ভিডিও + প্রতিলিপি
জিব্রাইল আঃ এর গল্প (২য় পর্ব)
পরিশেষে, ইমরানের পরিবারের সাথে। কোন কোন সময় জিব্রিল (আঃ) কে নবীর সাথে উল্লেখ না করে নবীর পরিবারের সাথে উল্লেখ করা হয়। তো, আমরা মারিয়াম (আঃ) এর ঘটনা জানি। মারিয়াম (আঃ) মসজিদের বাইরে পূর্বে দিকের কোন এক স্থানে যেতেনمَكَانًا شَرْقِيًّا । তিনি মাসে একবার মসজিদের বাইরে পূর্ব দিকের কোন এক জায়গায় যেতেন। অনেক আলেমের মতে, সেটা ছিল সূর্যোদয় দেখার উদ্দেশ্যে। তিনি সেখানে গিয়ে সূর্যোদয় দেখতেন আর আল্লাহর জিকর করতেন। তিনি সেখানে মাটিতে দুটি লাঠি গেঁড়ে পর্দা টাঙিয়ে দিতেন, যেন এই খোলা জায়গায় মানুষ বুঝতে পারে এটা তাঁর বসার জায়গা। কেউ যেন এটার নিকটে না আসে। তিনি অল্প বয়স্ক মেয়ে ছিলেন, ১৪- ১৮ বছর বয়সের। মোটকথা তিনি একজন টিনেজার ছিলেন। আর তিনি একা আল্লাহর উপাসনা করছেন, আল্লাহকে একা একা স্মরণ করছেন। আল্লাহ তায়ালা বলেন, فَأَرْسَلْنَا إِلَيْهَا رُوحَنَا আমরা তাঁর কাছে আমাদের রুহকে (জিবরাইল আঃ ) পাঠালাম। فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا জিব্রিল (আঃ) তাঁর নিকট একজন সুন্দর পুরুষের আকৃতিতে আবির্ভূত হলেন। জিব্রিল (আঃ) মুখ খুলে কিছু বলার আগেই মারিয়াম (আঃ) তাকে দেখে বললেন, أَعُوذُ بِالرَّحْمَٰنِ مِنكَ إِن كُنتَ تَقِيًّا ”আমি পরম করুণাময়ের কাছে তোমার থেকে আশ্রয় চাচ্ছি, যদি তোমার অন্তরে আল্লাহর কোন ভয় থেকে থাকে।” মানে – যদি তোমার নূন্যতম কোন শালীনতা থেকে থাকে ভাগ এখান থেকে। কোন কথা বলতে যেও না। মনে কর যে এটা কখনো ঘটে নি। যাও, আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। তাই প্রিয় বোনেরা, যদি কোন ভাই আপনার নিকট এগিয়ে আসে, তাদের সাথে এভাবে আচরণ করার চেষ্টা করে দেখুন(আরবিতে এই কথাটা বলেন)। দেখুন, কি ঘটে। যদি তিনি আরবি নাও বুঝেন তিনি ভাববেন, না এই আপুর থেকে দূরে থাকাই উত্তম। আমরা এই গল্পে যদি আবার ফেরত যাই, তাহলে দেখবো যে মারিয়াম (আঃ) জিবরাইল (আঃ) এর সাথে পরে কথা বলেছিলেন।...ধার্মিকতা-বিহীন ক্ষমতা
[শায়েখ ওমার সুলেইমান ও মুহাম্মাদ জিয়ারার তৈরি ইন্সপিরেশন সিরিজ] ”হে ঈমানদারগণ, তোমরা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাক; আল্লাহর ওয়াস্তে ন্যায়সঙ্গত সাক্ষ্যদান কর, তাতে তোমাদের নিজের বা পিতা-মাতার অথবা নিকটবর্তী আত্নীয়-স্বজনের যদি ক্ষতি হয় তবুও। কেউ যদি ধনী কিংবা দরিদ্র হয়, তবে আল্লাহ তাদের শুভাকাঙ্খী তোমাদের চাইতে বেশী। অতএব, তোমরা বিচার করতে গিয়ে রিপুর কামনা-বাসনার অনুসরণ করো না। আর যদি তোমরা ঘুরিয়ে-পেঁচিয়ে কথা বল কিংবা পাশ কাটিয়ে যাও, তবে আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ কর্ম সম্পর্কেই অবগত।” (সূরা আন নিসাঃ...জিব্রাইল (আঃ) এর গল্প (৩য় পর্ব)
আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (সঃ) এর সাথী ফেরেশতাদের মাঝে যিনি রাসূল (সঃ) এর সবচেয়ে নিকটবর্তী ছিলেন, যিনি রাসূল (সঃ) কে সহযোগিতা করেছেন, তাঁর প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা করেছেন তিনি ছিলেন জিব্রিল আঃ। অন্য একটি বর্ণনায় রাসূল (সঃ) আরও বলেছেন, …… প্রত্যেক নবীকেই আল্লাহ সুব হানাহু ওয়া তায়ালা দুনিয়া থেকে দুইজন এবং আকাশ থেকে দুইজন মন্ত্রী দান করেছেন। আমাকে দেয়া আকাশের দুইজন মন্ত্রী হলেন – জিব্রিল এবং মিকাল। আর দুনিয়া থেকে প্রদত্ত দুইজন হলেন- আবু বকর এবং ওমর (রা)। জিব্রিল আ এবং রাসূল সঃ এর প্রথম সাক্ষাৎকারটি কেমন ছিল? আনাস ইবনে মালিক (রা) বর্ণনা করেন, রাসূল (সঃ) এর ছেলেবেলায় তিনি অন্য বাচ্চাদের সাথে খেলছিলেন, দৌড়াদৌড়ি করছিলেন – ঠিক সকল বাচ্চার মত। হঠাৎ করে এক ব্যক্তির আবির্ভাব হলো। তিনি রাসূল (সঃ) কে ধরে মাটিতে শুইয়ে দিলেন। এটা দেখে অন্য বাচ্চারা