বাংলা নোটসমূহ

আলহামদুলিল্লাহ, আমরা এখন উস্তাদ নুমান আলী খানের সকল বাংলা নোটসমূহের আর্কাইভ করছি

ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি বিপ্লবের প্রয়োজন

ব্যাক্তিগতভাবে আমি মনে করি যে, ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থার একটি বিপ্লব দরকার।  এটা একান্তই আমার নিজস্ব মতামত, “ইসলামি শিক্ষাব্যবস্থার জন্য একটি বিপ্লবের প্রয়োজন” আমি এর দ্বারা কি বুঝাতে চাচ্ছি ? (দেখুন) আলেমদের জন্য ইসলামি অধ্যাপনার ব্যবস্থা আছে যেখানে তারা পড়াশুনা করবেন ফিকহ, হাদিস, তাফসীর, আকীদাহ নিয়ে, এগুলো সবই তারা চর্চা করবেন এবং (এভাবে) আপনিও একজন আলেম হবেন আর আপনি সেগুলো চর্চা করে অনেক উচু স্তরে যেতে পারেন।  কিন্তু এর নিচেও একটি স্তর আছে, যেটা আসলে আমাদেরই তৈরি করা প্রয়োজন। যেটার বাস্তবে তেমন কোন অস্তিত্ব নেই, এখনো  এবং (তাই) আমাদের প্রয়োজন ইসলাম শেখার একটি স্তর তৈরি করা শুধুমাত্র প্রতিদিন অনুশীলনের জন্য, প্রাত্যহিক জীবনে। আমি ফিকহ নিয়ে কথা বলছি না, আমি কথা বলছি বাবাদের জন্য উপদেশ নিয়ে, আমি কথা বলছি স্ত্রীদের জন্য উপদেশ নিয়ে, শুধু একটি পাঠ্যক্রম, কিভাবে হওয়া যায় একজন ভালো মুসলিম স্ত্রী? কিভাবে হওয়া যায় একজন ভালো মুসলিম স্বামী? কিভাবে হওয়া যায় একজন ভালো মুসলিম….. পিতা? কিভাবে হওয়া যায় একজন ভালো পুত্র? কিভাবে হওয়া যায় একজন ভালো কন্যা? এ ব্যাপারে মহান আল্লাহ তাআলার কি কি উপদেশ আছে? পুরো পাঠ্যক্রমটার ভিত্তি হবে কিভাবে আমাদেরকে ভাল মানুষে পরিণত করা যায়, এটাই হচ্ছে (প্রকৃত) শিক্ষা। প্রকৃত শিক্ষা এটা না যে, তুমি C++ কোডিং জানো, আর তুমি মাইক্রোসফটের কিছু একটায় সার্টিফাইড হয়েছো এবং তুমি সিসকো সার্টিফাইড হয়েছো  আর এ সবগুলোর উপরে তোমার একটা একাউন্টিং ডিগ্রী আছে, এমবিএ ডিগ্রী আছে। এ সবকিছুরই মানে হলো, তুমি টাকা উপার্জন করতে সক্ষম কিন্তু তার মানে এই নয় যে, তুমি শিক্ষিত। এটার মানে শুধু এই যে, তুমি টাকা উপার্জন করতে সক্ষম। এতটুকুই, এ সবকিছুর মানে শুধু এতটুকুই। এগুলোর কোনোটাই তোমাকে একজন ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে তুলবে না। আমি অনেক চিকিৎসকদেরকে চিনি যারা মানুষ হিসাবে ভয়ংকর, আমি অনেক প্রোগ্রামারদেরকেও চিনি যারা...

আমাদের পরিবারঃ আমার চোখের শীতলতা

– উস্তাদ নোমান আলী খান হে আল্লাহ আমাদের সেই অপ্রত্যাশিত উপহার প্রদান করুন। কি সেই অপ্রত্যাশিত উপহার?   رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُن- হে আমার প্রভু! স্ত্রী ও সন্তাদের দ্বারা আমার চোখ শীতল কর।অর্থাৎ, স্বামী বা স্ত্রী এবং সন্তান দেও যা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় ও চোখে আনন্দের অশ্রু বইয়ে দেয়। কুররাতা আইয়ুন, এর অর্থ কি আপনি জানেন? এর মানে এমন কিছু যা পাওয়ার আনন্দে আপনার চোখে আনন্দের অশ্রু চলে আসে। আপনি যখন দেখেন আপনার সন্তান কুরআন তিলাওয়াত করছে ও কুরআন তিলাওয়াত করতে ভালোবাসে তখন কি আনন্দে আপনার চোখে পানি আসে না কিংবা আপনার প্রিয়তমা স্ত্রী যখন অতি আদর-যত্নে বড় করে তোলে আপনার সন্তানদের তখন কি আপনার চোখ আনন্দে ভিজে যায় না? আপনি যখন দেখেন আপনার স্বামী আপনার সন্তানদের ফজরে ডেকে তোলে এবং তাদেরকে নিয়ে মসজিদে যায় তখনো আনন্দে আপনার চোখে অশ্রু চলে আসে, আপনি প্রচন্ড সুখ অনুভব করেন।অনেক স্বামী বা স্ত্রীকেই কাঁদতে দেখবেন কিন্তু তাদের এই কান্না কিন্তু আনন্দের কান্না না, তাদের এই কান্না অন্য কোন কারণে। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি আনন্দের কান্নার জন্য, আমরা চাই আমাদের পরিবার নিয়ে সর্বোচ্চ সুখী হতে। কিন্তু সেটা কিভাবে হবেন? এখনো তো আপনি বাসায় গিয়ে আপনার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করেন। আপনি বাসায় গেলে আপনার স্ত্রী জিজ্ঞেস করে আপনার আসতে দেরি হলো কেন আর আপনিও তখন রেগেমেগে জবাব দেন এই বলে যে বারবার একই প্রশ্ন কেন করো, তুমি কি জানো না রাস্তায় কি পরিমাণ জ্যাম, জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেই তো দেখতে পাও। এই ধরণের ঝগড়া নিয়মিতই হয় আর এরপর আপনি যখন আপনার সন্তানের কাছে যান তাকেও আপনি বকাঝকা করেন সে কেন খেলনা নিয়ে খেলছে বা কেন এত হাসাহাসি করছে, এত খুশির কি আছে এসব নিয়ে। তাকে বকা দেন তার হোমওয়ার্ক...

