– উস্তাদ নোমান আলী খান
হে আল্লাহ আমাদের সেই অপ্রত্যাশিত উপহার প্রদান করুন। কি সেই অপ্রত্যাশিত উপহার?
رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُن- হে আমার প্রভু! স্ত্রী ও সন্তাদের দ্বারা আমার চোখ শীতল কর।
অর্থাৎ, স্বামী বা স্ত্রী এবং সন্তান দেও যা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় ও চোখে আনন্দের অশ্রু বইয়ে দেয়। কুররাতা আইয়ুন, এর অর্থ কি আপনি জানেন? এর মানে এমন কিছু যা পাওয়ার আনন্দে আপনার চোখে আনন্দের অশ্রু চলে আসে। আপনি যখন দেখেন আপনার সন্তান কুরআন তিলাওয়াত করছে ও কুরআন তিলাওয়াত করতে ভালোবাসে তখন কি আনন্দে আপনার চোখে পানি আসে না কিংবা আপনার প্রিয়তমা স্ত্রী যখন অতি আদর-যত্নে বড় করে তোলে আপনার সন্তানদের তখন কি আপনার চোখ আনন্দে ভিজে যায় না? আপনি যখন দেখেন আপনার স্বামী আপনার সন্তানদের ফজরে ডেকে তোলে এবং তাদেরকে নিয়ে মসজিদে যায় তখনো আনন্দে আপনার চোখে অশ্রু চলে আসে, আপনি প্রচন্ড সুখ অনুভব করেন।
অনেক স্বামী বা স্ত্রীকেই কাঁদতে দেখবেন কিন্তু তাদের এই কান্না কিন্তু আনন্দের কান্না না, তাদের এই কান্না অন্য কোন কারণে। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি আনন্দের কান্নার জন্য, আমরা চাই আমাদের পরিবার নিয়ে সর্বোচ্চ সুখী হতে। কিন্তু সেটা কিভাবে হবেন? এখনো তো আপনি বাসায় গিয়ে আপনার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করেন। আপনি বাসায় গেলে আপনার স্ত্রী জিজ্ঞেস করে আপনার আসতে দেরি হলো কেন আর আপনিও তখন রেগেমেগে জবাব দেন এই বলে যে বারবার একই প্রশ্ন কেন করো, তুমি কি জানো না রাস্তায় কি পরিমাণ জ্যাম, জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেই তো দেখতে পাও। এই ধরণের ঝগড়া নিয়মিতই হয় আর এরপর আপনি যখন আপনার সন্তানের কাছে যান তাকেও আপনি বকাঝকা করেন সে কেন খেলনা নিয়ে খেলছে বা কেন এত হাসাহাসি করছে, এত খুশির কি আছে এসব নিয়ে। তাকে বকা দেন তার হোমওয়ার্ক নিয়ে। সে যখন বলে তার আজকে হোমওয়ার্ক নেই তখন আপনি আরো রেগে তার স্কুলের ব্যাপারেও ক্ষোভ ঝাড়েন। এটা কুররাতা আইয়ুন না।
যারা মসজিদে আসেন সালাত আদায় করতে তাদের মনে এক ধরণের আলাদা শান্তি বিরাজ করার কথা, তাদের শান্ত-নম্র হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু তারা বাড়ি যায় ঝড়ের মত, তাদের দেখে তাদের সন্তানেরা বিছানার নিচে যেয়ে লুকায়, আপনার স্ত্রী ফোনে তার গুরুত্বপূর্ণ কথা বন্ধ করে দেয় আপনার ভয়ে। কিন্তু আপনার কোনভাবেই উচিত না আপনার পরিবারের জন্য ভয়ের কারণ হয়ে ওঠা। আপনি হবেন আপনার পরিবারের আনন্দের কারণ, আপনার পরিবারের ভালোবাসার কারণ। আপনাকে দেখে আপনার সন্তান দৌড়ে আসবে, আপনাকে জড়িয়ে ধরবে। এটাই আপনার সন্তানের সাথে আপনার সম্পর্ক হওয়া উচিত।
আমি আজকে যখন এই বিষয়ে কথা বলছি, আজ থেকে ২০-৩০ বা ৪০ বছর আগে সন্তান লালনপালনের বিষয়টা এখনকার সময় থেকে ভিন্ন ছিলো। এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। আমি বাবাদের উদ্দেশ্যে বলছি, আপনি আপনার সন্তানকে অযাচিত শাসন করতে পারেন না। আপনি আপনার সন্তানকে বুঝাবেন তার বন্ধুর মত হয়ে। আমাদের বাবার সাথে আমাদের সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ ছিলো না, তারা আমাদের উপর শাসন করতেন যা আমরা পছন্দ করতাম না। এখনকার মত বাবার পিঠ চাপড়ে বলে উঠতে পারতাম না, “চলো বাবা, ফুটবল বা বাস্কেটবল খেলতে যাই।” আমরা কোনভাবেই এটা করতে পারতাম না। আমরা বাবাদের সামনে আদবের সাথে মাথানিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতাম, তাদের জুতা এনে দিতাম। এটা ২০-৩০ বছর আগের কথা, আপনার সন্তান এখন এগুলো করবে না। আপনি বাস করছেন বর্তমান যুগে। আপনাদের মেনে নিতে হবে এখন আপনাদের সন্তানরা অনেককিছু জানে ও বুঝে, তা আপনি মুসলিম এলাকায় থাকুন আর অন্য যেই এলাকাতেই থাকুন না কেন। এহতেরাম বা সম্মান বজায় থাকবে, সন্তান আপনাকে সম্মান করবে কিন্তু আপনিই সেই ব্যক্তি যে তাকে ইসলামের প্রতি ভালোবাসা শিখাবেন, কিন্তু আপনি তাকে এসব কিছুই শিখাতে পারবেন না যদি আপনি তার বন্ধু না হয়ে তার শাসনকর্তা রূপে আবিভূর্ত হন। এখনকার বাবাদের উচিত তার সন্তানেরা যেসব ভিডিও গেম খেলে সেগুলো ভালোকরে শিখে নেওয়া। আপনি তাদের ভিডিও গেম খেলতে দিচ্ছেন এটা একটা ভিন্ন সমস্যা কিন্তু আপনি যদি তাদের খেলতে দিয়েই থাকেন এবং তাদের গেম খেলা থেকে বিরত রাখছেন না তাহলে আপনারও উচিত তার সাথে বসে বসে গেম খেলা। খবর দেখার থেকে এই কাজটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ খবর দেখে আপনি দুনিয়া বদলে ফেলবেন না। আপনি যতই খবর দেখেন না কেন কিছুই বদলাবে না। শেয়ার বাজার উঠানামা করছে, সুদের কি হাল-হকিকত এগুলো তো আপনার জানার প্রয়োজন নেই। গাড়িতে যখন যাতায়াত করছেন তখন এসব খবরাখবর জেনে নিন, কিন্তু বাসায় এসে টিভিতে খবর দেখা বন্ধ করুন। বাসায় এসে আপনার সন্তানের সাথে খেলুন, তার সাথে বসে তার হোমওয়ার্ক করে দিন, তার সাথে গল্প করুন, আপনার সন্তানকে মসজিদে নিয়ে যান। আপনি যদি এগুলো করেন তারা আপনাকে ভালোবাসতে বাধ্য। কিন্তু বাবারা যদি এই কাজগুলো ত্যাগ করে তবে আমি শতভাগ নিশ্চিত মুসলিম উম্মাহর পতন সুনিশ্চিত, আমি সুনিশ্চিত ভাবে বলে দিয়ে যাচ্ছি আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম হুমকির সম্মুখীন।