তাদের পিতা-মাতার কাছে দৌড়ে চলে গেল আর বলতে লাগলো – মুহাম্মাদ (সঃ) কে হত্যা করা হয়েছে। অন্য বাচ্চারা যখন দৌড়ে পালাতে লাগলো, তখন রাসূল (সঃ) দেখছিলেন যে এই লোকটি তাঁকে কি করতে যাচ্ছে। আল্লাহর রাসূল (সঃ) বলেন, তিনি আমার বুক কেটে ফেললেন, তিনি আমার বুক খুলে ফেললেন। তিনি রাসূল (সঃ) এর হার্ট ধরলেন এবং তা থেকে কিছু একটা বের করে নিলেন আর বললেন- এটা হলো তোমার অন্তরের শয়তানের অংশ। তারপর তিনি এটাকে ফেলে দিলেন। তারপর তিনি সোনালি বর্ণের একটি পাত্রে রাখা জমজমের পানিতে আমার হার্ট ধুয়ে ফেললেন। আর এই বাচ্চাবস্থায় রাসূল (সঃ) সবকিছু অবলোকন করছেন। এরপর রাসূল (সঃ) এর হার্টকে আবার যথাস্থানে রেখে দেয়া হলো। অন্য বাচ্চারা ফিরে এসে দেখল যে রাসূল (সঃ) এর বুক সেলাই করে দেয়া হয়েছে। আর তাঁর মুখমণ্ডল নীল বর্ণ ধারণ করলো। রাসূল (সঃ) এর হার্ট বের করে পবিত্র করা হলো। সে সময় তিনি এই ঘটনার কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পেলেন...জিব্রাইল (আঃ) এর গল্প (৪র্থ পর্ব)
খাদিজা (রা) বললেন – চলুন, ওয়ারাকার কাছে যাই। তো, তাঁরা তার নিকট গেলেন। রাসূল (সঃ) যা দেখলেন তা ওয়ারাকার নিকট বর্ণনা করলেন। ওয়ারাকা সাথে সাথে বলে উঠলেন – ”ইনি নামুস! (আপনিই সেই রাসূল যার জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।) এই ফেরেশতাই (নামুস বা জিব্রিল) মূসার (আঃ) কাছে এসেছিলেন। ইস! আমি যদি যুবক হতাম! তাহলে আপনাকে সাহায্য করতে পারতাম! যখন আপনার সম্প্রদায় আপনার বিরোধিতা করবে।” এরপর কি ঘটেছিল? আয়েশা (রা) বর্ণনা করেন – এরপর বহুদিন যাবত ওহী অবতীর্ণ হওয়া বন্ধ থাকে। রাসূল (সঃ) অপেক্ষা করতে লাগলেন যেন সেই ফেরেশতা আবার দেখা দেন। রাসূল (সঃ) আবার ওইসব পাহাড়ে ঘুরতে লাগলেন। রাসূল (সঃ) নিজের ভাষায় তা এভাবে বর্ণনা করেন যে, ”(তাঁর মানসিক অবস্থা এমন ছিল যে) তিনি যেন চাইতেন নিজেকে পাহাড় থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে!” তিনি স্পষ্টরূপে জানতে চান কি ঘটছে! প্রতিবার রাসূল (সঃ) পাহাড়ে গেলে জিব্রিল (আঃ) এর কণ্ঠ শুনতে পেতেন। ”ও মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল।” এতে রাসূল (সঃ) কিছুটা সান্ত্বনা পেতেন এবং ঘরে ফিরে আসতেন। এরপর পরবর্তীতে তিনি শুধু যে ”ও মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল।” এ কথা বলতেন তা নয়, তিনি আরও বলতেন – ”আর আমি জিব্রিল”। তো, তিনি রাসূল (সঃ) এর নিকট বিষয়টা পরিষ্কার করলেন যে তিনি জিব্রিল (আঃ)। কিন্তু তবু কোন কুরআন বা ওহী অবতীর্ণ হয়নি। অবশেষে, অন্য একদিন রাসূল (সঃ) হাঁটছিলেন – আর এবার ‘ইয়া মুহাম্মাদ ইন্নাকা রাসূলুল্লাহি হাক্কা’- ”ও মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর সত্য রাসূল” এ বাক্য নয়। বুখারি শরীফে জাবির (রা) থেকে বর্ণিত আছে- রাসূল (সঃ) হাঁটছিলেন তারপর হঠাৎ উপরের দিকে তাকিয়ে দেখলেন – জিব্রিল আলাইহিস সালাম তাঁর পরিপূর্ণ ফেরেশতার আকৃতি ধারণ করে সম্পূর্ণ আকাশ ঢেকে আছেন, সম্পূর্ণ দিগন্তকে ঢেকে আছেন। আল্লাহ জিব্রিল (আঃ) সম্পর্কে বলেছেন – ذُو مِرَّةٍ فَاسْتَوَىٰ প্রজ্ঞার অধিকারী, সে নিজ আকৃতিতে...জিব্রাইল (আঃ) এর গল্প (৬ষ্ঠ পর্ব – সমাপ্ত)
