেকেই ভাবেন, এটা নামাজের অংশ তাই সিজদা করি; আবার অনেকে চিন্তা করেন এটা হল সেই জায়গা যেখানে প্রার্থনা করা যায়। কিন্তু আমরা কয়জন অনুভব করি যে, এটা হল আমাদের অন্তরের শ্রেষ্ঠতম বিনয় যা আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তার পবিত্রতা ঘোষণায় আমাদের মাথা মাটিতে লুটিয়ে প্রকাশ করি? সত্যিকারের সুখ আমরা কোথায় সুখ পাই? বস্তুবাদী সুখ নয়, সত্যিকারের আত্মার সুখ। মুসলিম হিসেবে আমরা বলতে পারি, জগতে সত্যিকারের সুখ পাওয়া যায় আল্লাহর সান্নিধ্য অর্জন করতে পারলে। আপনি যত আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে পারেন, আপনার হৃদয় ততই শান্তি পায়। আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য, সিজদায় চলে যান। মহানবী (সাঃ) বলেন- أَقْرَبُ مَا يَكُونُ الْعَبْدُ مِنْ رَبِّهِ وَهُوَ سَاجِدٌ বান্দার সিজদারত অবস্থাই প্রতিপালকের সবচেয়ে নিকটবর্তী অবস্থা [মুসলিম ৯৭৬] আপনি সিজদায় যত বেশী বিনীত হতে পারবেন, তত বেশী আপনি আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবেন; এবং নিশ্চয়ই তিনি এতে আপনার সম্মান বৃদ্ধি করবেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন- ‘তুমি আল্লাহর জন্য অবশ্যই বেশী বেশী সিজদা করবে। কেননা তুমি যখনই আল্লাহর জন্য একটি সিজদা করবে, আল্লাহ তায়ালা এর বিনিময়ে তোমার মর্যাদা একধাপ বৃদ্ধি করে দেবেন এবং তোমার একটি গুনাহ মাফ করে দেবেন।’ [মুসলিম ৯৮৬, ইফা] একারনেই যখনই আমাদের রাসুল (সাঃ) এমন কিছু পেতেন যাতে তিনি খুশী হতেন, সঙ্গে সঙ্গে তিনি আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা জানাতে সিজদায় লুটিয়ে পড়তেন। আল্লাহ বলেন- [[۩]]كَلَّا لَا تُطِعْهُ وَاسْجُدْ وَاقْتَرِب [٩٦:١٩] কখনই নয়, আপনি তার আনুগত্য করবেন না। আপনি সেজদা করুন ও আমার নৈকট্য অর্জন করুন। [সূরা ‘আলাক্বঃ ১৯]...

কীভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায় (পর্ব ২৬)