আপনার ভিতরের প্রতিভাকে খুঁজে নিন

আল্লাহ সূরা বনি ইসরাইলে বলেছেন,” বলুন, ‘প্রত্যেকেই নিজ প্রকৃতি অনুযায়ী কাজ করে থাকে এবং আপনার রব সম্যক অবগত আছেন চলার পথে কে সবচেয়ে নির্ভুল।‘”-(১৭:৮৪) এটি সূরা বনী-ইসরাইলের একটি খুব সুন্দর আয়াত। আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা আমাদের প্রত্যেককে কঠিন পরিশ্রম করার নির্দেশ দিয়েছেন আমাদের নিজ প্রকৃতি,প্রবণতা,আকৃতি,গঠনের উপর ভিত্তি করে। এর মানে হচ্ছে আমাকে আল্লাহ বিভিন্ন রকমের দক্ষতা দিয়েছেন, বিভিন্ন রকমের জেনেটিক্স,বিভিন্ন রকমের প্রতিভা, শক্তির বিভিন্নতা আপনাদের থেকে। আপনাকে আমার চেয়ে ভিন্ন প্রকৃতি আপনাকে দেওয়া হয়েছে,বিভিন্ন সুযোগ,ভিন্নরকম জেনেটিক অবকাঠামো। আপনাকে কিছু প্রতিভা দেয়া হয়েছে,আমাকে অন্যরকম প্রতিভা দেয়া হয়েছে, অন্যজনকে অন্যরকম প্রতিভা দেয়া হয়েছে। প্রথম কথা হল আল্লাহ বলেছেন নিজের সক্ষমতা অনুযায়ী কাজ করতে। আমরা যখন আল্লাহর এই নির্দেশনা সঠিকভাবে পালন করিনা তখন কি হয়? সবাই চিন্তা করতে শুরু করে,আমার লক্ষ্য ওই মানুষটির সাথে তুলনা করে সাজানো উচিত। এই মানুষটি এই লক্ষ্যে,ওই লক্ষ্যে পৌঁছেছেন, আমি কেন পৌঁছাতে পারিনি। আমার ভাই মেডিকেল কলেজে খুব ভাল করেছে কিন্তু আমি বায়োলজি পছন্দ করিনা তাই আমি একজন ব্যার্থ। আপনি কিছু বুঝতে পারছেন না মানে হল আপনার বোঝার সক্ষমতা আপনার ভাইয়ের সক্ষমতার মাঝে পার্থক্য রয়েছে। আমি জানিনা, আপনি হয়ত একজন ভাল অলিম্পিক ক্রীড়াবিদ হতে পারেন। আমি জানিনা,আপনি হয়তো একজন খুব ভাল লেখক হতে পারেন। আপনাকে আপনার ভাইয়ের মত প্রতিভা না দিয়ে হয়ত অন্য প্রতিভা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেছেন,”আর যা দ্বারা আল্লাহ তোমাদের কাউকে কারো উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন তোমরা তার লালসা করো না।”(সূরা: নিসা- ৪:৩২) আল্লাহ কাউকে একটা বিষয়ে খুব ভাল দক্ষতা দিয়েছেন,হয়ত সে বিষয়ে আপনার দক্ষতা একদম কম,আবার আপনাকে যে বিষয়ে দক্ষতা দিয়েছেন অন্যজনের সে বিষয়ে হয়ত দক্ষতা নেই। তাই প্রথম কথা হল, এই আয়াতগুলোর মাদ্ধমে বলতে চাচ্ছি- আল্লাহ আমাদের একটি সুন্দর নির্দেশনা দিয়েছেন,নির্দেশনা মানে হল আমাদেরকে একটি লক্ষ্যে পৌঁছান। আজকাল অনেক মানুষের মনে প্রশ্ন আছে,তারা জিজ্ঞেস করে,...

সেই বিবাহ প্রস্তাবটি

— উস্তাদ নোমান আলী খান আপনাদের সাথে মুসা আলাইহিস সালামের কাহিনীর একটি অংশ আজ শেয়ার করতে যাচ্ছি। যা ঘটেছিল – মূসা আলাইহিস সালাম দুজন নারীকে সাহায্য করেন যারা তাকে উত্তম বিবেচনা করে তাদের ঘরে আমন্ত্রণ জানায় যাতে অর্থের বিনিময়ে তিনি তাদের জন্য কাজ করেন। তিনি তাদের ঘরে আসেন আর নিজের কাহিনী বিস্তারিত তাদের বলেন – কিভাবে তিনি মিশর থেকে পালালেন, আর সেখানে কিভাবে তাকে হত্যার অপরাধে অভিযুক্ত করা হয়েছে, এবং তিনি যে গৃহহীন ও আশ্রয় পেতে আগ্রহী  ইত্যাদি। সেই নারীরা ঘরের অন্য পাশ থেকে সব শুনছিলেন, তন্মধ্যে একজন তাদের পিতাকে ডাকলেন আর তাকে কিছু জানালেন। এই বিষয়টি কুরআনে উল্লিখিত হয়েছে, অর্থাৎ এটি গুরুত্বপূর্ণ। সে নারীটি পিতাকে ডেকে বললেন,  يا ابت استاجره  প্রিয় আব্বা, তাকে কাজের জন্য নিয়ে নিন।   দারুন। এই বৃদ্ধ লোকটির দুটি কন্যা রয়েছে, কিন্তু কোন পুত্রসন্তান নেই, স্বাভাবিক যে এ কারনেই তাকে তাঁর মেয়েদেরকেই পাঠাতে হয় যেকোন কাজের জন্য। মেয়েটি ভাল করেই জানে,  যদি মুসাকে কাজের জন্য নেয়া হয় তাহলে তাকে  অবিবাহিত এই নারীদের আশেপাশেই কাজ করতে হবে – যা অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। তো সে জানে বা বুঝতে পারছিল যে যদি তাকে ভাড়ায় নেয়া হয় – সুযোগ থাকে তাদের দুইজনের একজনের সাথেই তাঁর বিয়ে হবে । আর সে নিজেই যখন এই কথা বলছে, সুযোগ বেশি যে আব্বা তার ইংগিত বুঝবে – আব্বা, আমার মনে হয় বিবাহের জন্য সে এক উত্তম পুরুষ।  তো প্রথমেই যে বিষয়টি এখান থেকে আপনারা বুঝতে পারেন, এই নারীর আত্মবিশ্বাস ছিল যে সে নিজের বিয়ের জন্য আব্বাকে কারও সম্পর্কে বলতে পারে।  কোন কন্যাসন্তান বিবাহের ব্যাপারে কোন ছেলের প্রতি আগ্রহী থাকলে, তার পিতাকে ইঙ্গিত দিয়ে জানানোতে কোনই অন্যায় নেই। বড় একটি বিষয় যা এখান থেকে পাওয়া যায়। এতে কোন ক্ষতি নেই, লজ্জার ও...