জিব্রাইল আলাইহিস সালামের মৃত্যু। সুবহানাল্লাহ, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মৃত্যুবরণ করেছেন এবং প্রত্যেকেই মৃত্যুবরণ করবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, এমনকি জিব্রীল-ও মৃত্যুবরণ করবে। চিন্তা করতে পারেন, জিব্রীল (আলাইহিস সালাম)- ও মারা যাবেন। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, সিংগায় ফুতকার দেওয়ার পর আল্লাহ যাদের চান তারা ছাড়া আর কেউ স্থির থাকতে পারবে না (অন্য সবাই মৃত্যুবরণ করবে)। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা তাদেরকে তাঁর সম্মুখে নিয়ে আসবেন, তারা হলেনঃ জিব্রীল, ইস্রাফিল, মিকাল ও মৃত্যুর ফেরেশতা … যারা আল্লাহর আদেশ সমূহের বাস্তবায়ন করে থাকেন। আল্লাহ মৃত্যুর ফেরেশতাকে জিজ্ঞেস করবেন, আর কারা কারা বাকী আছে? মৃত্যুর ফেরেশতা বলবেন, ওহ আল্লাহ, আপনার সম্মানিত পবিত্র চেহারা (পূর্ণ সত্ত্বা), আপনার বান্দা আমি, আপনার বান্দা জিব্রীল, আপনার বান্দা মিকাল, আপনার বান্দা ইস্রাফিল। আল্লাহ বলবেন, মিকালের আত্মা নিয়ে নাও। তখন মিকালের আত্মা নিয়ে নেওয়া হবে। তখন আল্লাহ পূনরায় বলবেন, আর কে কে বাকী আছে? তিনি বলবেন, ওহ আল্লাহ, আপনি, আমি, জিব্রীল এবং ইস্রাফিল। আল্লাহ বলবেন, ইস্রাফিলের আত্মা নিয়ে নাও। ইস্রাফিলের আত্মা তাঁর থেকে নিয়ে নেওয়া হবে। আল্লাহ আবারও বলবেন, আর কারা বাকী আছে? তিনি বলবেন, ওয়াজহুকাল বাকিল কারিম – ওহ আল্লাহ, আপনার পবিত্র চেহারা, আপনার এই বান্দা এবং আপনার বান্দা জিব্রীল। আমরা দুই বান্দা সবশেষে বাকী রয়েছি। আল্লাহ বলবেন, জিব্রীলের আত্মা নিয়ে নাও। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, জিব্রীল তাঁর চেহারা নিয়ে পতিত হবেন এমন অবস্থায় যে তাঁর ডানাগুলো বিস্তৃত অবস্থায় থাকবে আর সেগুলো আল্লাহর প্রশংসা করতে থাকবে। তিনি তাসবিহ (আল্লাহর প্রশংসা)-রত অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবেন। তাঁর চেহারা নিম্নে পতিত হবে এমতাবস্থায় তিনি আল্লাহর প্রশংসারত থাকবেন। এরপর আল্লাহ বলবেন, আর কে বাকী আছে? তখন মৃত্যুর ফেরেশতা বলবেন, ইয়া আল্লাহ, কেবল আপনি আর আমিই বাকী আছি। আল্লাহ মৃত্যুর ফেরেশতাকে আদেশ করবেন মৃত্যুবরণ করার জন্য। আর...প্রবন্ধ
আমাদের পরিবারঃ আমার চোখের শীতলতা
– উস্তাদ নোমান আলী খান হে আল্লাহ আমাদের সেই অপ্রত্যাশিত উপহার প্রদান করুন। কি সেই অপ্রত্যাশিত উপহার? رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُن- হে আমার প্রভু! স্ত্রী ও সন্তাদের দ্বারা আমার চোখ শীতল কর।অর্থাৎ, স্বামী বা স্ত্রী এবং সন্তান দেও যা আমাদের চোখ জুড়িয়ে দেয় ও চোখে আনন্দের অশ্রু বইয়ে দেয়। কুররাতা আইয়ুন, এর অর্থ কি আপনি জানেন? এর মানে এমন কিছু যা পাওয়ার আনন্দে আপনার চোখে আনন্দের অশ্রু চলে আসে। আপনি যখন দেখেন আপনার সন্তান কুরআন তিলাওয়াত করছে ও কুরআন তিলাওয়াত করতে ভালোবাসে তখন কি আনন্দে আপনার চোখে পানি আসে না কিংবা আপনার প্রিয়তমা স্ত্রী যখন অতি আদর-যত্নে বড় করে তোলে আপনার সন্তানদের তখন কি আপনার চোখ আনন্দে ভিজে যায় না? আপনি যখন দেখেন আপনার স্বামী আপনার সন্তানদের ফজরে ডেকে তোলে এবং তাদেরকে নিয়ে মসজিদে যায় তখনো আনন্দে আপনার চোখে অশ্রু চলে আসে, আপনি প্রচন্ড সুখ অনুভব করেন।অনেক স্বামী বা স্ত্রীকেই কাঁদতে দেখবেন কিন্তু তাদের এই কান্না কিন্তু আনন্দের কান্না না, তাদের এই কান্না অন্য কোন কারণে। আমরা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছি আনন্দের কান্নার জন্য, আমরা চাই আমাদের পরিবার নিয়ে সর্বোচ্চ সুখী হতে। কিন্তু সেটা কিভাবে হবেন? এখনো তো আপনি বাসায় গিয়ে আপনার স্ত্রীর সাথে ঝগড়া করেন। আপনি বাসায় গেলে আপনার স্ত্রী জিজ্ঞেস করে আপনার আসতে দেরি হলো কেন আর আপনিও তখন রেগেমেগে জবাব দেন এই বলে যে বারবার একই প্রশ্ন কেন করো, তুমি কি জানো না রাস্তায় কি পরিমাণ জ্যাম, জানালা দিয়ে বাইরে তাকালেই তো দেখতে পাও। এই ধরণের ঝগড়া নিয়মিতই হয় আর এরপর আপনি যখন আপনার সন্তানের কাছে যান তাকেও আপনি বকাঝকা করেন সে কেন খেলনা নিয়ে খেলছে বা কেন এত হাসাহাসি করছে, এত খুশির কি আছে এসব নিয়ে। তাকে বকা দেন তার হোমওয়ার্ক...শুনতে শিখুন
