যেভাবে একজন মানুষ ঈমান হারিয়ে ফেলে

খুৎবায় আলোচিত আয়াতসমূহ — “যেদিন আপনি দেখবেন ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারীদেরকে, তাদের সম্মুখ ভাগে ও ডানপার্শ্বে তাদের জ্যোতি ছুটোছুটি করবে বলা হবেঃ আজ তোমাদের জন্যে সুসংবাদ জান্নাতের, যার তলদেশে নদী প্রবাহিত, তাতে তারা চিরকাল থাকবে। এটাই মহাসাফল্য। যেদিন কপট বিশ্বাসী পুরুষ ও কপট বিশ্বাসিনী নারীরা মুমিনদেরকে বলবেঃ তোমরা আমাদের জন্যে অপেক্ষা কর, আমরাও কিছু আলো নিব তোমাদের জ্যোতি থেকে। বলা হবেঃ তোমরা পিছনে ফিরে যাও ও আলোর খোঁজ কর। অতঃপর উভয় দলের মাঝখানে খাড়া করা হবে একটি প্রাচীর, যার একটি দরজা হবে। তার অভ্যন্তরে থাকবে রহমত এবং বাইরে থাকবে আযাব। তারা মুমিনদেরকে ডেকে বলবেঃ আমরা কি তোমাদের সাথে ছিলাম না? তারা বলবেঃ হ্যাঁ, কিন্তু তোমরা নিজেরাই নিজেদেরকে বিপদগ্রস্ত করেছ। প্রতীক্ষা করেছ, সন্দেহ পোষণ করেছ এবং অলীক আশার পেছনে বিভ্রান্ত হয়েছ, অবশেষে আল্লাহর আদেশ পৌঁছেছে। এই সবই তোমাদেরকে আল্লাহ সম্পর্কে প্রতারিত করেছে। অতএব, আজ তোমাদের কাছ থেকে কোন মুক্তিপন গ্রহণ করা হবে না। এবং কাফেরদের কাছ থেকেও নয়। তোমাদের সবার আবাস্থল জাহান্নাম। সেটাই তোমাদের সঙ্গী। কতই না নিকৃষ্ট এই প্রত্যাবর্তন স্থল। যারা মুমিন, তাদের জন্যে কি আল্লাহর স্মরণে এবং যে সত্য অবর্তীর্ণ হয়েছে, তার কারণে হৃদয় বিগলিত হওয়ার সময় আসেনি? তারা তাদের মত যেন না হয়, যাদেরকে পূর্বে কিতাব দেয়া হয়েছিল। তাদের উপর সুদীর্ঘকাল অতিক্রান্ত হয়েছে, অতঃপর তাদের অন্তঃকরণ কঠিন হয়ে গেছে। তাদের অধিকাংশই পাপাচারী। তোমরা জেনে রাখ, আল্লাহই ভূ-ভাগকে তার মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করেন। আমি পরিস্কারভাবে তোমাদের জন্যে আয়াতগুলো ব্যক্ত করেছি, যাতে তোমরা বোঝ।” সূরা হাদীদ : আয়াত:...

