প্রাইভেট সেক্টর এবং একাডেমিয়ার গুরুত্ব

[বক্তব্যটি আমেরিকার প্রেক্ষাপটে দেয়া হয়েছে] আপনার দৈনন্দিন জীবনে সরকারের প্রভাব কতটুকু? আমি জানি, আপনি সরকারকে প্রতি বছর ট্যাক্স দিয়ে যাচ্ছেন। এ ব্যাপারটি আপাতত একপাশে রেখে যদি আপনার প্রাত্যাহিক জীবনের কথা ভাবেন, তাহলে আপনার উপর সরকারের প্রভাব কতটুকু? উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, এই দেশে মানুষের মূল ভাবনা হলো ফ্যাশন সচেতনতা, জীবনের সাফল্য-ব্যর্থতা, মন-মানসিকতা ইত্যাদি। আপনারা জানেন, এসবের পেছনে সরকারের কোনো ভূমিকা নেই। প্রাইভেট সেক্টরের প্রভাবেই এসব বিষয়ে মানুষ প্রভাবিত হচ্ছে। এগুলোর পেছনে আছে বিনোদন জগত, একাডেমিয়া এবং বড় বড় করপোরেশনগুলো, যারা আমাদের কাছে তাদের পণ্য বিক্রি করছে, বিজ্ঞাপন দিচ্ছে। এমনকি মেডিক্যাল রিসার্চসহ বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থা কর্তৃক অর্থায়নকৃত সকল ধরনের গবেষণা প্রকল্প ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আমাদের জীবনকে প্রভাবিত করছে। তাহলে বুঝা যাচ্ছে, আপনার দৈনন্দিন জীবনকে যেসব বিষয় প্রভাবিত করে তার বেশিরভাগই সরকারী নয়, বেসরকারী খাতের উদ্যোগ। এই ব্যাপারটি বুঝতে পারলে আমাদের এখন কী নিয়ে চিন্তা করার কথা? আমরা যদি সত্যিই এই সমাজকে আমাদের আদর্শে পরিচালনা করতে চাই, তাহলে আমাদেরকে কীসের নিয়ন্ত্রণ নিতে হবে? বেসরকারী খাতের। এটি একটি অবাধ ক্ষেত্র। অথচ মুসলমানরা এখনো এই সেক্টরে কাজ শুরুই করতে পারেনি। মিডিয়াতে কয়জন মুসলমান আছে? বর্তমানে মিডিয়া সরকারের চেয়েও বেশি শক্তিশালী। নির্বাচনের গতিপ্রকৃতি পাল্টে দিতে পারে মিডিয়া। মিডিয়া প্রেসিডেন্টকে অভিশংসনের মুখে পর্যন্ত ঠেলে দিতে পারে। মিডিয়া জনমানসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। ‘ওমাবা একজন মুসলিম’ – এ ধরনের চটকদার ও বিপজ্জনক গুজব মিডিয়াই ছড়াতে পারে পারে। এসব করেও তারা পার পেয়ে যায়। কারণ, মিডিয়া অত্যন্ত শক্তিশালী। তারপর একাডেমিয়ার কথা ধরুন। এই সমাজের যারা নেতা, তাদের চিন্তাভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলো। একাডেমিয়া জগতে কয়জন মুসলমান আছে? কয়জন মুসলিম নৃবিজ্ঞানী, রাজনীতি বিজ্ঞানী কিংবা ইতিহাসবিদ রয়েছে? এসব ক্ষেত্রে আমাদের পদচারণা নেই বললেই চলে। আমরা এ দেশে আসছি এবং ভাবছি, ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হওয়াই বুঝি জীবনের সফলতা। তা...

