আল্লাহ আজ ওয়াজ্জাল বিবাহ সম্পর্কে বলেছেন,
وَمِنْ آيَاتِهِ أَنْ خَلَقَ لَكُم مِّنْ أَنفُسِكُمْ أَزْوَاجًا لِّتَسْكُنُوا إِلَيْهَا وَجَعَلَ بَيْنَكُم مَّوَدَّةً وَرَحْمَةً ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ
আর এক নিদর্শন এই যে, তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সংগিনীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাক এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্প্রীতি ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয় এতে চিন্তাশীল লোকদের জন্যে নিদর্শনাবলী রয়েছে। (৩০ঃ ২১)
এটি কুরআনের অত্যন্ত সুন্দর কিছু বাণী। আপনারা যারা বিবাহিত তাদের পুরো বিবাহিত জীবনে এই বাণীর প্রযোজ্যতা খুঁজে পাবেন। আল্লাহ বলেন, তিনি আপনাদের মধ্যে, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ভালোবাসা ‘মাওয়াদ্দা’, এবং প্রগাঢ় ভালোবাসা দিয়েছেন, ‘ওয়া রাহমা’ দৈবানুগ্রহ দিয়েছেন। কারণ, বিবাহের প্রথম দিকে ভালোবাসা প্রগাড় থাকে। আপনি আপনার স্ত্রীকে নিয়ে মুগ্ধ থাকেন। আপনি অন্য কিছুর কথা আর চিন্তা করতে পারেন না । আপনার বন্ধুরা যখন আপনাকে কল দেয়, তারা সরাসরি ভয়েস মেইল এ যায়। ঠিক? কারণ, আপনি সদ্য বিবাহিত। আপনারা জানেন, ছয় মাস ধরে আপনার কোন দেখা নেই, কেউ আপনাকে দেখে নি। কিন্তু তারপর যখন বিবাহিত জীবন আরও অগ্রসর হয়, কী আপনাদের বিবাহিত জীবন চাঙ্গা রাখে? এটা কি আগের মত থাকে? কারণ, অন্যান্য দায়িত্ব নিতে হয়। বাচ্চা হয়, কাজে ব্যস্ততার কারণে আর মধুর থাকে না। কিভাবে আপনার দাম্পত্য জীবন বজায় রাখবেন? রাহমা, আপনার স্ত্রীর প্রতি অনুগ্রহ থাকতে হবে। স্বামীর প্রতি অনুগ্রহ থাকতে হবে। একে অপরকে সম্মানপ্রদর্শন করতে হবে।
একবার উমর (রাঃ) এর কাছে এক লোক আসল। সে বলল, আমি আমার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাই। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, কেন তুমি তোমার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাও? (উত্তরঃ) আমি তাঁকে আর ভালোবাসি না, তাঁকে আর আকর্ষিত মনে হয় না। তারপর উমর (রাঃ) তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, ফা’ইনা রি’ইয়াআ, সৌজন্যতার কি অবস্থা? তোমার স্ত্রীর প্রতি উদারতার কি হল? সে কি তোমার সন্তানদের রক্ষণাবেক্ষণ করছে না? সে কি সবসময় তোমাকে দেখভাল করছে না? আপনারা জানেন যে, আমরা পুরুষরা খুবই কঠিন প্রাণী কোনো কিছু দেখাশুনা করার ক্ষেত্রে। আমরা খুবই কঠিন প্রাণী সাহায্য করার ক্ষেত্রে। এবং আমাদের স্ত্রীরা সব সময়ই আমাদের দেখাশুনা করে, যদিও তারা মাঝে মাঝে কিছু কথা বলে, কিন্তু দিন শেষে তারা আমাদেরই দেখাশুনা করে। ঠিক? তাই স্ত্রীদের যখন আমাদের কাছে আর খুব ভালো না লাগে তখন আমরা এটা বলতে পারি না যে, ওও সে তো ওইরকম নয়। আগে যখন আমি আমার দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করতাম না এবং প্রচুর টিভি দেখতাম, আমি টিভিতে মেয়েদের মত কিছু আশা করছিলাম। এটা কোনভাবেই সুস্থ আচরণ হতে পারে না। যদি বিশ্বাসীরা তাদের দৃষ্টি নিয়ন্ত্রণ করে , কুকর্মে প্ররোচনা নিয়ন্ত্রণ করে এবং তাদের স্ত্রীদের সাথে যথাসাধ্য সদ্ব্যবহার করে, তাহলে তারা সবচাইতে বেশি পরিতৃপ্ত হবে। আর তারা বাইরে কোন কুকর্মে প্ররোচনায় লিপ্ত হবে না।