স্থায়ীভাবে অন্তরের শান্তি কীভাবে অর্জন করা যায়

একজন শ্রোতার প্রশ্ন ছিল, ঈমানের বিভিন্ন পর্যায় আছে। ঈমান কি শান্তির সাথে সম্পর্কিত ? শান্তির বিভিন্ন পর্যায় আছে। আমি কি ঈমান ছাড়া কিংবা ঈমানদার হয়ে শান্তি লাভ করতে পারি? কোন ব্যক্তি অল্প ঈমান নিয়ে শান্তি পেতে পারেন কিনা? গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। আসলে এটি একটি সুন্দর প্রশ্ন। এবং আল্লাহ একটি আয়াতে বর্ণনা করেছেন, যেটা আমি আগে তেলাওয়াত করেছি ,”অতএব, উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে শান্তি লাভের অধিক যোগ্য কে, যদি তোমরা জ্ঞানী হয়ে থাক। যারা ঈমান আনে এবং স্বীয় বিশ্বাসকে জুলুমের সাথে মিশ্রিত করে না, তাদের জন্যেই শান্তি…..(৬; ৮১-৮২) এটি একটি চমৎকার উত্তর। আল্লাহ বলেছেন, দু,দিকের কোন দিক বেশি শান্তি প্রত্যাশা করে। অন্য কথায় ইসলাম ছাড়াও এমন কিছু জিনিস আছে যার মাঝে মানুষ মাঝে মধ্যে শান্তি খুঁজে পায়। কিন্তু কে নিয়মিত, বিরামহীন এবং সারাজীবন ধরে শান্তি পাওয়ার যোগ্য? এরা ঐসব মানুষ যারা সত্যিকারভাবে ঈমান আনে এবং ঈমান আনার পর মন্দ কাজ করে তাদের ঈমানের অধিকার ক্ষুণ্ণ করে না। এখন আমি আপনাদের বলছি , কে এটা আপনাদের বলতে পারবে , কেউ একজন ৪ ঘণ্টা একই অবস্থায় থেকে মেডিটেশন করেছে এবং নড়াচড়া করছে না। আপনি তার দিকে তাকিয়ে দেখেন সে দেখতে সত্যি শান্তিময়। সে সত্যিকার অর্থে এখন শান্ত এবং তার ভিতরে অনেক শান্তি আছে। মানুষ ইয়গা করে এবং এর মধ্যেও শান্তি খুঁজে পায়। ঠিক আছে। কিছু মানুষ সাওনায় বসে শান্তি পায় । কেউ কেউ ক্লাসিক্যাল গান শুনে শান্তি খুঁজে পায়। সুতরাং আপনি যদি কারো শান্তি খুঁজে পাওয়ার ব্যাপারে কথা বলেন, তারা বলে আমি ভিন্ন ভিন্ন জিনিস থেকে শান্তি খুঁজে পাই। কেউ হয়ত সমুদ্রের ধারে বসে আছে এবং সমুদ্রের ঢেউয়ের দিকে তাকিয়ে থেকেই শান্তি খুঁজে পাচ্ছে। কিন্তু এটা হচ্ছে অস্থায়ী ভাবে আবেগের শান্ত / স্থির অবস্থা। কিন্তু আমরা যখন বলি শান্তি খুঁজে পাই, এটা আসলে ১...

ঈমান এবং আঁধার প্রান্তরে পথ চলা প্রদীপ – ৩য় পর্ব

সে মনে করেছিল এই সব কিছু তাকে তার লক্ষ্যে পৌঁছে দিবে। কারো জন্য সেটা হয় পরবর্তী কোন মুভি, কোন খেলনা, নেক্সট স্মার্ট ফোন। যেমন- কোন স্টার ওয়ার মুভি বের হলে টিকেটের লাইন হজ্জের ভিসার লাইনের চেয়েও লম্বা হয়। কারণ তাকে এখনি এটা দেখতে হবে। যদি এখন না দেখা হয়, জীবন তো তাহলে পুরাই ব্যর্থ। যদি মুক্তি পাওয়ার রাতে দেখা না হয়, জীবনের তো তাহলে কোন মূল্য থাকে না। তাই এখনি দেখতে হবে। প্রসঙ্গতঃ সে ভেবেছিল এই মুভি দেখলে তা তাকে এক ধরণের মানসিক পরিপূর্ণতা দিবে, যা সে কোথাও পায়নি। সিনেমা হল থেকে বের হয়ে চোখ বড় বড় করে বলবে, “It was pretty awesome”!! পরক্ষনেই আবার বিষণ্ণ হয়ে যাবে। নিজেকে প্রশ্ন করবে, “এখন কি করবো? আবার দেখবো মুভিটা?!” প্রথম বারের মতো অতটা ভালো না লাগলেও মোটামুটি ভালো লাগলো। এভাবে সে নিজের ভেতরের শূন্যতা পুরণ করার জন্য নিত্য নতুন জিনিস খুঁজতে থাকে। কারণ যে জিনিসটা তাদের প্রকৃত শান্তি দেয়ার কথা – আল্লাহর সন্তুষ্টির অন্বেষণ – সেটা তো আর তার জীবনের লক্ষ্য নয়। সে ইচ্ছাটাও আর অবশিষ্ট নেই। ‘وَغَرَّتْكُمُ الْأَمَانِيُّ حَتَّىٰ جَاءَ أَمْرُ اللَّهِ‘ অর্থাৎ “অলীক আশার (দুনিয়ার মোহ) পেছনে বিভ্রান্ত হয়েছ, অবশেষে আল্লাহর আদেশ পৌঁছেছে”। বিশ্বাসীদের মতে এটাই ছিল তার জীবন। মুমিনরা বলবে – এটাই ছিল তার জীবন। যারা তাদের ঈমান হারিয়ে ফেলেছিল। যেটা শুরু হয়েছিল আপাতদৃষ্টিতে একটা ছোট্ট পদক্ষেপ থেকে, অসৎ সঙ্গ! এবং সেখান থেকে এটা একটা অটোমেটিক ডাউনওয়ার্ড স্পাইরাল সিঁড়ি, শুধুই নিচের দিকে নেমে যাওয়া! তারপর তার মনে সন্দেহ দানা বাঁধতে শুরু করে। এর পর সে তার গোটা জীবন শুধু কামনা বাসনা চরিতার্থ করা এবং দুনিয়াবী অর্জনের পেছনে ব্যয় করে। وَغَرَّكُم بِاللَّهِ الْغَرُورُ তারপর আল্লাহ বলেন, চূড়ান্ত প্রতারক… এখানে ‘গারুর’ শব্দটি ‘মুবালাগা’, চূড়ান্ত প্রতারক যে সফলভাবে তোমাদের প্রতারিত করে।...