সিজদার সময় রসুল (সাঃ) সাত অঙ্গ দিয়ে সিজদা করতেন (নাক সহ কপাল, দুই হাত, দুই হাঁটু, দুই পা এর আঙ্গুল সমূহ) [বুখারী ৭৭৫; ইফা]। উভয় হাত এরূপ ফাঁকা রাখতেন যে তাঁর বগলের শুভ্রতা প্রকাশ হয়ে পড়ত (বুখারী ৭৭০; ইফা)। তিনি উভয় পায়ের আঙ্গুল এ সময় কিবলামুখী রাখতেন (বুখারী অনুচ্ছেদ ৫২২; ইফা)। তিনি (সাঃ) সিজদায় অঙ্গ প্রত্যঙ্গের সামঞ্জস্য রক্ষা করতে বলেছেন, এবং কুকুরের মতো দুই হাত বিছিয়ে দিতে নিষেধ করেছেন (বুখারী ৭৮৪; ইফা) রাসুল (সাঃ) সিজদায় বেশী বেশী পড়তেন- ১)سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَبِحَمْدِكَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِي ‘সুবহানাকা আল্লা-হুম্মা রব্বানা ওয়া বিহামদিকা আল্লা-হুম্মাগফিরলী’ অর্থাৎ, “হে আল্লাহ্‌! আপনার প্রশংসা সহ পবিত্রতা ঘোষণা করছি। আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।” [বুখারী ৭৮০; ইফা] এ ছাড়াও তিনি বিভিন্ন সময় সিজদায় বিভিন্ন দোয়া পড়তেন, তার কিছু এখানে উল্লেখ করা হল- ২)سُبْحَانَ رَبِّيَ الأَعْلَى “সুবহানা রব্বিয়াল ‘আলা” অর্থঃ আমার মহান সুউচ্চ প্রতিপালকের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। (তিনবার) [সহীহ আত তিরমিযী ১/৮৩] ৩) سُبُّوحٌ، قُدُّسٌ، رَبُّ الْمَلَائِكَةِ وَالرُّوحِ “সুব্বুহুন ক্কুদ্দুসুন রব্বুল মালা-ইকাতি ওয়াররুহ” অর্থঃ ফেরেশতাবৃন্দ এবং রুহুল কুদ্দুস (জিব্রাঈল আঃ) এর রব প্রতিপালক স্বীয় সত্তায় এবং গুনাবলীতে পবিত্র। [মুসলিম ১/৫৩৩] ৪)اللَّهُمَّ لَكَ سَجَدْتُ وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، سَجَدَ وَجْهِيَ لِلَّذِي خَلَقَهُ، وَصَوَّرَهُ، وَشَقَّ سَمْعَهُ وَبَصَرَهُ، تَبَارَكَ اللهُ أَحْسَنُ الْخَالِقِينَ “আল্লাহুম্মা লাকা সাজাদতু ওয়াবিকা ‘আ-মানতু ওয়ালাকা ‘আসলামতু সাজাদা ওয়াজহিয়া লিল্লাযী খলাক্কাহু ওয়াসাও ওয়ারাহু ওয়া শাক্কা সাম‘আহু ওয়া বাসারাহু তাবারকাল্লাহু আহসানুল খ-লিক্কীন” অর্থঃ হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য সিজদা করেছি, তোমারই প্রতি ঈমান এনেছি, তোমার জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছি, আমার মুখমণ্ডল (আমার সমগ্র দেহ) সিজদায় অবনমিত সেই মহান সত্তার জন্য যিনি উহাকে সৃষ্টি করেছেন এবং উহার কর্ণ ও চক্ষু উদ্ভিন্ন করেছেন, মহিমান্বিত আল্লাহ সর্বোত্তম স্রষ্টা। [মুসলিম ১/৫৩৪] ৫) “سُبْحَانَ ذِي الْجَبَرْوتِ، وَالْمَلَكُوتِ، وَالْكِبْرِيَاءِ، وَالْعَظَمَةِ” “সুবহানা যিল জাবারূতি ওয়াল মালাকূতি ওয়াল কিবরিয়া-ই ওয়াল...

কিভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায়? পর্ব ২৭

আমরা নামাজের শেষ প্রান্তে চলে এসেছি, আল্লাহর সাথে আমাদের সংক্ষিপ্ত সাক্ষাতের শেষ পর্যায়ে। আজকের পর্বে আলোচনা করব তাশাহুদ সম্পর্কে। দুই রাকা’আত নামাজের পর দ্বিতীয় সিজদার পর রাসুল (সাঃ) সোজা হয়ে বসতেন। তিন অথবা চার রাকা’আত বিশিষ্ট নামাজে(যোহর/আসর/মাগরিব/‘ইশার ফরজ নামাজে) দ্বিতীয় রাক’আতের পর তিনি (সাঃ) বাম পায়ের উপর বসে ডান পা খাড়া করে দিতেন এবং যখন শেষ রাকা’আতে বসতেন তখন বাম পা এগিয়ে দিয়ে ডান পা খাড়া করে নিতম্বের উপর বসতেন (সহীহ বুখারী ৭৯০; ইফা)। বাম হাত বাম উরুর উপর, ডান হাত ডান হাঁটুর উপর রাখতেন (মুসলিম ১১৯৫; ইফা)। অন্য এক বর্ণনায়, ডান হাত ডান উরুর উপর রাখতেন (মুসলিম ১১৯৬; ইফা)। অপর এক বর্ণনায়, দুই হাত দুই হাঁটুর উপর রাখতেন (মুসলিম ১১৯৭; ইফা)। এ সময় তিনি (সাঃ) শাহাদাত আঙ্গুল (তর্জনী) দিয়ে ইশারা করেতেন (মুসলিম ১১৯৫, ১১৯৬, ১১৯৭, ১১৯৮, ১১৯৯; ইফা) এবং বৃদ্ধাঙ্গুলি মধ্যমার সাথে সংযুক্ত করতেন (মুসলিম ১১৯৬ ইফা)। তাশাহুদ রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বৈঠকের শুরুতে বলতেনঃ التحياتُ لله ، والصلوات والطيبات “আত্তাহিয়্যাতু লিল্লাহি ওয়াসসালাওাতি ওয়াত্তায়্যিবাতু…” অর্থাৎ, সকল মৌখিক, দৈহিক, আর্থিক ইবাদত আল্লাহর জন্য…। (সহীহ বুখারী ৭৯৩) আমরা যখন এটি বলব তখন আমাদের সেই গুপ্তধন প্রয়োগ করতে হবে যার কথা আগেই বলা হয়েছে, যেমন এটা মনে করা যে সরাসরি আল্লাহ্‌র সাথে কথা বলা হচ্ছে। কাজেই চলুন আমরা যেই কথাগুলো উচ্চারন করছি তার অর্থ আরও গভীরভাবে জেনে নেই। আত-তাহিয়্যাতঃ আমরা ঘোষণা করি যে, শান্তি, রাজত্ব, এবং চিরন্তন আধিপত্যসহ যাবতীয় প্রশংসাসূচক বাক্য আল্লাহর জন্য। ইবনে আল উসাইমীন বলেন, এটি মহত্ব ও শ্রদ্ধা ব্যঞ্জক একটি শব্দ। আস-সালাওাতঃ আমরা ঘোষণা করি যে, সমস্ত দুআ ও প্রার্থনা আল্লাহর কাছে। আত-তায়্যিবাতঃ আমরা ঘোষণা করি যে, যা কিছু ভাল কর্ম বা আমল করা হয় তা আল্লাহরই জন্য। একটি ভিন্ন জায়গায় গমন উপরে উল্লেখিত কথা গুলো বলার পরে আমরা যা...

কীভাবে নামাজের মাধূর্য আস্বাদন করা যায় (পর্ব ২৮ এবং শেষ পর্ব)

রাসুল (সাঃ) যদি প্রথম তাশাহুদ পড়ে থাকেন, তাহলে তিনি তৃতীয় রাকা’আতের জন্য তাকবীর দিয়ে (আল্লাহু আকবর বলে) উঠে দাঁড়াতেন। আর যখন তিনি শেষ তাশাহুদ পড়তেন, তিনি তারপর বলতেন, اللهم صلي على محمد وعلى آل محمد كما صليت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد اللهم بارك على محمد وعلى آل محمد كما باركت على إبراهيم وعلى آل إبراهيم إنك حميد مجيد আল্লাহুম্মা সল্লি ‘আলা মুহাম্মাদিওওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা সল্লাইতা ‘আলা ইবরহীমা ওয়া আ-লি ইবরহীম, ইন্নাকা ‘হামীদুম মাজীদ; আল্লাহুম্মা বা-রিক ‘আলা মুহাম্মাদিওওয়া ‘আলা আ-লি মুহাম্মাদ, কামা বারকতা ‘আলা ইবরহীমা ওয়া ‘আলা আ-লি ইবরহীম, ইন্নাকা ‘হামীদুম মাজীদ। “হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং তাঁর বংশধরের উপর রহমত বর্ষণ কর, যেমন রহমত বর্ষণ করেছ ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর বংশধরের উপর, নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানী। হে আল্লাহ! তুমি মুহাম্মাদ (সাঃ) এবং তাঁর বংশধরের উপর বরকত নাযিল কর, যেমন বরকত নাযিল করেছ ইবরাহীম (আঃ) ও তাঁর বংশধরের উপর, নিশ্চয়ই তুমি প্রশংসনীয় ও সম্মানী।” [বুখারী ও মুসলিম] এখন চলুন, এর অর্থগুলোর দিকে লক্ষ্য করিঃ * মুহাম্মাদ (সাঃ) এর প্রতি রহমতের প্রার্থনা- (ইবনে হাযার এর বর্ণনায়) আপনি আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছেন রাসুল (সাঃ) এর মর্যাদা বৃদ্ধি করে দেওয়ার জন্য। * মুহাম্মাদ (সাঃ) উপর বরকত নাযিলের প্রার্থনা- আপনি আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছেন যেন তিনি রাসুল (সাঃ) এর উপর যে রহমত করেছেন তা আরও বৃদ্ধি করে দেন; অর্থাৎ, আল্লাহ যেন মুহাম্মাদ (সাঃ) কে সেই সব নেয়ামত দান করেন যা কিছু ইবরাহীম (আঃ) কে দান করেছিলেন এবং তা আরও বহুগুণে বাড়িয়ে দেন। রাসুল (সাঃ) তাঁর উপর দুরুদ পাঠের ফজীলত বর্ণনা করেছেন। তিনি (সাঃ) বলেছেন- من صلى عليَّ صلاة واحدة، صلى اللَّه عليه عشر صلوات، وحُطت عنه عشر خطيئات، ورُفعت له عشر درجات “যে ব্যক্তি আমার উপর...