নোমান আলী খান কিছু দিন আগে,আমি আসলে একটি গির্জার সমাবেশে অংশ নিয়েছিলাম,শুধু দেখার জন্যে যে তারা আসলে কি করে।সেটা ছিল বুধবার রাতে,এবং যাজক মতামতই পাঁচ মিনিটের মতো কথা বলে।তার যা বলার প্রথমে সে তা বলে। এবং তারপরে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ঘটনাটি ঘটে।তিনি সমাবেত লোকজনকে জিজ্ঞাসা করলেন, “এখানে কার কি সমস্যা হচ্ছে? আমাকে খলখুলি এই সম্পর্কে বলুন!” কিছু লোক বলল, “আমি সবেমাত্র আমার চাকরি হারিয়েছি। আমার কঠিন সময় পার হচ্ছে। “ “ঠিক আছে সবাই, জেফের জন্য প্রার্থনা করুন!” এবং প্রত্যেকে জেফের জন্য প্রার্থনা শুরু করে। তারপর কেউ বলল যে , “আমি সবে তালাক পেয়েছি, আমার স্ত্রী সকল সম্পদ নিয়ে নিয়েছে। “ প্রত্যেকে এই ব্যক্তির জন্য প্রার্থনা করুন… এবং তারপর এক মহিলা বলল, “আমি সবেমাত্র ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছি” এবং প্রত্যেকে তার জন্য প্রার্থনা করল। এবং কোনে বসে থাকা এক লোক বলল, “সে একটা চাকরি হারিয়েছে? আমার সাথে পরে কথা বলতে বলুন। আমার প্রতিষ্ঠানে পদ খালি আছে। “ এবং তারা শুরু যা তাদের একসাথে একতাবদ্ধ করল তা কিন্তু এটা না যে এই লোকটি ঘন্টা পড় ঘন্টা কথা বলে যাচ্ছে এবং তারা সেখানে বসে বসে শুনছে, আসলে তারা এই সমাবেশে জড়ো হয়েছিল কারণ তাদের এমন একটি জায়গা আছে যেখানে তাদের শোনার মানুষ আছে। যেখানে তারা সমর্থিত বোধ করতে পারে। রসুলুল্লাহ (ﷺ) একজন আশ্চর্য শ্রোতা ছিলেন।আমরা রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে আশ্চর্য বক্তা মনে করি।হ্যাঁ অবশ্যই তিনি তা ছিলেন.তবে তিনি অবিশ্বাস্য শ্রোতাও ছিলেন। অনেক সময়, যাদের হৃদয় আপনি প্রভাবিত করতে চান, অনেক সময় আমরা চিন্তা করি যে আমরা যদি কেবল তাদের সাথে কথা বলি তবে তাদের পরিবর্তন হবে। কিন্তু আমি আপনাদের বলব যে, মানুষের সাথে কথা বলার চেয়ে জরুরি হল, আমাদের লোকের কথা শুনতে শিখতে হবে,আমাদের লোকের কথা শুনতে শিখতে হবে।আপনি কেবল উত্তর দেয়ার জন্য তাদের কথা...আপনার সন্তান শান্ত হোক অথবা বেয়াড়া/চঞ্চল, তাদেরকে দ্বীন শেখান
যে সকল বাবা-মার দশ বছরের কম বয়সী শিশু-সন্তান রয়েছে, তাদের জন্য, তারা হাত দেখান/উঠান দয়া করে, দশ বছরের কম বয়সী শিশু-সন্তান…. ঠিক আছে, আপনারা কয়েক জনই আছেন । সুতরাং আমাদের জন্য, সবচেয়ে বড় কাজটি হচ্ছে আমাদের সন্তানদের ইসলাম শিক্ষা দেওয়া, আমাদের, সন্তানদের ইসলাম শিক্ষা দেওয়া । নবীগণ যখন দ্বীন শিক্ষা দিতেন, তারা সবাইকেই দ্বীন শিক্ষা দিতেন । কিন্তু আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল যখন (পবিত্র) কুরআনে শিশুদের ইসলাম শিক্ষার ব্যাপারে কথা বলেন, শিশুদের শেখানোর বিষয়ে, শিশুদের উপদেশ গ্রহণ করা সম্পর্কে মহান আল্লাহ তায়ালা খুব কমই বলেছেন । কিন্তু যখনই তিনি এ বিষয়ে কথা বলেছেন, সেটা ছিল বাবা-মার কাছ থেকে । আবার শুনুন। মহান আল্লাহ তায়ালা যখনই (পবিত্র) কুরআনে শিশুদের পথনির্দেশনা গ্রহণ করা সম্পর্কে কথা বলেছেন, সেটা সবসময় ছিল বাবা-মার কাছ থেকে এবং বাবা-মার মধ্যে, সেটা সবসময় বাবার কাছ থেকে. কারণ মাতো সেখানে সবসময়ই আছেন । বাচ্চার কাছে সবসময় থাকার জন্য মাকে অতিরিক্ত কোন কাজ করতে হয় না, বাচ্চাকে সবসময় যত্ন করা এবং তাকে সবসময় উপদেশ দেওয়া, একজন মাকে আপনার প্রশিক্ষণ দিতে হবে না যে, কিভাবে একজন মা হতে হয়, এটা তার স্বাভাবিকভাবেই আসে । আল্লাহ সেটা তাদের ভিতরেই দিয়ে দিয়েছেন । তবে বাবাদের অবস্থা অবশ্য ভয়াবহ । প্রকৃত পিতা হবার জন্য আমাদেরকে (রীতিমতো) প্রশিক্ষণের মধ্য দিয়ে যেতে হয় । এটা আমাদের (ভিতরে) স্বাভাবিকভাবে আসে না । যখন একজন মায়ের সন্তান হয়, তার অনুভূতি, তার আবেগ, সবকিছুর তখনই পরিবর্তন হয়, তাৎক্ষণাৎ পরিবর্তন হয়ে যায় । (আর) একজন বাবার ? ৩-৪ দিন চলে যাবার পর, যখন কোন বন্ধু বলে, “আরে, শুনলাম তোমার নাকি একটা বাচ্চা হয়েছে ? ” “হ্যাঁ, ভাই, এটা আমাকে এখনও নাড়া/ধাক্কা দেয়নি ” somebody needs to hit you, so it hits you. (মানে) কারো আপনাকে নাড়া/ধাক্কা দেয়া প্রয়োজন, তাহলেই সেটা...ব্যবসানীতি: মিথ্যার মাধ্যমে মানুষের টাকা গ্রাস করবেন না