আলেমদের ঝগড়ার কারনেই পরবর্তী প্রজন্ম বিশ্বাস হারাচ্ছে

নোমান আলি খান وان الذين اورثوا الكتاب من بعدهم لفي شك منه مريب তিনি বলেন – কোন সন্দেহ নেই যে যারা তাদের পরবর্তীতে বংশগতভাবে কিতাব পেয়েছিল, যাদের কিতাব দেয়া হয়েছিল উত্তরাধিকার সূত্রে اورثوا الكتاب من بعدهم শব্দগুলো নিয়ে একটু ভেবে দেখুন। সাধারণভাবে এখানে পরের প্রজন্ম নিয়ে তিনি বলছেন,  ঠিক কিনা ?  পরবর্তী জেনারেশানের মুসলিমরা। কিন্তু তিনি এটা কিভাবে বলছেন ? তিনি বোঝাতে চাচ্ছেন যে, যারা উত্তরাধিকারসূত্রে এই দ্বীন পেয়েছিল প্রথম প্রজন্ম থেকে – সেই প্রথম প্রজন্ম ব্যাস্ত ছিল অনৈক্য ও বিভাগ-বিভাজনে। তো এ থেকে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম কী শিখবে ?  বুঝতে পারছেন? তারা তাদের বড়দের যা যা করতে দেখেছিল, যেভাবে তাদেরকে দ্বীন অনুসরণ করতে দেখেছিল – সেটা এতটাই কুতসিত ছিল, এতটাই সামঞ্জস্যহীন ছিল..  কেননা আমরা জানি ধর্ম হওয়ার কথা এমন কিছু যা কিনা খুবই চমৎকার, এটা সমাজে ঐক্য নিয়ে আসে। উম্মাহর ভেতর একতার বিকাশ ঘটায়। এটা اشداء على الكفار رحماء بينهم সৃষ্টি করে।  হ্যা এমন অবস্থারই প্রবর্তন করে । এটা পুরোপুরি উলটো বিষয়ের প্রবর্তন ঘটায়।  কিন্তু পরবর্তীতে এমন প্রজন্মের আবির্ভাব ঘটলো যারা বিভেদ, অনৈক্যের মানুষদের থেকে দ্বীন শেখা শুরু করলো। হ্যা এটা নতুন প্রজন্ম।  এখন এই নতুন প্রজন্মের ব্যাপারে তিনি কী বলেন !?… তারা দেখতে পেল সেই বিষয়ের কদাকার চিত্র যা তাদের হাতে পৌছেছিল ।  তারা এখন আর এই কিতাবকে চমৎকার কিছু হিসেবে দেখে না। এই দ্বীনকে সুন্দর কিছু বলে মনে করে না। তারা আসলে ভয়ঙ্কর একটা রুপ তাদের সামনে দেখে থাকে। তো তাদের কী অবস্থা হয় জানেন ?  এই পরবর্তী প্রজন্ম ?   لفي شك منه তারা এ ব্যাপারে সংশয়তে ভোগে ।  পরবর্তী প্রজন্ম, তারা নিজেদের দ্বীনকেই সন্দেহ করতে শুরু করে। সুবহানাল্লাহ।  এ কেমন মূল, যা পরিশোধ করতে হচ্ছে, এই অপরাধের দরুন !  এখানে এমন মানুষজন রয়েছে যারা দ্বীন...

আমাদের পরিবারঃ আমার চোখের শীতলতা

– উস্তাদ নোমান আলী খান হে আল্লাহ আমাদের সেই অপ্রত্যাশিত উপহার প্রদান করুন। কি সেই অপ্রত্যাশিত উপহার?   رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُن- হে আমার প্রভু! স্ত্রী ও সন্তাদের দ্বারা আমার চোখ শীতল কর।অর্থাৎ, স্বামী বা স্ত্রী এবং সন্তান দেও যা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় ও চোখে আনন্দের অশ্রু বইয়ে দেয়। কুররাতা আইয়ুন, এর অর্থ কি আপনি জানেন? এর মানে এমন কিছু যা পাওয়ার আনন্দে আপনার চোখে আনন্দের অশ্রু চলে আসে। আপনি যখন দেখেন আপনার সন্তান কুরআন তিলাওয়াত করছে ও কুরআন তিলাওয়াত করতে ভালোবাসে তখন কি আনন্দে আপনার চোখে পানি আসে না কিংবা আপনার প্রিয়তমা স্ত্রী যখন অতি আদর-যত্নে বড় করে তোলে আপনার সন্তানদের তখন কি আপনার চোখ আনন্দে ভিজে যায় না? আপনি যখন দেখেন আপনার স্বামী আপনার সন্তানদের ফজরে ডেকে তোলে এবং তাদেরকে নিয়ে মসজিদে যায় তখনো আনন্দে আপনার চোখে অশ্রু চলে আসে, আপনি প্রচন্ড সুখ অনুভব করেন।অনেক স্বামী বা স্ত্রীকেই কাঁদতে দেখবেন কিন্তু তাদের এই কান্না কিন্তু আনন্দের কান্না না, তাদের এই কান্না অন্য কোন কারণে। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি আনন্দের কান্নার জন্য, আমরা চাই আমাদের পরিবার নিয়ে সর্বোচ্চ সুখী হতে। কিন্তু সেটা কিভাবে হবেন? এখনো তো আপনি বাসায় গিয়ে আপনার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করেন। আপনি বাসায় গেলে আপনার স্ত্রী জিজ্ঞেস করে আপনার আসতে দেরি হলো কেন আর আপনিও তখন রেগেমেগে জবাব দেন এই বলে যে বারবার একই প্রশ্ন কেন করো, তুমি কি জানো না রাস্তায় কি পরিমাণ জ্যাম, জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেই তো দেখতে পাও। এই ধরণের ঝগড়া নিয়মিতই হয় আর এরপর আপনি যখন আপনার সন্তানের কাছে যান তাকেও আপনি বকাঝকা করেন সে কেন খেলনা নিয়ে খেলছে বা কেন এত হাসাহাসি করছে, এত খুশির কি আছে এসব নিয়ে। তাকে বকা দেন তার হোমওয়ার্ক...

শুনতে শিখুন

নোমান আলী খান কিছু দিন আগে,আমি আসলে একটি গির্জার সমাবেশে অংশ নিয়েছিলাম,শুধু দেখার জন্যে যে তারা আসলে কি করে।সেটা  ছিল  বুধবার রাতে,এবং যাজক মতামতই  পাঁচ মিনিটের মতো কথা বলে।তার যা বলার প্রথমে সে তা বলে। এবং তারপরে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঘটনাটি  ঘটে।তিনি সমাবেত লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এখানে  কার কি সমস্যা হচ্ছে? আমাকে খলখুলি এই সম্পর্কে বলুন!” কিছু লোক বলল, “আমি সবেমাত্র আমার চাকরি হারিয়েছি। আমার কঠিন সময় পার হচ্ছে। “ “ঠিক আছে সবাই, জেফের জন্য প্রার্থনা করুন!” এবং প্রত্যেকে জেফের জন্য প্রার্থনা শুরু করে। তারপর কেউ বলল যে , “আমি সবে তালাক পেয়েছি, আমার স্ত্রী সকল সম্পদ নিয়ে নিয়েছে। “ প্রত্যেকে এই ব্যক্তির জন্য প্রার্থনা করুন… এবং তারপর এক মহিলা বলল, “আমি সবেমাত্র ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছি” এবং প্রত্যেকে তার জন্য প্রার্থনা করল। এবং কোনে বসে থাকা এক লোক বলল, “সে একটা চাকরি হারিয়েছে? আমার সাথে পরে কথা বলতে বলুন।  আমার প্রতিষ্ঠানে পদ খালি আছে। “ এবং তারা শুরু যা তাদের একসাথে একতাবদ্ধ  করল তা কিন্তু  এটা না যে এই লোকটি ঘন্টা পড় ঘন্টা কথা বলে যাচ্ছে এবং তারা সেখানে বসে বসে শুনছে, আসলে তারা এই সমাবেশে জড়ো হয়েছিল কারণ তাদের এমন একটি জায়গা আছে যেখানে তাদের শোনার মানুষ আছে। যেখানে তারা সমর্থিত বোধ করতে পারে। রসুলুল্লাহ (ﷺ) একজন আশ্চর্য শ্রোতা ছিলেন।আমরা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে আশ্চর্য বক্তা মনে করি।হ্যাঁ অবশ্যই তিনি তা ছিলেন.তবে তিনি অবিশ্বাস্য শ্রোতাও ছিলেন। অনেক সময়, যাদের হৃদয় আপনি প্রভাবিত করতে চান, অনেক সময় আমরা চিন্তা করি যে আমরা যদি কেবল তাদের সাথে কথা বলি তবে তাদের  পরিবর্তন হবে। কিন্তু আমি আপনাদের বলব যে, মানুষের সাথে কথা বলার চেয়ে জরুরি হল, আমাদের লোকের কথা শুনতে শিখতে হবে,আমাদের লোকের কথা শুনতে শিখতে হবে।আপনি কেবল উত্তর দেয়ার জন্য তাদের কথা...