মতবিরোধপূর্ণ বিষয়ে ইসলামের প্রাথমিক যুগের আলেমদের দৃষ্টিভঙ্গি

খলিফা হারুন অর রশিদ, তিনি তখন রাষ্ট্র প্রধান ছিলেন, আমির উল মু’মিনিন। সেই সময় আমির উল মু’মিনিনগণ সালাতের ইমামতি করতেন, বিশেষভাবে হজ্বের সময়। এরকম এক সময় তিনি হজ্ব পালন করতে গেছেন, তাহলে কে তখন ইমামতি করবেন? আমির উল মুহ’মিনিন হিসেবে তিনিই ইমামতি করবেন। যাই হোক, তিনি প্রথম কাতারে ছিলেন। কারণ তিনি ইমামতি করবেন। আর তিনি ছিলেন হানাফি মাজহাবের অনুসারী। উনার হজ্বের যিনি মুয়াল্লিম ছিলেন, আপনারা তো জানেনই মুয়াল্লিম কাকে বলে – মুয়াল্লিম হচ্ছেন সেই ব্যক্তি যিনি আপনাকে হজ্বের বিভিন্ন নিয়মকানুনগুলো সঠিকভাবে শিখিয়ে দেন। স্বাভাবিকভাবেই আমির উল মু’মিনিনের মুয়াল্লিমও হানাফি মাজহাবের অনুসারী ছিলেন। তিনি ছিলেন কাজী ইউসুফ, হানাফি মাজহাবের প্রতিষ্ঠাতা। ইমাম আবু হানিফার সবকিছু উনিই লিপিবদ্ধ করতেন। যাইহোক, এই কাজী ইউসুফই ছিলেন আমির উল মুহ’মিনিনের মুয়াল্লিম। পৃথিবীর বুকে হানাফি মাজহাবের সবচেয়ে বিজ্ঞ যে আলেম তিনি হচ্ছেন তাঁর মুয়াল্লিম! তাঁরা দুজনেই সামনের কাতারে আছেন এবং আমির উল মুহ’মিনিনের একটু পরেই সালাতের ইমামতি করার কথা। কিন্তু খলিফা হারুন অর রশিদ, হিজামা করিয়েছেন। আপনারা জানেন নিশ্চয়ই হিজামা কি। হিজামা হচ্ছে এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যেটা কাপিং এর মাধ্যমে করা হয় এবং এর ফলে শরীর থেকে রক্ত বের হয়। এখন, হানাফি মাজহাব অনুসারে শরীর থেকে রক্ত বের হলে অজু নষ্ট হয়ে যাবে। খলিফা হারুন অর রশিদ একজন বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন, তিনি জানতেন যে তিনি যদি আবু ইউসুফকে এখন জিজ্ঞাসা করেন যে আমার অজু কি নষ্ট হয়েছে কি না? তাহলে আবু ইউসুফ কি বলবেন? বলবেন যে, হ্যাঁ, অজু নষ্ট হয়ে গেছে। আর সে ক্ষেত্রে তাঁকে এখন প্রথম কাতার থেকে বের হয়ে, সবগুলো কাতার পার হয়ে অজুখানায় যেয়ে অজু করতে হবে। এরপরে, আবার সেই পেছন থেকে প্রতিটি কাতারে বিভিন্ন মানুষজনের সাথে কুশল বিনিময় করতে করতে সামনের কাতারে ফেরত আসতে হবে। এই পুরো প্রক্রিয়াতে যে সময় লাগবে...

