আয়াতের পরের অংশ যেন কি? আলহামদুলিল্লাহি … কি? রব্বিল আলামিন। আল্লাহর কতগুলো নাম আছে? কমপক্ষে ৯৯। আল্লাহ তাদের মধ্যে একটা বেছে নিলেন। প্রথমবারের মত আমাদেরকে তাঁর পরিচয় দেয়ার জন্য। তাঁর সকল গুণবাচক বর্ণনার মধ্য থেকে। খালিকিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ (আসমান ও জমিনের সৃষ্টিকর্তা)। তিনি এটা বাছাই করতে পারতেন। আল আজীজ (মহা সম্মানিত), আল হাকিম, তিনি এগুলোর যে কোনটাই বেছে নিতে পারতেন। তিনি একটা বেছে নিলেন। এখন যেহেতু তিনি তাঁর নাম (আল্লাহ) আপনাকে জানিয়ে দিয়েছেন, এটা হচ্ছে তাঁর সম্পর্কে প্রথম বিষয় যা আপনাদের জানা উচিৎ, তা হচ্ছে কি? রব্বিল আলামিন। এটাই আল্লাহ সম্পর্কে আপনার প্রথম জানা উচিৎ। তাই, এটা নিয়ে আমাদের কিছু সময় কাটানো উচিৎ। রব্ব শব্দটি বেশ জটিল। এর অনেকগুলো অর্থ রয়েছে। আরবরা বলেন এর মূল অর্থ হচ্ছে… আমি সবগুলোই ইংরেজীতে বলব। তখন সহজ হয়ে যাবে। প্রথমত, রব্ব হচ্ছেন যিনি কোন কিছুর মালিকানা অধিকার করেন। তিনি সবকিছুর মালিক। এটা হচ্ছে রাব এর প্রথম অর্থ, “মালিক”। কিন্তু তিনি যদি সকল কিছুর মালিক হয়ে থাকেন তাহলে আমরা কি হয়ে যাচ্ছি? তাহলে আমরা কি হচ্ছি? তাঁর অধিকৃত সম্পত্তি। তাই না? একজন অধিপতির/মালিকের কি থাকে? অধিকৃত সম্পত্তি। এর অর্থ দাঁড়ায় আমরা আল্লাহর অধিকৃত সম্পত্তি। এটাই প্রথম অর্থ। আল মালিক।
দ্বিতীয়ত, তিনি হচ্ছেন আল মুরাব্বি। মুরাব্বি মানে হচ্ছেন যিনি কোন বিষয়ের ক্রমবিকাশকে নিশ্চিত করেন। যিনি দেখভাল করেন কোন কিছুর, যাতে তা বিকশিত হয়। এটাকেই বলে মুরাব্বি। মুরাব্বি’র একটা ব্যাপার এমন হতে পারে যে, আপনার কিছু একটা আছে কিন্তু আপনি তার দেখভাল করেন না। এমনকি কখনো হয়? আপনার একটা গাড়ি আছে কিন্তু আপনি সেটার তেল পরিবর্তন করেন না। হয়? আপনার একটা কম্পিউটার আছে কিন্তু আপনি তাঁর ফাইলগুলো গুছিয়ে রাখেন না। আপনি অনেক কিছু ডাউনলোড করে রাখেন আর সাথে একটা ভাইরাসও চলে আসে। জিনিসটা আপনার কিন্তু আপনি তার দেখভাল করেন না। এটা সম্ভব। ধরুন আপনার বাড়ির পেছনে কিছু জায়গা আছে, কিন্তু আপনি তাতে কখনো বাগান করেন না। যত ধরণের উদ্ভট জিনিস তাতে জন্মাচ্ছে। অথবা ধরুণ আমাদের বাচ্চাকাচ্চাদের ঘর আছে, কিন্ত তারা এর কোন যত্ন করে না। তাই না? অর্থ্যাৎ আপনার মালিকানা আছে কিন্তু আপনি তার দেখভাল করছেন না। রব্ব হচ্ছেন এমন কেউ, যার মালিকানা আছে এবং তিনি কি করেন? যত্ন নেন। তিনি এর যত্ন-আত্নি করেন। তিনি নিশ্চিত করেন সবকিছু ভালোভাবে চলছে। এটাই মুরাব্বি।