পঞ্চম পারায় সূরাহ নিসা থেকে একটি আয়াত নিয়েছি, উনত্রিশ নম্বর আয়াত। খুবই শক্তিশালী শব্দচয়ন। ইসলামের অন্যতম বড় একটি মূলনীতি আনা হয়েছে আয়াতটিতে। “তোমরা যারা ঈমানের দাবি করো…” يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تَأْكُلُوا أَمْوَالَكُمْ بَيْنَكُمْ بِالْبَاطِلِ) “… পরস্পরের টাকা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে খেয়ে ফেলো না।” কর্মক্ষেত্রে কর্মঘন্টার ব্যাপারে মিথ্যা বলবেন। যখন কার্ড পাঞ্চ করবেন, মিথ্যার আশ্রয় নিবেন না। ধরুন আপনি একজন কনসালটেন্ট। নির্দিষ্ট কিছু ঘন্টার বিনিময়ে আপনাকে টাকা দেয়া হয়। হয়তো কোনো কাজ করে, বা কিছু ঘন্টা ব্যয় করে। তো আপনি বসে বসে কফি খেলেন, মজা করলেন, আয়েশ করলেন। সেসবের জন্যেও আপনাকে টাকা দেয়া হয়। এভাবে উপার্জন করবেন না, যদি না আপনার নিয়োগকর্তা বিষয়টি জেনে থাকেন। لَّا أَنْ تَكُونَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِنْكُمْ) “… তবে ব্যবসা হয়ে থাকলে ভিন্নকথা, যে ব্যবসা পরস্পরের মধ্যে বোঝাপড়ার মাধ্যমে হয়ে থাকে।” অন্যকথায়, কেউ সবসময় একশভাগ প্রোডাক্টিভ থাকতে পারে না। মানবিকভাবেই তা সম্ভব নয়। তাই, আপনার মনে হতে পারে, “আচ্ছা, ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত কাজ করবো, তবে মাঝেমাঝে চল্লিশ মিনিটের ব্রেক নিবো। বসে থাকব, কথা বলব। করা যাবে?” যদি আপনার নিয়োগকর্তা জানেন আপনি তা করছেন, আর এটা তিনি মেনে নেন, তাহলে ঠিক আছে, কারণ এটা পারস্পরিক সম্মতিতেই হচ্ছে। لَّا أَنْ تَكُونَ تِجَارَةً عَنْ تَرَاضٍ مِنْكُمْ) যদি এটা ব্যবসা হয়, পরস্পরের সম্মতিক্রমে হয়, তবে ভিন্নকথা। এ ছাড়া মানুষ থেকে জোচ্চুরি করে টাকা আদায় করবেন না। জিনিসের দাম মাত্রাতিরিক্ত ধরবেন না। আপনার কাজের জন্য মাত্রাতিরিক্ত মূল্য চাইবে না। যদি গাড়ির মেকানিক হয়ে থাকেন, আপনার দাম বাড়িয়ে দিবেন না। কারণ এই দশ মাইলের মধ্যে আপনি একাই মেকানিক। আপনি জানেন লোকটার গাড়ির ট্রান্সমিশনে সমস্যা, টাইমিং বেল্টে সমস্যা, ইঞ্জিন ফ্লুইড, আরো বিভিন্নরকম সমস্যা আছে। সে কি করবে? আপনি যদি ডাক্তার হন, মানুষের কাছে মাত্রাতিরিক্ত বিল চাইবেন না। একের পর...সবচেয়ে বিশুদ্ধ বুদ্ধির মানুষ কারা?
— নোমান আলী খান। মানুষের মাঝে যাদের সবচেয়ে পরিপক্ক ঈমান রয়েছে কুরআনে তাদের জন্য একটি পরিভাষা ব্যবহার করা হয়েছে, আর তা হলো – উলুল আলবাব বা সবচেয়ে পরিশুদ্ধ বুদ্ধির মানুষ। আল্লাহ এই মানুষদের কথা সূরা আলে-ইমরানে বলেছেন – إِنَّ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَاخْتِلَافِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ لَآيَاتٍ لِّأُولِي الْأَلْبَابِ – “নিশ্চয়ই আসমানসমূহ ও যমীনের সৃষ্টিতে এবং রাত্র ও দিনের আবর্তনে জ্ঞানবানদের (উলুল আলবাবদের) জন্য বহু নিদর্শন আছে।” (৩:১৯০) তারা ঈমানের বুদ্ধিবৃত্তিক অনুসন্ধানে এবং ঈমানের আধ্যাত্মিক অনুসন্ধানে এক ধরণের পরিপক্কতায় পৌঁছে গিয়েছে, এমনকি কুরআনের সংস্পর্শে আসার পূর্বেই। সবচেয়ে পরিণত ঈমানের মানুষেরা ঐশী জ্ঞান অর্জনের সুযোগ পাওয়ার পূর্বেই নিজেদের ভেতর বিশ্বাসের ভিত গড়ে তুলেছিলেন। চলুন দেখি, কীভাবে? আল্লাহ বলেন – “ইন্না ফিই খালকিস সামাওয়াতি ওয়াল আরদি ওয়াখতিলাফিল লাইলী ওয়ান নাহারি…” নিশ্চয়ই নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টিতে এবং রাত্র ও দিনের আবর্তনে “লাআ-ইয়াতিন” অলোকিক নিদর্শন রয়েছে, শুধু একটা নয়, বহু বহু