সূরা ফাতিহা – ১ম – ৩য় পর্ব

(১ম পর্ব )

আপনাদের উপর শান্তি, রহমত ও বরকত বর্ষিত হোক আল্লাহ তায়ালার পক্ষ থেকে। সমস্ত প্রশংসা বিশ্বজগতের প্রতিপালক আল্লাহ তায়ালার এবং সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক সকল নবী ও রাসূলগনের উপর। এবং তাঁদের সঙ্গী সাথীদের উপর… প্রথমেই আমি ধন্যবাদ দিতে চাই এখানকার আয়োজকদের, বিশেষ করে মুইযকে, স্বেচ্ছাসেবী এবং পৃষ্ঠপোষকদের যারা এই অনুষ্ঠানটি আয়োজন করে আমার এবং আমার সাথীদের এখানে আসা সম্ভব করেছেন। এটা আমার অনেক দিনের স্বপ্ন যেন আমি পুরো পৃথিবীর মুসলিমদের সাথেই সাক্ষাৎ করতে পারি বিশেষ করে এই অঞ্চলের মুসলিমদের সাথে। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ এটা সম্ভব করেছেন। আমি শুরুতেই অনুরোধ করব দুয়া করতে আমার এই সফররত দলের জন্য এবং আমাদের ফেলে আসা পরিবারের জন্য। এই বিচ্ছেদকে আল্লাহ যেন তাদের জন্য সহজ করেন। এবং আল্লাহ (আজ্জা ওয়াজাল) যেন এই সফরে ও এই সম্মেলনে উপস্থিত সবাইকে বারাকাহ দান করেন। অবশ্যই আপনাদেরও, ইন শা আল্লাহ।

তো আজ রাতে আমি আপনাদের সাথে কথা বলতে যাচ্ছি সূরা ফাতিহা নিয়ে। এবং ভ্রমণের সময়েই বিষয়টা আমি পছন্দ করেছি । এবং আমি এর জন্য কৃতজ্ঞও বটে। কারণ আমাকে স্বাধীনতা দেয়া হয়েছিল আমার পছন্দের যে কোন বিষয়ে কথা বলার জন্য। আমি আজকের সন্ধ্যায় আপনাদের সাথে আলোচনার জন্য সূরা ফাতিহাকে পছন্দ করলাম। কেউ কেউ হয়ত অবাক হচ্ছেন, “সূরা ফাতিহা নিয়ে কথা বলার জন্য উনার কেন তিন ঘন্টা সময়ের প্রয়োজন?” শীঘ্রই এর উত্তর পেয়ে যাবেন। হয়তবা ততটা তাড়াতাড়িও না। আমি যেটা করতে যাচ্ছি তা হল, আপনাদেরকে সূরা ফাতিহা সম্পর্কে এমন কিছু বিষয় জানাবো, যা আপনাদের কুর’আনের কাছাকাছি আসতে এবং কুরআনের বাকি অংশকে নিয়ে একটু ভিন্নভাবে ভাবতে সাহায্য করবে বলে আশা করি। সম্ভবত আমি আর আপনি এর প্রতি যতটুকু মনোযোগ দিতাম, তার চেয়ে একটু বেশি মনোযোগ দিতে পারবো। এর সাথেই ইনশা আল্লাহ আমি শুরু করবো, আমি এখানে উপস্থিত সবাইকে একটা অনুরোধ করব। যখন আমি আপনাকে কোন প্রশ্ন করব, আপনাকে উত্তর দিতে হবে যত জোরে পারেন। তাছাড়া, আপনি জেগে আছেন তা আমি বুঝতে পারার এটাই একমাত্র উপায়। এছাড়া আমার জানার জন্য অন্য কোন উপায় নেই। তাই আমি যদি আপনাকে কোন প্রশ্ন করি, চেষ্টা করবেন যত জোরে সম্ভব উত্তরটা দেওয়ার জন্য। এখন যদি আপনি লাজুক হোন অথবা সমাজের এমন শ্রেনীর মানুষ হোন যেখানে জোরে কথা বলা আপনার সাথে যায় না, তাহলে আপনি এমন করতে পারেন…. এরকম.. এটাও চলবে, ওকে? কিন্তু আমি যদি দেখি আপনাদের কেউ আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বসে আছেন ঠিক এরকমভাবে মুখ বন্ধ করে… নাহ. তাহলে আমি আপনাকে অবশ্যই ডাক দিব। সুতরাং, অংশগ্রহণ করার জন্য যথাসম্ভব চেষ্টা করুন ইন শা আল্লাহ। আমাদের আজ রাতের সফরটা লম্বা। এবং আমি চাইনা কেউই ঘুমিয়ে পড়েন। অন্ততপক্ষে এখনই না। সুতরাং চলুন আমরা যথাসম্ভব জমে যাওয়ার চেষ্টা করি। আলহামদুলিল্লাহ।

আল কুরআনের সবচাইতে সুন্দর সূরা হল প্রথম সূরা। এটাই সর্বপ্রথম নাযিলকৃত পূর্নাঙ্গ সূরা। আপনাদের অনেকেই এটার সাথে পরিচিত যে, অনেকগুলো বর্ণনায় এসেছে, ‘اقْرَأْ بِاسْمِ رَبِّكَ الَّذِي خَلَقَ’ ছিল প্রথম ওহী। কিন্তু এটা ছিল একটা সূরার অংশবিশেষ। পুরো সূরা না। সুতরাং, ফাতিহা অনেকের মতেই রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে দেওয়া প্রথম পূর্নাঙ্গ সূরা। একটা ঐতিহাসিক মতপার্থক্য আছে, সূরা ফাতিহার প্রথম আয়াত কোনটি? কোন আলেমরা মনে করেন যে সূরা ফাতিহার প্রথম আয়াত হল بِسْمِ اللَّهِ الرَّحْمَٰنِ الرَّحِيمِ অন্য আলেমরা মনে করেন যে, সূরা ফাতিহার প্রথম আয়াত হল الْحَمْدُ لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ সুতরাং, এটা একটি মতপার্থক্য। আজ রাত্রে যেহেতু সময় সীমিত, আমি ঐ মতপার্থক্য সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করব না। তাছাড়া সময়ের কথা ভেবেই যদি আমি বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম দিয়ে শুরু করি, আমাদের সারা সন্ধ্যা শুধু বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম এর উপরেই চলে যাবে। তাই, আমি আপনাদের সাথে আলোচনা শুরু করতে চাই যেই মতটা ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে বেশি নির্ভরযোগ্য মনে হয়েছে। এবং সে মতটা হল ফাতিহা শুরু হয় আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আ’লামীন দিয়ে। যদিও আমি ভিন্নমতটাকেও শ্রদ্ধা করি । আমি মনে করি এর পক্ষে অনেক শক্ত দলিল আছে আল কুরআনের ভিতরে এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিসেও যে সূরা ফাতিহা শুরু হয় আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আ’লামিন দিয়ে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় একটা বিখ্যাত হাদিসে কুদসী। যদি আপনি কখনও কোন ক্লাসিকাল শায়েখদের থেকে আল কুরআনের ব্যাখ্যা পড়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন, তারা সূরা ফাতিহা ব্যাখ্যা করার সময় এই হাদিসটা বলবে। হাদিসটা খুবই বিখ্যাত। এখানে বলা আছে, আমি নামাজকে আমার এবং আমার বান্দার মাঝে দুই ভাগে ভাগ করেছি। তারপর এই হাদিসটি আমাদের সূরা ফাতিহার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত নিয়ে যায়। কিন্তু এখানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম দিয়ে শুরু হয়নি। ঐ হাদিস আমাদেরকে জানায়, “ইজ ক্বলাল আবদ, আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আ’লামিন”। এখানে শুরু হয়েছে, “যখন আমার বান্দা বলে আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আ’লামিন”। এবং তারপর হাদিসের বাকি অংশ বিবৃত হয়েছে। এ থেকে বুঝা যায়, অনেক স্পষ্ট ইঙ্গিত যে, ফাতিহা কি দিয়ে শুরু হয়েছে??? চলুন দেখি আপনারা জেগে আছেন কিনা, এটা কি দিয়ে শুরু হয়েছে? আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিল আ’লামিন, এবং আল্লাহ তায়ালাই ভাল জানেন। তো আমরা এটা দিয়েই শুরু করতে যাচ্ছি।