ওয়ালমুন’ইম। والمنعم তৃতীয়টা হচ্ছে, আপনি কোন কিছুর মালিক, আপনি এর দেখাশোনা করেন এবং আপনি একে উপহার দিয়ে থাকেন। শুধু উদাহরণ দেয়ার জন্য বলছি… হ্যাঁ, অবশ্যই আমাদের সমাজে এখন আর সেই দাসপ্রথা নেই। কিন্তু যদি আপনার একজন কর্মচারী থাকে। কর্মচারী থাকা এক কথা। কর্মচারীর দেখাশোনা করা অন্যকথা। আরও পরের কথা হচ্ছে, সেই কর্মচারীকে কি দেয়া? উপহার। সুযোগ সুবিধা। তার যা প্রাপ্য তার পরে দিচ্ছেন। আপনি উপহার দিচ্ছেন। যদি আপনি আপনার কর্মচারীর জন্য এতটুকুই না করেন, আপনি তো আপনার দাসের সাথে এটা আরও করতেন না। ধরুন অনেকদিন আগের কোন এক লোকের কথা। আমাদের মধ্যে এখন আর দাসত্বের ধারনাটা নেই। কিন্তু আমাদের মালাকানাধীন পশুর কথা তো ধরতে পারি। ধরুন কারো একটা ছাগল আছে। আপনি নিশ্চয়ই আপনার ছাগলকে একটা টাই কিনে দেবেন না। আপনি এটাকে কোন উপহার দেন না। আপনি শুধু এর দেখা শোনা করেন এটাই যথেষ্ট। কিন্তু রব্ব হচ্ছেন তিনি, যিনি মালিক। যিনি মালিকানাধীন সম্পদের বৃদ্ধি নিশ্চিত করেন। যিনি উপহার প্রদান করে থাকেন। আপনার এবং আমার কাছে এটার মানে কি, আমি তা নিয়ে একটু পর বলছি।
ওয়াল কাইয়েম। والقيم এবং যিনি নিশ্চিত করেন তা যেন অক্ষত থাকে। তা নষ্ট না হয়ে যায়। কারণ যদি তিনি দেখা শোনা বন্ধ রাখেন তাহলে তা নষ্ট হয়ে যাবে। আপনারা কারা কারা বাগান করেন? সব মিলে, কেউ না? ঠিক আছে। সমস্যা নেই আমি এই ব্যাপারটা ধরে বসে থাকব না। মাঝেমধ্যে দেখবেন, বাগানে কিছু খুব স্পর্শকাতর গাছ থাকে। আপনি যদি একদিন তাদের যত্ন না নেন তা হলে তারা নষ্ট হয়ে যাবে। আপনারা অনেকেই মাছের যত্ন নেন। যদি একদিন না খাওয়ান, “ওহ!!!”। ঠিক আছে, ঠিক আছে। বেচারা! কেউ কি তার বাবা-মাকে খুঁজে দিতে পারেন? এখানে অনেক মানুষ। যদি আপনার বাচ্চা নীল টিশার্ট পরে থাকে এবং খুব চঞ্চল হয়, সে ওখানে। আমি যা বলছিলাম, “আসসাইঈদ আল-মালিক ওয়াল-মুরাব্বি, ওয়াল-মুনইম, ওয়াল-কাইয়েম” যিনি অস্তিত্ব রক্ষা করেন। আল্লাহ যদি আমাদের দেখাশোনা বন্ধ করেন, এক সেকেন্ডের জন্য, আধা সেকেন্ডের জন্যেও। সব কিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। আমার হাতে রক্ত সঞ্চালিত হচ্ছে। হৃদয়ের প্রতিটি অনুকম্পন চলছে কারণ আল্লাহ তা হতে দিচ্ছেন। আল্লাহ একে নির্দিষ্ট পরিমানে রেখেছেন। যদি তিনি এক সেকেন্ডের জন্য এর প্রতি লক্ষ্য না রাখেন, এটা শেষ যাবে সব শেষ হয়ে যাবে এটাই হচ্ছে কাইয়েম। এর মানে হচ্ছে আমরা সম্পূর্ণভাবেই নির্ভরশীল আল্লাহর উপর প্রতিনিয়ত নির্ভরশীল।