ইসলামের অত্যাবশ্যকীয় উপাদানসমূহ

আমরা কাউকে অপছন্দ করি, কাউকে ভালোবাসি। ঠিক বিপরীত বিষয় এদুটি। এভাবে আপনি যে আল্লাহর প্রিয়, আল্লাহ আপনাকে ভালোবাসে কিনা সেটা বুঝতে পারলেই উপলব্ধি করতে পারবেন। ইসলাম কেবল হানাফি-সালাফি নিয়মনীতি না – এজন্য আপনার ফিকহের সাথে না মিললেই আরেকজনের মসজিদ ধ্বংস করে দিবেন যেখানে আল্লাহর জন্য সিজদা করা হয় – না এইটা ইসলাম না। ফিকহটা আপনার, কিন্তু সেই মসজিদে যে সিজদা করা হয় সেইটা আল্লাহকে ভালোবাসার জন্য। আবার আপনি বিশুদ্ধ জিনিসের দাওয়াত দিবেন কিন্তু বিশুদ্ধ পদ্ধতিতে দিবেন না সেইটাও ইসলাম না। আপনি সারা জীবন নামাজ পড়বেন, কিন্তু কোনো এক বা দুইজনের প্রতি জুলুম করেছেন, আল্লাহর অন্য সৃষ্টির উপর জুলুম করেছেন সেজন্য আপনার সমস্ত জীবনের ইবাদাতই শেষ হয়ে যেতে পারে। কারণ আপনি আল্লাহর ভালোবাসার ঠিক বিপরীত একটা দুইটা চরম কাজ করেছেন। আপনি প্রচুর ইসলামী কাজ করেন, কিন্তু সাথে আল্লাহর সৃষ্টিকে কষ্ট দিলেও আপনার সমস্ত আমল বরবাদ হয়ে যেতে পারে। এক মহিলা অনেক নামাজ পড়তো, সাদাকাও করতো অনেক কিন্তু সে একটি বিড়ালকে না খাইয়ে রেখেছিলো রেখেছিলো, সেজন্য তার সমস্ত আমল শেষ, জাহান্নামে গিয়েছিলো। কারণ সে আল্লাহর সৃষ্টিকে কষ্ট দিয়েছিলো, যেটা আপনার সমস্ত আমলের বিপরীত, ভালোবাসার বিপরীত। আবার আরেকজন কেবল ফরজগুলো মানতো, কিন্তু কাউকে কষ্ট দিতো না, সে জান্নাতে গিয়েছিলো। বোঝা গেছে? ইসলামের মৌলিক বিষয় বুঝবেন কোনগুলো? আল্লাহকে ভালোবাসার জায়গাগুলো বুঝুন। সিজদায় বেশি বেশি থাকুন, আল্লাহকে ভালোবাসার কাজগুলো দেখুন। পোস্টের পাশাপাশি নিচের উস্তাদের লেকচারটি দেখুন, এই বিষয়েই পূর্বে আমাদের ডাবিং...

