সুশৃঙ্খল জীবন যাপন করুন

প্রথমেই আপনি নিজেকে নিয়মানুবর্তী করে গড়ে তুলুন। আমাকে এবং আপনাকে এ ব্যাপারে যত্নশীল হতে হবে। আচ্ছা নিয়মানুবর্তিতা বলতে আপনি কি বুঝেন? সকাল সকাল ঘুমিয়ে পড়ুন। এশার সালাতের পর আপনি ঘুমিয়ে পড়ুন। রাত ১২.৩০ এ আপনি আড্ডা জমিয়ে বসবেন না, সিনেমা দেখতে বসে পড়বেন না, বন্ধুদের সাথে ঘুরতে বের হবেন না, রাতভর ইসলামী লেকচার শোনাকে জরুরী মনে করবেন না। কখনও করবেন না। এগুলো আপনার জন্য মোটেও কল্যাণ বয়ে আনবে না। এশার পর শুয়ে পড়ুন এবং ফজরের আগে উঠে পড়ুন। নিজের জন্য ১৫, ২০ অথবা ৩০ মিনিট সময় বরাদ্দ রাখুন। ভাবছেন এটা একদম অসম্ভব। রাত জেগে নেটফ্লিক্স দেখার কারনেই আপনার কাছে এটা অসম্ভব মনে হচ্ছে। শুধু এ কারনেই আপনার কাছে এটা অসম্ভব মনে হচ্ছে। আপনার রাতযাপন উন্নত করুন। রাতযাপন ঘুমের জন্য নির্দিষ্ট করুন কারণ এতে করে অন্তত প্রতি রাতে আপনি গুনাহের বোঝা বাড়িয়ে দিচ্ছেন না। অন্তত আপনি নিজের অন্তরকে গুনাহের মাধ্যমে কলুষিত করার হাত থেকে রক্ষা করলেন। অন্তত আপনি ঘুমাচ্ছেন এবং সে সময়টাতে পাপ করা থেকে মুক্ত। ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ুন। অন্তত প্রতিদিন সময়মত ফজর সালাত আদায় করার ব্যাপারে সচেষ্ট হোন। আর ছেলেরা এখানে যারা আছেন অন্তত সপ্তাহে একদিন মাসজিদে ফজরের সালাত আদায় করুন। আমি প্রতিদিন বলছি না অন্তত সপ্তাহে একদিনের কথা বলছি। অন্তত সপ্তাহে একদিন। আর দ্বিতীয় রাকাতে সালাম ফিরানোর আগে জামাতে যেয়ে উপস্থিত হবেন না। তারপর নামায শেষে বললেন, “ও যাক আজ মসজিদে আসতে পারলাম!” তারপর ডান কাঁধের ফেরেশতার দিকে ইঙ্গিত করে বললেন, “আপনি এটা লিখেছেন তো ? আজকের ফজর!!” মসজিদে নামায শুরু হওয়ার আগেই উপস্থিত হন। আপনাদের মসজিদে ফজর নামায পড়ার উপকারিতা সম্পর্কে বলছি… এটার এমন এক আধ্যাত্মিক প্রভাব রয়েছে যে একমাত্র যারা যায় তারাই তা অনুভব করতে পারে। এটা বক্তৃতা দিয়ে বোঝানো যাবে না। যখন আপনি...

