ধৈর্যশীল ও বুদ্ধিবৃত্তিক শয়তানের পথভ্রষ্টতার পলিসি…এবং আমরা

“শয়তান বলল(আল্লাহর উপর অভিযোগ দিয়ে)যেহেতু আপনি আমাকে পথভ্রষ্ট করলেন, একারণে আমি অবশ্যই, অবশ্যই, অবশ্যই তাদের(পথভ্রষ্ট করার)জন্য আপনার সরল পথে বসে থাকব”… এখানে শয়তান এরাবিক যে শব্দ ব্যবহার করেছে -তা খুবই গভীর, তা কোন সাধারণ শব্দ নয়। এই একটি শব্দ ভালো করে উপলব্ধি করতে পারলে আমরা শয়তানের পথভ্রষ্টতার পলিসি ধরতে পারব…এবং আমরা এ থেকে বেঁচে থাকব কি না সেটা আমাদের ইচ্ছা আর আল্লাহর রহমতের উপর নির্ভর করবে। আরবীতে জুলুস অর্থ বসে থাকা, কিন্তু কুয়ুদ অর্থ শুধু বসে থাকা নয়, বরং দীর্ঘক্ষণ বসে থাকা, চিন্তাশিলতা নিয়ে বসে থাকা(সূরা আলে ইমরান-১৯১ দেখুন)। এখানে শয়তান শিকার ধরার জন্য বিস্তারিত ও বড়সড় পরিকল্পনা নিয়ে বসে থাকে…কিভাবে? আসুন তবে বসে থাকা(কুয়ুদ) এর একটি উদাহরণ দেখি… একটি বক কিভাবে মাছ ধরার জন্য বসে থাকে(কুয়ুদ)? – সে দেখে তাঁর শিকারের সময় ছায়া পড়বে কি না…যাতে মাছ টের পায়, সে দেখে কখন তীব্র রোধ উঠবে ও মাছ উপরে উঠে আসবে, সে চিন্তা করে এই খাবার এখন না পেলে সে অভূক্ত থাকবে, কষ্টে থাকবে, সে চিন্তা করে কোন এংগেলে গেলে মাছ তাকে দেখবে না, মাছ কোন দিকে মাথা দিয়ে রাখবে এবং সেখানে থাবা দিবে যাতে শক্তি করতে না পারে, —এভাবে বহু চিন্তার পর সে মাছ শিকার করে। এটা কি শুধু বসে থাকলে হবে? …না, কক্ষনই না…বরং দীর্ঘক্ষণ বসে, চিন্তা করে, পরিকল্পনা করে, এর পরেই না তার কাজ সমাধা করতে হয়। তাহলে চিন্তা করুন কত দীর্ঘ সময় তাকে বসে থাকতে হয় একটি শিকার ধরার জন্য। যারা ক্রিমিনলজি পড়েছেন তারা হয়ত জানেন একটি ক্রিমিনালকে ধরতে বা কোন অপারেশন চালাতে কত প্রস্তুতি নিতে হয়, কত মাস, কত দিন ধরে সময় নিয়ে অবস্থান ঠিক করে, লোকজন ঠিক করে, অপরাধীর অবস্থান ভাল মত পর্যবেক্ষণ করে, কোথায়, কিভাবে, কোন পদ্ধতিতে, কত সময় ধরে, কোন অস্ত্র...

অপচয় কী আর শয়তানের ভাই কারা?