দৃঢ় প্রত্যয়ী মুসলিমের দুইটি অসামান্য উদাহরণ

আবু হুরাইরা (রা) বর্ণনা করেন, একদা হারিসা নামক এক যুবক আনসার সাহাবি রাসূল (স) এর নিকট আগমন করেন। রাসূল (স) তাকে দেখে বললেন, আজ সকালটা তোমার কেমন যাচ্ছে, হে হারেসা? হারেসা (রা) জবাবে বললেন, আজ সকালে আমি একজন দৃঢ় প্রত্যয়ী মুসলিম, হে আল্লাহর রাসূল (স)। রাসূল (স) বললেন, সবকিছুর একটা প্রমান রয়েছে; তোমার বক্তব্যের প্রমান কী? হারেসা (রা) বললেন – দুনিয়া আমার মনকে আর আচ্ছন্ন করে রাখে না। আমি রাতে নামাজ আদায় করি, আর দিন কাটাই রোজা রেখে। আমার মনে হচ্ছে যেন আমি আমার মহান রবের সিংহাসন দেখতে পাচ্ছি। আমার মনে হয় যেন আমি দেখতে পাচ্ছি যে, জান্নাতবাসীরা মহা আনন্দ উৎসবে মেতে আছেন; আর জাহান্নামবাসীরা আগুনে পোড়ার আজাব উপভোগ করছে। অতঃপর রাসূল (স) তাকে বললেন – “তুমি ঈমানের বাস্তব অবস্থা চিনতে পেরেছো। এখন এর উপর সব সময় অটুট থেকো।” আর এ বিষয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। ঈমান এমন নয় যে আপনি একটা লেভেল অর্জন করে ফেলেছেন। যেমন, আপনি যদি পি এইচ ডি ডিগ্রি অর্জন করেন কেউ আপনার কাছ থেকে এটা ছিনিয়ে নিতে পারবে না। এটা আপনার অর্জন। ঈমানের ব্যাপারটা এমন নয়। ঈমানের জন্য নিয়মিত পরিশ্রম করতে হয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (স) বললেন – “কেউ যদি এমন কাউকে দেখতে চায় যার অন্তর থেকে ঈমানের আলো বিচ্ছুরিত হচ্ছে সে যেন হারেসার দিকে তাকায়।” আমার অত্যন্ত প্রিয় আরেকটি বর্ণনা দিয়ে আজকের আলোচনার সমাপ্তি টানবো। এটাও দৃঢ় প্রত্যয়ী ঈমানের উদাহরণ নিয়ে। দৃঢ় ঈমান বলতে আসলে কী বুঝায়? অধ্যাত্বিকতা বলতে আসলে কী বুঝায়। তাবারানী শরীফের একটি অসাধারণ বর্ণনা… “রাসূল (স) একদিন এক বেদুঈনের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যখন সে আল্লাহর নিকট দোয়া করছিল…” এখন বেদুইন বলতে আসলে কারা? সহজভাবে বললে আমাদের সময়কার গ্রামাঞ্চলের সহজ সরল মানুষদের মত। যারা খুবই সিম্পল জীবন যাপন করতেন। তো, রাসূল (স) থামলেন এবং সে...

মুসলিমরা কি এলিয়েনে বিশ্বাস করে?

মহাকাশের কাল্পনিক জীব অর্থাৎ এলিয়েন সম্বন্ধে আমাদের বিশ্বাস কি? মুসলিমরা কি এলিয়েন বিশ্বাস করে? আল্লাহ কি এই ধরনের কিছু সৃষ্টি করেছেন? নাকি আমরাই আল্লাহর একমাত্র সৃষ্টি? ইবনে তাইমিয়া(র) সহ অন্যান্য কয়েক জন আলেম মনে করেন আল্লাহ তাআলা এই ধরনের কিছু সৃষ্টি করেছেন। এবং এটি সৃষ্টিকর্তা হিসেবে আল্লাহ তাআলার নৈপুণ্য বর্ণনা করে। ‘খালাক্ব’ অর্থাৎ তিনি যিনি সৃষ্টি করতে থাকেন। এই ধারণাটি অর্থাৎ আমরা আল্লাহ তাআলার একমাত্র সৃষ্টি এবং আমরা ছাড়া আল্লাহতালার আর কোন সৃষ্টিই থাকবে না, এর দ্বারা আল্লাহর সৃষ্টি কর্তা হিসেবে চিরস্থায়ীত্ব এবং নিরবচ্ছিন্নতার ওপর সন্দেহ পোষণ করা হয়। এবং ইবনে তাইমিয়া বলে ছিলেন এটি আল্লাহর মহত্বের বিপরীত। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন আল্লাহ সুবাহানাতালা সৃষ্টি করে যাচ্ছেন এবং ক্রমাগত সৃষ্টি করে যাবেন, যার কোন শেষ নেই। এবং আমরা যা জানি অর্থাৎ আমাদের এই জগত আল্লাহ এভাবেই (সৃষ্টি) শুরু করলেন এবং একদিন আমাদের বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। এটি হচ্ছে শুধু আমাদের অংশটুকু, এরকম আরও আছে। আমাদের আগেও ছিল এবং আমাদের পরেও থাকবে। তারা আমাদের সমসাময়িক কিনা এ নিয়ে ইবনে তাইমিয়া কোন মত দেননি। বরং ইবনে তাইমিয়া আল্লাহ তায়ালার ক্রমাগত সৃষ্টি করা নিয়ে কথা বলেছেন। কিন্তু আমাদের সমসাময়িক অন্য জগত থাকার সম্ভাবনার ব্যাপারে কোন অস্বীকৃতি নেই। অথবা আমাদের সমসাময়িক অন্য কোন সৃষ্টি। এবং বহু প্রমাণ আছে যা খুব সম্ভবত এই দিকেই ইঙ্গিত করে। সুতরাং দয়া করে আমাকে কোন ধরনের কটুক্তি করবেন না, এটা টুইট করে বসবেন না যে ইয়াসির কাদরী বলছেন এলিয়েন আছে। বরং আমি বলছি কিছু প্রমান আছে যা আল্লাহ তাআলার এ ধরনের সৃষ্টি সম্পর্কে ইঙ্গিত করে। এই প্রমাণগুলো কি? প্রথমত, ”يخلق مالا تعلمون” তিনি এমন জিনিস সৃষ্টি করেছেন যা সম্পর্কে তুমি কখনো জানবেনা। তুমি কখনো জানবেনা অর্থাৎ এমন কোন জিনিস যা তোমার দেখা সম্ভব নয়।وَيَخْلُقُ مَا لَا تَعْلَمُونَ আর তিনি...