রামাদানে তরুণদের প্রতি উপদেশ

আমার প্রিয় তরুণ প্রজন্ম, যদি আপনি রোজা রেখে বাসায় আছেন আর বসে বসে সিনেমা দেখছেন, তাহলে আপনি আসলে রোজা রাখছেন না। আপনি রোজা রাখছেন না। কারণ আপনার অন্তর এখনো আপনার ভুল আকাঙ্ক্ষাগুলোর কাছে হার স্বীকার করছে। রোজা রাখার এই অনুশীলনটার উদ্দেশ্যই হল যে আপনি প্রতিনিয়ত মনে করবেন যে যেভাবে আমি আমার ক্ষুধা, তৃষ্ণার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছি, আমাকে আমার চোখের আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধেও লড়তে হবে, আমাকে আমার মুখের (কথার) বিরুদ্ধেও লড়তে হবে, আমাকে আমার জিহবার বিরুদ্ধেও লড়তে হবে, আমাকে আমার আকাঙ্ক্ষার বিরুদ্ধেও লড়তে হবে, আমাকে আমার হরমোনের বিরুদ্ধেও লড়তে হবে, আমাকে এখন আমার সবকিছুর বিরুদ্ধেই লড়তে হবে। এর মাঝে দৃশ্যমান হল খাওয়া আর পান করা থেকে বিরত থাকা। কিন্তু আর সবকিছুও রোজার মাঝে রয়েছে। ‘লাআল্লাকুম তাত্তাকুন’। আশা করা যায় তোমরা আল্লাহভীরু হতে পারবে। এই জিনিসটাই যদি আমাদের মনে না থাকে তাহলে বনী ইসরাইলের সাথে আমাদের আর কোন পার্থক্য থাকছে না। তারাও রোজা রাখতো, কিন্তু তাদের মাঝে কী ছিল না? তাদের তাকওয়া ছিল না, কিন্তু তারাও রোজা রাখতো। আপনি যদি এটাই ভুলে যান যে কেন আপনি রোজা রাখছেন, তাহলে আপনি তাই করছেন যা বনী ইসরাইল করতো। আল্লাহ আপনাকে বলছেন, কুতিবা আলাইকুম আসসিয়াম। আলাইকুম ‘মুকাদ্দাম’, এটাকে বলা হয় জার মাজরুর মুকাদ্দাম। বিশেষত তোমাদের উপর, এখন তোমাদের পালা। আমি তোমাদেরকে তাই দিচ্ছি, যা আগের প্রজন্মের ওদেরকেও দিয়েছিলাম, তারা এর থেকে কোন উপকার পায়নি, তারা তাকওয়া অর্জন করতে ব্যর্থ হয়েছে, আশা করি যে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পারবে। আল্লাহ এটাই...

কঠিন হৃদয় জনিত সমস্যা

এটি একটি আত্মিক এবং হৃদয়জনিত সমস্যা। কেবল আপনি নিজে এই ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন। ইনশাআল্লাহ্‌ শেষের দিকে যেয়ে এ সমস্যাগুলো দূর করার জন্য কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করবো। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন, أَلَمْ يَأْنِ لِلَّذِينَ “যারা ইমান এনেছে তাদের কি এখনো সময় আসেনি…” أَن تَخْشَعَ قُلُوبُهُمْ لِذِكْرِ اللَّهِ“…..যে তাদের হৃদয় আল্লাহর স্মরণে বিগলিত হয়ে যাবে, তাদের হৃদয় সশ্রদ্ধ ভয়ে পূর্ণ হয়ে যাবে?” যখন আপনার পেশী নরম আর দুর্বল হয়ে পড়ে, সেটাকে বলা হয় খুশু’। আর তখন পেশীগুলোকে শক্তিহীন মনে হয়। আপনার মনে হয় যে কেউ আপনাকে বশীভূত করে ফেলছে। আল্লাহ বলছেন তাদের হৃদয় আল্লাহর ভয়ে, তাঁর কথা স্মরণ করে বশীভূত হয়ে পড়বে।“যারা বিশ্বাসী, তাদের জন্যে কি আল্লাহর স্মরণে তার কারণে হৃদয় গলে যাওয়ার সময় আসেনি?…” وَمَا نَزَلَ مِنَ الْحَقِّ“…এবং যে সত্য অবর্তীর্ণ হয়েছে তার কারণে?”আর সেই সত্যটা কী? আল কুর’আন। তারপর আল্লাহ একই আয়াতে একটি সতর্ক বাণীও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন : وَلَا يَكُونُوا كَالَّذِينَ أُوتُوا الْكِتَابَ مِن قَبْل فَطَالَ عَلَيْهِمُ الْأَمَدُ তারা (মুমিনরা) যাতে তাদের মত না হয়, যাদেরকে তাদের পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তাদের উপর একটি বড় সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেছে। তার মানে তারা এই কিতাব ধারণ করেছিল দীর্ঘ সময়ের জন্য। যখন আপনি প্রথম ধর্মীয় অনুশাসন মানা শুরু করেন, আপনি এ ব্যাপারে খুবই উত্তেজিত থাকেন। এই উত্তেজনা একসময় চলে যায়, যা থাকে তা হলো বহিরাবরণ। সুতরাং ঐসব লোকদের ক্ষেত্রে কী ঘটল? فَقَسَتْ قُلُوبُهُمْ তাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেল। একটি দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর, ধর্মীয় কর্ম সম্পাদন একটি রুটিনে পরিনত হয়ে গেল। এমন কিছু যা তারা শুধু করে, যা করতে হয়, তারা এটা করছে কারণ এটাতে তারা অভ্যস্ত। কিন্তু এটা আর এমন কিছু নয়, যা তাদের হৃদয়কে আলোড়িত করে। তাদের হৃদয় হয়ে গেছে কঠিন। আর যখন আপনার অন্তর কঠিন...
বিনয়ের সাথে ভদ্রভাবে চলা