আপনার সন্তান শান্ত হোক অথবা বেয়াড়া/চঞ্চল, তাদেরকে দ্বীন শেখান

যে সকল বাবা-মার দশ বছরের কম বয়সী শিশু-সন্তান রয়েছে, তাদের জন্য, তারা হাত দেখান/উঠান দয়া করে, দশ বছরের কম বয়সী শিশু-সন্তান…. ঠিক আছে, আপনারা কয়েক জনই আছেন । সুতরাং আমাদের জন্য, সবচেয়ে বড় কাজটি হচ্ছে আমাদের সন্তানদের ইসলাম শিক্ষা দেওয়া, আমাদের, সন্তানদের ইসলাম শিক্ষা দেওয়া । নবীগণ যখন দ্বীন শিক্ষা দিতেন, তারা সবাইকেই দ্বীন শিক্ষা দিতেন । কিন্তু আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল যখন (পবিত্র) কুরআনে শিশুদের ইসলাম শিক্ষার ব্যাপারে কথা বলেন, শিশুদের শেখানোর বিষয়ে, শিশুদের উপদেশ গ্রহণ করা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা খুব কমই বলেছেন । কিন্তু যখনই তিনি এ বিষয়ে কথা বলেছেন, সেটা ছিল বাবা-মার কাছ থেকে ।  আবার শুনুন। মহান আল্লাহ তায়ালা যখনই (পবিত্র) কুরআনে শিশুদের পথনির্দেশনা গ্রহণ করা সম্পর্কে কথা বলেছেন, সেটা সবসময় ছিল বাবা-মার কাছ থেকে এবং বাবা-মার মধ্যে, সেটা সবসময় বাবার কাছ থেকে. কারণ মাতো সেখানে সবসময়ই আছেন ।  বাচ্চার কাছে সবসময় থাকার জন্য মাকে অতিরিক্ত কোন কাজ করতে হয় না, বাচ্চাকে সবসময় যত্ন করা এবং তাকে সবসময় উপদেশ দেওয়া, একজন মাকে আপনার প্রশিক্ষণ দিতে হবে না যে, কিভাবে একজন মা হতে হয়, এটা তার স্বাভাবিকভাবেই আসে । আল্লাহ সেটা তাদের ভিতরেই দিয়ে দিয়েছেন ।  তবে বাবাদের অবস্থা অবশ্য ভয়াবহ । প্রকৃত পিতা হবার জন্য আমাদেরকে (রীতিমতো) প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হয় । এটা আমাদের (ভিতরে) স্বাভাবিকভাবে আসে না ।  যখন একজন মায়ের সন্তান হয়, তার অনুভূতি, তার আবেগ, সবকিছুর তখনই পরিবর্তন হয়, তাৎক্ষণাৎ পরিবর্তন হয়ে যায় ।  (আর) একজন বাবার ? ৩-৪ দিন চলে যাবার পর, যখন কোন বন্ধু বলে, “আরে, শুনলাম তোমার নাকি একটা বাচ্চা হয়েছে ? ” “হ্যাঁ, ভাই, এটা আমাকে এখনও নাড়া/ধাক্কা দেয়নি ”  somebody needs to hit you, so it hits you. (মানে) কারো আপনাকে নাড়া/ধাক্কা দেয়া প্রয়োজন, তাহলেই সেটা...

ব্যবসানীতি: মিথ্যার মাধ্যমে মানুষের টাকা গ্রাস করবেন না

পঞ্চম পারায় সূরাহ নিসা থেকে একটি আয়াত নিয়েছি, উনত্রিশ নম্বর আয়াত। খুবই শক্তিশালী শব্দচয়ন। ইসলামের অন্যতম বড় একটি মূলনীতি আনা হয়েছে আয়াতটিতে। “তোমরা যারা ঈমানের দাবি করো…”  يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ)  “… পরস্পরের টাকা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে খেয়ে ফেলো না।” কর্মক্ষেত্রে কর্মঘন্টার ব্যাপারে মিথ্যা বলবেন। যখন কার্ড পাঞ্চ করবেন, মিথ্যার আশ্রয় নিবেন না। ধরুন আপনি একজন কনসালটেন্ট। নির্দিষ্ট কিছু ঘন্টার বিনিময়ে আপনাকে টাকা দেয়া হয়। হয়তো কোনো কাজ করে, বা কিছু ঘন্টা ব্যয় করে। তো আপনি বসে বসে কফি খেলেন, মজা করলেন, আয়েশ করলেন। সেসবের জন্যেও আপনাকে টাকা দেয়া হয়। এভাবে উপার্জন করবেন না, যদি না আপনার নিয়োগকর্তা বিষয়টি জেনে থাকেন।  لَّا أَنْ تَكُونَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِنْكُمْ)  “… তবে ব্যবসা হয়ে থাকলে ভিন্নকথা, যে ব্যবসা পরস্পরের মধ্যে বোঝাপড়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে।” অন্যকথায়, কেউ সবসময় একশভাগ প্রোডাক্টিভ থাকতে পারে না। মানবিকভাবেই তা সম্ভব নয়। তাই, আপনার মনে হতে পারে, “আচ্ছা, ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কাজ করবো, তবে মাঝেমাঝে চল্লিশ মিনিটের ব্রেক নিবো। বসে থাকব, কথা বলব। করা যাবে?” যদি আপনার নিয়োগকর্তা জানেন আপনি তা করছেন, আর এটা তিনি মেনে নেন, তাহলে ঠিক আছে, কারণ এটা পারস্পরিক সম্মতিতেই হচ্ছে।  لَّا أَنْ تَكُونَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِنْكُمْ)  যদি এটা ব্যবসা হয়, পরস্পরের সম্মতিক্রমে হয়, তবে ভিন্নকথা। এ ছাড়া মানুষ থেকে জোচ্চুরি করে টাকা আদায় করবেন না। জিনিসের দাম মাত্রাতিরিক্ত ধরবেন না। আপনার কাজের জন্য মাত্রাতিরিক্ত মূল্য চাইবে না। যদি গাড়ির মেকানিক হয়ে থাকেন, আপনার দাম বাড়িয়ে দিবেন না। কারণ এই দশ মাইলের মধ্যে আপনি একাই মেকানিক। আপনি জানেন লোকটার গাড়ির ট্রান্সমিশনে সমস্যা, টাইমিং বেল্টে সমস্যা, ইঞ্জিন ফ্লুইড, আরো বিভিন্নরকম সমস্যা আছে। সে কি করবে?  আপনি যদি ডাক্তার হন, মানুষের কাছে মাত্রাতিরিক্ত বিল চাইবেন না। একের পর...

সবচেয়ে বিশুদ্ধ বুদ্ধির মানুষ কারা?