প্রচেষ্টা বনাম ফলাফল

আজকের বক্তৃতার ওই অংশটা বিশেষভাবে বোনদের জন্য ছিল। কারণ তারা কঠোর পরিশ্রম করে এবং তাদের মনে হয় এই চেষ্টায় কোনভাবে কিছু হবার নয়। ছেলেরা এমন নয়। কারণ ছেলেরা কোন খাটুনি করে না এবং তারা মনে করে যে আমি তো অনেক করেছি। আমি কত কঠোর চেষ্টা করেছি। ছেলেরা, তোমাদের নিজের সাথে মিথ্যাচার বন্ধ করতে হবে। তোমাদের নিজেদের এটা বলা বন্ধ করতে হবে যে তুমি যথেষ্ট করছো। তোমাদের অলসতা দূর করতে হবে। ভাইয়েরা, শয়তান তোমাদের ধ্বংস করে দিচ্ছে। সে তোমাদের ধ্বংস করছে। তোমরা এত অলস। তোমাদের এই অলসতা দূর করতে হবে। নিজেদের কাছে যুক্তি দেওয়া বন্ধ কর। অলসতা ঝেড়ে উঠ এবং কাজ কর। বেশি করে কাজ কর। যদি তুমি চাকুরী না পাও তবে চেষ্টা করতে থাক। আবেদন করতে থাক, করতেই থাক। অন্যদের সাথে এব্যাপারে কথা বলতে থাক, নেটওয়ার্কিং করতে থাক। থেমে যেয়ে বোল না যে আমি সবরকম চেষ্টা করেছি, তারপরেও ফল পায় নাই। না, তুমি সবরকম চেষ্টা কর নাই। উদ্যম হারিয়ো না। এটা করা তোমাদের শিখতে হবে। ছেলেরা তোমরা তোমাদের বোনদের কাছে থেকে শিখো। তারা হল…একটু অপেক্ষা কর…আমি তোমাদের ব্যাপারেও বলবো…একটু অপেক্ষা কর(মেয়েদের উদ্দেশ্যে)। কিছুক্ষণ পরেই তোমরা আর খুশী হবে না। তোমাদের সমস্যা কি জান? সুখের সন্ধানের কথা এখন ভুলে যাও। তোমাদের সমস্যা হল, তোমরা সর্বদা নিজেদের ব্যাপারে অনিশ্চিত। তোমরা সবসময় ভাবছো আমি যথেষ্ট নই বা আমি হিসেবের মধ্যেই নাই। (হাততালি)। হাততালি থামাও। তোমাদের ব্যাপারগুলো সহজভাবে নিতে হবে। তোমাদেরকে বলছি না(ছেলেদের উদ্দেশ্যে)। তোমাদের এমনিতেই সবকিছু যথেষ্ট হালকাভাবে নাও, মাশাআল্লাহ। অপরপক্ষে, তোমাদের শান্ত হওয়া দরকার। আমার এমন বোনদের সাথে দেখা হয়েছে যারা ইসলাম নিয়ে পড়াশুনা করছে। তারা কুর’আন শিক্ষা করছে। “কিন্তু আমার এখনও সব শব্দ শেখা হয় নাই।” হ্যাঁ, ঠিক আছে! আন্টি শান্ত হন। আপনার সব শব্দ মুখস্ত হয় নাই। কিন্তু তাতেই...