এখন সূরা ফাতিহার প্রথম শব্দটি মুসলিমরা সবসময় ব্যবহার করেন, সবসময়। ঐ শব্দটা কি? আলহামদুলিল্লাহ। আমরা এটা ব্যবহার করি আমাদের দৈনন্দিন কথাবার্তায়, একে অপরের সাথে সাক্ষাতের সময়। আপনি কাউকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনার কি অবস্থা? প্রথম যে কথাটা বেরিয়ে আসে, আলহামদুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ, তাই না? এমনকি আপনি কারও কথা থামিয়ে দেওয়ার জন্যও এটা ব্যবহার করেন, ঠিকাছে, আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ। তো আমরা এটা বিভিন্ন মজাদার ক্ষেত্রেও ব্যবহার করি। কিন্তু আপনি জানেন, এই প্রথম শব্দটির দিকে আমরা একটু বেশি মনোযোগ দিতে চাই। একটা ব্যাপার হল আমি এই ভাষার একজন ছাত্র। শুধুমাত্র আল্লাহ তায়ালা কি বলেছেন তা না বরং কিভাবে বলেছেন এবং আর কিভাবে এটা বলা যায়। তো আমাকে শুরু করতে দিন একটা ছোট অনুশীলনের মাধ্যমে এবং আমি আপনাদের থেকে একটু জোরে উত্তর আশা করছি। আপনারা এর আগে আলহামদুলিল্লাহ এর কি অনুবাদ পড়েছেন? বলার চেষ্টা করুন বলুন, বলুন।
-”সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।”
এছাড়া অন্য কিছু ?
-”ধন্যবাদ তোমাকে আল্লাহ।”
এটা খুবই মজার অনুবাদ। ধন্যবাদ তোমাকে আল্লাহ, এটা আমাকে আমার শ্বাশুড়ির কথা মনে করিয়ে দেয়। কারণ একসময় তিনি এত খুশি ছিলেন যে, তিনি বলে ফেললেন,”জাযাকাল্লাহ আল্লাহ।” অনেক অনুবাদ বলে, “সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য, ধন্যবাদ আল্লাহকে।” তাই না?। কিন্তু আজকে আমি কিছু দিয়ে শুরু করব।

‘হামদ’ শব্দের অর্থ আরবি ভাষায় ২টি জিনিস বুঝায়। এবং আমি চাই আপনারা সবাই এটা মনে রাখবেন। হামদ বুঝায় ২টি জিনিস, এর প্রথম মানে হল আস-সানা যার অর্থ প্রশংসা। দ্বিতীয়টি হল, এর মানে ধন্যবাদ। প্রশংসা এবং ধন্যবাদ। এগুলো দুটি ভিন্ন জিনিস। তারা একরকম নয়। প্রথম যে আলোচনা আমি আপনাদের সাথে করব তা হলো, প্রশংসা এবং ধন্যবাদের মাঝে পার্থক্য কোথায়? প্রথমত আমি চাই এটা আপনাদের এবং আমাকেও স্মরণ করাতে। আপনি রাস্তা দিয়ে হাঁটাছেন, এমন সময় আপনি খুবই সুন্দর একটি গাড়ি দেখলেন। আপনি তখন কি করেন? প্রশংসা করেন না ধন্যবাদ দেন? আশা করি, আপনি এটাকে ধন্যবাদ দেন না। যেমন আপনি গাড়িটির কাছে যেয়ে এর হুডের উপর হাত চাপড়িয়ে বলেন না তোমাকে ধন্যবাদ বি এম ডব্লিউ। আপনি সেটা করেন না। আপনি বলেন, চমৎকার গাড়ি। আপনি প্রশংসা করেন। প্রশংসা করাটা একটি ভিন্ন বিষয়। এখন উদাহরণস্বরূপ, আপনি এমন কারও বাসায় গেলেন যার মাত্রই বাচ্চা হয়েছে। যদিও আমার ব্যক্তিগত মতামত হল সদ্যজাত বাচ্চা দেখতে বয়স্ক লোকদের মত। কিন্তু আপনি যাবেন এবং সুন্দরভাবে বলবেন, খুব সুন্দর। ওহ খুব সুন্দর। যদিও তাকে দেখতে অদ্ভুত লাগে কিংবা ডাইনোসরের মত। আমি এটা বলতে পারি, আমার ৬টা বাচ্চা আছে। আমি এটা বলতে পারি। আমার এটা বলতে একটুও লজ্জা লাগে না। কিন্তু যাহোক, আপনি একটি পরিবারের কাছে যান এবং বলেন,”কি চমৎকার বাচ্চা!” আপনি এখন কি করলেন? আপনি কি প্রশংসা করলেন না ধন্যবাদ দিলেন? আপনি প্রশংসা করলেন। আপনি বাচ্চাটাকে ধন্যবাদ দেন না। আপনি এর প্রশংসা করেন বুঝতে পারছেন? আপনি যখন কোনো খেলা দেখেন এবং একজন ভাল খেলোয়াড় দেখেন, আপনি তার প্রশংসা করেন, “ওয়াও! অসাধারণ ছিল!” আপনি সেই খেলোয়ারকে ধন্যবাদ দেন না, আপনি তার প্রশংসা করেন। বুঝতে পারছেন?