এবং সবশেষে, রবের শেষ অর্থটা হচ্ছে আস-সাঈয়্যেদ। এর অর্থ যার পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। যার পূর্ণ ক্ষমতা রয়েছে। এমনটা কি সম্ভব যে আপনি কোন কিছুর মালিক কিন্তু এর উপর আপনার পূর্ণ কর্তৃত্ব নেই? আপনার একটা গাড়ী আছে কিন্তু আপনি যেভাবে খুশি সেভাবেই গাড়িটা চালাতে পারবেন না। এটা কি সম্ভব? আপনার একটা বাড়ি বানাবেন, কিন্তু আপনি যেভাবে খুশি সেভাবেই সেটা বানাতে পারবেন না। আপনাকে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলতে হবে। সেটা কি সম্ভব? হ্যা। কিন্তু যখন কেউ কোন কিছুর মালিক এবং তার সেই বস্তুকে যা খুশি তাই করার ক্ষমতা আছে, তখন তাদেরকে বলা হয় রব্ব। তখন তাদেরকে বলা হয় রব্ব। আল্লাহ পরিচয় করিয়েছেন নিজেকে রব্ব শব্দ দিয়ে। রব্ব হচ্ছেন তিনি যিনি আপনার মালিক। তার মানে হচ্ছে আপনি কোন কিছুরই মালিক নন। রব্ব হচ্ছেন তিনি, যিনি নিশ্চিত করেন আপনার বৃদ্ধি। তিনি আপনার দেখাশোনা করেন। তিনি এমন না যে আপনার মালিক কিন্তু আপনার দেখাশোনা করেন না। রব্ব হচ্ছে তিনি, যিনি আপনাকে উপহারও দিবেন। যার মানে হচ্ছে, প্রথমত আমি কোন কিছুরই মালিকই নই। তার মানে হচ্ছে আমি যা কিছুরই মালিক, তার সবই উপহার, এটা এমন কিছু না যা আমি উপার্জন করেছি। আমি আমার হাতের জন্য টাকা দেই না। আপনি আপনার হাত বিক্রি করার জন্য কতটা আগ্রহী? একটা পায়ের জন্য? একটা নাকের জন্য? একটা চোখের জন্য? আপনি কত টাকা দিতে রাজি? সুবহানাল্লাহ। অমূল্য উপহার, তাই না? এসবই আমাদেরকে দেয়া উপহার। কে তাদের হৃদপিণ্ড বিক্রি করতে চাইবে? কে করতে চাইবে? সুবহান আল্লাহ। এগুলো অমূল্য উপহার। তার উপরে হচ্ছে, ওয়াল-মুনইম।
ওয়াল-কাইয়েম এবং তিনি আমার অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছেন। আমি বেঁচে আছি কারণ তিনি বাঁচিয়ে রেখেছেন। একটা নিঃশ্বাস থেকে আরেকটা নিঃশ্বাস – একারণে নয় যে আমি ভালো খাই। আমি ব্যায়াম করি, আমি নিজের দিকে খেয়াল রাখি। আমি স্বাস্থ্যকর পরিবেশে নিঃশ্বাস নেই, ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব আমার বেঁচে থাকার কারণ নয়। আমি বেঁচে আছি কারণ আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। অস্তিত্ব শেষ হওয়ার অনেক পথ আছে। আমি এমন লোকদের চিনতাম যারা আমার চেয়ে বয়সে ছোট। আমার চেয়ে ছোট আর, নিখুঁত স্বাস্থ্যের অধিকারী। নিয়মিত ব্যায়াম করত। আর, হঠাৎ করেই, বাচ্চাদের সকালের নাস্তা বানাতে গিয়ে পড়ে যায়। এবং হার্ট এটাক করে রান্না ঘরেই মারা যান। ২৯ বছর বয়স ছিল। আগে কখনোই হার্ট এট্যাক হয় নি। পরিবারের কারোরও ছিল না। কিছুই না। এটা আল্লাহর উপর নির্ভরশীল। আমরা এর থেকে স্বাধীন