এই রমজানকে গ্রহণ করুন নিজেকে পরিবর্তনের রমজান হিসেবে

পরিশেষে, আমি পুরুষদের কিছু উপদেশ দিতে চাই, যারা দর্শকদের মাঝে বসে আছেন। বাচ্চাদের ব্যাপারে যা বলেছি, আপনাদেরকেও প্রথমে তাই বলবো, আপনার মোবাইলের অপ্রয়োজনীয় apps গুলো মুছে ফেলুন, সেগুলো ফেলে দিন। ভিডিও গেমস এর apps মুছে ফেলুন, Netflix app মুছে ফেলুন, amazon video player app, যে সকল apps আপনি বিনোদনের জন্য ব্যবহার করে থাকেন, সেগুলো সব মুছে ফেলুন। সেগুলো যেন আপনার ডিভাইসে না থাকে। এই মুহূর্ত থেকে! বলবেন না, যে প্রথম রমযান থেকে শুরু করবো, এর মধ্যে season 5 শেষ করতে পারব। সেটা করবেন না। এটি ফেলে দিন। একেবারে মুছে ফেলুন। আর না। আর না। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল তাদেরকে পছন্দ করেন না, যাদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হলেও তারা অবজ্ঞা করে। এবং এরা নিজেদের বলে তারা পরে বদলে যাবে। আল্লাহ এসব লোকদের পছন্দ করেন না। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল মাঝে মধ্যে খুব কঠোর ভাষায় এরকম মানুষদের বর্ণনা দেন। যে সকল লোকদের স্মরণ করিয়ে দেয়া হলেও তারা অবজ্ঞা করে। وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن ذُكِّرَ بِآيَاتِ رَبِّهِ فَأَعْرَضَ عَنْهَا তার চেয়ে বড় জালিম আর কে? যাকে আল্লাহর আয়াত স্মরণ করিয়ে দেয়া হলে উপেক্ষা করে। সে থামে না, নিজের অপকর্ম চালিয়ে যায়। وَنَسِيَ مَا قَدَّمَتْ يَدَاهُ এবং তার কৃতকর্মসমূহ ভুলে যায় অন্য কথায়, সে দায়িত্বজ্ঞানশূন্য ছিল, যদিও তাকে স্মরণ করে দেয়া হয়েছিল। তাই, ব্যাপারটি হালকা ভাবে নিবেন না। বিনোদনের মাধ্যমগুলো থেকে নিজেকে মুক্ত করুন। আমাদেরকে এই মাসে আল্লাহর কালাম এবং আল্লাহর রাসূলে উপদেশ গ্রহন করতে হবে, দূষিত ইনপুট বন্ধ করতে হবে আমাদের। তাতে তালা লাগাতে হবে। যদি পুরো জীবনের জন্য সেগুলো বন্ধ করতে না পারেন, অন্ততপক্ষে এই মাসটিকে যথার্থ সম্মান দিন। এটি ছিল পুরুষদের উদ্দেশ্যে প্রথম উপদেশ। দ্বিতীয় উপদেশ হলো, দীর্ঘ রাত-জাগবেন না। আপনি যদি এখানে আসেন তারাবী পড়তে, এবং আপনি এক্সট্রা সালাত আদায়...

ঋতুবতী নারী কীভাবে লাইলাতুল ক্বদর পালন করবেন?