ঈমানের পুনর্জাগরণ (পর্ব ৩)

যদি হৃদয়কে পরিচ্ছন্ন রাখতে চান, তবে আপনার জিহ্বাকে পরিচ্ছন্ন রাখুন। আসসালামুয়ালাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু ঈমানের পুনর্জাগরণ সিরিজে আবারো আবারও স্বাগতম। আমরা কথা বলছিলাম কী করে ঈমান অর্জন করতে হবে এবং কিভাবে তা তৈরী করতে হবে। এ সম্পর্কে আমরা বেশ চমকপ্রদ ধারণা পাই কুর’আন এবং রাসূল (স) এর সুন্নাহতে। আল্লাহ বলেন- هُوَ الَّذِي أَنزَلَ السَّكِينَةَ فِي قُلُوبِ الْمُؤْمِنِينَ لِيَزْدَادُوا إِيمَانًا مَّعَ إِيمَانِهِمْ আল্লাহ বলছেন, তিনি মুমিনদের অন্তরে প্রশান্তি নাযিল করেন, যাতে তাদের ঈমানের সাথে আরও ঈমান বেড়ে যায়। (সুরা ফাতহ ৪) অর্থাৎ যে ঈমান রয়েছে তা যেন বেড়েই চলে। এখন যদি আপনি আয়াতটার দিকে লক্ষ্য করেন, আলেমরা বলছেন, তা হচ্ছে ঈমান, যা অন্তরকে প্রশান্ত করে। বিশ্বাস অন্তরকে প্রশান্ত করে। তাই, যখন অন্তর এদিক সেদিক চলে যায়, তা অস্থির থাকে, বিভিন্ন জায়গায় ছুটে বেড়ায়, আল্লাহ ঈমান/বিশ্বাসকে পাঠিয়েছিলেন তাকে শান্ত করার জন্যে। কোন কিছুই অন্তরকে স্থির করতে কিংবা প্রশান্তি দিতে পারে না বিশ্বাস ছাড়া। সত্যিকার অর্থে প্রশান্তি দিতে। তাই বিশ্বাস আপনাকে লক্ষ্যচ্যুত করবে না, বিশ্বাস আপনাকে অস্থির করবে না। বিশ্বাস আপনাকে শান্ত করবে ভেতর থেকে। রসুল সঃ এর একটা হাদিস আছে যাতে তিনি জানিয়েছেন ঈমান গ্রহণ করতে হলে হৃদয়ের স্থিতির গুরুত্ব কতটা। তিনি সঃ একটা হাদিসে বলেছেন যা মুসনাদে ইমাম আহমাদে এসেছে। বলেছেন, কারো বিশ্বাস স্থির হবে না যতক্ষণ না তার হৃদয় স্থির হয়। অর্থাৎ, বিশ্বাস অন্তরে স্থির হতে হলে অন্তরকেও স্থির হতে হবে। তারপর তিনি বললেন, তার অন্তর ততক্ষণ পর্যন্ত শান্ত হবে না, যতক্ষণ না তার জিহ্বা শান্ত হয়। অর্থাৎ রসুল সঃ বলছেন আপনি যদি আপনার অন্তরকে স্থির করতে চান, এবং চান ঈমানকে গ্রহণ করতে, আপনাকে নিশ্চিত করতে হবে আপনার জিহ্বাও যেন স্থির থাকে। ব্যাপারটা অদ্ভুত, কারণ আমরা সাধারণত জিহ্বার ব্যবহারের সাথে অন্তরে বিশ্বাসের মিল খুঁজি না। কিন্তু ইমাম ইবনুল কাইউম...