আর বুঝতে চেষ্টা করুন, আপনারা অনেকেই হয়তো মনে করেন যে আপনি একসময় আল্লাহর অনেক কাছাকাছি ছিলেন। “আমি অনেক ভালো মানুষ ছিলাম” বা “আমার হৃদয় এখনকার চেয়ে আগে আরও পরিষ্কার ছিল।” কোন কারণে হয়তো আপনি সেই পথ হারিয়ে ফেলেছেন আর অনেক দূরেও চলে গিয়েছেন। এখন আপনার মনে হচ্ছে যে আপনি আল্লাহর কাছ থেকে এতই দূরে চলে গিয়েছেন যে আপনার জন্য আর কোন আশা নেই। শয়তানের ধোঁকায় পড়ে আপনি একদম হারিয়ে গেলেন!
আর আমি আপনাকে এতটা বলতে পারিঃ আপনি বা আমি আল্লাহর কাছ থেকে নিজেদের যতই দূরে মনে করি না কেন, আল্লাহ প্রথম যেই মানুষটিকে জান্নাত থেকে দুনিয়ায় পাঠিয়ে দিলেন সেই দূরত্বের সাথে আমাদের এই দূরত্বের তুলনা চলে না। সেটা খুবই বড় ডিমোশন ছিল। এমন একজন যিনি আল্লাহর এতো নিকটে ছিলেন যে, আল্লাহ সরাসরি তাঁর সাথে কথা বলতেন। তারপর আল্লাহ তাঁকে বললেন, তোমার সাথে আর সরাসরি কথা বলবো না, এখন থেকে তোমার সাথে ওহী পাঠানোর মাধ্যমে কথা বলবো। এতো বড় ডিমোশন সত্ত্বেও তাঁর আশা ছিল যে, আল্লাহর পাঠানো ওহীর মাধ্যমে আমি আবার আল্লাহর কাছাকাছি হতে পারবো।
কুরআন আপনাকে জাহান্নামে পাঠাতে আসেনি। কুরআন তো বলছে না যে আপনার কোন আশা নেই। কুরআন আল্লাহর প্রতিজ্ঞা যে আমরা যতই ভুল করি বা আল্লাহর কাছ থেকে দূরে চলে যাই না কেন, আমরা আমাদের আদি পিতা আদম (আঃ) এর মত মতো হবো এবং তাওবা করে ফিরে আসবো। আমরা কখনোই ইবলিসের মতো হবো না।
ইবলিস… আর আরবিতে ‘আবলাসা’ ক্রিয়ার একটি অর্থ হল আশা ছেড়ে দেয়া। আমরা নিরাশ হবো না। আমরা নিজেদের মাঝে আশা ধরে রাখবো। আর যখন আপনি নিজেকে বলতে থাকেন যে আপনার জীবনের আর অর্থ নেই, “আমি খারাপ মানুষ, আমার কী-ই বা আর করার আছে?” আপনি যখন এমনটা বলা শুরু করছেন, তখন আপনি আসলে ইবলিসের সুন্নত/পথ অনুসরণ করলেন। সে নিজেকে শয়তান হিসেবেই মেনে নিয়েছিল। কিন্তু মানুষদেরকে সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
আমরা ভুল করবোই। কুল্লু বানি আদম খাত্তাউন – “আদম সন্তানেরা প্রতিনিয়ত ভুল করতে থাকবে”। ‘খত্তায়ুন’ শব্দটা ‘খতিয়ুন’ থেকে আসলে আলাদা। রাসুল (সাঃ) বলেছেন যে আমরা ভুল করতে থাকবো, কেবল একবারই না। ভুল করাতে যেন আমরা আসক্ত। আর তারপরেও ভুল করতে থাকা মানুষগুলোর মধ্যে তারাই উত্তম যারা আল্লাহর কাছে বারবার ফিরে আসতে থাকে।এই মাসে আমরা আল্লাহর নিকট প্রত্যাবর্তন করার সুযোগ উদযাপন করবো। কারণ এই মাসে আল্লাহ তাঁর দড়ি দুনিয়াতে ফেলেছিলেন, কুরআন নাজিল করেছিলেন। যা সব সময় আমাদেরকে তাঁর সাথে সম্পর্কযুক্ত রাখবে।
যখন আপনি কাউকে খুব মিস করেন, আপনি তাকে কল দিতে চান। তাঁর কন্ঠ শুনতে চান। মৃত কাউকে আপনি যখন মিস করেন, হয়তো তাঁর কোন ভিডিও ছেড়ে দিলেন। হয়তো আপনার মারা যাওয়া বাচ্চার হাসি দেওয়ার বা আপনার মা-বাবার কথোপকথনের কোন ভিডিও দেখেন। মানুষের যখন প্রিয় কারো স্মৃতি মনে পড়ে সে তাঁর সাথে কথা বলার জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়ে। আল্লাহর কাছ থেকে আমরা যদি দূরে চলে যাই, তখনই আমাদের তাঁর সাথে কথা বলা আরও বেশি প্রয়োজন। আমরা তাঁর কথা শুনতে চাই। আর সেটি আল্লাহ আমাদের দিয়েছেন, তা হলো তাঁর কালাম আল কুরআন।”
এই রমজান মাস জীবনের এক মহা সুযোগ। এই মাসটি এতোই সুন্দর যে, যে ইবলিশের কারণে আদম আলাইহিস সালাম ভুল করেছিলেন এই মাসে আল্লাহ তাকেও শিকল দিয়ে আটকিয়ে রাখেন, শয়তানকে সরিয়ে রাখেন। যেন আমরা বিভ্রান্ত না হই। এখন আল্লাহর কালাম এবং আমাদের মাঝে আর কোনো বাধা নেই। ফলে আমরা সহজেই কুরআনের সাথে যুক্ত হতে পারবো। সুবহানাল্লাহ।