নাস্তিক হবার ৩টি কারণ

অনেক মুসলিমের মাঝে একটি আচরণ আমি খেয়াল করেছি, সেই মনোভাবটি সর্বপ্রথম আমি নিজের মাঝেই খুজে পেয়েছিলাম। তাই আমি জানি এমনটা হয়। কারণ এটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা—যে কুরআন বর্তমান সময়ের সাথে সম্পৃক্ত নয়। কুরআন আমার জীবনের ব্যপারে কিছু বলছে না। এটা এমন কিছু নিয়ে বলছে যা অনেক আগেই ঘটে গেছে। আমি যাদেরকে চিনি যারা কুরআন নিয়ে কথা বলে, তাদেরকে দেখলে মনে হয় তারা ৫০০ বছর আগেই পড়ে আছে। তারা আধুনিক মানুষের মত নয়। তারা যখন কথা বলে, এমনভাবে কথা বলে যেভাবে আর কেউই কথা বলে না। আমার বন্ধুরা, সহকর্মীরা, শিক্ষকরা কেউই এইভাবে কথা বলেনা। আপনি একজন খাতিবের বন্ধু হতে পারেন। তারা এমনভাবে কথা বলে যেন তারা ভিন্ন কোন যুগের মানুষ যাদের সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। ধর্মীয় আলোচনার পর আমার প্রথম মনোভাব ছিল যে এটি এই সময়ের জন্য নয়। এটি একটি পুরাতন কিছু, প্রাচীন কিছু মানুষের জন্য। এই ধর্ম পালন করে এই যুগে বেচে থাকা সম্ভব নয়। অসম্ভব। আর আমি যত লেকচার শুনেছি সব সময়ই তারা এই কথাই বলত যে এখনকার সময়টা কতটা খারাপ। এখন বেশ খারাপ সময়, আগে কতই না ভালো সময় ছিল। তো আমি নিজেকে বলতাম যে কিন্তু ঐ সময় তো চলে গেছে। আর এখন খারাপ সময় চলছে। তো কি আর করার? এটি প্রথম সমস্যা। দ্বিতীয় যে সমস্যা আমি দেখেছি। আবারও, আগে নিজের মাঝেই দেখেছি এরপর আরও লাখ লাখ মানুষের মাঝে যে এই ধর্ম, এই বইটি খুবই কঠোর। আর কঠিন। যেই নিয়ম কানুন আছে তা পালন করা সহজ নয়। এই নিয়ম নীতি গুল কিছু জিনিস থেকে দূরে থাকতে বলে, কিছু করতে বলে। কিন্তু এগুলোর সংখ্যা অতি মাত্রায় বেশি, বেশ কঠিন এবং প্রাসঙ্গিক নয়। পালন করা সম্ভব নয়। আর যদি পালন করতেই হয়, তবে আমাকে চরমপন্থি হতে হবে। সাধারন-সুখী কেউ...