আল্লাহ যেভাবে রাসূল (সাঃ ) এর মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন

আল্লাহ যেভাবে রাসূল (সাঃ ) এর মর্যাদা বৃদ্ধি করেছেন

ওয়ারাফা’না লাকা যিকরাক- এখন আসুন এই আয়াতটিতে আসি, আল্লাহ আজ্জা ওয়াজাল তার নবীকে বলেন: বিশেষভাবে আপনার প্রতি, এবং আপনার জন্য আমরা আপনার স্মরণকে মর্যাদা দিয়েছি, আমরা আপনার স্মরণকে মর্যাদা দিয়েছি।

প্রথম যে দিকে তাকানো দরকার তা হল: এর সাথে তার বোঝা হালকা করার সম্পর্ক কি?
নবিজির (সা:) স্মরণকে মর্যাদা দেয়া আর তার বোঝা লাঘব করার মধ্যে সম্পর্ক কি?এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা আমাদের বুঝতে হবে। আমি এখানে বলতে চাই যে, নবীজির উপর দায়িত্ব ছিল এই বাণী পৌঁছে দেয়া, আর অনেক লোক যদি নবীজির নাম মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ (সা:) এর নাম উল্লেখ করতে থাকে, নবীজি (সা:) কি এটাই চাইতেন না যে অনেক মানুষ তাকে আল্লাহর প্রেরিত নবী হিসেবে স্বীকার করে নিক?

তার উল্লেখ করাকে মর্যাদা দেয়া মানে ইসলামের বিজয়কে নিশ্চয়তা দান করা। আর এর মাধ্যমে নবীজির (সা:) দুশ্চিন্তাকে কমিয়ে দেয়া হয়েছে।আবু সাইদ আল খুদ্রি (রা) খুব সুন্দর একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন, “আতানি জিবরীল (আঃ)”, মহানবী (সা:) বলেন, জিবরীল (আঃ) আমার কাছে এসেছিল,

“ওয়া কানা ইন্না রাব্বাকা ইয়াকুলু আতাদ্রি কাইফা রাফাআতু যিকরাক”, জিবরীল নবীজি (সা:) এর কাছে আসলেন এবং বল্লেনঃ আপনার রব বলেছেন, “আপনি কি জানেন আমি কিভাবে আপনার উল্লেখকে মর্যাদা দিয়েছি?”

জিবরীল (আঃ) আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসুলুল্লাহ (সঃ) কে জিজ্ঞেস করছেন, “আপনি কি জানেন আমি কিভাবে আপনার উল্লেখকে মর্যাদা দিয়েছি?” 
“কুলতু আল্লাহু ত’লা আ’লামু বিহি” আমি বললাম, “আল্লাহ সর্বাধিক মর্যাদাবান, তিনি ভাল জানেন। আমি জানিনা।”
“কালা ইযা যুকিরতু যুকিরতা মা’ই”। তিনি বলেন: যখন আমাকে উল্লেখ করা হয় তখন আপনাকেও আমার সাথে উল্লেখ করা হয়।

যখন আল্লাহকে উল্লেখ করা হয়, মুহাম্মাদ (সা:) কে তার সাথে উল্লেখ করা হয়। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ, আযানে বলা হয়, আশহাদু আল্লাহ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, এরপর কি? ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ। ঠিক কিনা?
একইভাবে আত্তাহিয়াতুলিল্লাহ ওয়াসসালাওাত ওয়া তায়্যিবাত, আসসালামুয়আলায়কা ইয়া আয়্যুহান নাবি।
যতবারই আপনি আল্লাহর উল্লেখ পাবেন ততবারই আপনি আল্লাহর নবী (সা:) এর উল্লেখও পাবেন।

খুব সুন্দরভাবেই, রাফাআত বা উচ্চ করার বিপরীত শব্দ হল ওয়াদাআত বা কমিয়ে দেয়া, তাই শব্দ দুটি বিপরীত সৌন্দর্য হিসেবেও কাছাকাছি। আরবিতে যিকর এর দুটি অর্থ আছে, রাফা’না লাকা যিকরাক, যিকর দুটি জিনিষ বুঝাতে পারে, কোন কিছু যা আপনার জিহ্বাতে আছে, কোন কিছুর যখন উল্লেখ করা হয়, অথবা কোন কিছু যা আপনার হৃদয়ে আছে, মানে আপনি যা স্মরণ করেন। যিকর এর এই দুটি অর্থ হতে পারে।

আসুন তাহলে এখন কথা বলি, “ওয়া রাফা’না লাকা যিকরাক” এর “লাকা” এর দিকে,
আমরা আপনার উল্লেখকে মর্যাদা দিয়েছি, আপনার জন্য। আল্লাহ তার নবী (সা:) এর প্রতি ভালোবাসা প্রদর্শন করছেন। যে কারণে আপনার অবস্থানকে উচ্চতা দেয়া হয়েছে এবং আপনার উল্লেখ, যে কারণে আপনি মানুষের হৃদয়ে স্মরণে থাকবেন, তা হল আপনার জন্য। “লাকা” এটা ১ নম্বর।