কিন্তু একইসাথে, আমি শুধু ভাইদের কথাই বলেছি, সাথে সাথে বোনদেরকেও এটা বুঝতে হবে যে, আল্লাহ সুবহানওয়াতা’আলা পুরুষ এবং স্ত্রীদেরকে আলাদাভাবে সৃষ্টি করেছেন। পুরুষদের সবচাইতে বড় দুর্বলতা হচ্ছে নারী। তারা ধনী হতে পারে, গরীব হতে পারে, স্বাস্থ্যবান হতে পারে আবার নাও হতে পারে, হাড্ডিসার, মোটা অথবা লম্বা, যে কোন সংস্কৃতি বা ভাষাভাষী হোক না কেন, সবার ভেতরে একই ধরনের দুর্বলতা কাজ করে আর তা হলো নারীদের প্রতি দুর্বলতা । এবং আল্লাহ আজ ওয়াজ্জাল বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষদের এই দুর্বলতার ব্যাপারে নারীদেরকে অন্যমনস্ক করেছেন। তারা বুঝতে পারে না, এটা কত নিকৃষ্ট। কাজেই যখন মহিলারা তাদের দৃষ্টি নত রাখার আয়াতটি পড়ে, তখন তারা অনায়াসেই বলে, ও এটা আমি সহজেই করতে পারব। এবং তারা বুঝতে পারে না, পুরুষরা কেন সহজে তাদের দৃষ্টি নত রাখতে পারে না! এবং তারা বলে, আমি বুঝিনা! তোমারও চোখ আছে, আমারও আছে, তাদেরও রেটিনা আছে, আপনারা জানেন। এগুলো একই ধরনের তথ্য প্রস্তুত করে। কাজেই সমস্যাটা কোথায়? আপনি দেখেন, তারা এটা বুঝতে পারে না, আল্লাহ সুবহানওয়াতা’আলা আমাদের ভেতরে যে আকুল আকাঙ্ক্ষার ক্ষমতা দিয়েছেন এবং এক নম্বর আকাঙ্ক্ষা হিসেবে উল্লেখ করেছেন, জুইয়িনা লিন্নাসি হুব্বু শাহাওয়াত মিনান নিসা- প্রবৃত্তির মধ্যে সর্ব প্রথম এটা। পুরুষদের জন্য অলঙ্কৃত করা হয়েছে নারীদের জন্যে কামনাকে। ঠিক?
মহানবী (সঃ) এক নম্বর ফিতনা হিসেবে তাঁর উম্মাহদের নিয়ে ভয় করেছেন, সেটা কি? নারী। কারণ এটি একটি জটিল সমস্যা। এবং যদি কোন স্ত্রী এটি বুঝে, কিভাবে তুমি এত দুর্বল হয়ে যাও নারী দেখলেই? কেন তুমি দৃষ্টি নত রাখতে পার না? এসব বলে তাঁর স্বামীকে নিন্দা করার পরিবর্তে তারা গ্রহণ করে নিবে যে এভাবেই আল্লাহ সুবহানওয়াতা’আলা তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন। স্বামীদেরকে শক্ত করার ভূমিকা স্ত্রীদের। এবং তারা বকুনি না দিয়ে বাইরে স্বামীদের কুকর্মে প্ররোচনা দমন করতে পারে। এবং এটি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার যেটি স্ত্রীদেরকে বুঝতে হবে। স্বামী অফিসে যায় অথবা ট্রেনে যায়, এবং কিছু মেয়ে অপ্রীতিকর জামা কাপড় পড়ে বসে আছে, সবার প্রতি হাসছে আপনারা জানেন। মূলত তারা এভাবেই নিজেদেরকে সম্মানিত মনে করে। তারা তাদের বুদ্ধিবৃত্তির জন্যে সম্মানিত হন না, তাদের মতামতের জন্য সম্মানিত হন না। তারা মনে করে, যদি পুরুষরা আমাদের শরীর বেশি দেখে, তাহলে আমরা বেশি সম্মানিত হব! তাই তারা অশ্লীল জামা কাপড় পড়ে ফ্যাশন করে, যখন কোন পুরুষ তাদের দেখে তারা এক ধরনের আত্মমর্যাদা অনুভব করে যে আমার মূল্য অনেক। মানুষ আমার দিকে তাকিয়ে থাকে, এটাই মূলত ব্যাপার। এটা আসলেই ভয়ঙ্কর এবং দুঃখজনক। যখন আপনি অফিসে যান, আপনার সেক্রেটারি আপনার দিকে তাকিয়ে হাসি দেয়। আপনি জিজ্ঞেস করেন, কেমন আছেন আপনি? আপনার দিনটি কেমন কাটছে? দুপুরে লাঞ্চ কি খাচ্ছেন? অথবা আপনি কি রোজা? ও, খুব ভালো। এবং তারা আপনার দিকে হাসি দেয়। আপনারা জানেন, বেশির ভাগ বিজ্ঞাপনেই নারীরা আপনার দিকে হাসি মুখ করে থাকে। তারপর আপনি বাড়ি যান। এবং আপনি দরজা খোললেই আপনার স্ত্রী জিজ্ঞেস করে, কোথায় ছিলে? হা হা হা হা! ট্রেন দেরি করেছে! প্রতিদিনই কি ট্রেন দেরি করে? ও বুঝতে পেরেছি! প্রতিদিনই এরকম ভ্রূকুটি চলতে থাকে। প্রথম দিন এটা ঠিক আছে, দ্বিতীয় দিনও এটা ঠিক আছে, এরকম দশ বছর, বার বছর চলতে থাকলে কি হবে?
