উস্তাদ নুমান আলী খানের ডেইলি রিমাইন্ডার এ দেওয়া লেকচারের অংশ বিশেষ
হে মুমিনগণ! তোমরা রুকু কর, সেজদা কর, তোমাদের পালনকর্তার ইবাদাত কর এবং সৎকাজ সম্পাদন কর, যাতে তোমরা সফলকাম হতে পার।
(সূরা আল-হাজ্জঃ আয়াত ৭৭)
(এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা বলছেন) আমি তোমাদের শিখিয়ে দেই কিভাবে আল্লাহকে যথাযথ স্বীকৃতি দিতে হয়। ঠিক এভাবেই আল্লাহর মর্যাদার যথাযথ মূল্যায়ন করতে হয়। রুকূ’ কর এবং সিজদাহ কর। এই দুটি কাজই কিসের প্রতি ইঙ্গিত করছে? সালাত।
(আল্লাহ বলছেন) তোমার উচিত আমাকে যথোপযুক্ত স্বীকৃতি দেওয়া। আর এর জন্যে প্রথম পদক্ষেপ হল সালাত আদায় করা
আমরা আমাদের নামাযকে কতটা গুরত্ব দেই তা থেকে বুঝা যায় আমরা আল্লাহকে কতটা মর্যাদা দেই। আমরা কতটা সক্রিয় এবং সতর্ক ঘুম থেকে উঠে নামায পড়ার ব্যাপারে, মসজিদে যেতে কতটা আলসেমি লাগে, কুর’আনের তিলাওয়াত আকর্ষণীয় না হলে আমরা কতটা বিরক্ত অনুভব করি. এসব ব্যাপারই বলে দেয় আল্লাহর কাছে আমাদের অবস্থান কোথায়।
যে আসলে নামায সম্পর্কে জানে না, মুসলিমদের প্রার্থনার ব্যাপারে যার কোন ধারণা নেই। যেমন একজন Non-Muslim, সে যদি হঠাৎ করে কিছু মুসলিমদের নামায পড়তে দেখে তবে সে খেয়াল করবে এই মানুষগুলো মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে অর্থাৎ তারা কারও প্রতি তাদের হীনাবস্থা প্রকাশ করছে। এরপর তারা মাথাসহ অর্ধেক শরীর ঝুঁকিয়ে ফেলে। ওয়াও! তারা আরও বিনয়ী হয়ে উঠেছে। তারপর যখন তারা দাঁড়িয়ে পড়ে এরপর কী হয়? সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে! তারা সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করছে! অন্য কথায় সে খেয়াল করবে আল্লাহর প্রতি সম্মান প্রদর্শনে তারা প্রতিনিয়ত অগ্রসর হচ্ছে। তারা যার ইবাদত করছে তাঁর প্রতি তারা আরও বেশি আজ্ঞাবহ হচ্ছে।দেখে মনে হবে তারা তাদের প্রভুকে সম্মান প্রদর্শন করছে…আরও সম্মান প্রদর্শন করছে… আরও বেশি সম্মান প্রদর্শন করছে। সালাতের এই অগ্রসরতা আমাদের শিক্ষা দেয় যে আল্লাহর প্রতি আমাদের বিনয়াবনত অবস্থা বেড়ে উঠা উচিত, বিকশিত হওয়া উচিত।
মূল ধারণাটি হল, আমরা আল্লাহর যত ইবাদত করবো ততোই বিনয়ী হয়ে উঠবো। আর বিনয়ের সর্বোচ্চ অবস্থা ছিল সিজদাহ। এরপর যা করা উচিত, কারণ এই দুটি জিনিস (রুকূ ও সিজদাহ) মূলত সালাতের প্রতিই নির্দেশ করে। কিন্তু নামাযের মধ্যবর্তী অবস্থা গুলোতে কী করা উচিত? “নিজেদের আল্লাহর দাস হিসেবে দায়বদ্ধ কর এবং তোমাদের রবের ইবাদত কর” – অন্য কথায় রুকূ’ এবং সিজদাহ করা তো হল এখন নামায তো একমাত্র ইবাদত নয়। আপনারা জানেন ইবাদতের মানে এর চেয়ে অনেক বেশি।
ইবাদত এক ধরনের জীবনাচরণ। আমি একজন দাস। আমি এখানে দাসত্বের জন্যে এসেছি। আমি যেভাবে হাঁটি, যেভাবে কথা বলি, যেভাবে নিজের ব্যাপারে চিন্তা করি, অন্যের ব্যাপারে চিন্তা করি – এসবই ইবাদত। আপনার সম্পূর্ণ আচার-আচরণ পরিবর্তন হয়ে যায় নামাযের কারণে। নামায একজন মুসলিমের ব্যক্তিত্বের বড় একটা অংশ, কেবল তার আচরণের নয়। আমরা নামাযকে মুসলিমদের আচরণ হিসেবে দেখি। কিন্তু আসলে, দৈনন্দিন নামায আদায়ের কারণে এর সরাসরি প্রভাব থাকা উচিত আমাদের চিন্তাধারায়, আচার-আচরণে, আমাদের মানসিকতায়।
জোহর এবং আসর নামাযের মধ্যবর্তী সময়টা তে আমার চিন্তা প্রভাবিত হয়ে থাকবে জোহর নামাযকে ঘিরে। আসর এবং মাগরিব নামাযের মধ্যবর্তী সময়ে আমার চিন্তাধারা অগ্রাধিকার পাবে আসর নামাযকে ঘিরে। এই পথেই একজন মুসলিম নিজেকে ইবাদতকারী হিসেবে পরিচিত করে। ইবাদতের মনোভাব গড়ে তোলা – নামাযের কাজ হল এটাই।
আপনারা দেখেছেন স্তম্ভগুলো একটা দালানকে কিভাবে ধরে রাখে? নামায আমাদের দিনকে সেভাবে ধরে রাখে। আর নামাযের মধ্যবর্তী সময়টা বলে দেয় আমাদের নামাযের মান কেমন ছিল। সালাত যদি অনুভবশূন্য হয়ে পড়ে, নামায যদি কেবল হৃদযন্ত্রের ব্যয়াম হয়ে পড়ে, নামায যদি কেবল সূরা ইখলাস আর সূরা কাওসার (সবচেয়ে ছোট সূরা) এর রিভিউ সেশন হয় কারণ আপনার হাতে এর চেয়ে বেশি সময় নেই।নামায যদি কেবল এতেই সীমাবদ্ধ থাকে তবে আপনি আপনার ব্যাক্তিত্বে কোন পরিবর্তন দেখতে পাবেন না।