— নোমান আলী খান।       মানুষের মাঝে যাদের সবচেয়ে পরিপক্ক ঈমান রয়েছে কুরআনে তাদের জন্য একটি পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, আর তা হলো – উলুল আলবাব বা সবচেয়ে পরিশুদ্ধ বুদ্ধির মানুষ।  আল্লাহ এই মানুষদের কথা সূরা আলে-ইমরানে বলেছেন – إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ – “নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিতে এবং রাত্র ও দিনের আবর্তনে জ্ঞানবানদের (উলুল আলবাবদের) জন্য বহু নিদর্শন আছে।” (৩:১৯০)    তারা ঈমানের বুদ্ধিবৃত্তিক অনুসন্ধানে এবং ঈমানের আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানে এক ধরণের পরিপক্কতায় পৌঁছে গিয়েছে, এমনকি কুরআনের সংস্পর্শে আসার পূর্বেই। সবচেয়ে পরিণত ঈমানের মানুষেরা ঐশী জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পাওয়ার পূর্বেই নিজেদের ভেতর বিশ্বাসের ভিত গড়ে তুলেছিলেন।  চলুন দেখি, কীভাবে? আল্লাহ বলেন – “ইন্না ফিই খালকিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়াখতিলাফিল লাইলী ওয়ান নাহারি…” নিশ্চয়ই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টিতে এবং রাত্র ও দিনের আবর্তনে  “লাআ-ইয়াতিন” অলোকিক নিদর্শন রয়েছে, শুধু একটা নয়, বহু বহু নিদর্শন রয়েছে এর প্রত্যেকটাতে। রাতের মাঝে অনেক শিক্ষা আছে, দিনের মাঝে অনেক শিক্ষা আছে, আকাশের মাঝে অনেক শিক্ষা আছে, পৃথিবীর মাঝেও অনেক শিক্ষা আছে। এর প্রত্যেকের মাঝে রয়েছে অনেক অনেক শিক্ষা। কার জন্য?  উলুল আলবাব-দের জন্য। সবচেয়ে পরিশুদ্ধ বুদ্ধির মানুষদের জন্য, খাঁটি বুদ্ধিমত্তার অধিকারী মানুষদের জন্য। এখন, খাঁটি বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞা কী? আল্লাহ কিভাবে খাঁটি বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন?  তিনি পরবর্তী আয়াতে “উলুল আলবাব-দের” পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন – الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ – যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে…. তাহলে উলুল আলবাবদের প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো, যারা সবসময় আল্লাহকে স্মরণ করে। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল, “ওয়া ইয়াতা ফাক্কারুনা ফিই খালিকস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ” এবং তারা আকাশ ও জমিনের সৃষ্টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে।  তাহলে এখন দেখুন…...

শয়তান বিয়েকে নরকতুল্য করতে চায়

এখন আল্লাহ কথা বলবেন আদমের সাথে। তিনি বললেন, وَيٰٓـَٔادَمُ اسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ -আদম! তুমি আর তোমার স্ত্রী বসবাস করো জান্নাতে, সাময়ীকভাবে। (7:19) উসকুন। উসকুন এসেছে সুকুন থেকে। যারা একটু একটু তাজউইদ জানেন, সুকুন করলে পুরোপুরি থেমে যেতে হয় নাকি বিরতি নিতে হয়? সুকুনের আক্ষরিক অর্থ বিরতি। শাব্দিকভাবেই এর অর্থ হলো বিরতি। আর উসকুনের বিপরীত হলো উখলুদ। উখলুদ মানে চিরকাল। উসকুন মানে স্বল্প সময়ের জন্য। আল্লাহ আগেই তো ঘোষণা দিয়েছেন, “তোমরা সবাই কোথায় যাচ্ছো? তোমরা পৃথিবীতে যাচ্ছো। কিন্তু আদম, তুমি আর তোমার স্ত্রী কয়েকদিন জান্নাতে থেকেই দেখো না। কোথায় যাবার আগে? পৃথিবীতে যাবার আগে। কিন্তু কেনই বা তারা…? যেন আপনি সাধারণ এপার্টমেন্ট পেয়েছেন, কিন্তু তাতে যাবার আগে ফাইভ স্টার হোটেলে এক সপ্তাহ থেকে আসুন। এক্সেকিউটিভ লাউঞ্জে। ফ্রি খাবার সহ। কেন সেখানে আগে থাকতে হবে? কেন? কারণ তিনি চাচ্ছিলেন যেন প্রথম মানুষটি দেখে নেয় চিরকালের জন্য তার সন্তানরা কী অর্জন করতে যাচ্ছে। তিনি চাচ্ছিলেন যেন সে জান্নাতের একটি ভালো ধারণা পেয়ে নিজের সন্তানদের সেটার প্রতি উৎসাহ দিতে পারে। আর সেই উৎসাহ চলতেই থাকবে। বুঝতে পারছেন? তাই তিনি বলছেন, কিছু সময়ের জন্য চাই এখানে থাকো। তুমি আর তোমার স্ত্রী। অন্যদিকে, আদমকে সৃষ্টি করা হলো, কিন্তু স্ত্রীর তো কোন উল্লেখ ছিল না তাই না? স্ত্রীর কোন উল্লেখই ছিল না এতোক্ষণ। হঠাৎ করেই আল্লাহ বলছেন, “তুমি আর তোমার স্ত্রী”। এই স্ত্রী কোত্থেকে এলো? এটার কারণ বর্ণনায় কিছু মুফাসসিরুনের মন্তব্য আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। তারা বলেন, বিয়ে ছাড়া জান্নাত ঠিক জান্নাত হয় না। প্রথমবার পড়ে খুব হেসেছিলাম। খুব সুন্দর কোথাও বেড়াতে গেলেন। পৃথিবীতে খুব সুন্দর কিছু স্থান আছে। সেই সুন্দর স্থানে গেলেন, একা। নিজের হোটেল রুমে আছেন। ঘুম থেকে উঠে ভাবছেন, “স্থান পরিদর্শনে যাবো, পর্বত দেখবো”। একা! আপনার কি যাবার আর ইচ্ছে হচ্ছে? না।...

