আমাদের জীবনের কয়েকটি পর্যায় (৩য় পর্ব)

আল্লাহ বলেন – كَمَثَلِ غَيْثٍ أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ -দুনিয়ার উপমা হল বৃষ্টির মত…. আরবিতে বৃষ্টির জন্য যে শব্দটি ব্যবহৃত হয় তা হলো – ‘মাতার।’ কিন্তু ‘গাইস’ শব্দের অর্থ হলো – পরিমানমত বৃষ্টি, এতো বেশি নয় যার ফলে জমিনে বন্যা তৈরি হয় আবার এতো কমও নয় যার কারণে জমিনে গাছ জন্মাবে না। একেবারে পরিমানমত বৃষ্টি। আর এই ধরণের বৃষ্টিকে বলা হয় ‘গাইস।’ এই জন্য যখন আমরা আল্লাহর কাছে বৃষ্টির জন্য দোয়া করি আমরা ‘সালাতুল ইস্তিগাসা’ আদায় করি। কারণ আমরা যেমন তেমন বৃষ্টির জন্য দোআ করছি না, আমরা দোয়া করছি ‘গাইস’ এর জন্য। আমরা পরিমানমত বৃষ্টির জন্য দোয়া করছি। কারণ খারাপ বৃষ্টির কারণে মানুষ মারা যেতে পারে, বন্যা হয়ে যেতে পারে, এই বন্যা আপনাকে মেরে ফেলতে পারে। আল্লাহ আকাশ থেকে পাথরের বৃষ্টিও বর্ষণ করতে পারেন। তাই আপনি ‘গাইস’ চাইবেন, যে বৃষ্টি প্রাণের সঞ্চার করে। তো, আল্লাহ বলছেন, দুনিয়ায় যেসব কিছুর পেছনে তোমরা ছুটে চলো তার উপমা হলো – পরিমানমত বৃষ্টির মত, أَعْجَبَ الْكُفَّارَ نَبَاتُهُ – যে কৃষক জমিনে বীজ বপন করেছে, সে এই বৃষ্টি দেখে দারুণ খুশি, কারণে এই বৃষ্টির ফলে তার জমিনে ফসল ফলবে। এই উপমায় একটি সুন্দর চিত্র অঙ্কন করা হয়েছে। কৃষক এর জন্য আরবিতে যে শব্দটি ব্যবহার করা হয় তা হলো – ‘কুফ্ফার।’ এখন আমরা সাধারণভাবে ‘কাফের’ শব্দের একটা অর্থ জানি। ‘কাফের’ শব্দের অর্থ কী? অবিশ্বাসী। কিন্তু এই আয়াতে কাফের শব্দের অর্থ এটা নয়, সূরা হাদীদের এই আয়াতে ‘কুফ্ফার’ শব্দের অর্থ হলো- যে জমিনে বীজ লুকিয়ে রাখে। এটাই কুফ্ফার শব্দের শাব্দিক অর্থ। একজন অবিশ্বাসীকে এই জন্য কাফের বলা হয় কারণ সে সত্য লুকিয়ে রাখে। এই জন্যই তাকে কাফের বলা হয়। যাইহোক, একজন কৃষককে সারা বছর ধরে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। সর্ব প্রথম কোন কাজটা তাদের করতে হয়? বীজ...