নই। এক মুহুর্ত থেকে অন্য মূহুর্ত, প্রতিটি মূহুর্তেই। মোট কথা, একটা উপলব্ধি যে, আমার হাতে আসলে কিছুই নেই পুরোপুরি কর্তৃত্ব হচ্ছে… আল্লাহর হাতে। সেসবই আসছে রব্ব শব্দটি থেকে। এসবই রব্ব শব্দ থেকেই আসছে। এখন, এই রব্ব শব্দ সম্পর্কে, আপনি জানেন, যখন আমি বলব “শিক্ষক”। তখন তার সাথে কার সম্পর্ক থাকবে? ছাত্রদের। যখন আমি বলব, বাবা-মা। কার সাথে সম্পর্কিত? বাচ্চাকাচ্চার সাথে। যখন আমি বলব, বস/ চাকুরিদাতা। চাকুরি দাতার সাথে কার সম্পর্ক? কর্মচারীদের সাথে। এমন কিছু শিরোনাম আছে যাদের একটা সম্পর্ক থাকবেই। যখন আপনি বলবেন বুদ্ধিমান। এর সাথে কারো সম্পর্ক থাকবে, এমন না। যখন আপনি বলবেন, “লম্বা”। তার মানে এই না যে এটা কারো সাথে সম্পর্কিত। কিন্তু যখন বলবেন, চাকুরি দাতা, তখন তা কার সাথে সম্পর্কিত? কর্মচারীদের সাথে। আল্লাহর কিছু নাম এমন রয়েছে যা কারো সাথে সম্পর্ক নির্দেশ করে না। আল্লাহ হচ্ছেন জ্ঞানী। জ্ঞানী কথাটা কারো সাথে সম্পর্ক নির্দেশ করে না। এটা আল্লাহ’র একটা বর্ণনা আর এটা কারো সাথে সম্পর্কিত নয়। কিন্তু যখন আল্লাহ নিজেকে বলেন, প্রভু, রব কিংবা এধরণের শব্দে। এগুলোর কি কোন সম্পর্ক তৈরী করা জরুরী? হ্যাঁ। আল্লাহ নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে এই বর্ণনাই প্রথম দিয়েছেন। আল্লাহর এই প্রথম বর্ণনাই একটা সম্পর্ক তৈরী করছে।
এখন আল্লাহর সাথে আমাদের অনেক সম্পর্ক। তিনি আমাদের সৃষ্টিকর্তা, আমরা তার সৃষ্টি। তাই না? তিনি আমাদের প্রদান করেন আর আমরা গ্রহীতা, তাই না? আল্লাহ হচ্ছেন শিক্ষক। আমরা তার ছাত্র, তাই না? আল্লাহর সাথে এগুলো সবই আমাদের সম্পর্ক। কিন্তু আল্লাহ বলেন, “এই সকল সম্পর্ক পরে, প্রথম যে সম্পর্কটা জানতে হবে যেই সম্পর্ককে আপনি কখনই ভুলে যাবেন না, যা সারাটা দিন প্রতিটা সময়ই মনে রাখতে হবে”– তা কি? তিনি হচ্ছেন রব্ব। আর আপনি আমি কি? আরবিতে আমাদের কি বলা হবে? আপনি জানেন শব্দটা? আবদ, দাস। তা আমাদের দাসে পরিণত করে। এখন, আমি রব শব্দটা ব্যাখ্যা করেছি। আমাদের বুঝতে হবে আব্দ শব্দটা, কারণ এটাই আমাদের সম্পর্ককে পূর্ণতা দিবে, তাই না? আমি আপনাদের আবদ সম্পর্কে অনেক কথা বলব না। শুধু একটা কথা বলব। কারণ আল্লাহ নিজের পরিচয়ের অংশটিতে বলেছেন, তিনি হচ্ছেন রব্ব। এখন যা বাকি থাকে তা হচ্ছে, আমাদের শেষ কি হবে? তো যখন আপনি ফাতিহাতে আরও সামনে যাবেন, আপনি কি খুঁজে পাবেন? ইয়্যাকা না’বুদু। আমরা হচ্ছি আবদ। আমরা ইতোমধ্যেই আপনার আবদ হয়ে গিয়েছি। আমরা আপনাকে রব্ব হিসেবে স্বীকার করে নিলাম। আমার শিক্ষক ড. আব্দুস সামী