❀ বৃষ্টি ও কুর’আন: জীবন ও ঈমান ❀

আল্লাহ আকাশ থেকে পানি বর্ষণ করেন, তা দ্বারা যমীনকে তার মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত করেন। নিশ্চয় এতে মনোযোগ দিয়ে শ্রবণকারীদের জন্যে রয়েছে নিদর্শন। [নাহল: ৬৫] এখানে আসলে বৃষ্টির কথা বলা মুখ্য উদ্দেশ্য না৷ উদ্দেশ্য পূর্বের আয়াত। আগের আয়াতে যা বলা হয়েছে তা হচ্ছে: আমি আপনার প্রতি এ জন্যেই কিতাব নাযিল করেছি। (নাযিলের উদ্দেশ্য) যাতে আপনি সরল পথ প্রদর্শনের জন্যে তাদেরকে পরিষ্কার বর্ণনা করে দেন (ঐসব বিষয়ে) যে বিষয়ে তারা মতবিরোধ করছে এবং(এই কিতাব) ঈমানদারকে হেদায়াত ও তাদের জন্যে ক্ষমা (নিয়ে আসবে)। [সূরা নাহল: ৬৪] পূর্বের আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ তা’আলা আসমান থেকে কিতাব নাযিল করেন। পরের আয়াতে বলা হয়েছে আল্লাহ আসমান থেকে পানি বর্ষণ করেন। সুতরাং আপনি যদি পৃথিবীতে আল্লাহর কিতাবের গুরুত্ব বুঝতে চান, তাহলে আপনাকে পৃথিবীতে পানির ভূমিকা বুঝতে হবে। বলুন তো পানির কাজ কী? পানি পৃথিবীতে জীবন তৈরি করে৷ পৃথিবীতে জীবন ধারণের জন্য পানি অপরিহার্য। ঠিক তেমনি জগতের যেসব জায়গা নীতি-নৈতিকতার দিক থেকে মৃত, সেখানে আল্লাহর কিতাবের শিক্ষা অনিবার্য৷ আধ্যাত্মিকভাবে মৃত জগতকে জাগাতে চাই কুর’আনের শিক্ষা৷ হাজার বছরের মৃতপুরীকে জাগিয়ে তুলতে পারে পানি৷ পৃথিবীর রাজনৈতিক অবস্থা যতই খারাপ হোক না কেন, পৃথিবীর নৈতিক অবস্থা যতই খারাপ হোক না কেন, দিন রাতে যেকোনো অবস্থাতেই মিডিয়া যতই খারাপ হোক না কেন, মুসলিমরা যতই নীচে নামুক না কেন — এই কিতাব (মহিমান্বিত কুর’আন) সেই মৃত লোকদের মধ্যে জীবন আনার ক্ষমতা রাখে। কিন্তু পানি যখন বর্ষিত হয় তখন দুই ধরনের উদ্ভিদ জন্মায় পানি বর্ষণের ফলে। এক ধরনের উদ্ভিদ যা নিজে নিজে জন্মায়। আরেক ধরনের উদ্ভিদ হচ্ছে ফসল৷ এর জন্য শ্রম দিতে হয়৷ পৃথিবীতে কি এমন লোক নেই যাদেরকে কোনো প্রকার সরাসরি দাওয়াত ছাড়া ইসলাম গ্রহণ করেছে? অনেকে করেছে। যাদের সাথে কোনো অবস্থাতেই আমার দেখা হয়নি। আমি শুধু একটি ইউটিউব ভিডিও তৈরি করেছি...

শাস্তি আসার পূর্বেই ফিরে আসুন, দেরি করবেন না

—নোমান আলী খান  গুনাহ বা মন্দ কাজগুলো আমাদের হতাশ করে দেয়। এগুলো এমন অনুভুতি আনে যে— “আল্লাহ তো আর আমাকে ক্ষমা করবে না। আমার অবস্থা তো খুব খারাপ। ক্ষমা চাবার অর্থটাই বা আর কি? আমি কী করছি জানেন? আমি কি কি কাজ করি সেগুলো জানেন? আপনি না জানলেই ভালো ভাই। আমি খুব খারাপ।”  ভাবছেন, এই সময়ে এসে ক্ষমা চাবার মানেটাই বা কি? আর আল্লাহ জানেন এই চিন্তাগুলো ওসব মন্দ কাজের থেকেই উৎপন্ন হয়। আবার কেউ বলে, “ক্ষমা চাওয়া নিয়ে আমি আর ভাবতে পারবো না। আসলে যারা ভালো মানুষ তারা তো ইস্তিগফার ইত্যাদি করে। আমি তো অনেক খারাপ কাজের মধ্যে জড়িত। তাছাড়া এসব থেকে দূরে থাকবো সেটাও আপাতত হচ্ছে না।” আল্লাহ বলছেন—لَا تَقۡنَطُوۡا مِنۡ رَّحۡمَۃِ اللّٰهِ নিজেদের আলাদা করে ফেলো না। আশাহত হয়ো না। আল্লাহর রহমত থেকে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলো না। আল্লাহ্‌র ভালোবাসা, যত্ন আর ক্ষমা থেকে একেবারেই আশাহীন হয়ে যেয়ো না। আল্লাহ তোমাকে ভালোবাসা বন্ধ করেননি, তোমার খেয়াল রাখাও বন্ধ করেননি। এমন কখনোই না যে আল্লাহ তোমার প্রতি ক্ষমা দেখাতে আর আগ্রহী নন। এমন কিছুই না। আপনি নিজেকে বলেন, “আল্লাহ মনে হয় আমাকে শাস্তি দিতেই চান।” না! এটা আপনার ধারণা! আল্লাহ বলেননি, আপনিই বলছেন। আল্লাহ কুরআনে কখনোই বলেন না যে আপনাকে শাস্তি দিতে চান। বরং তিনি উল্টোটাই বলেন। مَّا يَفْعَلُ اللَّهُ بِعَذَابِكُمْ আপনাকে শাস্তি দিয়ে আল্লাহ্‌র কি লাভ? তিনি কেন শাস্তি দেবেন আপনাকে? হুবুহু এটাই বলছেন আল্লাহ! আল্লাহ আযযা ওয়াজাল এই আয়াতে বলছেন, إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا – দয়া করে খোলা কানে এই আয়াতগুলো শুনুন। নিজের জন্যে আর আপনার পরিবারের জন্যে হলেও। “আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন সমস্ত গুনাহ, সব একত্রেই।”   এটা কুরআনের একটি মিরাকল, কুরআনে সবচাইতে বড় উপহারগুলোর একটি যে আল্লাহ বলছেন যুনুব, তিনি সায়্যিআত বলেননি। কারণ...

মনের অস্থিরতা দূর করার উপায়

  – নোমান আলী খান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এরশাদ করেনঃ  اِذَا مَسَّهُ الشَّرُّ جَزُوۡعًا ۙ  “সে(মানুষ)বিপদগ্রস্থ হলে হা-হুতাশ করতে থাকে।” (৭০ : ২০) অর্থাৎ, যখন মানুষ ব্যর্থ হয় কিংবা কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, তারা খুব তাড়াতাড়ি অধৈর্য হয়ে পড়ে আর হতাশায় ভেঙ্গে পড়ে। এমনকি আল্লাহর নির্দেশ না মেনে পাপ কাজে লিপ্ত হয় বা অসংযত আচরণ করে।  এখানে ‘জুজুয়া’(جَزُوۡعًا)শব্দটি ‘সবর’(صَبْر)এর বিপরীত। মূলতঃ এটি দ্বারা মানুষের মনের অসহনশীল প্রকৃতিকেই তুলে ধরা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে ধরা যাক- আমরা কোন পরীক্ষায় খারাপ করলাম কিংবা ব্যবসায় বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হলাম। এরপর সচরাচর আমরা যা করি তা হলো প্রথমেই মন খারাপ করে বসে বসে ভাবি আমি হয়তো শেষ। ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ আমাকে পরিত্যাগ করেছেন, তিনি আর আমার দুঃখ-দুর্দশা বা প্রয়োজনের দিকে খেয়াল করেন না।.. এমনকি মানুষকে এটাও বলতে শোনা যায়, ‘আমি যতই আল্লাহর আনুগত্য করি না কেন, জীবনে স্বস্তি তো আসেই না বরং তা আরও কঠিন থেকে কঠিনতর হয়। এসব আল্লাহর ইবাদাত করে আমার ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হচ্ছে না’। হতাশা কাটানোর জন্য তারা বিভিন্ন নিষিদ্ধ কার্যকলাপে আসক্ত হয়ে পড়ে, যেমন- মদ, ড্রাগ, অবৈধ মেলামেশা ইত্যাদি। …  মজার বিষয় হচ্ছে, আল্লাহ্‌ রাব্বুল আলামিন আমাদের এই স্বভাবগত অসহনশীল প্রবণতা সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত আছেন। তাই এই আয়াতে আমাদেরকে কোনো দোষারোপ করছেন না, বরং তিনি জানেনই যে মানুষ আসলেই মানসিকভাবে অত্যন্ত দুর্বল এবং তীব্র প্রতিক্রিয়াশীল; কঠিন পরিস্থিতিতে তারা ধৈর্য হারাবে এবং নিজেকে আত্মসংবরণ করতে না পেরে ভুল পথে পা বাড়াবে, পাপাচারে লিপ্ত হবে; তারা আসলেই অস্থির বা ‘জুজুয়া’(جَزُوۡعًا)। এর পরের আয়াতে আল্লাহ্‌ উল্লেখ করেছেন – وَاِذَا مَسَّهُ الۡخَيۡرُ مَنُوۡعًا ۙ‏ ” আবার যখন(সে)ঐশ্বর্যশালী হয় তখন কৃপণ হয়ে যায়।”(৭০:২১)  তার মানে, আল্লাহ্‌ তাআলা মানুষের উপর কোন রহমত দান করেন তখন তারা এতটাই কৃপণ আর ঈর্ষান্বিত হয়ে পড়ে যে, সবকিছু একাই...