কিন্তু ধন্যবাদ দেওয়া সম্পূর্ণ ভিন্ন। আপনি তখনই কাউকে ধন্যবাদ দেন যখন কেউ আপনার জন্য কিছু করে। যখন কেউ আপনার জন্য কিছু করে, সুতরাং যখন আপনি মনোমুগ্ধকর কিছু দেখেন, যখন আপনি সুন্দর কিছু দেখেন, যখন আপনি এমন কিছু দেখেন যা আপনাকে মুগ্ধ করে এবং কৌতুহলী করে, তখন আপনি এর প্রশংসা করেন। যখন কেউ আপনার উপকার করে, যখন কেউ আপনার জন্য ভাল কিছু করে আপনি তাকে ধন্যবাদ দেন তবে নেহাত প্রশংসা করেন না, যখন আপনি কারো প্রশংসা করেন তার মানে এই না যে আপনি তাকে ধন্যবাদও দেন, এটা পরিষ্কার তো? যখন আপনি কোন কিছুর প্রশংসা করেন এটা এমন না যে আপনি এটাকে ধন্যবাদ দেবেন কিন্তু এর বিপরীতটিও সত্য যখন আপনি কোন কিছুকে ধন্যবাদ দেন বা কাউকে ধন্যবাদ জানান, তার মানে এই না যে আপনি তার প্রশংসা করেন। এটা নিয়ে কিছুক্ষণ চিন্তা করা যাক। কিভাবে আপনি কাউকে ধন্যবাদ জানাবেন তার প্রশংসা না করে? আপনাদের আমি ক্বুরআন থেকে ২-১ টি উদাহরণ দিতে চাই, আপনারা জানেন, মুসা (আঃ) খুব অদ্ভুত পরিবারে বড় হয়েছেন কোথায় বড় হয়েছেন? তার ঠিকানা কি ছিল? বেশ বিখ্যাত ঠিকানা, তাই না? তো ফেরাউন তাকে সন্তান হিসেবে নিয়েছিল, দেখুন, ফেরাউওন-ই তাকে লালন-পালন করেছে, আর অনেক বছর পর মুসা (আঃ) যখন ফিরে এলেন, ফিরাউন মূলত বলেছিল, “কি করে!” “কোন সাহসে তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছ?” এবং তিনি তাকে বলেছিলেন, “أَلَمْ نُرَبِّكَ فِينَا وَلِيدًا وَلَبِثْتَ فِينَا مِنْ عُمُرِكَ سِنِينَ” “আমরা কি তোমাকে নবজাতক হিসেবে লালিত-পালিত করিনি? আমরা কি তোমাকে এখানে লালন-পালন করি নি?” “আমাদের মাঝে?” “তুমি কি তোমার জীবনের অনেকগুলো বছর এখানে কাটাও নি?, তুমি কি করে আমাদের সাথে এভাবে কথা বলছ?” সে কি বলেছিল? তুমি কি … না? তুমি কি … না? শূণ্যস্থানটি পূরণ করুন। না, উত্তর এটা না যে, “তোমার কি ঘুম পাচ্ছে না?” এটা উত্তর না। তুমি কি … না? তুমি কি কৃতজ্ঞ না? তুমি কি কৃতজ্ঞ নও? এবং মুসা (আঃ) উত্তরে বললেন -وَتِلْكَ نِعْمَةٌ تَمُنُّهَا عَلَيَّ ”সেটা তো ছিল আমার প্রতি আপনার একটা অনুগ্রহ।” ধন্যবাদ। এটা ছিল তাঁর ধন্যবাদ দেয়ার ধরণ। অন্যভাবে বললে, ফিরয়াউন কখনোই প্রশংসিত হবে না, এই লোক কখনোই প্রশংসিত হবে না। না কোন নাবী প্রশংসা করবেন, না করবে কোন মুসলিম। কিন্তু যখন সে কারো প্রতি অনুগ্রহ করবে, তখন সে কি প্রাপ্য? ধন্যবাদ।

প্রশংসা ছাড়াও ধন্যবাদ জানানো সম্ভব । কুর’আন মাতা পিতার অধিকারের কথা বলে। মাতা-পিতারা এটা জানেন কারণ তারা এটা নিয়ে সব সময় কথা বলেন। কুর’আন মাতা পিতার অধিকারের কথা বলে। আর, মাতা পিতার সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, কৃতজ্ঞ হও আমার প্রতি ও তোমার মাতা পিতার প্রতি। তোমার বাবা মা যদি তোমাকে শিরক করতে বাধ্য করে… শিরক তো খুবই খারাপ। আমার মনে হয়না এর থেকে খারাপ কিছু হতে পারে। তোমার বাবা মা যদি তোমাকে শিরক করতে বলে, তাদের কথা শুনবে না। কিন্তু আয়াতের শুরুতেই বলেছেন, তবুও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ হতে হবে। তাহলে তারা যদি শিরক করে, আপনি কি তার প্রশংসা করবেন? না, আপনি প্রশংসা করবেন না। কিন্তু যেহেতু তারা আপনার বাবা মা, আপনি কি করবেন? তবুও তাদের ধন্যবাদ দিবেন। ইব্রাহিম (আঃ) এর কথা ভাবুন, তিনি তার বাবার কাজটার প্রশংসা করতেন না। কিন্তু তবুও তিনি কৃতজ্ঞ ছিলেন, তাই না? তাই, আমি বলতে চাচ্ছি, আপনাদের সাথে আমার প্রথম কথা হবে আল হামদ নিয়ে। সুরা ফাতিহাতে হামদ মানে ২টি বিষয়, আপনারা কি সেগুলো বলতে পারেন? প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতা। এবং এ দুটাই কি একই নাকি ভিন্ন? ভিন্ন। আর আপনি চাইলে কৃতজ্ঞ না হয়েও প্রশংসা করতে পারেন। আবার প্রশংসা না করেও কৃতজ্ঞ হতে পারেন। এখন চলুন দেখি আল্লাহ আলহামদুলিল্লাহতে কি বলেছেন? আল্লাহ বলেছেন, প্রশংসা আল্লাহর জন্যই তিনি এটাও বলেছেন কৃতজ্ঞতাও আল্লাহর জন্যই। এবং তিনি যে কোন একটার কথা বলছেন না।…

(২য় পর্ব)