২ নম্বর হল, শুধু আপনার জন্য। এই ধরণের মর্যাদা শুধু আপনাকেই দেয়া হয়েছে। এটা নিজেই কুরআনের একটি অলৌকিক দিক। এই আয়াতটি নিজেই অলৌকিক। আপনারা জানেন, সূর্য ধীরে ধীরে উঠে, এর মানে হল ফজরের সময় কোন এক শহরে এক সময়, ঠিক তার পরের শহরে ২ মিনিট পর। এবং এভাবেই সারা দুনিয়াতে চলতে থাকে। আর প্রত্যেকবার ফজরের সময় কি হয়? আযান দেয়া হয়। প্রতি মিনিটেই একের পর এক শহরে আযান দেয়া হয়। আর এভাবে অর্ধেক পৃথিবী পার হওয়ার আগেই প্রথম শহরে কি হয়? জোহর শুরু হয়ে যায়।

১ম চক্র শেষ হওয়ার আগেই ২য় চক্র শুরু হয়ে যায়। আর সারা পৃথিবীতে কি পাঠ করা হচ্ছে? আশহাদু আল্লাহ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ।

আর প্রত্যেকবারেই যখন একজন বিশ্বাসী তা শুনছেন, তিনি কি বলেন? সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
ওয়ারাফা’না লাকা যিকরাক, আমরা আপনার স্মরণকে মর্যাদা দিয়েছি, আপনার জন্য। সুবহানআল্লাহ। এইখানে আযানের কথা বলা হয়েছে। আল আলুসি (রা:) এই ব্যাপারে সত্যি খুব সুন্দর একটি উক্তি করেছেন, তাই আমি এর পুরোটি আপনাদের সামনে উপস্থাপন করব, “ওয়াজা আলা তা’আতাহু তা’আতাহু”, আল্লাহ নবীকে অনুসরণের মধ্যে আল্লাহকে অনুসরণ করা দিয়েছেন। তিনি কি এভাবে তাকে মর্যাদা দেননি?

এরপর, “ওয়া সাল্লা আলাইহি ফি মালাইকাতিহি” এবং তিনি তার সালাম প্রেরণ করেছেন ফেরেশতাদের মাধ্যমে। এর মানে হল আল্লাহ নবী (সা:) এর উপর সালাম প্রেরণ করেছেন। “ইন্নাল্লাহা ওয়া মালাইকাতাহু ইয়ুসাল্লুনা আলান্নাবি” কুরানের আয়াত, তাই না? “ওয়া মানাল মু’মিনু বিসসালাতি আলায়হিম”, এরপর তিনি বিশ্বাসীদের প্রতি নির্দেশ দেন: “ইয়া আয়্যুহাল্লজিনা আ’মানু সাল্লুয়ালাইহি ওয়া সাল্লিমু তাস্লিমা” শুধু তিনি নিজে এবং ফেরেশতারাই নন, তিনি বিশ্বাসীদেরকেও নির্দেশ দিয়েছেন তাকে সালাম দিতে।

“ওয়া খাতাবাহি বিল ইল্কাআব”, বিস্ময়কর, এরপর তিনি যখন তাকে ডাক দেন, যখন কথা বলেন, তিনি ভালবাসাময় শব্দ ব্যবহার করেন। ইল্কাব- যা লাকাব থেকে এসেছে, “কায়া আয়্যুহাল মুদ্দাসসির”, “ইয়া আয়্যুহাল মুযযাম্মিল”, “ইয়া আয়্যুহান্নাবি”, “ইয়া আয়্যুহাররাসুল”। অথচ কুরআনে কি পাওয়া যায়? “ইয়া জাকারিয়া”, “ইয়া ইয়াহহিয়া”, “ইয়া মুসা ইন্নানি আলাল্লাহ”। “ইয়া দাউদু ইন্নাকা জাআলনাকা খালিফাতু ফিল আরদ”, “ইয়া আদাম উস্কুন আন্তা ওয়া জাওজুকা জান্নাহ”, “ইয়া ঈসা ইন্নি মুতাওাফফিকা ওয়া রাফিউকা ইলাইয়া” এইসব নবীর ক্ষেত্রেই আমরা পাই, ইয়া এবং তাদের নাম, কিন্তু আমরা কুরআনে ইয়া মুহাম্মাদ পাইনা। এটা সেখানে নেই। “ইয়া আয়্যুহাল মুদ্দাসসির”, “ইয়া আয়্যুহাল মুযযাম্মিল”, “ইয়া আয়্যুহাররাসুল”, “ইয়া আয়্যুহান্নাবি”, । সুবহানআল্লাহ।