আপনার পা কিনতে চাই, মূল্য কত ?

— নোমান আলী খান  আল্লাহ তায়ালা বলেন – لِيُوَفِّيَهُمْ أُجُورَهُمْ وَيَزِيدَهُم مِّن فَضْلِهِ ۚ إِنَّهُ غَفُورٌ شَكُورٌ – “যাতে তিনি তাদেরকে তাদের পূর্ণ প্রতিফল দান করেন এবং নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে আরো বাড়িয়ে দেন। নিশ্চয় তিনি অতি ক্ষমাশীল, মহাগুণগ্রাহী।” (৩৫:৩০)  আজ আমি আপনাদের সাথে আল কুরআনে বর্ণিত আল্লাহর একটি অনন্য এবং অসাধারণ নাম সম্পর্কে আলোচনা করবো। এই নামটি অনন্য কারণ আল্লাহ এই একই নাম তাঁর নিজের জন্য ব্যবহার করেছেন আবার বিশ্বাসীদেরকেও এমন হতে বলেছেন। আল্লাহ আমাদের সম্পর্কে বলেছেন – وَقَلِيلٌ مِّنْ عِبَادِيَ الشَّكُورُ – “এবং আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই শাকুর”। (৩৪:১৩)  ‘শাকুর’ অর্থ – চরম কৃতজ্ঞ এবং চরম গুণগ্রাহী।(appreciative)  আর কৃতজ্ঞ হওয়া এবং গুণগ্রাহী হওয়া দুটি ভিন্ন ভিন্ন জিনিস। কৃতজ্ঞ মানে কেউ যদি আপনার কোনো উপকার করে, তাহলে আপনি তাকে ‘থ্যাংক ইউ বা ধন্যবাদ’ বলেন এবং মনে মনে তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা অনুভব করেন। ‘গুণগ্রাহী’ মানে আপনি সবকিছুতে ইতিবাচকতা প্রত্যক্ষ করেন। সব পরিস্থিতিতেই আপনি ভালো কিছুর সন্ধান পেয়ে থাকেন। আপাতদৃষ্টিতে পরিস্থিতি খারাপ হলেও আপনি তাতে ভালো কিছু হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী থাকেন।  আমাদের রাসূলুল্লাহ (স) এর জীবনে অন্যতম দুর্বিষহ একটি ঘটনা ছিল ‘ইফকের ঘটনা’, যখন মদীনাতে তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে অপমানজনক অপবাদ রটনা করা হয়। আর এই মিথ্যা অপবাদ রটনার কাজ ত্রিশ দিন পর্যন্ত চলতে থাকে। ত্রিশ দিন পর আল্লাহ নাজিল করেন –  لَا تَحْسَبُوهُ شَرًّا لَّكُم ۖ بَلْ هُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ – “এটাকে তোমাদের জন্য ক্ষতিকর মনে করো না, বরং তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর।” (২৪:১১)  তো, এভাবে আল্লাহ আমাদের মনোভাব পরিবর্তন করেন এবং তিনি চান আমরা যেন শাকুর হই। যার অর্থ চরম গুণগ্রাহী হওয়া, চরম তারিফ করা, আল্লাহর তারিফ করার জন্য উপায় খোঁজা, কৃতজ্ঞ হওয়ার কারণ অনুসন্ধান করা। ‘শাকুর’ এর এই অর্থ আমাদের জন্য। আর আমাদের জন্য ব্যাপারটা উপলব্ধি করা সহজ।   কিন্তু...

একজন মানুষ কিভাবে তাওবা করবে?

খুব সংক্ষেপে বলছি।  এক নাম্বার: তাওবা করার ক্ষেত্রে আন্তরিক হওয়া। তাওবা হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য।  দুই নাম্বার: সত্যিকারের অনুশোচনা থাকতে হবে এবং নিজেকে অপরাধী মনে করতে হবে। এটা ছাড়া কোনো তাওবা নেই। তাওবা অন্তর থেকে আসতে হবে। আর অন্তরকে উপলব্ধি করতে হবে যে, আমি অন্যায় করেছি। আমি ভুল করেছি। আমার ঐ টাকাটা নেওয়া উচিত হয়নি। আমার অমুক কাজটি করা ঠিক হয়নি। আমার ঐটা খাওয়া বা পান করা উচিত হয়নি। যে কাজটি আমি করেছি তা করা উচিত হয়নি। অন্তরে খাঁটি অনুতাপ থাকতে হবে।  আমাদের রাসূল (স) বলেছেন – তাওবার মূল হল অনুশোচনা অনুভব করা। (আন-নাদামু তাওবা) অনুতাপ অনুভব করা তাওবার অপরিহার্য বৈশিষ্ট্য। তাহলে, দুই নাম্বার হল, অনুশোচনা অনুভব করা।  তিন নাম্বার: ইস্তেগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করা জিহ্বা দিয়ে। আপনি আল্লাহর কাছে এভাবে চাইবেন – ইয়া গাফ্ফার! ইয়া তাউয়াব! ইয়া রাহমান! আমাকে মাফ করে দিন। এরপর, তাওবা যথাযথ করতে হলে ….. এতক্ষণ যা বলেছি তা হল সর্বনিম্ন। আর তাওবাকে পূর্ণ করতে হলে….আর আল্লাহ আমাদের কাছে পূর্ণাঙ্গ তাওবা আশা করেন, তিনি বলেন – হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর, খাঁটি তাওবা। একটি যথাযথ তাওবা। আর তাওবাকে যথাযথ করতে হলে আমাদেরকে আরো দুইটি শর্ত এর সাথে যোগ করতে হবে।  যদি এই দুইটি শর্ত পূরণ করা না হয়, তাহলে তাওবা পরিপূর্ণ হবে না। এটা হয়তো সি গ্রেইড, এ গ্রেইড নয়। তাওবাটা পূর্ণাঙ্গ নয়।  শেষ দুইটি শর্ত একটি যথাযথ তাওবার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর তা হল, পাপটি ভবিষ্যতে আর না করার জন্য দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। কারণ, যে ব্যক্তি এটা জেনে তাওবা করে যে সে এই পাপটি আবার করবে, সে তাওবাকে পূর্ণ করলো না। এটি পরিপূর্ণ আন্তরিক তাওবা নয়। আমি বলছি না যে এটা মিথ্যা তাওবা। না, এটা অর্ধ-হৃদয়ের তাওবা। এটা খাঁটি তাওবা নয়। কোন...