যদি আরবীতে বলে “আল মাদহুলিল্লাহ” এর অর্থ দাঁড়ায় প্রশংসা আল্লাহর জন্য। অনুবাদ ঠিকই হবে। কারণ মাদহ অর্থ শুধু প্রশংসা। যদি বলা হয় “আস শুকরুলিল্লাহ”। যদি এমন বলা হয়, তবে এর অর্থ এটা মানতে সমস্যা নেই। আল্লাহর জন্য কৃতজ্ঞতা। আল্লাহর জন্য কৃতজ্ঞতা। কিন্তু আল্লাহ বলেছেন “আলহামদুলিল্লাহ”। এর অর্থ একই সাথে দুটোই। তাহলে এটা (আলহামদুলিল্লাহ) ভালো কিভাবে? আসলে এটা ভালো কয়েকটা কারণে। প্রথমত, যখন আপনি কোন কিছুর প্রশংসা করেন, সেটা আসল নাও হতে পারে। ধরুন, আপনি খুব দ্রুত গাড়ি চালাচ্ছেন আর পুলিশ অফিসার আপনাকে থামালেন। তাকে দেখেই আপনি বললেন, চমৎকার হ্যাট, অফিসার। আজকে তো আপনাকে অসাধারণ লাগছে! আপনি তার প্রশংসা করছেন, কিন্তু আসলে করছেন না। আপনি আশা করছেন আপনাকে যেন টিকেট না ধরায়। এটাই তো, তাই না? অথবা তরুণদের মধ্যে হয়ত কেউ খুবই খারাপ রিপোর্ট কার্ড পেলে। তারপর বাড়িতে গেলে আর বললে, “আম্মা, রান্না তো আজ খুব মজার হয়েছে” অথচ, তিনি এখনো রান্নাই করেন নি। আপনি প্রশংসা করছেন কিন্তু সেটা খাঁটি না, প্রশংসা মিথ্যাও হতে পারে। রাজাদের জন্য মিথ্যা প্রশংসা করা হয়। মিথ্যা প্রশংসা হতে পারে বসদের জন্য, বিচারকদের জন্য, সবসময়-ই এগুলো করা হয়। অতিমাত্রায় প্রশংসা শুধুমাত্র কাউকে খুশি করার জন্য, কিন্তু এটা সত্যিকারের না, ঠিক না? ধরুন, আপনি কোন চাকরির ইন্টারভিউ দিতে গেলেন এবং খুবই ভয়ানক ইন্টার্ভিউ দিয়েছেন। আপনার দেয়া সবচেয়ে খারাপ ইন্টারভিউ ছিল। এমনকি তখনও আপনি বের হওয়ার সময় বলেন, “আপনার সাথে পরিচিত হয়ে ভাল লাগল” এটা (ইন্টারভিউ) ভাল না হলেও আপনি এ-কথা বলেন। এটা মিথ্যা প্রশংসা। বুঝতে পারছেন? অর্থাৎ, যখন “মাধ” শব্দটি ব্যবহার করা হয়, এটা মিথ্যাও হতে পারে। এটা মিথ্যাও হতে পারে, এটা আসলে আল্লাহর জন্য পুরোপুরি উপযুক্ত না।

আসুন “শুকর” নিয়ে ভাবা যাক। আল্লাহ বলেছেন,“আস-শুকরুলিল্লাহ” মানে সকল কৃতজ্ঞতা আল্লাহরই জন্য। কৃতজ্ঞতা আল্লাহরই জন্য। আপনি জানেন কি? আপনি কৃতজ্ঞতা তখনই স্বীকার করেন যখন আপনি উপকার স্বীকার করেন। আপনার জন্য কিছু করা হয়েছিল। এবং আপনি বুঝতে পেরেছেন যে এটা আপনার জন্যই করা হয়েছিল। এবং শেষ পর্যন্ত আপনি কৃতজ্ঞতা জানান। আপনার (গাড়ির) চাকা পাংচার হয়ে গেছে। কেউ এসে আপনাকে সাহায্য করল। আপনি বলবেন, “ধন্যবাদ”। যদি আপনার (গাড়ির) চাকা পাংচার থাকে এবং আপনি বুঝতেই পারলেন না যে কেউ আপনাকে সাহায্য করছে। আপনি গাড়িতে ঘুমিয়ে আছেন, বা অন্যকিছু, বুঝলেন? আপনি কাউকে ধন্যবাদ জানাবেন না। আপনি তখনই ধন্যবাদ দেবেন যখন আপনি বুঝবেন যে কেউ আপনাকে সাহায্য করছে। অন্যভাবে বললে, ধন্যবাদ একটি প্রতিক্রিয়া। বিষয়টি আপনাদের কাছে পরিষ্কার? ধন্যবাদ সবসময় কি? প্রতিক্রিয়া। আপনি কখনোই ধন্যবাদ দিয়ে শুরু করবেন না। কখনোই না। আপনি হয়ত হাঁটছেন এবং কারো সাথে দেখা হলেই (বলবেন না), “এই যে ধন্যবাদ, ধন্যবাদ, ধন্যবাদ”। আপনি এটা করবেন না। এটা অদ্ভুত। আল্লাহ (আজ্জা ওয়াজাল) “হামদ” শব্দটি ব্যবহার করেছেন, যা একইসাথে প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতা বোঝায়। এবং হ্যাঁ, আরবি ভাষায় “হামদ”, আরবি শব্দ হিসেবে, এটা শুধু অকৃত্রিমই হতে পারে। এটা তৈরি করা যায় না। এটা কৃত্রিম হয় না। এবং এটা কোন প্রতিক্রিয়া না। এটা প্রতিক্রিয়া না। এটা আল-মাদহুলিল্লাহ বলার চেয়েও বেশী শক্তিশালী। এটা আস-শুকরুলিল্লাহ বলার চেয়েও বেশী শক্তিশালী। এটা এই দুইয়ের চেয়ে আরও ব্যাপক। আল্লাহ এমনকিছু বেছে নিয়েছেন যা একত্রে এই দুইয়ের চেয়েও ভাল। সুবহানাল্লাহ।

সবশেষে, ইংরেজিতে আমার কতগুলো শব্দ ব্যবহার করতে হবে “হামদ” বুঝাতে? এই পর্যন্ত কতগুলো শব্দ ব্যবহার করতে হবে? দুইটি। কিন্তু আল্লাহ কয়টি ব্যবহার করেছেন? একটি। এখানে আপনি ক্বুরআন এবং এর অনুবাদ করার একটি জটিলতা সম্পর্কে শিখলেন। কখনো কখনো আল্লাহ একটি শব্দ ব্যবহার করেছেন, কিন্তু এর সম্পূর্ণ ধারণা পেতে হলে আপনার অনেকগুলো শব্দ লাগবে, সত্যি নয় কি? কিন্তু কি হত যদি আল্লাহই দুটি শব্দ ব্যবহার করতেন? কি হত যদি আল্লাহ বলতেন, “আল মাদহু ওয়া শুকরুলিল্লাহ”? যদি আল্লাহ নিজেই দুইটি শব্দ ব্যবহার করতেন, “প্রসংশা এবং কৃতজ্ঞতা আল্লাহর জন্য” যদি তিনি উভয় শব্দই ব্যবহার করতেন এটা কি একই রকম হত? আসলে হত না। আরবি ভাষার খুব সুন্দর একটি নীতির জন্য এটা একই রকম হত না। সত্যি বলতে, এটা আসলে সকল ভাষারই একটি মূলনীতি। আরবিতে একটি প্রবাদ আছে, “খাইরুল কালামি মা কাল্লা ওয়া দাল্লা”। যার অর্থ হল, “সবচেয়ে ভাল কথা সেটাই যেটা অল্প শব্দে সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশ করে”। অল্প শব্দ ব্যবহার করে সম্পূর্ণ ভাব প্রকাশ করে। এটাই সবচেয়ে ভাল কথা। এখন আপনাদের কারো কারো মা শা আল্লাহ এমন কিছু বন্ধু আছে যাদের আপনার সাথে ৩০ মিনিট অবধি কথা বলল, কিন্তু আসল কথাটাই এখনও গুছাতে পারল না। তারা অনেক কথা বলেও যেন কিছুই বলে না। আপনি তখনও আশায় থাকেন তারা হয়ত আসল কথাটা বলবে। তাই না? অনেকেই সাধারণ বিষয় বর্ণনা করতে অনেক বেশী শব্দ ব্যবহার কর। “যেমন আমি আজ এমন এক স্থাপত্যশৈলী দিয়ে যাচ্ছিলাম যেটা একের পর এক পদক্ষেপ ব্যবহার করে এক তলা থেকে অন্য তলায় যেতে” আপনি শুধুমাত্র সিঁড়িই ব্যবহার করেছেন। শুধু বলুন যে আপনি সিঁড়ি ব্যবহার করেছেন। আপনার অপ্রয়োজনীয় বর্ণনা দিতে হবে না। সংক্ষিপ্ত কথাই সবচেয়ে ভাল কথা। সেটা অল্প, বলাও সহজ। সুতরাং “আল-হামদ” বলা “আল-মাদহু ওয়া আস-শুকরু লিল্লাহ” বলার চেয়ে ভাল।

