সমালোচনামূলক চিন্তা-ভাবনার গুরুত্ব

আপনি যদি ইব্রাহিম (আ) এর প্রতি বিশ্বাস করেন তাহলে আপনি কখনোই সব কিছু চোখ বন্ধ করে মেনে নিতে পারেন না। কারণ তাঁর গোটা জিন্দেগী ধরে তিনি শুধু প্রশ্ন করার কারণেই ঝামেলায় পড়েছেন। তিনি কখনোই প্রশ্ন করা বন্ধ করেন নি। তিনি কি তাঁর পিতাকে প্রশ্ন করেছিলেন? হ্যাঁ। তিনি কি রাজাকে প্রশ্ন করেছিলেন? দেখুন কুরআন কী বলে– “ইব্রাহীম যখন (নমরুদকে) বললেন, আমার পালনকর্তা হলেন তিনি, যিনি জীবন দান করেন এবং মৃত্যু ঘটান। সে বলল, আমি জীবন দান করি এবং মৃত্যু ঘটিয়ে থাকি। ইব্রাহীম বললেন, নিশ্চয়ই তিনি সুর্যকে উদিত করেন পূর্ব দিক থেকে এবার তুমি তাকে পশ্চিম দিক থেকে উদিত কর।” (২:৫৮)

তিনি রাজাকে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি তাঁর পিতাকে প্রশ্ন করেছিলেন, তিনি তাঁর সমাজকে প্রশ্ন করেছিলেন। তিনি এমনসব প্রশ্ন করাতে বার বার বিপদে জড়িয়ে পড়েন। ইব্রাহিম (আ) কোন জবাব গ্রহণ করেননি যতক্ষণ পর্যন্ত না জবাবের স্বপক্ষে প্রমাণ পেশ করা হয়েছে, যতক্ষণ না কারণ জানানো হয়েছে, যতক্ষণ না এটা যুক্তিযুক্ত মনে হয়েছে। ইব্রাহিম (আ) ছিলেন একজন বিশুদ্ধ চিন্তাশীল, চিন্তানায়ক। তিনি একনজর দেখেই কোন কিছু গ্রহণ করতেন না।

আমি আপনি যদি ইব্রাহিম (আ) এর বংশধর হয়ে থাকি, আমরা কখনোই এর মর্যাদা রক্ষা করতে সমর্থ হবো না যে পর্যন্ত না আমরা চিন্তাশীল হতে পারি। আমাদের এমন চিন্তাশীল হতে হবে যারা প্রশ্ন করে, যারা এক নজর দেখেই কোন কিছু গ্রহণ করে না, যারা শুধু অনুসন্ধানের পর অনুসন্ধান করেই যায়, যারা কখনো এমন বলে না যে আমাদের পিতামাতা করেছেন বলে আমরা এটা করি; তারা মুসলিম হোন বা না হোন।

আপনি আমি যা-ই করি না কেন, আমাদের ভাল মন্দের সংজ্ঞা, আমাদের অবশ্যই যা করা উচিত এবং যা উচিত নয়, যা আমরা গ্রহণ করি এবং যা গ্রহণ করি না সবকিছুই বুঝে শুনে হতে হবে। أَدْعُو إِلَى اللَّهِ ۚ عَلَىٰ بَصِيرَةٍ – “আমি আল্লাহর দিকে বুঝে সুঝে দাওয়াত দেই”। এটাই ছিল ইব্রাহিম (আ) এর ঐতিহ্য।

চোখ বন্ধ করে কোন কিছুই মেনে নিবেন না। চিন্তা করুন, চিন্তা করুন এবং আবার চিন্তা করুন। প্রশ্ন করুন, প্রশ্ন করুন, বার বার প্রশ্ন করুন। আপনি যদি ধর্মের কোন কিছু বুঝতে না পারেন তবে এমন কাউকে জিজ্ঞেস করুন যিনি এ সম্পর্কে ভাল জানেন। আর তিনি কোন জবাব দেয়ার পর যদি তাঁর উত্তরে আপনি সন্তুষ্ট হতে না পারেন, তবে বলুন যে আপনি তাঁর জবাবে সন্তুষ্ট নন। আমাকে আরও ভালভাবে বুঝতে হবে। আপনার শুধু প্রশ্ন করার অধিকারই নেই, প্রশ্ন করা আপনার দায়িত্বও বটে। আর প্রশ্ন করার এই ঐতিহ্য আমাদের সন্তানদেরকেও শিখিয়ে দিতে হবে।

(Visited 229 times, 1 visits today)

মতামত

comments