নূরুন ‘আলা নূর

— উস্তাদ নোমান আলী খান  আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা বলেন –  اللَّهُ نُورُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ مَثَلُ نُورِهِ كَمِشْكَاةٍ فِيهَا مِصْبَاحٌ الْمِصْبَاحُ فِي زُجَاجَةٍ الزُّجَاجَةُ كَأَنَّهَا كَوْكَبٌ دُرِّيٌّ يُوقَدُ مِن شَجَرَةٍ مُّبَارَكَةٍ زَيْتُونِةٍ لَّا شَرْقِيَّةٍ وَلَا غَرْبِيَّةٍ يَكَادُ زَيْتُهَا يُضِيءُ وَلَوْ لَمْ تَمْسَسْهُ نَارٌ نُّورٌ عَلَى نُورٍ يَهْدِي اللَّهُ لِنُورِهِ مَن يَشَاء وَيَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ لِلنَّاسِ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ আল্লাহ হলেন সমস্ত আসমান ও যমীনের নূর (আলো)। তাঁর নূরের দৃষ্টান্ত হলো যেন একটি তাক – যার ভিতরে রয়েছে একটি প্রদীপ; প্রদীপটি রয়েছে একটি স্বচ্ছ কাঁচপাত্রের আবরণের ভিতরে; কাঁচটি (নিজেও) যেন একটি উজ্জ্বল তারকা, যা প্রজ্জ্বলিত করা হয় বরকতময় যায়তুন গাছ (থেকে নিসৃত তেল) দ্বারা; যা পূর্বমুখি নয়, আবার পশ্চিমমুখিও নয় (বরং উভয়দিক থেকেই আলোপ্রাপ্ত, সর্বদা প্রজ্জ্বলিত)। আগুন তাকে স্পর্শ না করলেও সেই তেল এতই বিশুদ্ধ স্বচ্ছ যে (তাতে আগুন না দিলেও) তা যেন নিজে নিজেই জ্বলে উঠার নিকটবর্তী। আলোর উপরে আলো। আল্লাহ যাকে ইচ্ছে করেন তার নূরের দিকে পথ দেখান। আল্লাহ মানুষের (বোঝানোর) জন্য (এসব) দৃষ্টান্ত পেশ করেন। আর আল্লাহ সর্ববিষয়ে সর্বজ্ঞ।  [সূরা নূরঃ ৩৫] আপনাদের অনেকেই এই আয়াতের সাথে পরিচিত। এর সাধারন অনুবাদ করা হয় “আল্লাহ হলেন আকাশ এবং পৃথিবীর জ্যোতি।” পরবর্তী কয়েক মিনিটে আমি এই আয়াতগুলো নিয়ে আপনাদের সাথে কথা বলতে চাই।  ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার আলোকে আমি বলতে পারি, আল্লাহর কিতাবকে গভীরতার বিভিন্ন ধাপে অধ্যয়ন করা যায়। আর আল্লাহর এই কিতাবের গভীরতার কোনো সীমা-পরিসীমা নেই। এর কোনো শেষ নেই। গত এক দশকের বেশি সময় ধরে এই কিতাব নিয়ে অধ্যয়ন করছি। এই অভিজ্ঞতার ফলে আমি একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, এমনকি একটি আয়াত নিয়ে অনেক অধ্যয়ন করার পরও আপনি কেবল আপনার সামর্থ অনুযায়ী অল্পই জ্ঞান লাভ করতে পারেন। তারপর যখন এই আয়াত নিয়ে এমন কারো ব্যাখ্যার সন্ধান পান...

মৌমাছির মত হও।

— নোমান আলী খান  আল্লাহ তায়ালা বলেন – وَأَوْحَىٰ رَبُّكَ إِلَى النَّحْلِ أَنِ اتَّخِذِي مِنَ الْجِبَالِ بُيُوتًا وَمِنَ الشَّجَرِ وَمِمَّا يَعْرِشُونَ – আর তোমার রব মৌমাছিকে আদেশ দিলেনঃ ‘তুমি পাহাড়ে ও গাছে এবং তারা যে গৃহ নির্মাণ করে তাতে নিবাস বানাও।’  ثُمَّ كُلِي مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ فَاسْلُكِي سُبُلَ رَبِّكِ ذُلُلًا ۚ يَخْرُجُ مِن بُطُونِهَا شَرَابٌ مُّخْتَلِفٌ أَلْوَانُهُ فِيهِ شِفَاءٌ لِّلنَّاسِ ۗ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَةً لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ – “অতঃপর প্রত্যেক ফল থেকে আহার কর, অতঃপর তোমার প্রতিপালকের (শিখানো) সহজ পদ্ধতি অনুসরণ কর। এর পেট থেকে রং-বেরং এর পানীয় বের হয়। এতে মানুষের জন্য আছে আরোগ্য। চিন্তাশীল মানুষের জন্য এতে অবশ্যই নিদর্শন আছে।” (16:68-70)   একজন মুসলিমের চিন্তাপদ্ধতি অন্য সবার চেয়ে ভিন্ন। এর কারণ হল আল্লাহর বই। এটা আমাদের চিন্তা ধারাকে রূপদান করে। বস্তুত, আজ আমি আলোচনা শুরু করতে চাই সূরা মূলকের একটি আয়াত দিয়ে। যেখানে বলা হয়েছে –  লোকেরা জাহান্নামে প্রবেশ করছে, আর প্রবেশ করা কালে তাদেরকে তাদের অপরাধ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হচ্ছে। তখন, তারা উত্তরে বলবে,  وَ قَالُوۡا لَوۡ کُنَّا نَسۡمَعُ اَوۡ نَعۡقِلُ مَا کُنَّا فِیۡۤ اَصۡحٰبِ السَّعِیۡرِ  – বিখ্যাত একটি আয়াত –  “এবং তারা বলবেঃ যদি আমরা শুনতাম…চলুন, এখানে একটু থামি। এখানে কী শুনার কথা বলা হচ্ছে? যদি কুরআন শুনতাম! যদি ইসলামের বার্তা শুনতাম! যদি উপদেশগুলো শুনতাম! এই অংশটি সবাই বুঝে। কিন্তু এরপর আয়াতে ‘ও না’কিলু’ বলা হয়নি, বলা হয়েছেঃ ‘আও না’কিলু’, লাও কুন্না নাস্মাউ’ আও না’কিলু। আর আরবিতে ‘আও’ অর্থঃ অথবা। যদি আমরা শুনতাম অথবা বিবেক-বুদ্ধি প্রয়োগ করতাম। অর্থাৎ, যদি শুনতাম অথবা অন্ততপক্ষে চিন্তাভাবনা করতাম।  কথাগুলো এভাবে উপস্থাপনের পেছনে শক্তিশালী উদ্দেশ্য রয়েছে। একদিকে, মুসলমানরা কিছু শুনলে সেখান থেকে শেখার চেষ্টা করবে। আমরা খুৎবা শুনি, রিমাইন্ডার শুনি, লেকচার শুনি, কিছু পড়লেও আমরা ঐখান থেকে শিখি। এগুলো থেকে আমরা...
(Visited 15,157 times, 4 visits today)