কিন্তু এখানে আরো একটি পার্থক্য রয়েছে। আরো একটি পার্থক্য রয়েছে। আর সেটা হল, পুরানো আরবিতে, যখন আপনি দুইটি জিনিসের মধ্যে “এবং” ব্যবহার করেন (আসলে) “এবং” শব্দটি খুব সাধারণ, যা আমরা সবসময়ই ব্যবহার করি। কিন্তু যখন আপনি “এবং”…। যখন আপনি “এবং” শব্দটি আরবিতে ব্যবহার করেন, “এবং” এর আরবি প্রতিশব্দ কি, কেউ জানেন? “ওয়া”। এটা দুটি জিনিসকে আলাদা করে এমনকি অর্থের দিক দিয়েও। আপনি কি তার মানে জানেন? যদি বলেন “আল-মাদহু ওয়া আস-শুকরু লিল্লাহ”। আপনি (আসলে) বলছেন, “আল্লাহর প্রশংসা কিছু জিনিসের জন্য এবং কৃতজ্ঞতা অন্য কিছু জিনিসের জন্য” এটা সবসময় একত্রিত হয় না। কারণ শব্দগুলো একত্রিত না। যেহেতু আপনি তাদের আলাদ করেছেন, কখনো আপনি আল্লাহর প্রশংসা করছেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ না করে, আবার কখনো আপনি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছেন তাঁর প্রশংসা না করে। কিন্তু যখন আপনি “আলহামদুলিল্লাহ” বলেন, যে কারণেই “আলহামদুল্লাহ” বলেন না কেন, বাস্তবতা কি? আপনি আল্লাহর প্রশংসা এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ একই সময়ে করছেন, আপনার যেকোনো একটি বেছে নিতে হবে না। এখন, উদাহরণস্বরূপ, আপনি একটি সুন্দর গাড়ির পাশে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছেন, এবং আপনি এই সুন্দর গাড়িটির দিকে তাকান এবং বলেন, “আলহামদুলিল্লাহ” আপনি কি করলেন? আপনি আল্লাহর প্রশংসা করলেন, মানুষকে এই ক্ষমতা দেয়ার জন্য, নকশা করার জন্য। এটা তৈরি করার (ক্ষমতা দেয়ার) জন্য। এবং আপনি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন এর ভেতরে বসে থাকার সুযোগ দেয়ার জন্য অথচ এর মালিক হয়ত জানেন না। আপনি একই সাথে প্রশংসা করছেন এবং ধন্যবাদ দিচ্ছেন। আপনি এমনটাই করছেন।

এটাই প্রকাশ করে একজন মুসলিমের আচরণ কেমন… তো, ধরুন কেউ আপনার সাথে কথা বলতে আসল। দিনটা আপনার খারাপ যাচ্ছিল “কেমন চলে?” “ওহ! আলহামদুলিল্লাহ” আপনি কিন্তু আসলেই আল্লাহর প্রশংসা করছেন না। আলহামদুলিল্লাহ শুধু বলার জিনিস না। এটা একটা আচরণগত ব্যাপারও। এটা আপনার মনোভাবের সাথেও সম্পর্কযুক্ত। মুখ দিয়ে কি আসল সেটা আল্লাহর কাছে মুখ্য নয়। আল্লাহর কাছে মূল্যবান হচ্ছে যে কথা অন্তর থেকে আসে। তাই, যখন আমরা আলহামদুলিল্লাহ বলি, তখন যেন মন থেকেই বলি। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আপনি জ্যামে আটকে থেকেও বলছেন আলহামদুলিল্লাহ । এমনটা ভাবাও একটু কঠিনই বটে, তাই না? কারণ আমি জানি আপনারা প্রায়ই জ্যামে পড়েন। তাই, যখন আপনি জ্যামে বসেও আলহামদুলিল্লাহ বলেন, তার মানে আপনি কি বলছেন? হে আল্লাহ! এটা দেখতে হয়ত খারাপ মনে হচ্ছে, আমি নিশ্চিত এর পেছনে একটা কারণ অবশ্যই আছে এবং আছে আমার জন্য ভালো কিছু এবং আমি আপনাকে এর জন্য ধন্যবাদ জানাই। এবং আপনার প্রশংসা করছি কারণ আমি নিরাপদে আছি। আমি খুশি কারণ আমার একটা গাড়ি আছে। যা নিয়ে জ্যামে আটকে থাকতে পারি। কিন্তু কমপক্ষে একটা গাড়ি তো আছে। এজন্য যে, আমার একটা চাকরি আছে। আপনি ইতিবাচক চিন্তা করতে শুরু করছেন। আলহামদুলিল্লাহ যা করে তা হল, একজন মুসলিমকে ইতিবাচকভাবে ভাবতে বাধ্য করে। আলহামদুলিল্লাহ সম্পর্কে প্রথমত এটাই বলতে চেয়েছিলাম। সময়ের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। মাগরিবের আগে আর ৫ মিনিট সময় আছে। তো, চলুন আরও কিছু ব্যাপার নিয়ে কথা বলি।

(৩য় পর্ব)

দ্বিতীয়ত আলহামদুলিল্লাহ সম্পর্কিত যা বলতে চাই, এখনও আলহামদুলিল্লাহ’তেই আছি। আরবীতে আপনি বিশেষ্যপদও ব্যবহার করতে পারেন, আবার ক্রিয়াপদও ব্যবহার করতে পারেন। আর এখন মনে হচ্ছে ব্যাকরণের জ্ঞান দিচ্ছি। কিন্তু আশা করি আপনারা ইংরেজি ব্যাকরণে আমাদের আমেরিকানদের তুলনায় অনেক ভালো। যখন “ইংলিশ গ্রামার” শব্দটা বলি, তখন আমেরিকানরা হতাশ হয়ে যান। আস্তাগফিরুল্লাহ, উনি কি বলছেন এসব? আমার দিকে তাকাবেন না। কিন্তু, আমি আশা করি এখানকার ইংরেজি শিক্ষার অবস্থা বেশ ভালো। বিশেষ্য এবং ক্রিয়াপদ। এখন, কোনটার কাল(Tense) আছে? যেমন অতীতকাল, বর্তমানকাল, ভবিষ্যৎকাল । কোনটার কাল আছে? ক্রিয়ার কাল আছে। বিশেষ্যপদের কাল নেই । অতীত বিশেষ্যপদ বলতে কিছু নেই, কিংবা বর্তমান বিশেষ্য পদ , অথবা ভবিষ্যৎ বিশেষ্যপদ্‌ । সবার কাছে ব্যাপারটা পরিষ্কার? ঠিক আছে? তো এখন, যদি আমি বলি, “আমি আল্লাহর প্রশংসা করি”। এবং এর মানে বুঝিয়েছি প্রশংসা ও ধন্যবাদ কারণ আমি আগেই বলে এসেছি, আমি এখন সংক্ষেপে বলছি। যখন আমি বলি, “আমি আল্লাহর প্রশংসা করি” আমি কি বিশেষ্যপদ ব্যবহার করলাম, নাকি ক্রিয়াপদ? এখানেই প্রশ্ন। হায় আল্লাহ, PHD level এর প্রশ্ন। হা? এটা ক্রিয়াপদ, তাই না? আমি যদি বলি, “আমরা আল্লাহর প্রশংসা করি” এটা কি বিশেষ্যপদ, নাকি ক্রিয়াপদ? ক্রিয়াপদ। কোন কাল? অতীত না বর্তমান? বর্তমান কাল, ঠিক না? আচ্ছা।