বলতেন, তিনি আমাকে প্রশ্ন করতেন। একবার আমরা আরবী পড়ছিলাম তার কাছে তিনি বললেন, “অই! আমাকে পুরো কুর’আনের সারমর্ম বল” আমি বললাম, “আমি বুঝতে পারছি না আপনি কি বোঝাতে চাচ্ছেন” তিনি বললেন, “আচ্ছা, আমাকে এমন একটা বাক্য বল যা পুরো কুর’আনের সারাংশ” আমি বললাম, “আচ্ছা আচ্ছা, এবার মনে হয় পারব। আল্লাহকে রব্ব হিসেবে মেনে নেয়া এবং নিজেদেরকে আবদ হিসেবে স্বীকার করা” এটাই। তিনি বললেন, “হ্যাঁ, তুমি পেরেছ। আমি তোমাকে কিছু শেখাতে পেরেছি” এটাই। এটাই সেই কথা। আল্লাহকে রব হিসেবে মেনে নাও। নিজেকে আবদ হিসেবে স্বীকার করে নাও।
এখন, দাস কথাটার মানে কি? দাস হচ্ছেন এমন, যার নিজের কোন পছন্দ থাকতে পারে না। শেষ কথা হচ্ছে, একজন দাস হচ্ছে, যে নিজে নিজের কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। তাদের জন্য সিদ্ধান্ত নিয়ে দেয়া হয়। একটা উদাহারন দেই। আমাদের তো এখন দাসপ্রথা নেই কিন্তু মনে করুন আছে। ভাবুন আপনাদের একজন আসলেন আর বললেন, “এই নো’মান, তুমি আমার গোলাম” আমি বললাম, “ঠিক আছে চল” তাহলে এখন থেকে তুমি আমার প্রভু আর আমি তোমার দাস। আর, আমি এখন এখানে ১০ মিনিট নিরবে বসে আছি। তো, আপনি কি চাচ্ছেন? কফি কিংবা অন্যকিছু? একজন দাসের ইচ্ছার স্বাধীনতা নেই। তাই, এখন দাস যা করতে পারে, তা হল তার প্রভু যা চায়। তাই, যতক্ষণ না তার প্রভু তাকে কিছু বলছে, তার কিছু করার নেই। যদি লোকটি শুধু বলত, “আমার দাস!” আর আমি বলতাম, “জ্বী, আচ্ছা” আর, তিনি আমাকে কিছুই বলছেন না। যদি তিনি আমাকে কিছু করতে না বলেন, তাহলে আমার জন্য যা বাকি থাকে, তা হচ্ছে নিজের ইচ্ছা মত কাজ করা। যতক্ষণ না তিনি আমাকে কিছু করতে বলছেন বুঝতে পারছেন? একজন দাস আর কর্মচারীর মধ্যে পার্থক্য কি? একজন কর্মচারী তো শুধু নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নিযুক্ত। তারপর তারা মুক্ত। কিন্তু, একজন দাস একজন দাস- কতক্ষন পর্যন্ত? যখন আপনি ঘুমান তখনও আপনি দাস। যখন সজাগ তখন আপনি দাস। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে আপনি একজন দাস। সপ্তাহের বাকি দিনগুলোতেও আপনি একজন দাস। সকালেও আপনি একজন দাস। রাতেও আপনি একজন দাস। মাসজিদেও আপনি দাস। মাসজিদের বাহিরেও আপনি দাস। এমন কোন সময় নেই যখন আপনি দাস নন, বুঝতে পারছেন? এবং দ্বিতীয়ত, আপনি তখনই কেবল দাস হতে পারবেন, যখন আপনি জানেন আপনার প্রভু আপনার কাছে কি চান। যদি আপনি না জানেন তিনি কি চান, আপনি তখন করতে শুরু করবেন যা আপনি চান। আর আপনি যদি আপনার ইচ্ছামত করা শুরু করেন, সংজ্ঞানুযায়ী আপনি মুক্ত। ঠিক না?