কতইনা মর্যাদা দেয়া হয়েছে নবী (সা:) কে। আল্লাহ তাকে তার নাম নয়, বরং উপাধি ধরে উল্লেখ করেছেন। তাকে সম্মানজনক উপাধি দিয়েছেন। এরপরে তিনি বলেছেন “ওয়া কাতাবা ফিল আও্বালিন আখাজা আল্লালাম্বিয়া আলাইহিম” (সা:)। তিনি প্রথমে পূর্বের ধর্মগ্রন্থে তার উল্লেখ করেছেন, অর্থাৎ তিনি পূর্বের লোকদেরকেও সতর্ক করেছেন যে, শেষ নবী আসছেন। এবং তিনি সকল নবী রসূলের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি নিয়েছেন, যে তারা অবশ্যই মুহাম্মাদ (সা:) কে বিশ্বাস করবে। এবং “ওয়া উমামাহুম” আর তাদের জাতির থেকেও, যখন তিনি আসবেন, অথবা যখন তারা তার সংস্পর্শে আসবে তারাও বিশ্বাস করবে।

আযান, সালাত, কালিমা, খুৎবা, মানব ইতিহাস, আল্লাহ এবং সকল ফেরেশতা তার নামের পর সালাম পাঠ করে, এমনকি সালাতের ভিতরে পাঠ করা হয় “আল্লাহুম্মা সাল্লিয়ালা মুহাম্মাদ ওয়ালা আলি মুহাম্মাদ”।
চিন্তা করুন কি পরিমাণে করা হয়, কতোটা ভক্তির সাথে করা হয় তা নাহয় বাদ দিলাম
আল্লাহ উচ্চ মর্যাদা দিয়েছেন, ওয়ারাফা’না লাকা যিকরাক একবার দেখুন আল্লাহ তার উল্লেখকে কুরানের ভিতরেও কতোটা মর্যাদা দিয়েছেন, কুরানের ভিতরেও। সুনহাল্লাহুতা’লা।

আর দুটি কথা বলব, তার পরেই আমার কথা শেষ ইনশাল্লাহ।

প্রথম কথা হল, আমরা এমন এক সময়ে বাস করছি যেখানে মানুষ আল্লাহর নবী (সা:) কে খোলাখুলি ভাবে অপমান করতে চায়। তারা খোলাখুলি ভাবেই তা করে।

আমাদের মনে ডেনিশ কার্টুনের দাগ এখনও সতেজ। এর আগেও, এটা সাম্প্রতিক সময়ে খুব সাধারণ হয়ে গিয়েছে, যেমন আপনারা সালমান রুশদি এবং অন্যদের কথাও মনে করতে পারেন, তারা আসলে জোকার, তাইনা? এগুলো মনে করলেই মুসলিমদের মনে ক্ষত সৃষ্টি হয়, কিন্তু একটি কথা জেনে রাখুন,
আল্লাহর নবী (সা:) কে অপমান করা ততটাই নিরর্থক, যতটা হল সূর্যের দিকে থুতু মারা। এটা আপনার মুখের উপরেই এসে পরবে। এরাই কি আল্লাহ্র নবী (সা:) কে অপমান করা প্রথম মানুষ?
না, তিনি তার সম্মুখেই এর চেয়েও বেশি বিদ্রূপের শিকার হয়েছিলেন।

এমনকি তখনও আল্লাহ নবী (সা:) কে বলেছেন, “আপনার বক্ষ সংকুচিত হয় তারা যা বলে তার কারণে”
“ওয়ালা কাদনা’লামু আন্নাহু ইয়াদিকু সাদ্রুকা বিমা ইয়াকিলুন” আমারা জানি যে আপনার বক্ষ সংকুচিত হয় নিশ্চিতভাবেই তারা যা বলে তার কারণে এমনকি তখনও আল্লাহ তাকে সান্ত্বনা দিয়েছেন এই বলে, তারা যাই বলুক-না কেন, কোন জিনিষকে উচ্চ মর্যাদা দেয়া হয়েছে? আপনার স্মরণকে।

এবং তাদের অপমান কোনদিন আপনার স্মরণকে যে পরিমাণ মর্যাদা দেয়া হয়েছে তার ধারে কাছেও আসতে পারবেনা। এটাই প্রথম কথা, আমাদের নবী (সা:) এর সম্মান যেকোনো বিদ্রূপের ঊর্ধ্বে। আপনি যত খুশি চেষ্টা করুন, সব ইভাঞ্জেলিকাল ওয়েবসাইট খুলুন, তার মর্যাদা একটুও কমবেনা এবং এটা বিশ্বাসীদের মনে তার প্রতি যে ভালোবাসা আর সম্মান আছে তাকে আরও বৃদ্ধি করবে। শুধু এটাই ঘটবে।

আর তাদের এইসব চেষ্টাই এটা প্রমাণ করে যে আমরা আমাদের নবী (সা:) কে কতোটা ভালোবাসি। এটাই প্রথম কথা।

 

 

মতামত

comments