যখন আমি বলব, “প্রশংসা আল্লাহর জন্য”। এখনে “প্রশংসা” কি বিশেষ্য নাকি ক্রিয়া? সবার কাছে ব্যাপারটা পরিষ্কার? এখানে “প্রশংসা” বিশেষ্যপদ। আল্লাহ তো ক্রিয়াপদও ব্যবহার করতে পারতেন। মানে, আরবীতে আপনি বলতে পারতেন, “আহমাদুল্লাহ, আমি আল্লাহর প্রশংসা করলাম” নাহমাদুল্লাহ, খুতবাতে যেমন শোনেন আলহামদুলিল্লাহ, নাহমাদুহু ওয়া নাসতাইনুহু আগে কি শুনেছিলেন? (খুতবায়) ঘুমিয়ে পড়ার ঠিক আগে? ঠিক? তো, আপনারা শুনেছেন নাহমাদুহু ওয়া নাসতাইনুহু। তো, এটা একটা ক্রিয়াপদ। ওহ! ১০ মিনিট বাকি? চমৎকার। তো, নাহমাদুহু, আমরা আল্লাহর প্রশংসা করলাম। আহমাদুহু, আমি আল্লাহর প্রশংসা করলাম। কিন্তু, আল্লাহ (আলহামদুলিল্লাহ’তে) বলেননি “আমি নাকি আমরা” তিনি বর্তমান কাল ব্যবহার করেন নি, তিনি ব্যবহার করলেন একটা বিশেষ্য। এখন, মূল যে কথাটা বলেছিলাম, বিশেষ্যের কোন কাল হয় না। এর কোন অতীত, বর্তমান বা ভবিষ্যৎ নেই। কিন্তু ক্রিয়াপদের কি আছে? এদের কাল আছে। এদের আছে বর্তমানকাল, অতীতকাল, ভবিষ্যৎকাল। এখন ব্যাপারটা হচ্ছে, এটাই পুরো বিষয়টাকে সৌন্দর্যময় করেছে। যদি বলি, “আমি আল্লাহর প্রশংসা করলাম” তখন আমি শুধু বর্তমানকালের কথা বলছি। অতীত সম্পর্কে কিছুই বলছি না এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কেও কিছু বলছি না। যদি আমি অতীতকাল ব্যবহার করি, আমি এখানে বর্তমান বা ভবিষ্যতের কোন ব্যাপারের নিশ্চয়তা দিচ্ছি না। কারণ, কাল (Tense) যেকোন একটি সময়কালকে বুঝাবে। যে কোন একটি সময়কালকে বুঝাবে।

আরেকটা কথা, আমি এখন আল্লাহর প্রশংসা করার মানে কি সামনের সময়টাতেও আল্লাহর প্রশংসা করছি? নাকি না? না, আমার এই প্রশংসা ক্ষণিকের। তাই না? এটা স্থায়ী না। একটা ক্রিয়াপদ অনন্তকাল বোঝাতে পারে না। আল্লাহ ব্যবহার করলেন বিশেষ্য আর বিশেষ্য হচ্ছে? স্থায়ী। আল্লাহর প্রশংসা স্থায়িত্বের দ্বারা বর্ণিত হয়েছে। জানেন, এর মানে কি দাঁড়ায়? মানে দাঁড়ায়, আমি হয়ত এখন আল্লাহর প্রশংসা করছি, কিন্তু আল্লাহর প্রশংসা সর্বদাই বিদ্যমান। এবং আমি চিরকাল থাকব না, কিন্তু আল্লাহর প্রশংসা চিরকালই থাকবে। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা চিরকালই থাকবে আমার জন্য এটা থেমে থাকবে না। আলহামদুলিল্লাহ’র বাস্তবতা হল, এটা আমার উপর নির্ভরশীল না। এবং এটাই বিশেষ্য আর ক্রিয়ার আলোচনার দ্বিতীয় অংশ। মনোযোগ দিন, আশা করি বিষয়টা বোঝাতে পারবো।

যখন ক্রিয়াপদ ব্যবহার করেন, তার মানে ক্রিয়া (কাজটা) করার জন্য কাউকে লাগবে। এটাই হচ্ছে কর্তা। এটাকেই আরবিতে বলে ফা’য়েল । ক্রিয়ার জন্য কর্তা লাগে। হঠাৎ করে কথার মাঝে আপনি বলে উঠতে পারবেন না, “পরীক্ষায় ফেল করেছে” কে পরীক্ষায় ফেল করলো? আপনি বলতে পারেন না, “গায়েব হয়ে গেছে” কে গায়েব হয়ে গেল? ও! আমার কলম। আমার কলম গায়েব হয়ে গেছে । দেখলেন? যখন ক্রিয়া ব্যবহার করবেন তখনই তা করার জন্য কাউকে লাগবে। আপনার একটা কর্তা দরকার শুধু একটা ক্রিয়া দিয়ে চলবে না এর কোন অর্থ দাঁড়ায় না। বরং, তা গোলমাল পাকাবে । কিন্তু, বিশেষ্যে করার জন্য কাউকে লাগে না। বিশেষ্যের কোন কর্তা লাগে না। বিশেষ্য নিজেই স্বাধীন। একটা আপেল একটা আপেলই। আপনাকে বলতে হবে না সেটা কে খেয়েছে এমন করার প্রয়োজন নেই, এটা একাই যথেষ্ট। যখন আল্লাহ আল হামদ কথাটা ব্যবহার করলেন, তিনি এটাকে স্বাধীন করে দিলেন। এর কাউকে দরকার নেই। যদি তিনি ক্রিয়া ব্যবহার করতেন? তখন এর কাউকে দরকার ছিল। তাই না? দরকার ছিল এমন কাউকে যে প্রশংসা করবে। হয় আমি অথবা আপনি কিংবা আমরা । কিন্তু আল্লাহ ব্যাপারটাকে কোন ব্যক্তি কিংবা স্বত্বার নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত রাখলেন। এটা সবাই বা সবকিছু আল্লাহর প্রশংসা করার চেয়েও অনেক শক্তিশালী। কারণ, যদি সবার বা সবকিছুর কথা বলাও থাকতো, তবুও তা বোঝাতো বর্তমানে যারা বা যা কিছু আছে তাদের। কিন্তু আল্লাহ বিষয়টাকে সময় দিয়ে বেঁধে রাখলেন না। যারা প্রশংসা করে/করবে তাদের দিয়েও না। সুবহানাল্লাহ! আল্লাহ আমার আলহামদুলিল্লাহ বলার মুখাপেক্ষী নন। যখন আমরা আলহামদুলিল্লাহ বলি, আমি আল্লাহকে স্বীকৃতি দেই যে, আল্লাহর আমাদের দরকার নাই, বরং আমাদের দরকার আল্লাহকে। শুধুমাত্র আলহামদুলিল্লাহ শব্দের মাধ্যমে আমরা এর সাক্ষ্য দিচ্ছি।

