বিয়ের প্রস্তাবের ব্যাপারে সালফে সালেহীনদের অভিমত

“আর যদি তোমরা আকার ইঙ্গিতে সে নারীর বিয়ের পয়গাম দাও, কিংবা নিজেদের মনে গোপন রাখ, তবে তাতেও তোমাদের কোন পাপ নেই, আল্লাহ জানেন যে, তোমরা অবশ্যই সে নারীদের কথা উল্লেখ করবে” [সুরা আল-বাকারা: ২৩৫]

ইবনে আব্বাস (রাদিয়াল্লাহু আনহু) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, “প্রস্তাবকারী বলবে, আমি বিয়ে করতে চাই, আমি চাই আমার জন্য একজন নেককার স্ত্রীলোক জুটুক। [আহকামুল কুরআন, ইবনুল আরাবী, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা ২১২-২১৩]

ইংগিতে কীভাবে বিয়ের প্রস্তাব পেশ করা যাবে সে বিষয়ে ইমাম তাবারী (রাহিমাহুল্লাহ) তাঁর তাফসীরে কিছু রেওয়াতে উল্লেখ করেছেন। এখানে তার কয়েকটি পেশ করা হল।

ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “আমি একজন নারীকে তার অমুক অমুক গুণাবলীর জন্য পছন্দ করি। এভাবে সুন্দর ও সুরুচিপূর্ণ ভাষায় ইংগিত প্রদান করবে।”

মুজাহিদ থেকে বর্ণিত, প্রস্তাবকারী বলবে, “তুমি সুন্দরী। তোমার অবশ্যই চাহিদা আছে এবং তুমি তো কল্যাণ লাভ করতে যাচ্ছো।”

কাসেম ইবনে মুহাম্মদ থেকে বর্ণিত, “প্রস্তাবকারী বলবে, আমি তোমার প্রতি আকৃষ্ট। আমি তোমার প্রতি অত্যন্ত আগ্রহী হয়ে আছি। আমি তোমাকে পছন্দ করি এবং এ ধরণের উক্তি।”

সুদ্দী থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, “প্রস্তাবকারী ব্যক্তি মহিলার কাছে গিয়ে তাকে সালাম দেবে এবং ইচ্ছা করলে উপঢৌকন পেশ করবে কিন্তু কোন কথা বলবে না।”

এ ক্ষেত্রে ইমাম মালেক (রাহ) যে মতটি পছন্দ করেছেন সেটি হলো, প্রস্তাবক বলবে, “আমি তোমাকে পছন্দ করি, তোমাকে ভালবাসার মত একজন লোক আছে। তোমার প্রতি আকৃষ্ট একজন আছে। আমার মতে এ কথা গুলো অত্যন্তু দৃঢ় ইংগিতসূচক এবং সুস্পষ্টতার অধিক নিকটবর্তী।”

এবার দেখি এক সাহাবিয়াত অর্থাৎ মহিলা সাহাবা কীভাবে সয়ং রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে প্রস্তাব দিয়েছিলেন।

“সাবে আল বানানী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেছেন,
“আমি আনাসের কাছে ছিলাম। সেই সময় তার কাছে তার এক কন্যা ছিল। আনাস বললেন, এক মহিলা নিজেকে সমর্পন করার জন্য রাসুলুল্লাহ (সা) এর কাছে এসে বললো,

“হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে দিয়ে আপনার কোন প্রয়োজন আছে?”

সেই সময় আনাসের কন্যা বললো, মেয়েটার লজ্জা শরম কত কম এবং সে কত জঘন্য। আনাস বললেন, “সে তোমার চাইতে ভাল। সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে তাই নিজেকে তাঁর কাছে সমর্পন করতে চেয়েছে।”

[বুখারী বিবাহ অধ্যায়, অনুচ্ছেদঃ নারী কর্তৃক নিজেকে সৎ পুরুষের কাছে সমর্পন করা, ১১ খন্ড, ৭৯ পৃষ্ঠা]

ইমাম বুখারী “নিজেকে নেককার পুরুষের কাছে সমর্পণ করা” অনুচ্ছেদ শিরোনামে এ হাদীসটি বর্ণনা করেছেন। ফাতহুল বারীতে বলা হয়েছে, ইবনুল মুনীর হাশিয়াতে বলেছেন, ইমাম বুখারীর সূক্ষ্মদর্শিতা হচ্ছে, তিনি যখনই এই হাদীস থেকে নিজেকে সমর্পণকারিণী এই মহিলার কাহিনীর নির্দিষ্টতা জানতে পারলেন, তখন হাদীসটিতে যে নির্দিষ্টতা নেই তাই উদ্ভাবন করে ফেললেন। অর্থাৎ মহিলা কর্তৃক নিজেকে নেককার পুরুষের কাছে তার যোগ্যতার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে সমর্পণ করার বৈধতা [ফাতহুল বারী, ১১ খন্ড, ৭৯]। কাজেই একাজ করা তার জন্য জায়েজ।

হাফেয ইবনে হাজার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে নিজেকে সমর্পণকারিণী মহিলা সম্পর্কিত হাদীস সম্পর্কে বলেছেন যে, কোন মহিলা কর্তৃক তার চাইতে উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন কোন পুরুষের সাথে নিজেকে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করতে চাওয়ার মধ্যে লজ্জা বা অপমান নেই। বিশেষ করে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যদি নির্দোষ অথবা সংকল্প যদি সৎ হয়। অর্থাৎ যার কাছে প্রস্তাব করা হচ্ছে তার যদি দ্বীনি মর্যাদা থাকে কিংবা তার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে থাকে এবং এ ব্যাপারে নিশ্চুপ থাকলে যদি গোনাগের কাজে লিপ্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। [ফাতহুল বারী , ১১ খন্ড, ১২২]

ইবনে দাকীক আল ঈদ বলেছেন, “হাদীসটিতে যার থেকে কল্যাণ আশা করা যায় এমন ব্যক্তির কাছে নারীর নিজেকে বিয়ের জন্য পেশ করার বৈধতার দলীল আছে।” [উমদাতুল আহকাম, ২ খন্ড, ২০১]

মতামত

comments