আমি দুয়া করি যেন আমরা সবাই, আমরা এই দর্শকদের সবাই, আমাদের পরিবারে কী করি, কী হয় সেটার দায়িত্ব নিই। আমি যদি বলি যে আমাদেরকে উম্মাহর সদস্য হিসাবে পরিবর্তন করতে হবে, তাহলে আপনি আসলে কোন দায়িত্ব নেওয়া ছাড়াই এখান থেকে বের হয়ে যাবেন। হ্যাঁ উম্মাহ! আমি জানি না এটা কী। আপনাকে দায়িত্ব নিতে হবে আসলে আপনার নিজের পরিবারে কি হচ্ছে সেটার। আপনার পরিবার হচ্ছে আপনার জন্য সরকারের মত, এবং সেখানে যখন দুর্নীতি হয় এর অর্থ আপনার ঘরের মাঝেই একটা ফ্যাসাদপূর্ন পরিবেশ চলছে। সেখানেই আপনার পরিবর্তন করতে হবে, যদি আপনার নিজের পরিবারেই পরিবর্তিত না হয়, দুনিয়া পরিবর্তনের কথা ভুলে যান। আপনি নিজে যদি ব্যক্তিগত ভাবে পরিবর্তিত না হয়ে থাকেন, তাহলে দুনিয়া পরিবর্তনের কথা বলবেন না। আপনি আসলে নিজের সাথেই রসিকতা করছেন। নিজেকে ধোঁকা দিচ্ছেন।
কীভাবে এটা সম্ভব যে আপনি বলছেন আপনি নবীজী মুহাম্মদ (সঃ) এর উম্মাহকে ভালোবাসেন কিন্তু যেভাবে আপনি আপনার স্ত্রীর সাথে ব্যবহার করছেন, তার সাথে নবীজী মুহাম্মদ (সঃ) উনার স্ত্রী- উম্মুল মু’মীনীনদের – সাথে যেভাবে ব্যবহার করতেন তার কোন মিলই নেই? কেমন করে এটা সম্ভব হতে পারে যে আপনি বলেন, আপনি নবীজী মুহাম্মদ (সঃ) কে ভালোবাসেন, বলেন যে আপনি পুরো বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ শিখে ফেলবেন, দুনিয়ার সব জ্ঞান আহরণ করে ফেলবেন, কিন্তু যেভাবে আপনি আপনার বাচ্চাদের সাথে কথা বলেন, তাদের সাথে আচরন করেন, তাতে কোন “রাহমা” নেই, যেখানে নবীজী মুহাম্মদ (সঃ) যখন উনার সন্তানদের সাথে আচরন করতেন “রাহমা” সহকারে? আপনি কেন শিখছেন এগুলো? কেন শিখছেন এসব? কীভাবে সম্ভব যে আপনি কিভাবে আপনার পরিবারের সাথে ব্যবহার করছেন তাতে কোন প্রভাবই ফেলছে না আপনার শিক্ষা? মাসজিদে পাশের মুসলিমের সাথে যে ব্যবহার করছেন তাতে কেন এর কোন প্রভাবই পড়ছেনা ? কীভাবে সম্ভব যে আপনি যেভাবে গাড়ি চালাচ্ছেন তাতে এটা কোন প্রভাবই ফেলছে না? একজন লোক এদিক থেকে গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে, আরেকজন অন্যদিক থেকে, তাদের দুইজনের দাড়ি আছে, দেখে পরিষ্কার বুঝা যাচ্ছে উনারা মুসলিম, কিন্তু উনারা এমন ভাবে একজনের দিকে আরেকজন তাকিয়ে আছে, যেন, উনারা প্রতিযোগিতায় নেমেছে, কে আগে চোখের পলক ফেলবে? আপনি হয়তো বললেন ‘আমাকে কি এক সেকেন্ড দিতে পারবেন’, আরেকজন বলল (রাগত স্বরে) হুম। কি হল সেই আয়াতের “ويؤثرون على انفسهم” (৫৯;৯)। “তারা অন্যদেরকে নিজেদের উপর অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।”
এটা অনেক সোজা, ভাইয়েরা, অনেক সোজা।আল্লাহ আমাদের থেকে বড় জিনিস চান না। ছোট ছোট পরিবর্তন – আমাদের পারিবারিক জীবনে, আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে, অন্যদের সাথে আমাদের ব্যবহারে, এগুলো চান। আমি যখন মুসলিম দেশগুলোতে আসি প্রথম জিনিস যেটা আমার চোখে পড়ে সৌজন্যতার অভাব। আমি দাঁড়িয়ে আছি, এটা এখানে হয়নি, কিন্তু আমি অবাক হবনা এখানে হলেও, যেকোন জায়গাতেই হতে পারে এটা, আমি দাঁড়িয়ে আছি একটা মুসলিম দেশের হোটেল এর চেক ইন করার জন্য, আরেকজন পিছন থেকে এসে ‘হাবিবী’ বলে ঢুকে গেল। এটা অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, আমেরিকা কোথাও হবে না, এটা শুধু মুসলিম দেশ গুলোতেই হবে। একটা ন্যূনতম সৌজন্যতাবোধ যেখানে আমাদের নেই, সেখানে কিভাবে আমরা সবচেয়ে সম্মানীয়, মহান ব্যক্তির সুন্নাহ সম্পর্কে বলবো?