তো, আমি এতক্ষণ আপনাদের কি বললাম? যখন আমরা আলহামদুলিল্লাহ বলি, তা আমাদেরকে আশাবাদী করে তোলে। এই বিষয়টাই আমি আপনাদের প্রথমে জানিয়েছিলাম। যখন আমরা “আলহামদুলিল্লাহ্‌” বলি, তা আমাদের বিনয়ী করে তোলে। এটা আমাদের বুঝায় যে কোনকিছুই আমাদের উপর নির্ভর করে না বরং, আমরা আল্লাহর উপর নির্ভর করি। আল্লাহ আমাদের উপর নির্ভরশীল নন এবং আমাদেরকে তাঁর প্রয়োজন-ও নেই। “আলহামদুলিল্লাহ” বলে আমরা তাঁর কোন উপকার করছি না। “আলহামদুলিল্লাহ” বলে আমরা শুধুমাত্র আমাদেরই উপকার করছি।

আর একটু বাকী আছে, আমার মনে হয় আমি শেষ করতে পারব। “আদেশ” এক ধরনের ক্রিয়া পদ একটি বিশেষ ধরনে ক্রিয়াপদ হল “আদেশ”। যেমন, আরবিতে আপনি বলতে পারেন, “ইহমাদুল্লাহ” “আল্লাহর প্রশংসা করুন”। “আল্লাহর প্রশংসা করুন” এটা অনুরোধ-ও হতে পারে। যেমন, “চলুন মাগরিব পড়ে আসি”। অথবা আপনি আপনার সন্তানকে বলতে পারেন, “আমার জন্য পানি নিয়ে এসো” তাই না? সুতরাং উদাহরণস্বরূপ, যখন আমি বাসায় থাকি এবং আমার মেয়েকে বলি, “হুসনা, আমাকে পানি এনে দাও”। সে দু’টি কাজ করতে পারে, যখন আপনি কাউকে কোন আদেশ করেন, তার কাছে দুইটি উপায় থাকে তাই না? উপায় দুইটি কি? হয়ত সে এটি করবে অথবা করবে না। যদি আমি হুসনাকে বলি, “ আমাকে পানি এনে দাও” সে দুইটি কাজ করতে পারে, হয়ত সে আমাকে পানি এনে দেবে, অথবা সে আমাকে পানি এনে দেবে। ওর এই দুইটি উপায়-ই আছে। যদি আল্লাহ কাউকে বলেন, যদি আল্লাহও বলেন, “আল্লাহর প্রশংসা কর” কোন দুটি জিনিস হতে পারে? কেউ প্রশংসা করবে, কেউ করবে না। কাজেই, যখন আপনি কাউকে কিছু করতে বলবেন, বল এখন তাদের কোর্টে (সিদ্ধান্ত তাদের)। এটা তাদের উপর নির্ভর করে হয়ত তারা এটি করবে, অথবা করবে না। আল্লাহ এমনভাবে “প্রশংসা” করার ব্যাপারটি এমন করে বলেননি যে, তা আমাদের ইচ্ছার উপর নির্ভর করে। তিনি আমাদের কোর্টে বল(উপর সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার) ছেড়ে দেননি। “ইচ্ছা হলে করবে না হলে করবে না, কি বা আসে যায়!” এটা(আল্লাহর প্রশংসা) ছিলই। “আলহামদুলিল্লাহ এখনও আছে সবসময়-ই থাকবে, এটা চিরকাল-ই থেকে যাবে। মানুষ আসবে যাবে প্রজন্ম আসবে যাবে, পৃথিবীর পরিবর্তন হবে, আল্লাহর প্রশংসা অপরিবর্তিতই থাকবে এটাই বাস্তবতা । আমার মনে হয় এই দুই মিনিটেই শেষ করতে পারব। এখানে যতটুকু সম্ভব সংক্ষেপ করব। আশা করছি “আলহামদুলিল্লাহ” নিয়ে আলোচনা শেষ করতে পারব, অন্তত শেষের কাছাকাছি যেতে পারব। অন্তত শুধুমাত্র “আল-হামদ” আমরা এখনো “লিল্লাহ” নিয়ে আলোচনা করিনি। শুধু “আল-হামদ” নিয়েই বলেছি। “লিল্লাহ” নাহয় সালাতের পর আলোচনা করব, ঠিক আছে?

আল-হামদ নিয়ে শেষ আরেকটি বিষয়। আরবের ভাষাতত্ত্ববিদগণ দুই ধরণের যোগাযোগের কথা বলেন। ভাষাবিজ্ঞানে, তাঁরা বলেন যে যোগাযোগ দুই ধরণের। এটা তথ্যবহুল অথবা অনুভূতিপূর্ণ। “জুমলা ইন শা ঈয়া জুমলা খাবারিয়া”, তারা বলেন। কালামে ইনশাঈ, কালামে খাবারি। এটি একটি পরিভাষা আপনাদের এটা না জানলেও চলবে এটা আপনাদের ঈমান বা অন্যকিছু বাড়াবে না। আপনাদের আমি সহজ করে বলি। হয় আপনি এমন কোনও কথা বলেন যা আপনার অনুভূতি প্রকাশ করে অথবা কথার মাধ্যমে তথ্য আদান-প্রদান করেন। ২ ধরণের কথা আছে এখন এটা সত্যিই খুব টেকনিক্যাল এবং দূর্বোধ্য মনে হচ্ছে, আমি সহজ করে দিচ্ছি। যখন আমি কাউকে বসিয়ে কিছু বুঝানোর চেষ্টা করি। এটা কি তথ্যের আদান-প্রদান? নাকি অনুভূতির? যখন আমি কাউকে কিছু বুঝাই? তথ্যের আদান-প্রদান। যেমন, আমি আপনাদের সাথে সূরা ফাতিহা নিয়ে আলোচনা করছি অথবা “আলহামদুলিল্লাহ” নিয়ে কথা বলছি এগুলো তথ্যবহুল কথা বার্তা। আমরা মাগরিবের জন্য একটি বিরতি নেব আপনারা চেয়ার ছেড়ে উঠে যাবেন, এবং অনেক-অনেক দুয়া করবেন “ইয়া আল্লাহ, আমি সামনের সারিতে বসেছিলাম, কেউ যেন আমার জায়গাটা না নেয়” ধরুন, শেষ বৈঠকে বসে আছেন সালাম ফেরানোর ঠিক আগ মূহুর্তে। আপনি করলেন কি, আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ, আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ… তারপর আপনি এখানে ফিরে আসলেন, এবং আপনার চেয়ারটি পাওয়ার জন্য অন্যদের কনুই মেরে সামনে আসলেন এবং আপনার চেয়ারটি ফাকা দেখে আপনার মুখে প্রথম কি চলে আসবে? “আলহামদুলিল্লাহ” এমনো হতে পারে যে ঐ সময়ে এই হলে কেউ আসেনি। আপনি ভাবছেন, “ভুল জায়গায় চলে আসলাম নাতো?” কিন্তু আপনি যখন “আলহামদুলিল্লাহ্‌” বলেন এবং সেখানে কেউ থাকে না, আপনি কাউকে জানানোর জন্য “আলহামদুলিল্লাহ্‌” বলেন? না। তাহলে কেন আপনি “আলহামদুলিল্লাহ্” শব্দটি ব্যবহার করেন? আবেগ প্রকাশের জন্য। যদি আমি কাউকে আলহামদুলিল্লাহ সম্পর্কে শেখাই, তখন আমি তথ্যবহুল (ইনফর্মেটিভ) হবার চেষ্টা করব। কিন্তু যদি আমি নিজেই নিজেকে একই কথা বলি, তখন তা হয়ত হবে আবেগের কথা। পার্থক্যটা বোঝা যাচ্ছে?