নিদর্শন রয়েছে এর প্রত্যেকটাতে। রাতের মাঝে অনেক শিক্ষা আছে, দিনের মাঝে অনেক শিক্ষা আছে, আকাশের মাঝে অনেক শিক্ষা আছে, পৃথিবীর মাঝেও অনেক শিক্ষা আছে। এর প্রত্যেকের মাঝে রয়েছে অনেক অনেক শিক্ষা। কার জন্য? উলুল আলবাব-দের জন্য। সবচেয়ে পরিশুদ্ধ বুদ্ধির মানুষদের জন্য, খাঁটি বুদ্ধিমত্তার অধিকারী মানুষদের জন্য। এখন, খাঁটি বুদ্ধিমত্তার সংজ্ঞা কী? আল্লাহ কিভাবে খাঁটি বুদ্ধির পরিচয় দিয়েছেন? তিনি পরবর্তী আয়াতে “উলুল আলবাব-দের” পরিচয় দিতে গিয়ে বলেন – الَّذِينَ يَذْكُرُونَ اللَّهَ قِيَامًا وَقُعُودًا وَعَلَىٰ جُنُوبِهِمْ وَيَتَفَكَّرُونَ فِي خَلْقِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ – যাঁরা দাঁড়িয়ে, বসে, ও শায়িত অবস্থায় আল্লাহকে স্মরণ করে এবং চিন্তা-গবেষণা করে আসমান ও জমিন সৃষ্টির বিষয়ে…. তাহলে উলুল আলবাবদের প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো, যারা সবসময় আল্লাহকে স্মরণ করে। দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্য হল, “ওয়া ইয়াতা ফাক্কারুনা ফিই খালিকস সামাওয়াতি ওয়াল আরদ” এবং তারা আকাশ ও জমিনের সৃষ্টি নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করে। তাহলে এখন দেখুন…...মু’জিযা

“সব কিছুই নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে” ও অলৌকিক মু’জিযা
বিসমিল্লাহির রাহমানীর রাহীম আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেনঃ “সূর্যের পক্ষে সম্ভব নয় চন্দ্রের নাগাল পাওয়া, আর রজনীর পক্ষে সম্ভব নয় দিবসকে অতিক্রম করা; আর প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে (Orbit) অতিক্রম করছে (সাঁতার কাটছে)” [সূরা ইয়াসিনঃ ৪০] আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা এখানে আসমানের সকল কিছুর বর্ণনা করছেন। প্রত্যেকেই তাদের নিজেদের কক্ষপথে ভাসছে, সাঁতার কাটছে, ঘুরছে। তিনি কী নিয়ে কথা বলছেন? চন্দ্র, সূর্য, গ্যালাক্সি, প্ল্যানেট ইত্যাদি। তিনি বলছেন এগুলোর সবই নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে। এখানে আল্লাহ কী শব্দ ব্যবহার করেছেন সবার ‘নিজ নিজ কক্ষপথে’ বুঝানোর জন্য? এর জন্য আল্লাহ বলছেনঃ كُلٌّ فِي فَلَك আরবিটা লক্ষ করেছেন? আরো একটু গভীরভাবে লক্ষ করুন তবেই বাক্যাংশটির অলৌকিক মু’জিযাটা বুঝতে পারবেন। আল্লাহ বলছেন, “প্রত্যেকেই নিজ নিজ কক্ষপথে ঘুরছে।” এবার আরবিতে দেখুন – কীভাবে শব্দগুলোও অর্থের সাথে সামঞ্জস্য রেখে, আসমানের প্রত্যেকটি জিনিসের ঘূর্ণনের অর্থের সাথে যেই বাক্যটি দিয়ে, যেই শব্দগুলো দিয়ে, যেই অক্ষরগুলো দিয়ে আল্লাহ বলেছেন এই কথা, সেই অক্ষরগুলোও ঘুরছে নিজ নিজ কক্ষপথে (ছবিটি লক্ষ্য করুন)!!! সুবহানাল্লাহ! কীভাবে ঘুরছে? كُلٌّ فِي فَلَك প্রথম শব্দের প্রথম অক্ষর (ك) শেষ শব্দের শেষ অক্ষর (ك) প্রথম শব্দের দ্বিতীয় অক্ষর (ل) শেষ শব্দের দ্বিতীয় শেষ অক্ষর (ل) প্রথম শব্দের তৃতীয় অক্ষর (فِ) শেষ শব্দের প্রথম অক্ষর (فِ ِ) এখানে বাকি আছে (ي) অক্ষরটি – আর ঘূর্ণন অর্থের জন্য কী শব্দ? يَسْبَحُونَ (ঘুরছে) ঘূর্ণনের অর্থের জন্য যে শব্দটা ব্যবহৃত সেটা শুরু হয়েছে (ي) দিয়ে আর মাঝখানে আছে (ي) অর্থাৎ অক্ষরটা কিন্তু “নিজ নিজ কক্ষপথে” এর মাঝে রয়েছে আর তার চারপাশে অন্যান্য অক্ষর ঘুরছে অর্থাৎ ঘূর্ণন অর্থের জন্য যেই শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে সেই শব্দের অক্ষরের চারপাশে সবই ঘুরছে!!! অর্থাৎ আয়াতের অক্ষরসমূহ শব্দের অক্ষরগুলোর ঘূর্ণনের সাথে আসমানের বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সব কিছুর নিজ নিজ কক্ষপথে ঘূর্ণনের সাথে কী অপূর্ব মিলে যাচ্ছে !! সুবহানাল্লাহ !!...
কুরআনের ভাষাগত মু’জিযা (পর্ব ৩) – মক্কা নাকি বাক্কা?