শাইখ ওমার সুলাইমানঃ আমরা একটা প্রশ্ন পেয়েছি যে, যদি কোন মেয়ে রোজা করতে না পারে তবে সে কিভাবে রমজান মাসের সর্বোচ্চ উপকার পেতে পারে? এমন অনেক বোনেরা আছেন যারা আমার সামনে এসে এই বলে কেঁদে ফেলেছেন যে, রমজানের শেষ ১০ রাত এসে গেছে কিন্তু আমি রোজা করতে পারবো না, নামাজ পড়তে পারবো না। শেষ ১০ রাতের মধ্যে লায়লাতুল কদর, কিন্তু আমি রোজা করতে পারবোনা, নামায পড়তে পারবো না। একটা হাদীস আছে যেটা আপনাকে অনেক আশাবাদী করে তুলতে পারে। প্রথমটি হল, মহানবী (সাঃ) বলেছেন, কেউ যদি অসুস্থ্য হয়ে পড়ে… । কিয়াসের মাধ্যমে উলামারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে, কোন মেয়ে যে রোজা করতে পারছে না তাকে সাময়িকভাবে অসুস্থ্য মানুষের সমতুল্য মনে করা যাবে। মহানবী (সাঃ) বলেছেন, “কেউ যদি অসুস্থ্য হয়ে পড়ে বা সফরে থাকে এবং এ কারণে তারা সাধারণত যেই ইবাদত করত সেটা মিস করে ফেলে। সেক্ষেত্রে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা তাদের নামে এই ইবাদতের সওয়াব পুরোপুরি লিখে দেন”। আল বুখারীতে এই হাদিসটি এসেছে। আল্লাহর কি রহমত! আল্লাহ যদি জানেন যে, আপনি নামায পড়তেন এবং আপনার সেই আকাঙ্ক্ষা ও প্রয়োজন আছে তবে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা সেটা লিখে দিবেন। তবে সেটা আপনার স্ট্যান্ডার্ডে নয়, তাঁর স্ট্যান্ডার্ডে। যাই ঘটুক না কেন আপনি পুরো পুরস্কারই পাবেন। এটা হল এক নাম্বার কথা। দুই নাম্বার হল, তখনো কুর’আন পাঠ করা। এই অবস্থায় কুর’আন পাঠ করা ফিক্‌হের এক দীর্ঘ আলোচনার বিষয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) একদা জানাবাহ অবস্থায় ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) তাঁকে বলেছিলেন যে, সুবহানাল্লাহ! “মু’মিন, যে বিশ্বাসী, সে কখনো সত্যিকারের অপবিত্র হয় না”। ঠিক আছে? সে কখনো অপবিত্র হয় না। সহীহ মুসলিমে দীর্ঘ হাদীস আছে, সেখানে ইহুদীদের, বিশেষত গোঁড়া ইহুদীদের কথা বলা হয়েছে। হাদীসের বর্ণনা থেকে আমরা জানতে পারি যে, তারা ছিলেন বনু কুরায়যার কিছু গোঁড়া ইহুদী।...

চলুন ফিরে যাই আল্লাহর পথে

”অবশ্যই আল্লাহ তাদের তওবা কবুল করবেন, যারা ভূলবশতঃ মন্দ কাজ করে, অতঃপর অনতিবিলম্বে তওবা করে; এরাই হল সেসব লোক যাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন। আল্লাহ মহাজ্ঞানী, সর্বজ্ঞ।” [সূরা নিসাঃ আয়াত ১৭] আজকে আমি আপনাদের সাথে সূরা নিসার ১৭ নম্বর আয়াত নিয়ে কিছু কথা বলবো। বান্দা যখন আল্লাহ্‌র দিকে ফিরে আসে, আল্লাহ্‌ তা’আলাও তখন তার বান্দার দিকে ফিরে আসেন। আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন, “إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ” ফিরে আসা, কেউ যদি খাঁটি মনে সত্যিকারভাবে আল্লাহ্‌র দিকে ফিরে আসতে চায় তবে তাকে কিছু শর্ত মেনে নিতে হয়।অন্যকথায় আরবী শব্দ “إِنَّمَا” বিশেষ কিছু বুঝাতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।আপনি যখন প্রশান্ত হৃদয়ে আল্লাহ্‌র দিকে ফিরে আসার চিন্তা করেন, আপনি এই শর্তগুলো পূরণ করে ফিরে আসতে পারেন ।তাই আয়াতের প্রথমে “إِنَّمَا” শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে। আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন, “إِنَّمَا التَّوْبَةُ عَلَى اللَّهِ”নিশ্চয় আল্লাহ্‌ তা’আলা আপনার তওবা কবুল করা তঁার নিজের উপর অপরিহার্য করে নিবেন, যদি আপনি এই শর্তগুলো মেনে নেন, তিঁনি নিশ্চয় কবুল করবেন “لِلَّذِينَ يَعْمَلُونَ السُّوءَ بِجَهَالَةٍ” এই তাওবা গ্রহণযোগ্য হবে তাদের জন্য, যারা কুৎসিত, ঘৃণ্য, জঘন্য, পাপকাজ করে – এ সবগুলোই “سُّوءَ”এর অর্থ হিসেবে ব্যবহত হতে পারে। আর, “بِجَهَالَةٍ”অর্থাৎ অপ্রতিরোধ্য আবেগের বশবর্তী হয়ে, যেমন কুকর্মে প্ররোচনা, রাগের বশবর্তী হয়ে, হতাশার আগুনে পুড়ে অথবা এমন কোন শক্তিশালী মানবিক অনুভূতি, যা ওই মুহূর্তে বিজয়ী হয়েছে। তারপর তারা ওই ঘৃণ্য কাজে লিপ্ত হয়ে পড়েছে। এটা হোল “جَهَالَةٍ” । আপনার অলসতা এক ধরনের “ جَهَالَةٍ” যখন আপনি নিজেই জানেন আপনার ফজরের নামাজ বাদ যাচ্ছে শুধু আপনার অলসতার জন্য। আপনার ক্রোধ এক ধরনের “ جَهَالَةٍ” যখন আপনি আপনার পিতামাতার উপর নিজের কণ্ঠ উঁচু করেন। আপনার চোখের সামনে কোন খারাপ ছবি আসার পরেও যখন টিভির চ্যানেল পাল্টাতে আপনার মনে অনীহা আসে, বুঝে নিবেন এটি সেই “ جَهَالَةٍ”। আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন...