এখন আসুন এই ব্যাপারে কথা বলা যাক। খুতবাতে… যখন মাসজিদে খুতবাতে উপস্থিত হন, খতিব সাহেব শুরু করেন এভাবে, ইন্নাল হামদালিল্লাহ কখনো শুনেছেন? “ইন্নাল হামদালিল্লাহ” প্রথম শব্দটা কি শুনলেন?
-‘ইন্না’
– সজাগ থাকার জন্য ধন্যবাদ। প্রথম কথাটা কি শুনেছেন? ইন্না। ইন্নার অর্থ কি কেউ জানেন? অবশ্যই। নিশ্চিতভাবেই। নিশ্চয়ই। নিশ্চয়ই যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর জন্য। এখন কোনটি বেশি শক্তিশালী? আল্লাহর জন্য যাবতীয় প্রশংসা- নাকি, নিশ্চয়ই আল্লাহর জন্য যাবতীয় প্রশংসা? কোনটা শুনতে বেশি শক্তিশালী মনে হচ্ছে? নিশ্চয়ই আল্লাহর জন্য যাবতীয় প্রশংসা। ইন্না শুনতেই বেশি শক্তিশালী মনে হচ্ছে। আর, খতিব সাহেব প্রতি জুমাতেই এটা বলে থাকেন। প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে আল্লাহ কেন এটা ব্যবহার করলেন না? আল্লাহ কেন এটা বললেন না যে, নিশ্চয়ই আল্লাহর জন্য যাবতীয় প্রশংসা? তাই না? এটা(আলহামদুলিল্লাহ) এমনিতেই খুব শক্তিশালী কথা, আল্লাহ কেন ইন্না বলে একে আরও শক্তিশালী করলেন না? সব কিছুর পরেও, সারা জীবন ধরে তো শুনেই আসছেন কুর’আন একেবারে পরিপূর্ণ। আপনি নতুন করে একটা শব্দও যোগ করতে পারবেন না। এটা (কুর’আন) যেভাবে আছে, সেভাবেই পরিপূর্ণ আছে। এটা কি ধরণের পার্থক্য তৈরী করবে? আমি তো ছোট্ট করে একটা ইন্না যোগ করেই দিতে পারি। খতিব সাহেব তো সবসময়ই এমন করে থাকেন। আমিও তো করতে পারি। একমাত্র পার্থক্য এটাই যে, যখন আপনি ইন্না শব্দটা ব্যবহার করবেন আরবীতে, যখন আপনি ইন্না শব্দটি ব্যবহার করবেন, তখন কথাটা কেবল মাত্র একটি তথ্য প্রকাশ করে। কথাটা কেবল মাত্র একটি তথ্য প্রকাশ করে। এটা কি প্রকাশ করে না? আবেগপ্রবণ। এখন, আপনি যদি ইন্না ব্যবহার না করেন, তাহলে আপনার বিবৃতি তথ্য ও হতে পারে আবার আবেগও প্রকাশ করতে পারে। ইন্না ব্যবহার না করে আল্লাহ আলহামদুলিল্লাহকে এমন বিবৃতি বানিয়েছেন যা আমরা অন্যদের বলতে পারি। এবং তিনি আলহামদুলিল্লাহ কে এমন বিবৃতি করেছেন, যা আমরা নিজেদেরও বলতে পারি। সুবহানআল্লাহ। এর সৌন্দর্য্যটা হচ্ছে, এখন কথাটা আমাদের অন্তরের অনুভূতি প্রকাশ করছে। আবার অন্যদেরকে পৌঁছে দেয়ার মত একটা বার্তা হিসেবেও ব্যবহার করা যাচ্ছে। যদি ইন্নাল হামদালিল্লাহ বলা হয়, তখন তা কোন ব্যক্তির আবেগ বোঝাতে ব্যর্থ হয়। এটা তখন কেবল অন্যদের বলার জন্য ব্যবহার করা যাবে। নিজের ব্যাপারে নয়। সুবহান আল্লাহ। খতিব সাহেব অবশ্যই খুতবায় নিজের সাথে কথা বলছেন না। কার সাথে বলছেন? বাকিদের সাথে। তাই তিনি বলছেন, ইন্নাল হামদালিল্লাহ। “আমি আপনাদেরকে আলহামদুলিল্লাহ’র কথা মনে করিয়ে দিতে চাই” তিনি আপনাকে বলছেন, তাই তিনি ইন্না বলছেন।

যে কথাটা বিরতির আগেই বোঝাতে চাচ্ছি, তা হল, কুর’আনের প্রতিটি কথা, একেবারে আলহামদুলিল্লাহ থেকে শুরু করে, প্রতিটিই আল্লাহ যেভাবে বলেছেন সেভাবেই পরিপূর্ণ। আপনি তাতে যে ধরণের বৈচিত্রই (ভ্যারিয়েশন) নিয়েই আসেন না কেন, এর বদলে একটা ক্রিয়া বসান, ইন্না ব্যবহার করেন, শুকর ব্যবহার করেন, মাধ ব্যবহার করেন – আল্লাহ যেভাবে বুঝিয়েছেন সেভাবে বুঝাতে পারবেন না। আল্লাহ্‌ যেভাবে বলেছেন এর থেকে ভালো ভাবে বলতে পারবেন না। আলহামদুলিল্লাহ্‌র ব্যাপারে আরও একটু কথা বলব আমাদের বিরতির পর।