কুরআনে আল্লাহ তাআলা অসংযতভাবে ব্যয়কারীদের কথা উল্লেখ করেছেন এবং এর জন্য দুটি শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।একটি হল ‘ইসরাফ।ইসরাফ মানে হল প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খরচ করা।আপনি যদি শপিং এ যান কারণ আপনার একটি শার্টের প্রয়োজন আর আপনি একটি শার্টের পরিবর্তে ২০ টি শার্ট কিনলেন কেবলমাত্র আপনার সামর্থ্য আছে বলে।এ কাজটি এক ধরনের ইসরাফ। অবশ্যই শার্ট আপনার কাজে লাগবে আপনি সেগুলো পরতে পারবেন ব্যবহার করতে পারবেন। কিন্তু আপনি যদি প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত কিছু করে ফেলেন সেটাই হল ইসরাফ।কুরআনে ইসরাফ ব্যাপারটিকে নিচু চোখে দেখা হয়েছে। কিন্তু আরেক ধরনের খরচের বাতিক আছে। মানুষের মাঝে যা এর থেকেও অনেক খারাপ।যেটাকে আল্লাহ বলেছেন ‘তাবযীর। তাবযীর মানে হল আপনি এমন জিনিসে খরচ করছেন যা সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় এটা কোন মৌলিক চাহিদা নয়।আপনি জিনিসটি একেবারেই অর্থহীন কারণে কিনছেন।কোন উল্লেখযোগ্য চাহিদাও পূরণ হচ্ছে না আপনি যা কিনেছেন এই তাবযীর দ্বারা।তাবযীর শব্দটির মানে আপনি বলতে পারেন অতিরিক্ত ব্যয় করা কিংবা অপব্যয় করা, ফালতু জিনিসে খরচ করা। কিন্তু আল্লাহ যেভাবে তাবযীর শব্দটি বর্নণা করেছেন তা হল…”ইন্নাল মুবাযযিরীনা কানু ইখওয়ানাশ শায়াতীন” যারা অপ্রয়োজনীয় খরচ করে তারা শয়তানের ভাই।এই ঘোষণাটি খুব নিষ্ঠুর মনে হতে পারে। আমি শুধু খরচ করছি বলে ধরুন খরচ করছি ভিডিও গেমস এর উপর কিংবা Las Vegas এ একটি ট্রিপে যেতে অনেক টাকা খরচ করছি ইত্যাদি ইত্যাদি।এগুলোর জন্যে আমাকে শয়তানের ভাই হিসেবে কেন আখ্যা দেওয়া হল!আল্লাহ বলেননি এটা হারাম কিংবা এটা করো না কিংবা এ থেকে দূরে থাক।সরাসরি আমাকে শয়তানের অনুগত হিসেবে বিবেচিত করলেন!আল্লাহ এমনটা কেন বললেন! এর পিছনে অনেক কারণ আছে।চলুন ধীরে ধীরে আয়াতগুলো বুঝার চেষ্টা করি। প্রথমেই আল্লাহ বলছেন “রব্বুকুম আ’লামু বিমা ফী নুফূসিকুম ইন তা কুনু সলিহীন”। “তোমাদের রব জানেন তোমাদের অন্তরের গভীরে কী আছে যদি তোমরা প্রকৃত নেককার হয়ে থাক” ।”ফা ইন্নাহু কানা লিল আওওয়া বি...

শয়তানের ধূর্ততা – বাংলা ডাবিংসহ

“তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা এবং জান্নাতের দিকে ছুটে যাও যার সীমানা হচ্ছে আসমান ও যমীন, যা তৈরী করা হয়েছে পরহেযগারদের জন্য। যারা স্বচ্ছলতায় ও অভাবের সময় ব্যয় করে, যারা নিজেদের রাগকে সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, বস্তুতঃ আল্লাহ সৎকর্মশীলদিগকেই ভালবাসেন। তারা কখনও কোন অশ্লীল কাজ করে ফেললে কিংবা কোন মন্দ কাজে জড়িত হয়ে নিজের উপর জুলুম করে ফেললে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নিজের পাপের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আল্লাহ ছাড়া আর কে পাপ ক্ষমা করবেন? তারা নিজের কৃতকর্মের জন্য হঠকারিতা প্রদর্শন করে না এবং জেনে-শুনে তাই করতে থাকে না। তাদেরই জন্য প্রতিদান হলো তাদের পালনকর্তার ক্ষমা ও জান্নাত, যার তলদেশে প্রবাহিত হচ্ছে প্রস্রবণ যেখানে তারা থাকবে অনন্তকাল। যারা কাজ করে তাদের জন্য কতইনা চমৎকার প্রতিদান।” [সূরা আলে ইমরানঃ ১৩৩- ১৩৬...