স্থায়ীভাবে অন্তরের শান্তি কীভাবে অর্জন করা যায়

একজন শ্রোতার প্রশ্ন ছিল, ঈমানের বিভিন্ন পর্যায় আছে। ঈমান কি শান্তির সাথে সম্পর্কিত ? শান্তির বিভিন্ন পর্যায় আছে। আমি কি ঈমান ছাড়া কিংবা ঈমানদার হয়ে শান্তি লাভ করতে পারি? কোন ব্যক্তি অল্প ঈমান নিয়ে শান্তি পেতে পারেন কিনা? গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আসলে এটি একটি সুন্দর প্রশ্ন। এবং আল্লাহ একটি আয়াতে বর্ণনা করেছেন, যেটা আমি আগে তেলাওয়াত করেছি ,”অতএব, উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি লাভের অধিক যোগ্য কে, যদি তোমরা জ্ঞানী হয়ে থাক। যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে জুলুমের সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যেই শান্তি…..(৬; ৮১-৮২) এটি একটি চমৎকার উত্তর। আল্লাহ বলেছেন, দু,দিকের কোন দিক বেশি শান্তি প্রত্যাশা করে। অন্য কথায় ইসলাম ছাড়াও এমন কিছু জিনিস আছে যার মাঝে মানুষ মাঝে মধ্যে শান্তি খুঁজে পায়। কিন্তু কে নিয়মিত, বিরামহীন এবং সারাজীবন ধরে শান্তি পাওয়ার যোগ্য? এরা ঐসব মানুষ যারা সত্যিকারভাবে ঈমান আনে এবং ঈমান আনার পর মন্দ কাজ করে তাদের ঈমানের অধিকার ক্ষুণ্ণ করে না। এখন আমি আপনাদের বলছি , কে এটা আপনাদের বলতে পারবে , কেউ একজন ৪ ঘণ্টা একই অবস্থায় থেকে মেডিটেশন করেছে এবং নড়াচড়া করছে না। আপনি তার দিকে তাকিয়ে দেখেন সে দেখতে সত্যি শান্তিময়। সে সত্যিকার অর্থে এখন শান্ত এবং তার ভিতরে অনেক শান্তি আছে। মানুষ ইয়গা করে এবং এর মধ্যেও শান্তি খুঁজে পায়। ঠিক আছে। কিছু মানুষ সাওনায় বসে শান্তি পায় । কেউ কেউ ক্লাসিক্যাল গান শুনে শান্তি খুঁজে পায়। সুতরাং আপনি যদি কারো শান্তি খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে কথা বলেন, তারা বলে আমি ভিন্ন ভিন্ন জিনিস থেকে শান্তি খুঁজে পাই। কেউ হয়ত সমুদ্রের ধারে বসে আছে এবং সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে থেকেই শান্তি খুঁজে পাচ্ছে। কিন্তু এটা হচ্ছে অস্থায়ী ভাবে আবেগের শান্ত / স্থির অবস্থা। কিন্তু আমরা যখন বলি শান্তি খুঁজে পাই, এটা আসলে ১...

কুর’আন সান্ত্বনা দান করে, কুরআন প্রশান্তি দান করে

তৃতীয়টিঃ জীবনের পরীক্ষার মোকাবেলায় মানসিক শক্তির অন্বেষণ করা। এটা অনেক বড় একটা ব্যাপার। প্রতিদিনই আমাদের পরীক্ষা করা হয়। কখনো এই পরীক্ষা হয় ছোট, কখনো বড়। চলুন, বড় পরীক্ষা নিয়ে কথা বলি। জীবনে কোন কোন ধরণের বড় পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হয়? জোরে বলুন। মৃত্যু বড় পরীক্ষা। পরিবারে কারো মৃত্যু, প্রিয় কারো মৃত্যু, কোন বন্ধুর মৃত্যু। অন্য কোন পরীক্ষা? টাকা-পয়সা সংক্রান্ত, অর্থনৈতিক সমস্যা। হুম… অসুস্থতা, ব্যর্থতা, হতাশা। বায়্যিনাহ এক্সাম? না, বায়্যিনাহ এক্সাম নয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, শুক্রবারের বায়্যিনাহ পরীক্ষাও একটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ 🙂 । পরিবার এবং সন্তান-সন্ততিও পরীক্ষা হতে পারে। আমাদের সম্পর্কগুলোও পরীক্ষা হতে পারে। কখনো কখনো আমরা পিতা-মাতার সাথে সমস্যায় জড়িয়ে পড়ি। কোন কোন সময় স্বামী/স্ত্রীর সাথে, ভাইবোনের সাথে, বন্ধু- বান্ধবের সাথে সমস্যায় জড়িয়ে পড়তে পারি। বিচ্ছিন্নতাও পরীক্ষা হতে পারে; আপনি একাকীত্ব অনুভব করেন, আপনি মনে করেন কেউ আপনাকে বুঝতে পারে না, আপনি মনে করেন সবাই আপনাকে ঘৃণা করে। আসক্তিও পরীক্ষা হতে পারে। এখন ব্যাপারটা হলো, মানুষ যখন কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যায়, তাদের কোন জিনিসটি বেশি প্রয়োজন? আবার জোরে বলুন। সান্ত্বনা, সমর্থন, কারো সাথে মন খুলে আলোচনা করা। জানেন? কত মানুষ আমার কাছে আসে আর বলে – আমি জাস্ট দুই মিনিট আপনার সাথে কথা বলবো। কিন্তু পরে আসলে তা দুই ঘণ্টায় পরিণত হয়। আমি একটা সমস্যায় ভুগছি, আর এ ব্যাপারে শুধু আপনার সাথেই কথা বলা যাবে। এই গ্রহে আর কেউ আমার সমস্যা বুঝতে পারবে না। একমাত্র আপনি ছাড়া কারণ আপনি ইউটিউবে…হা হা। মানুষের সমস্যাগুলোকে বাতিল করে নয়… বাস্তবিক অর্থেই মানুষ কারো কাছে নিজের সমস্যার কথা বলতে চায়। মানুষ সবচেয়ে বেশি চায় কেউ যেন তাদেরকে আশার বাণী শোনায়, হতাশার অন্ধকার সুড়ঙ্গের শেষে আশার আলো দেখায়, তাদের মাঝে যেন এই বিশ্বাস তৈরি করে যে তারা এই সমস্যা মোকাবেলা করতে পারবে, তাদের পরীক্ষার...
বিনয়ের সাথে ভদ্রভাবে চলা