স্বামীর তাঁর স্ত্রীর উপর বিরক্তিভাব চলে আসে, যদিও সে কিছুই হয়তো বলে না। তাঁর ভেতরে খিটখিটে ভাব তৈরি হতে থাকে। এবং মহানবী (সঃ) এর সহজ সমাধান দিয়ে গিয়েছেন, যখন স্বামী ঘরে ঢুকে তখন যেন স্ত্রী তাঁর দিকে তাকিয়ে হাসি দেয়। এটা অন্যকে বিশাল কিছু। এটা হেলাফেলা করার ব্যাপার না। এটা স্বামীর জন্য এক প্রকার ছুরিকাঘাত যখন স্বামী ঘরে ঢুকে এবং তাঁর স্ত্রী খেয়ালই করে না। স্বামী খুবই বিক্ষুব্ধ হয়, সে হয়তো মুখে কিছুই বলে না। কিন্তু এটা সত্যি সত্যিই স্বামীদেরকে অনেক কষ্ট দেয়। এটা সম্পর্কের ক্ষতি করে। এবং এটার অদ্ভুত ফলাফল পরিলক্ষিত হয়। এখন যেহেতু তারা কষ্টে আছে, তারা বিপর্যস্ত হয়ে রাতের খাবার খেতে বসে বলে,ও! ঠিকমত লবণ হয়নি। কি যেন ঠিকমত হয়নি! এবং তারা তাদের সন্তানদের প্রতি মাত্রাতিরিক্ত রাগ দেখাচ্ছে। তারা হতাশ। কিন্তু একই পরিস্থিতিতে যদি স্ত্রী দরজা খোলে তাঁর স্বামীকে শুধু একটু হাসি দিয়ে অভ্যর্থনা জানায়, শুধু একটু হাসি এটা দামী কিছু না! কি হবে? বাকি রাত খুব সুন্দরভাবে পার হবে। স্বামী খুব ফুরফুরে মুডে থাকে। সুন্দরভাবে স্ত্রীর সাথে কথা বলে। সে এটা বলে না, আমি এখন কথা বলতে পারব না! আমার মাথা ধরেছে! সে কি এটা বলবে? কোথা থেকে এই ভাল কিছু শুরু হয়? শুধু স্ত্রীর ছোট্ট একটা কাজ, একটু হাসি। এগুলো সহজ সমাধান, কিন্তু অত্যন্ত কার্যকর সমাধান।
যদি আপনি এই সমাধানগুলোর প্রতি যত্নবান না হন, ক্ষোভ জমা হতে হতে এক সময় আপনি ঐ পরিসংখ্যানে পৌঁছে যান যখন স্বামী আর স্ত্রীর দিকে তাকিয়েও দেখে না, তাঁকে শুধুই বিরক্তিকর মনে হয়। সে শুধুই এরকম, ওরকম। ঠিক? কাজেই দুজনকেই বুঝতে হবে যে, তাদেরকে একে অপরের প্রতি যত্নবান হতে হবে। অপরজনের কাছ থেকে কিছু আশা করার পরিবর্তে কিছু লক্ষ্য তৈরি করুন অপরজনের প্রতি আরও বেশি যত্নবান হওয়ার জন্য। ইল্লা’আলা আজ ওয়া জিহিম। একমাত্র স্ত্রীদের ক্ষেত্রে তারা তাদের কামনা বাসনার নিয়ন্ত্রণ করে না। এবং এই সম্পর্কটি অত্যন্ত শক্তিশালী। আমি কোন হাদিসের উদ্ধৃতি দিচ্ছি না, যদিও হাদিসের উদ্ধৃতি দেয়া ভালো। কিন্তু আমি জানি আমাদের সমাজে এর প্রতিক্রিয়া কি হতে