এক ধনী মহিলার গল্প

একবার এক ধনী মুসলিম মহিলার সাথে আমার আজব এক কথোপকথন হয়েছিল। আমেরিকার একটি অঙ্গরাজ্যে যার নাম আমি বলবো না, একটি প্রোগ্রামে আলোচনার পর আমাকে রাতের খাবার খেতে এক বাসায় আমন্ত্রণ জানানো হয়। আর সেটি ছিল ১৫ হাজার বর্গ ফুটের বিশাল এক প্রাসাদ। আমি গাড়ি নিয়ে প্রবেশ করার সময় বাড়ির সৌন্দর্য দেখে মনে মনে ভাবতে লাগলাম, কে এই এল-ক্যাপনের (আমেরিকার এক বিখ্যাত গ্যাংষ্টার) বাড়িতে বাস করে!!! তারপর আমরা ম্যানশনে প্রবেশ করলাম। আমাদেরকে ডিনার পরিবেশন করা হয়েছিল কিং আর্থারের টেবিলের মত প্রকান্ড এক টেবিলে। সম্ভবত টেবিলের এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে কথা পৌঁছাতে হলে মাইক্রোফোনের প্রয়োজন হবে, এত লম্বা এক টেবিল! যাইহোক, আমরা সবাই এক পাশে বসে খাবার খেলাম। তারপর কথা-বার্তা বলতে লাগলাম। বাড়ির কর্তী বললো – “আমার একটি ব্যক্তিগত প্রশ্ন আছে।” আমি বললাম – “ঠিকাছে, বলুন।” তিনি বললেন – “না, আমি সবার সামনে এটা বলতে পারবো না।” তখন আমি অন্য সবাইকে বললাম – “আপনারা টেবিলের অপর প্রান্তে গিয়ে বসুন, (যার অবস্থান ভিন্ন আরেকটি জিপ কোডে 🙂 ) যেন আমি তার সাথে কথা বলতে পারি।” সবাই দূরে গিয়ে বসলো। তারপর ঐ মহিলা বললেন – “আমি জানি, আমাদের সবাইকে মরতে হবে, এবং কিয়ামতের দিন উঠতে হবে….কিন্তু আমি এই বাড়ি ছেড়ে যেতে চাই না।” তাদের লিভিং রুমের আয়তন হবে এই মসজিদের আয়তনের মত। পেছনে রয়েছে কৃত্রিম ঝর্ণা, প্রায় সব ওয়ালে গ্লাস লাগানো। তাদের বাসার ভেতরের সিঁড়িটি ছিল অসম্ভব সুন্দর মার্বেল পাথরে ঝড়ানো, দেখে মনে হয় যেন উপর থেকে সিল্ক গড়িয়ে পড়ছে। আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি এটা আসলে কী? পরে বুঝতে পেরে চমৎকৃত হয়ে গেলাম। তারা আমাকে জানালো, বাড়িতে ২৭ টি বেড রুম রয়েছে। আমি ভাবলাম – ঘুমান তো এক রুমে, বাকিগুলো দিয়ে কী করেন। কিন্তু ঐ মহিলা ম্যানসনটি নিয়ে এতো বেশি আচ্ছন্ন এবং সম্মোহিত…. প্রতিটি...