শুনতে শিখুন

নোমান আলী খান

কিছু দিন আগে,আমি আসলে একটি গির্জার সমাবেশে অংশ নিয়েছিলাম,শুধু দেখার জন্যে যে তারা আসলে কি করে।সেটা  ছিল  বুধবার রাতে,এবং যাজক মতামতই  পাঁচ মিনিটের মতো কথা বলে।তার যা বলার প্রথমে সে তা বলে। এবং তারপরে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঘটনাটি  ঘটে।তিনি সমাবেত লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলেন,

“এখানে  কার কি সমস্যা হচ্ছে?

আমাকে খলখুলি এই সম্পর্কে বলুন!”

কিছু লোক বলল, “আমি সবেমাত্র আমার চাকরি হারিয়েছি।

আমার কঠিন সময় পার হচ্ছে। “

“ঠিক আছে সবাই, জেফের জন্য প্রার্থনা করুন!”

এবং প্রত্যেকে জেফের জন্য প্রার্থনা শুরু করে।

তারপর কেউ বলল যে , “আমি সবে তালাক পেয়েছি,

আমার স্ত্রী সকল সম্পদ নিয়ে নিয়েছে। “

প্রত্যেকে এই ব্যক্তির জন্য প্রার্থনা করুন…

এবং তারপর এক মহিলা বলল,

“আমি সবেমাত্র ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছি”

এবং প্রত্যেকে তার জন্য প্রার্থনা করল।

এবং কোনে বসে থাকা এক লোক বলল,

“সে একটা চাকরি হারিয়েছে? আমার সাথে পরে কথা বলতে বলুন। 

আমার প্রতিষ্ঠানে পদ খালি আছে। “

এবং তারা শুরু যা তাদের একসাথে একতাবদ্ধ  করল তা কিন্তু  এটা না যে এই লোকটি ঘন্টা পড় ঘন্টা কথা বলে যাচ্ছে এবং তারা সেখানে বসে বসে শুনছে, আসলে তারা এই সমাবেশে জড়ো হয়েছিল কারণ তাদের এমন একটি জায়গা আছে যেখানে তাদের শোনার মানুষ আছে। যেখানে তারা সমর্থিত বোধ করতে পারে।

রসুলুল্লাহ (ﷺ) একজন আশ্চর্য শ্রোতা ছিলেন।আমরা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে আশ্চর্য বক্তা মনে করি।হ্যাঁ অবশ্যই তিনি তা ছিলেন.তবে তিনি অবিশ্বাস্য শ্রোতাও ছিলেন। অনেক সময়, যাদের হৃদয় আপনি প্রভাবিত করতে চান, অনেক সময় আমরা চিন্তা করি যে আমরা যদি কেবল তাদের সাথে কথা বলি তবে তাদের  পরিবর্তন হবে।

কিন্তু আমি আপনাদের বলব যে, মানুষের সাথে কথা বলার চেয়ে জরুরি হল, আমাদের লোকের কথা শুনতে শিখতে হবে,আমাদের লোকের কথা শুনতে শিখতে হবে।আপনি কেবল উত্তর দেয়ার জন্য তাদের কথা শুনবেন না অথবা শুধু  তর্ক করারা উদ্দেশ্যে শুনবেন না অথবা আপনি এমনকি কথা শেষ করার আগেই উত্তর দিবেন না তাদের কী বলতে চাচ্ছে হবে তা শোনার আগেই, আপনার কাছে ইতিমধ্যে তাদের জন্য দশটি উত্তর রয়েছে এমন যেন না হয়।

না না না.

শুধু শুনতে হবে  কোনরূপ পূর্বশর্ত দিয়ে শুনবেন না,”আমি তাদের সত্যিকারের ভাল উত্তর দেব।” এমন কিছু লোক আছে যে কোনও প্রশ্ন শুনছে, অর্ধেক পথেই সে বলবে …”আমি বলছি কি করতে হবে।”

না না না.

শুধু শুনতে হবে.

এটি কোনও বিতর্ক নয়, এটা কোন প্রতিযোগিতা নয়,তাদেরকে আপনার প্রমাণ দিয়ে ধ্বংস করতে হবেনা, এটি কোনও প্রতিযোগিতা হতে চলেছে না যেখানে আমাদের  সর্বাধিক প্রকৃত উত্তর দিতে হবে। এবং আমরা কেবল বলব, “তাকবীর !!” না, না, না, এর কোনওটিই নয়।

আপনার কাজটি প্রথমে একজন ভাল শ্রোতা হওয়া। লোকেদের যা বলতে হবে তা বলতে দিন, আপনার পরিবারের সদস্যদের তাদের অনুভূতিগুলি প্রচার করতে দিন। এবং আপনাকে যেটা প্রথমে করতে হবে, আপনি যদি সহানুভূতি অনুভব না করতে পারেন । আপনি কি রাসূল (ﷺ) এর একটি গুণাবলী জানেন? (সুরা  আত-তৌবাহ: ১২৮) بِٱلْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌۭ رَّحِيمٌۭ

রাসূল (সা) হলেন (رءوف) যার অর্থ চরম সহানুভূতিশীল। মানে তিনি তার সীমা অতিক্রম করে হলেও  অন্যরা কী অনুভব করছে তা বোঝার চেষ্টা করেন। আপনি বহুবার রাসূল (সা) এর বর্ণনায় খুঁজে পাবেন যে লোকেরা তাঁর কাছে এসে বলল, “আমার এটি দরকার, আমার এটি দরকার, আমার এটি দরকার।”কিন্তু আপনি এমনটি খুঁজে পাবেন না যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সরাসরি তাদের কাছে যাচ্ছেন এবং বলছেন, “আপনার এটি করা দরকার, আপনার এটি করা দরকার, আপনার এটি করা দরকার।তারা তাঁর কাছে এসে তাকে তাদের সমস্যা বলছে।

এবং এটি তারা নির্ভয়ে খোলাখুলি ভাবে  রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর  সাথে করছে।অথচ  আজকে যে কেউ যাকে একটু ধার্মিক দেখায় বা যে ধর্মের প্রতিনিধিত্ব করে, লোকেরা তাদের কাছে আসতে চায় না, তারা তাদের থেকে পালাতে চায়

“ওহ, আমি তার কাছাকাছি কথাও গেলেই, বক্তৃতা শুরু হবে। আমি এটা করতে চাই না। ” সুতরাং আমাদের এটি অনুধাবন করতে হবে যে আপনি এবং আমি নিয়ন্ত্রণে নেই।আমাদের কাজটি হল  মৃদুস্মরে  স্মরণ করিয়ে দেওয়া।এবং আমরা তা  করতে পারব  না যদি না আমরা ভাল-সহানুভূতিশীল-শ্রোতা হই , যদি না আমরা তাদের অনুভূতির প্রতি সহানুভূতিশীল হই। আপনাকে অন্য কারও অনুভূতির সাথে একমত হতে হবে না তবে প্রত্যেকেই তাদের নিজস্ব অনুভূতির অধিকার রয়েছে , সবার অনুভূতি আছে এবং আমাদের তার মধ্য দিয়েই কাজ করতে হবে।

এবং আমাদের তা করতে সক্ষম হতে হবে, বিশেষত যাদের  আমরা ভালোবাসি তাদের জন্য