পারে! দুর্ভাগ্যক্রমে, আমি ব্যক্তিগতভাবে আল্লাহু আলম, আমি ব্যক্তিগতভাবে অনুভব করি না যে মুসলিম পরিবারগুলো যথেষ্ট পরিণত। তারা একটি হাদিস পড়বে এবং এটিকে পরিণতভাবে গ্রহণ করবে। সাধারণত, তারা ইসলামিক বাণীগুলোকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। স্বামী হয়তো বলে – ”তুমি জান মহানবী (সঃ) ঐ স্ত্রীদের সম্পর্কে কি বলেছেন যারা রাতের বেলা স্বামীর চাহিদার প্রতি লক্ষ্য করেনা? তিনি বলেছেন, ……। তোমার নিজের প্রতি লজ্জা হওয়া উচিত।” আপনি কি মনে করেন সে এখন সত্যিই আপনার চাহিদার প্রতি লক্ষ্য রাখবে ? হা হা, আপনারা জানেন। এটা কোন প্রতিযোগিতা নয়! স্বামী হয়তো বলে , তোমার সাহাবীয়াদের মত হওয়া উচিত। স্ত্রী বলবে, তুমি নিজেও তো সাহাবী নও! হা হা হা হা। এরকমই পরিস্থিতি হতে পারে! তাই আপনি যদি এটি নিয়ে প্রতিযোগিতা তৈরি করেন, আপনি নারীদের কখনও হারাতে পারবেন না। আপনার মা, বোন, স্ত্রী কাউকেই যুক্তিতর্কে হারাতে পারবেন না। কারণ, তারা এমন কিছু আপনার সামনে নিয়ে আসবে যা আপনি চিন্তাই করতে পারেন না! ঠিক? আল্লাহ তাদের মধ্যে এটি দিয়েছেন। তাদের কথা বলার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে, মনস্তাত্ত্বিক কথা, যুক্তিতে কার্যকর বক্তব্য। কাজেই আপনার এসব পরিচালনা করতে শিখতে হবে।
স্বামী এবং স্ত্রীর মধ্যে মধুর সম্পর্কের জন্য আরেকটি উপদেশ হচ্ছে, যুক্তিপ্রদর্শন। পুরুষরা মনে করে, সব কিছুই যুক্তিপ্রদর্শন এবং যৌক্তিক প্রমাণের মাধ্যমে সমাধান করা যায়। ঠিক? এবং তারা ভুলে যান যে আল্লাহ সুবহানওয়াতা’আলা নারীদেরকে সহজ সাদা-সিধে ফ্যাশনে তৈরি করেন নি। নারীরা জটিল সৃষ্টি। যখন আপনি বিয়ে করেন, আপনি হয়তো কোন একদিন দেখবেন আপনার স্ত্রী কাঁদছেন। এবং আপনি তাঁকে জিজ্ঞেস করবেন, তুমি কাঁদছ কেন? সে বলবে, আমি জানি না। আমি তোমার সাথে পরে এটি নিয়ে কথা বলব। না আসলেই, আমি এ সম্পর্কে কিছুই জানি না। আমাকে একা থাকতে দাও। আমি জানি না। এবং মাঝে মাঝে তারা আসলেই কিছু জানে না। আর যদিও তারা সেটা জানে, তাহলে আপনার জন্যে সেটা বোঝা অত্যন্ত জটিল হবে। তাই তারা বলে, তুমি বুঝবে না! হা হা হা হা! ঠিক?