আরেকটি চমৎকার তুলনা হতে পারেঃ মক্কা আর বাক্কা। মক্কার এই দুটি নাম কি আগে কখনো শুনেছেন আপনারা? দুটি নামই একবার করে এসেছে কুরআনে। কুরআনে আল্লাহ আযযা ওয়া জাল মক্কা শব্দটি ব্যবহার করেছেন সূরা মুহাম্মাদে। আবার সূরা আল ইমরানে ব্যবহার করেছেন বাক্কা শব্দটি।ইতিহাসগতভাবে শব্দ দুটি মক্কা শহরটিরই ভিন্ন দুটি নাম মাত্র। অনেকে বলে থাকেন যে বাক্কা ছিল প্রাথমিক সময়ের নাম আর মক্কা পরবর্তী সময়ের। তবে ভাষাতাত্ত্বিকদের মত এই যে, মক্কা হল শহরটির মূলনাম আর বাক্কা হল এর ডাকনাম। বাক্কা শব্দটি এসেছে আরবি ক্রিয়াপদ “বাক” থেকে, যার অর্থ “জনাকীর্ণতা”। প্রচুর লোকের সমাগমে ভিড় সৃষ্টি হওয়া, আধুনিক আরবিতে যাকে বলা হয়ে থাকে “আল-ইজদিহাম”। এখন দেখা যাক, সূরা ইমরানে বাক্কা শব্দটি ব্যবহার হয়েছে, যেখানে শব্দের শুরুতে উপস্থিত “বা” ধাতুটির উৎপত্তি “ভিড়” শব্দটি থেকে। এখানে যেই আয়াতগুলো রয়েছে সেগুলো মূলত হজ্জের আয়াত – “ওয়া লিল্লাহি আলান নাসি হিজ্জুল বায়িত”। হজ্জ শব্দটির সাথে কীসের চিন্তা মাথায় আসে? লোক সমাগম, ভিড়। তাহলে হজ্জের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে উপযুক্ত শব্দ কোনটি? বাক্কা। কিন্তু সূরা মুহাম্মাদের উল্লেখিত অংশে হজ্জের কোন কথাই নেই, তাই সেখানে এসেছে মূল শব্দটি – মক্কা। সুবহান আল্লাহ! আমাদের জন্য মক্কা, বাক্কা তো একই শব্দ, একটার জায়গায় আরেকটা তো ব্যবহার করাই যায়। শব্দ দুটি একই জিনিসের দুটি ভিন্ন নাম বটে, তবে কুরআনে শব্দ দুটির ভিন্ন প্রয়োগ এর পুঙ্খানুপুঙ্খতার মানদণ্ডে যে মাত্রা যোগ করেছে তা কুরআনের অপ্রতিদ্বন্দ্বীটার আরেকটি প্রমাণ ছাড়া আর কিছুই নয়। মানুষ যখন কথা বলে তখন এরকম পরিপূর্ণ সূক্ষ্মতা বজায় রাখতে পারে না। এভাবে সে চিন্তাই করতে পারে...
কুর’আনের ভাষাগত মু’জিযা (পর্ব ২) – ইয়াসরিব নাকি মদীনা?
স্ক্রীনে দেখানো দুটো নামই আপনারা জানেন, ইয়াথরিব এবং মদীনা। দুটোই কি একই শহরের নাম? অবশ্যই। কুরআন মদীনা শহরের কথা বলার সময় “মদীনা” শব্দটি বহুবার ব্যবহার করেছে। স্ক্রীনে আপনাদের জন্য অন্তত সেরকম তিনটি আয়াত দেখানো হয়েছে। কিন্তু কুরআন মাত্র একবার “ইয়াথরিব” শব্দটি ব্যবহার করেছে। শুধুমাত্র সুরা আহযাবে, ব্যস! কুরআনের অন্য কোথাও “ইয়াথরিব” শব্দটি ব্যবহার করা হয় নি। দুটোই কিন্তু মদীনারই নাম। তর্কের খাতিরে ধরে নেয়া যেতে পারে, দুটোই তো একই জিনিস, তাই না? তাহলে আমি কেন ইয়াথরিব শব্দটি বদলে মদীনা লিখতে পারি না? অথবা মদীনার না বলে ইয়াথরিব বলি না? তোমরা বারবার বল, কুরআনের শব্দচয়ন পুরোপুরি পারফেক্ট। তোমরা তো জানই ইয়াথরিব আর মদীনা দুটোই একই জিনিস। তাহলে কেন ইয়াথরিবের বদলে মদীনা কিংবা মদীনার বদলে ইয়াথরিব ব্যবহার করা যাবে না? কতটুকুই আর হেরফের হবে তাতে? এই সামান্য পরিবর্তনে কি আসে যায়? এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে আমাদের ইতিহাসের দিকে একটু তাকাতে হবে। রাসুল (স) মদীনায় আসার আগে মদীনার নাম কি ছিল? ইয়াথরিব। রাসুল (স) আসার পর তাকে যখন সবাই একবাক্যে নেতা বলে ঘোষণা দিল, তখন শহরটার নাম হল “মদীনাতুন্নাবী” বা “নবীর (স) শহর”। সংক্ষেপে “শহর”। তাহলে মদীনা শব্দটি কিসের সংক্ষিপ্ত রূপ? “নবীর (স) শহর” শব্দটির। আর আসল নাম “ইয়াথরিব”। অথবা আপনারা এভাবেও ভাবতে পারেন যে, রাসুল (স) আসার আগে শহরটির নাম ছিল ইয়াথরিব, আর উনি আসার পর এর নাম হল মদীনা। মজার ব্যাপার হল, সুরাতুল আহযাব, সুরা নম্বর ৩৩ এ আসলে মদীনা এবং ইয়াথরিব, দুটোই ব্যবহার করা হয়েছে, একই সুরাতে। আরও মজার ব্যাপার হল, সুরাতুল আহযাব একটি মাদানী সুরা। মাদানী সুরার ব্যাপারে আমরা কি জানি? রাসুল (স) সেসময় কোথায় ছিলেন? মদীনাতে। তাহলে তখন শহরটাকে কি বলা হত? মদীনা, কিন্তু এখানে আমরা “ইয়াথরিব” শব্দটি দেখতে পাচ্ছি। ধাঁধাঁটা ধরতে পারছেন তো? ব্যাপারটা হল,...