রোগাক্রান্ত অন্তর

আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেন, فِي قُلُوبِهِم مَّرَضٌ “তাদের অন্তঃকরণ ব্যধিগ্রস্ত……” [সূরা আল-বাকারাঃ ১০] এই আয়াতের আরেকটি লক্ষণীয় বিষয় হলো: আল্লাহ তা’আলা এখানে ‘ফি সুদূরিহিম মারাদুন’ বলেননি, তিনি বলেছেন ‘ফি কুলুবিহীম মারাদুন’। ‘সুদুর’ এবং ‘কুলুব’ এই দুটি শব্দের মধ্যে অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে। আমরা সবাই কম বেশি ‘সূরা নাস’ জানি। যেখানে বলা হয়েছে ”الَّذِي يُوَسْوِسُ فِي صُدُورِ النَّاسِ আল্লাজি ইউওয়াস বিসু ফি সুদুরিন নাস — যে কুমন্ত্রণা দেয় মানুষের বুকের মধ্যে”। আমরা কিন্তু সেখানে ‘কুলুবিন নাস’ বলি না। যদি ‘কুলুবিন নাস’ বলা হতো তাহলে সূরা নাসের এই আয়াতের অর্থ হতো ‘সে, যে মানুষের (হার্ট) হৃদয়ের মধ্যে কুমন্ত্রণা দেয়।’ কিন্তু ‘সুদূরিন নাস’ বলার কারণে এইখানে অর্থ হয়ে যাচ্ছে ‘সে, যে মানুষের বুকের মধ্যে কুমন্ত্রণা দেয়।’ এখন আমরা যদি খেয়াল করি তাহলে দেখবো যে হার্ট এবং বুক এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। বুক হচ্ছে একটা ভল্ট এর মত, একটা সুরুক্ষিত জায়গা। আর হার্ট হচ্ছে এই সুরুক্ষিত জায়গার মধ্যে রাখা মূল্যবান বস্তু। এখন, শয়তানের ক্ষমতা হচ্ছে আপনার বুকের মধ্যে প্রবেশ পর্যন্ত। নিজের ক্ষমতাবলে সে আপনার বুকের ভিতরে ঢুকতে পারে। কিন্তু নিজের ক্ষমতাবলে আপনার হৃদয়ের মধ্যে প্রবেশের ক্ষমতা তার নেই। ব্যাপারটা পরিষ্কারভাবে বুঝার জন্য আপনার হৃদয়কে তুলনা করুন আপনার ঘর এর সাথে, আর বুক হচ্ছে সেই ঘর এর চারপাশে সীমানা প্রাচীর। শয়তান আপনার সেই সীমানা প্রাচীর এর ভিতরে প্রবেশ করতে পারে কিন্তু যেই পর্যন্ত না আপনি তাকে ঘর এর দরজা খুলে ভিতরে আসতে দিচ্ছেন, ততক্ষণ সে আপনার ঘরের ভিতরে ঢুকতে পারবে না। অর্থাৎ আপনার হৃদয়ের বাইরে শয়তান বসে আছে, এবং আপনার হৃদয়ের বন্ধ দরজায় সে অবিরাম করাঘাত করে যাচ্ছে, বিভিন্ন উপায়ে আপনাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে (লোভনীয় অফার এর কথা বলে) দরজা খোলানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমাদেরকে শয়তানের এই কুমন্ত্রণা অনুভব করে সাবধানে থাকতে হবে...
জাহান্নামে অল্প কিছু দিন

জাহান্নামে অল্প কিছু দিন

এই দলটি খুবই সুন্দর যাদের আল্লাহ ভালবাসেন। কারণ তারা আল্লাহকে কেবলমাত্র একটি অনুরোধই করে, “হে আল্লাহ, আমি জাহান্নাম দেখতে চাই না।” আমি চাই আমাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখো। আমি এর খেকে দূরে থাকতে চাই। জাহান্নামের শাস্তি অনেক কঠিন। এটা অনেক বড় শাস্তি, আমি তা সহ্য করতে পারব না, আমি এর সম্পর্কে চিন্তাও করতে পারি না। ইহা একটি ভয়ঙ্কর জায়গা- অল্প বা অধিক সময়ের জন্য। আমি এই অংশটুকু আপনাদের কাছে ব্যাখ্যা করব। ইহা একটি ভয়ঙ্কর জায়গা “মুস্তাকাররান”-অল্প সময়ের জন্য, “ওয়া মুকামা”-অধিক সময়। এমন কিছু লোক আছে, যেমনটি আমি ছিলাম, আমি নিশ্চিত আপনারা এটা ইউটিউবে দেখেছেন, যদি আপনারা আমার ভিডিও ফলো করে থাকেন, ফ্লোরিডায় এক যুবতী মেয়ে একটি ইউথ প্রোগ্রামে আমাকে একটি লিখিত প্রশ্ন করেছিল। সে বলেছিল, “আমি অনেক হারাম কাজ করেছি, কিন্তু আমি চিরদিনের জন্য জাহান্নামে যাব না, তাই নয় কি? কারণ আমি মুসলিম। তাই আমি জাহান্নামে গেলেও তা চিরদিনের জন্য নয়।” এই দোয়াটি বলে, “আমি জাহান্নামে যেতে চাই না, অধিক সময়ের জন্যও নয়, অল্প সময়ের জন্যও নয় আমি তা দেখতে চাই না”। আল্লাহ তাদের ভালোবাসেন যারা বোঝে যে , তারা জাহান্নামের কোন অংশই চায় না- ছোট কিংবা বড়।কিছু মুসলিম আছে যারা বলে, “অবশ্যই আমি চিরদিনের জন্য জাহান্নামে যেতে চাই না। হয়তো এক সপ্তাহের জন্য। হয়তো আমরা এতটুকু খারাপ কাজ করতে পারি।” আপনারা জানেন, এটা ইহুদীদের থেকে এসেছে।তারা বলেছিল, “অল্প দিনের জন্য আমরা তা সামলাতে পারব।এর পরেই জান্নাত।তাই দুনিয়ায় ফুর্তি কর, এক সপ্তাহ শাস্তি ভোগ কর এবং অতঃপর জান্নাতে ফিরে যাও! এ আর এমন কি?” আল্লাহ বলেন, “তারা করুণাময়ের প্রকৃত গোলাম নয়”। করুণাময়ের প্রকৃত গোলাম সেই বিশেষ লোকেরা। যারা বলে, “হে  আল্লাহ, আমি জাহান্নাম দেখতে চাই না, এক দিন বা দুই দিনের জন্য নয়, এক মিনিট বা এক সেকেন্ডের জন্যও...