বিনয়ের সাথে ভদ্রভাবে চলা

কুরআন উইকলি তে দেয়া উস্তাদ নুমান আলী খানের “Quranic Gems”  সিরিজ থেকে নেয়া। ” আল্লাহ্‌র বান্দারা পৃথিবীতে বিনম্রভাবে চলাফেরা করে এবং যখন অজ্ঞলোক তাঁদের আক্রমণ করে তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের মোকাবেলা করে। ”    সুরা ফুরকান-৬৩ আসসালামু আলাইকুম কুরআন উইকলি, আল্লাহ্‌ সুবাহানাহু ওয়া তায়ালা সুরা আল-ফুরক্বান এর শেষে সুরা নম্বর ২৫ এ বর্ণনা করেছেন কারা আর-রাহমান (পরম করুণাময়)-এর বান্দা। আল্লাহ্‌র অনেক নাম আছে জা তিনি এখানে উল্লেখ করতে পারতেন, আল্লাহ্‌র বান্দা, সৃষ্টিকর্তার বান্দা, মহাজ্ঞানীর বান্দা, কিন্তু যখন তিনি বলছেন, পরম করুণাময়ের বান্দা এর মানে যেন উনি বলছেন এই মানুষগুলোর সাথে তাঁর সম্পর্ক তাঁর অভাবনীয় ভালোবাসা, দয়া এবং মমতার ভিত্তিতে। তার মানে এমন এক সত্তার বান্দা যিনি অনেক মমতাময় , যিনি অনেক বেশি ভালোবাসেন, যিনি অভাবনীয় রকম দয়া দেখান তাঁর বান্দা। তার মানে এই মানুষগুলো বিশেষ ধরণের মানুষ। এইখানে আল্লাহ্‌ যাঁদের কথা বলছেন তাঁরা খুবই বিশেষ ধরণের মানুষ। সকল বিশ্বাসীরাই স্পেশাল কিন্তু এঁরা আরো অনেক অনেক বেশি স্পেশাল। এবং এই স্পেশাল মানুষদের যাদেরকে তিনি বলেছেন “ওয়া ই’বাদুর রাহমান”। তাঁদের প্রথম গুণ হচ্ছে, الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا “আল্লাজীনা ইয়ামশূনা আ’লাল আরদি হাওনান” তাঁরা পৃথিবীতে চলে, পৃথিবীতে তাঁরা চলাফেরা করে বিনম্রতার সাথে هَوْنًا ‘হাওনান’ কোমলভাবে এবং তাঁদের নিজেদের দুর্বলতা স্বীকার করে। আপনি জানেন যখন আমরা কোন কিছু অর্জন করি, আমরা একধরনের শক্তি, জোড় আর ক্ষমতা অনুভব করি। এবং ঐসব মুহূর্ত আসলে আমাদের নগণ্যতা অনুভব করার কথা। এটা প্রথম কথা, هَوْنًا ‘হাওনান’ মানে এটাও যে আপনি অন্যদের সামনে নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন করবেন না, আল্লাহ্‌ এ সম্পর্কে কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ্য করেছেন। উদাহরণ স্বরূপ, পিতামাতার সামনে নম্রভাবে মাথা নত করে দেয়া এর মানে কী? এরমানে হলো আপনি পূর্ণবয়স্ক, আপনি পেশাজীবী, আপনার টাকা আছে, আপনার নিজের গাড়ী আছে, বাড়ী আছে আর আপনার বাবা-মা রিটায়ার্ড, বৃদ্ধ।...