কুর’আনের ভাষাগত মু’জিযা (পর্ব ১) – শুয়াইব (আঃ)
শুয়াইব (আঃ), আপনারা জানেন তিনি একজন নবী, ঠিক? এখন নবী (আঃ) হিসেবে তাঁর নাম কুর’আনে বহুবারে এসেছে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, “ওয়া ইলয়া মাদিয়ানা আখা’খুম শুয়াইবা” মাদিয়ানের নিকট আমি প্রেরণ করেছিলাম তাদের ভাই শুয়াইবকে (আঃ)। এখন একটা কথা বলে রাখি, কোন জাতির কাছে শুয়াইব (আঃ) কে প্রেরণ করা হয়েছিল? মাদিয়ান.. ঠিক? এখন মাদিয়ান একই সাথে দুটি জিনিস কে বোঝায়, ঠিক আছে? মাদিয়ান দুইটি অর্থ বহন করে। মাদিয়ান একই সাথে একটা জায়গার নাম আবার একই সাথে এটি একটি জাতির নাম। ঐ জাতিটিকে মাদিয়ান বলা হয়, আবার তাদের জায়গা কেও মাদিয়ান বলা হয়। এবং আল্লাহ বলেন মাদিয়ানের নিকট আমি প্রেরণ করেছিলাম তাদের ভাই শুয়াইবকে (আঃ)। সূরা শু’রায়, ২৬তম সূরা, আল্লাহ তায়ালা আমাদের বিভিন্ন নবী-রাসূলদের ঘটনা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, “Idh qaala lahum akhuhum Lootun; idh qaala lahum akhuhum Saalihun; idh qaala lahum akhuhum Hoodun; idh qaala lahum akhuhum Noohun”- যখন তাদের ভাই নুহ (আঃ) কে তাদেরকে বললো। এর পরের বর্ণনায় আরেক নবীর কথা বলা হয়। যখন তাদের ভাই সালিহ (আঃ) কে বললো, তার নিজের জাতির কাছে। তারপর আসেন হুদ (আঃ)। যখন তাদের ভাই হুদ (আঃ) তাদেরকে বললো। তারমানে সালিহ, হুদ, নুহ এবং লুত (আঃ) – চারজনের বেলায়ই বলা হলো তাদের ভাই, তাদের ভাই, তাদের ভাই। পঞ্চম স্থানে শুয়ায়ব (আঃ) এর কথা বলা হচ্ছে। আল্লাহ বলেন – যখন শুয়াইব তাদেরকে বললো। এখানে তিনি শুধু বললেন “ইয কালা লাহুম শুয়াইবুন” যখন শুয়াইব তাদেরকে বললো। একই সূরায় আগের সব নবীদের সাথে কী বলা হয়েছিল? তাদের ভাই নুহ, তাদের ভাই সালিহ, তাদের ভাই লুত, তাদের ভাই হুদ। কিন্তু যখন শুয়াইব (আঃ) এর কথা বলা হলো তখন বলা হলো শুধু শুয়াইব – এখানে ভাই কথাটির উল্লেখ নাই। আরো মজার ব্যাপার হলো কুর’আনের অনান্য জায়গায় আল্লাহ বলেন “ওয়া...
“আল্লাহ পুরুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি।”
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম কুর’আনের ভাষাগত সৌন্দর্য: “আল্লাহ কোন পুরুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি।” ————————————- সূরা আল-আহযাব (সূরা নং ৩৩, মদীনায় অবতীর্ণ), আয়াত ৪: مَّا جَعَلَ اللَّهُ لِرَجُلٍ مِّن قَلْبَيْنِ فِي جَوْفِهِ وَمَا جَعَلَ أَزْوَاجَكُمُ اللَّائِي বাংলা অনুবাদে দেয়া আছে: আল্লাহ কোন মানুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি। সঠিক অনুবাদ হবে: আল্লাহ কোন পুরুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি। কারন لِرَجُلٍ অর্থ পুরুষ, মানুষ নয় (মানুষ হলে স্ত্রী পুরুষ উভয়কে বুঝাত)। ইংরেজী অনুবাদ সমূহ: By Abdul Daryabadi: Allah hath not placed unto any man two hearts in his inside. By Dr. Mohsin: Allâh has not made for any man two hearts inside his body. By Mufti Taqi Usmani: Allah has not made for any man two hearts in his chest cavity. By Pickthal: Allah hath not assigned unto any man two hearts within his body. By Yusuf Ali: Allah has not made for any man two hearts in his (one) body. এবার আসি মুল বিষয়ে। কুর’আনের এই আয়াতের ভাষার স্বচ্ছতা, সূক্ষ্মতা ও সৌন্দর্য বিষয়ে। আয়াতটি ছিল আল্লাহ কোন পুরুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি। দেখুন, আল্লাহ যিনি একমাত্র উপাসনা ও আনুগত্য পাবার যোগ্য তিনি সুন্দরভাবে বলেন যে, তিনি কোন পুরুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি। এখানে কাকে বাদ দেয়া হয়েছে? নারীকে, তাই না? তিনি যদি বলতেন তিনি কোন মানুষের মধ্যে দুটি হৃদয় স্থাপন করেননি, তবে সেটা স্ত্রী-পুরুষ উভয়কে বুঝাত। মানে সবার ক্ষেত্রে কথাটা বলা হতো। কিন্তু আপনি যদি لِرَجُلٍ অর্থ দেখেন, দেখবেন সেটা পুরুষকে বোঝায়, মানে নারী অর্ন্তভুক্ত নয়। গুগুল ট্রান্সলেটে ইংরেজি থেকে এরাবিক দেখতে পারেন- رجل অর্থ man, male, leg, boy, pin, bloke বা যেকোন ভালো আরবী জানা লোক বা ইমামের কাছ থেকেও জেনে নিতে পারেন। এবং সেই...(Visited 106,786 times, 16 visits today)