বিনয়ের সাথে ভদ্রভাবে চলা

কুরআন উইকলি তে দেয়া উস্তাদ নুমান আলী খানের “Quranic Gems”  সিরিজ থেকে নেয়া। ” আল্লাহ্‌র বান্দারা পৃথিবীতে বিনম্রভাবে চলাফেরা করে এবং যখন অজ্ঞলোক তাঁদের আক্রমণ করে তাঁরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের মোকাবেলা করে। ”    সুরা ফুরকান-৬৩ আসসালামু আলাইকুম কুরআন উইকলি, আল্লাহ্‌ সুবাহানাহু ওয়া তায়ালা সুরা আল-ফুরক্বান এর শেষে সুরা নম্বর ২৫ এ বর্ণনা করেছেন কারা আর-রাহমান (পরম করুণাময়)-এর বান্দা। আল্লাহ্‌র অনেক নাম আছে জা তিনি এখানে উল্লেখ করতে পারতেন, আল্লাহ্‌র বান্দা, সৃষ্টিকর্তার বান্দা, মহাজ্ঞানীর বান্দা, কিন্তু যখন তিনি বলছেন, পরম করুণাময়ের বান্দা এর মানে যেন উনি বলছেন এই মানুষগুলোর সাথে তাঁর সম্পর্ক তাঁর অভাবনীয় ভালোবাসা, দয়া এবং মমতার ভিত্তিতে। তার মানে এমন এক সত্তার বান্দা যিনি অনেক মমতাময় , যিনি অনেক বেশি ভালোবাসেন, যিনি অভাবনীয় রকম দয়া দেখান তাঁর বান্দা। তার মানে এই মানুষগুলো বিশেষ ধরণের মানুষ। এইখানে আল্লাহ্‌ যাঁদের কথা বলছেন তাঁরা খুবই বিশেষ ধরণের মানুষ। সকল বিশ্বাসীরাই স্পেশাল কিন্তু এঁরা আরো অনেক অনেক বেশি স্পেশাল। এবং এই স্পেশাল মানুষদের যাদেরকে তিনি বলেছেন “ওয়া ই’বাদুর রাহমান”। তাঁদের প্রথম গুণ হচ্ছে, الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا “আল্লাজীনা ইয়ামশূনা আ’লাল আরদি হাওনান” তাঁরা পৃথিবীতে চলে, পৃথিবীতে তাঁরা চলাফেরা করে বিনম্রতার সাথে هَوْنًا ‘হাওনান’ কোমলভাবে এবং তাঁদের নিজেদের দুর্বলতা স্বীকার করে। আপনি জানেন যখন আমরা কোন কিছু অর্জন করি, আমরা একধরনের শক্তি, জোড় আর ক্ষমতা অনুভব করি। এবং ঐসব মুহূর্ত আসলে আমাদের নগণ্যতা অনুভব করার কথা। এটা প্রথম কথা, هَوْنًا ‘হাওনান’ মানে এটাও যে আপনি অন্যদের সামনে নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন করবেন না, আল্লাহ্‌ এ সম্পর্কে কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় উল্লেখ্য করেছেন। উদাহরণ স্বরূপ, পিতামাতার সামনে নম্রভাবে মাথা নত করে দেয়া এর মানে কী? এরমানে হলো আপনি পূর্ণবয়স্ক, আপনি পেশাজীবী, আপনার টাকা আছে, আপনার নিজের গাড়ী আছে, বাড়ী আছে আর আপনার বাবা-মা রিটায়ার্ড, বৃদ্ধ।...
অতীতের জাতি থেকে শিক্ষা