আমরা কি ধরনের উদাহরণ? যেসব নন মুসলিম এসব দেশে বাস করে তারা কি উদাহরণ দেখতে পাচ্ছে মুসলিমদের কাছে? চিন্তা করেন এই ব্যাপারে। কী ধরনের আচরণ তারা লক্ষ্য করে? যখন মুসলিমদের আচরণ দেখে তখন কি তারা মুসলিম হতে চায়? তারা কি এটা ভাবে যে এই মুসলিমরা অনেক দয়ালু, অনেক অমায়িক, অনেক ধৈর্যশীল, আরেকজনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, যেভাবে তারা তাদের কথা, চোখ সব কিছু নিয়ন্ত্রন করে। তাদের পরিবারের মাঝে কত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ, তারা কিসের অনুসরণ করে? তারা এক মাত্র নবীজী মুহাম্মদ (সঃ) এর সুন্নাহ অনুসরণ করে। ও তাই( ননমুসলিম অবাক হয়ে বলবে)? তাহলে আমিও সেটা চাই, আমি কি একটা পেতে পারি? হ্যাঁ। তোমাকে মুসলিম হতে হবে। কিন্তু আমরা আসলে তাদেরকে কি দেখাচ্ছি? যেটা দেখাচ্ছি আমার সেটা বলতেও সঙ্কোচ হচ্ছে।
আমাদেরকে আমাদের নিজদের চরিত্রের উন্নয়ন করতে হবে। এটা করতেই হবে, করতেই হবে। দর্শকদের মাঝে যারা তরুন তাদেরকে বলছি, সরাসরি ভাবে বলছি, যত খারাপই শোনাক না কেন, তোমাদের সমস্যা আছে, মুসলিম তরুনরা তোমাদের সমস্যা আছে, তোমরা ব্রান্ড নিয়ে অবসেসড, লেবেল নিয়ে অবসেসড, তোমাদের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে শপিং সেন্টারে ঘুরে বেড়ানো। কি হয়েছে তোমাদের? জীবন শপিং সেন্টারে ঘুরে বেড়ানো এবং কি ব্রান্ডের জিনিস কিনলে তার থেকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তোমাকে দামী দোকানের ব্যাগ হাতে নিয়ে ঘুরতে হবে?? দামী ব্রান্ডের দোকানের শপিং এর ব্যাগ। হয়তো তুমি সেখান থেকে কিছু কিনোই নি কখনো, অথবা জীবনে একবারই কিনেছো কিন্তু প্রত্যেকবার তোমাকে ওই শপিং ব্যাগটা নিয়ে যেতে হবে। যাতে লোকেরা জানতে পারে তুমি ওখান থেকে শপিং কর, শপিং ব্যাগের ভিতরে হয়তো তোমার মোজা জোড়া ছাড়া আসলে কিছু নেই। কিন্তু তোমাকে ভাব ধরতে হবে। আবার তুমি যদি একটা ঘড়ি কিনো সেটা নিয়েও তুমি এমন ভাব করতে থাকবে যেন সবার চোখে পড়ে। এগুলো করি আমরা আমাদের সাথে, আমরা ভাবি এগুলো আমাদেরকে মহান বানাবে? সম্মানিত করবে? আমদেরকে অন্যদের চোখে দামি বানাবে? একটা প্লাস্টিকের ব্যাগ, জামা কাপড়, সামান্য ধাতু, পাথর (ঘড়ি,গয়না গাটি বোঝাচ্ছে)। এগুলো সামান্য জিনিস যা জীবনে আসবে একসময় চলে যাবে। যেই জিনিস তোমাকে সম্মান দিতে পারে তা হল ‘ইসলাম’, তোমার নবী, যেই জিনিস তোমাকে মহান করতে পারে তা হল আল্লাহর কালাম, তুমি তা সম্পর্কে কী জানো? তার কতটুকু তুমি নিজের মাঝে ধারন করেছ? আমি জানি তোমরা অনেক ব্র্যান্ডের জিনিস পরো, এবার এই দ্বীনটাকে ধারন কর নিজের মাঝে। এটাই তখন ব্র্যান্ড হবে যা মানুষ দেখতে চায়। তারা এখনো এটি দেখে নি।তাদেরকে এটা দেখতে হবে।