এবং আপনি এটি শিখবেন, আপনি যদি বিবাহিত না হন, তাহলে আপনার মা, বোনকে দেখে এটি শিখুন। আপনি তাদেরকে যুক্তি দেখাবেন, তাদেরকে কারণ দেখাবেন যে কাজটি কেন করেছেন যে কাজের জন্য তারা অসন্তুষ্ট হয়েছেন। তারা বলবে, ঠিক আছে! তাহলে তুমি আমার চাইতে বেশি বুঝ। পরের বার আমি তোমার সাথে তর্ক করব না, কারণ তুমি খুবই যুক্তিবাদী। ঠিক? এবং তারা তাদের অনুভূতিতে আঘাত পাবে। কে হারল যুক্তিতর্কে? আপনি হেরেছেন। কারণ, আপনি তাদেরকে কারণ দেখিয়েছেন। আপনি যেভাবে কারণ দেখান অথবা নারীদের সামনে কোন জিনিস তুলে ধরতে চান, সবচেয়ে ভালো উপায় কি নারীদের সামনে ঐ জিনিসটি তুলে ধরার? যুক্তিতর্কের মাধ্যমে নয়! আপনার স্ত্রী, আপনার মা এর কাছে কোন বিষয় তুলে ধরার সবচেয়ে ভালো উপায় হচ্ছে আমাদের মহানবী (সঃ) এর সুন্নাহ। এক, অনুগ্রহ। দুই, নীরবতা। নীরবতা। আপনি জানেন, একজন বিশ্বাসী ভালো স্ত্রীর জন্যে নীরবতা কতটা কার্যকর? যদি স্বামী নীরব থাকে, সে জিজ্ঞেস করবে, কি ব্যাপার? আমি কি কিছু করেছি? আর যদি স্বামী কিছু বলে, তাহলে আপনার চেয়ে আপনার স্ত্রী অনেক ভালো বলতে পারেন। সে আরও ভালো ক্ষেপনাস্ত্র নিয়ে আসবে যেটা আপনি হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি। পক্ষান্তরে, আপনি যদি নীরব থাকেন, আর যদি এক আউন্স পরিমাণ ভাল কিছু তাঁর মধ্যে থেকে থাকে, সে আপনার কাছে আসবে এবং বলবে, যদিও আমি মনে করি এটা আমার দোষ না, তারপরেও বলছি এটা আমার দোষ। আমি দুঃখিত।
কিন্তু স্বামীকে এই নীরব থাকার কৌশল শিখতে হবে। ভ্রূকুটিপূর্ণ নীরবতা নয় যা আপনার স্ত্রীকে দুরে ঠেলে দেয়। শুধু একটু বেশি দুঃখিত নিষ্পাপ চেহারা দেখানো এখানে সেখানে। এভাবে দেখুন আপনার মায়ের সাথে কাজ হচ্ছে কিনা। এবং তারপর ইনশা আল্লাহ তা’আলা আপনার স্ত্রীর সাথেও কাজ করবে। ঠিক? কিন্তু এটি গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো আপনার দাম্পত্য জীবনের জন্য যথোচিত। রাসুল (সঃ) উনার স্ত্রীদের সাথে চিৎকার চেঁচামেচি করতে পারতেন। তিনি কঠোর কথা বলতে পারতেন। কিন্তু তিনি বলেননি। কারণ, আপনারা জানেন এই সম্পর্কগুলো এত নাজুক যে শয়তান এই সম্পর্কগুলো নষ্ট করে দেয়ার জন্য প্রত্যেকটি সুযোগ কাজে লাগানোর চেষ্টা করে। এবং যখনই শয়তান এই সম্পর্কগুলো ভেঙ্গে দিতে সমর্থ হয়, তখনই মুসলিম সমাজে দুর্নীতি শুরু হয়। আর এটাই হয়। পুরুষরা আর তাদের দৃষ্টি নত রাখে না। এবং অন্যান্য খারাপ জিনিস হতে থাকে। স্ক্যান্ডাল বিস্তার করতে থাকে। খারাপ দাম্পত্য জীবন থেকে এগুলো এভাবেই বিস্তার লাভ করে। মুসলিম সমাজে যত বড় বড় দুঃখজনক ঘটনা ঘটে, যেগুলো নিয়ে মানুষ কথা বলতে চায় না কারণ সেগুলো শুনতে ন্যক্কারজনক, সেগুলো কোথা থেকে শুরু হয়? এগুলো স্বামী স্ত্রীর খেয়াল রাখে না এবং স্ত্রী স্বামীর খেয়াল রাখেনা – এখান থেকেই শুরু হয়।
তাই একজন বিশ্বাসী হিসেবে আমাদের হৃদয় এবং আমাদের ঈমানকে দৃঢ় করতে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি যত্নবান হতে হবে।
আল্লাহ সুবহানওয়াতা’আলা আমাদেরকে সর্বশ্রেষ্ঠ স্বামী হওয়ার এবং সর্বশ্রেষ্ঠ স্ত্রী প্রদান করুন।