অতীতের জাতি থেকে শিক্ষা

Quran Weekly তে দেয়া উস্তাদ নুমান আলী খানের Quranic Gems সিরিজ থেকে। আসসালামু ‘আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। আজকে আমি আপনাদের সাথে সূরা বাকারার ৫৭তম আয়াতের কিছু বিষয় বর্ণনা করতে চাই। এবং এই আয়াত আল্লাহ্‌ আযযা ওয়া জাল বনী ইসরাইলদের সম্বোধন করে বলছেন, ইসরাইলের সন্তানদের। এবং আল্লাহ্‌ তার কিছু অনুগ্রহের কথা উল্লেখ করেছেন। যেই কারণে আমি আপনাদের সাথে আয়াতটি শেয়ার করতে চাই তা হল এই আয়াতটির ভেতরে একটি অসাধারণ স্থানান্তরণ ঘটে। সেই পরিবৃত্তি অনুধাবন করার সুবিধার্থে আমি প্রথমে আপনাদের জন্য একটি দৃশ্যপট দাঁড় করছি। ধরুন একজন শিক্ষক ক্লাসরুমে, এবং ধরা যাক তার ছাত্ররা ৩ ভাগে, না, ২ ভাগে বিভক্ত। বাম পাশে হচ্ছে ছাত্রদের একাংশ, মাঝখানে কিছুটা ফাঁক, এবং ডান পাশে রয়েছে আরেক অংশ। বাম পার্শ্ববর্তী ছাত্ররা আগের দিন পরীক্ষা দিয়ে দিয়েছে, ধরা যাক তারা গ্রুপ A, তারা পরীক্ষা দিয়েছে, এবং ফেল করেছে। আর গ্রুপ B এই পরীক্ষাটি দিবে কালকে। দিনটি হল দুই পরীক্ষার মধ্যখানে। শিক্ষক ক্লাসে ঢুকলেন, এবং গ্রুপ A, যারা কিনা পরীক্ষাটি দিয়েছে, তাদেরকে তীব্র ভাবে বকা দিতে লাগলেন। কারণ তারা পাশ করে নি। এবং তিনি বকা দিয়ে বলছেন, মনে করেন, “ আমি তোমাদের জন্য কি না করেছি!রিভিউ করেছি!সব উত্তর দিয়ে দিয়েছিলাম, এমন কি প্রশ্নপত্রের কপিও পরীক্ষার আগের দিন দিয়ে দিয়েছিলাম!তাও কিভাবে ফেল করলে? তোমাদের জন্য আর বেশি কি করা যাই আমি ভেবে পাই না!” আর এই সময়টুকুতে, যখন তিনি তাদেরকে বকাঝকা করছিলেন, গ্রুপ B বসে বসে দেখছিল। কয়েকজন ওই ছাত্রগুলোকে টিটকারি মারছিল, “হা হা দেখ না ওদের অবস্থা”। তবে তাদের মধ্যেকার অন্যরা,যারা বুদ্ধিমান, তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ল কারণ তারা জানে কাল তাদের পরীক্ষা, এবং তারা খুব শীঘ্রই একি ধরনের শাস্তির শিকার হতে পারে। এখন শিক্ষক বললেন, “তোমরা, জান? তোমাদের সাথে আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না”। তিনি গ্রুপ...