তাই, তখন আমি যা চাচ্ছি, তা হচ্ছে, দাসত্ব বলে কিছু নেই যতক্ষণ না প্রভু কিছু করতে বলেন। সবার কাছে পরিষ্কার ব্যাপারটা? দাসত্ব বলে কিছু নেই, যতক্ষণ না কি হয়? প্রভু নির্দেশনা না দেন। এখন, আল্লাহ নিজেকে প্রভু বলছেন। যার মানে আমি দাস। এটা আমাকে ভাবাচ্ছে যে, “আচ্ছা, তিনি যদি প্রভু হন, তবে আমার কি প্রয়োজন?” নির্দেশনা। ফাতিহাতে কোথাও কি আমি লক্ষ্য করেছি যে আমি নিজেকে দাস বলছি এবং তারপর আমি দিকনির্দেশনা চাচ্ছি? এমন কি হয়েছে? আমরা ফাতিহাতে এমন কি বলি, যার মাধ্যমে আমরা আমাদের করণীয় জানতে চাই? ইহদিনাস সিরতাল মুসতাকিম। আমাদের পথ দেখান। ঠিক আছে, আমাকে এখন বলুন আমি কি করব। আমি আপনার দাসত্ব মেনে নিয়েছি এখন আপনি আমাকে বলেন দিন আমার করণীয় কি। আমি কোন পথে হাঁটবো? আমাকে সঠিক পথ দেখান। প্রভু আর দাসের মধ্যে একটা যৌক্তিক সম্পর্ক রয়েছে। বুঝতে পারছেন? এজন্যই তো পুরো কুর’আনটা… কি চমৎকার! আপনারা অসংখ্য জায়গায় লক্ষ্য করবেন, আল্লাহ বলছেন রব এবং পথনির্দেশনার কথা। রব এবং পথনির্দেশনার কথা। সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ’লা। যদি আপনি সূরাটা পারেন, তবে বলুন আমার সাথে। سَبِّحِ اسْمَ رَبِّكَ الْأَعْلَى — الَّذِي خَلَقَ فَسَوَّىٰ وَالَّذِي قَدَّرَ فَهَدَىٰ প্রথম আয়াতটি ছিল রব্ব এরপর হাদা(পথনির্দেশনা)। عَسَىٰ أَن يَهْدِيَنِ رَبِّي لِأَقْرَبَ مِنْ هَٰذَا رَشَدًا (১৮;২৪) قَالَ كَلَّا ۖ إِنَّ مَعِيَ رَبِّي سَيَهْدِينِ (২৬;৬২) রব্ব এবং পথনির্দেশনা। রব্ব এবং পথনির্দেশনা। রব্ব এবং পথনির্দেশনা। কারণ, তারা একে অপরের সাথে সম্পর্কিত।
তো, প্রথম অংশে আল্লাহ নিজের পরিচয় দিয়েছেন। এবং পরবর্তী অংশে আমরা দেখবো যে, আল্লাহ আযযা ওয়া জাল আমাদের রব তখনই যখন আমরা উনার নির্দেশনা মেনে নেই। অন্যথায় আপনি হয়তো তাঁকে মেনে নিয়েছেন আপনার সৃষ্টিকর্তা হিসেবে, তাকে স্রষ্টা হিসেবে হয়তো মেনে নিয়েছেন। কিন্তু আপনি তাঁকে আপনার প্রভু হিসেবে মেনে নেন নি, যতক্ষণ না আপনি তাঁর পথনির্দেশনা মেনে নিচ্ছেন। এটাই হল ফাতিহার সেই যৌক্তিক সম্পর্ক। অনেকেই এই ব্যাপারটাকে ছোট করে দেখেন। অনেকে আবার দেখেনই না। অনেকে আবার ভেবে বসেন, “ওহ! আল্লাহ আমাকে বানিয়েছেন। আল্লাহ আমাকে সৃষ্টি করেছেন।” ভালো। কিন্তু প্রথমে আপনাকে এই বিষয়টি বুঝতে বলছেন না। তিনি আপনাকে বুঝতে বলছেন যে, তিনি আপনার ? রব্ব। তিনি আপনার প্রভু। এটা গেলো রবের ব্যাপারে।